পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
হিজরতের পূর্বে মি’রাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে। এর পূর্বে দু’ ওয়াক্ত সালাত ফরয ছিল। সূর্যোদয়ের পূর্বে অর্থাৎ- ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আর সূর্যাস্তের পূর্বে অর্থাৎ- ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ’’সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার প্রভুর প্রশংসাসহ তার পবিত্রতা বর্ণনা করো’’- (সূরাহ্ আল গাফির/মু’মিন ৪০: ৫৫)।
’সালাত’ শব্দটি কোন ধাতু (মূল শব্দ) হতে উদগত এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে তা সালাত তথা রহমত শব্দ থেকে উদগত। কারো মতে তা সালাত তথা দু’আ থেকে উদগত। আবার কারো মতে তা الصلوين থেকে উদগত যার অর্থ ঐ দু’টি রগ সালাত আদায়ের সময় যা বক্র হয়। আবার কারো মতে الصلى (অগ্নিতে প্রবেশ) শব্দ হতে উদগত। ইবনুল ক্বইয়্যিম (রহঃ) বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ গ্রন্থে এ সম্পর্কে সুহায়লী (রহঃ) থেকে সুন্দর কথা বর্ণনা করেছেন। কেউ ইচ্ছা করলে তা দেখে নিতে পারেন।
৫৬৪-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ্ হতে অপর জুমু’আহ্ পর্যন্ত এবং এক রমাযান হতে আরেক রমাযান পর্যন্ত সব গুনাহে্র কাফফারাহ্ হয়, যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা হয়। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ لَمَّا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِر» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসটির বাহ্যিক দিক হতে আমরা এটাই বুঝতে পারছি যে, মানুষ সালাত-সিয়াম পালন করার সাথে সাথে যদি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে বাঁচতে পারে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সগীরাহ্ গুনাহগুলো সালাত-সিয়ামের মাধ্যমে ক্ষমা করে দিবেন।
ইমাম নাবাবী বলছেন যে, উক্ত হাদীসের অর্থ হচ্ছে এই যে, সালাত-সিয়ামের মাধ্যমে সগীরাহ্ গুনাহ ক্ষমা হয় এবং কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের জন্য তাওবাহ্ শর্ত।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৫-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, আচ্ছা বলো তো, তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার কাছে যদি একটি নদী থাকে, যাতে সে নদীতে দিনে পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবীগণ উত্তরে বললেন, না, কোন ময়লা থাকবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এ দৃষ্টান্ত হলো পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ. قَالَ: فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
ব্যাখ্যা: এখানে বর্ণিত হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে পবিত্রতা লাভের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ যেমনভাবে শারীরিকভাবে অপবিত্র হয় তেমনভাবে পাপের কারণে হৃদয় ও মন পংকিল হয়ে যায়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে উক্ত পাপের মোচনকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত পাপ দ্বারা শুধুমাত্র সগীরাহ্ গুনাহ উদ্দেশ্য। কেননা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ হতে মুক্ত হতে তাওবাহ্ করা আবশ্যক।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৬-[৩] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমু দিয়েছিল। তারপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বিষয়টি বললো। এ সময়ে আল্লাহ ওয়াহী নাযিল করেনঃ
وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَىِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّاتِ
’’সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ক্বায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ পাপ কাজকে দূর করে দেয়’’- (সূরাহ্ হূদ ১১: ১১৪)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এটা কি আমার জন্য? তিনি বললেন, এটি আমার সকল উম্মতের জন্য। অন্য একটি বর্ণনা অনুসারে তিনি বলেছিলেন, "আমার উম্মাহর মধ্যে যারা এটি মেনে চলে তাদের জন্যও।"
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا أَصَابَ مِنِ امْرَأَةٍ قُبْلَةً فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: (وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْل إِن الْحَسَنَات يذْهبن السَّيِّئَات)
فَقَالَ الرَّجُلُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِي هَذَا؟ قَالَ: «لِجَمِيعِ أُمَّتِي كُلِّهِمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «لِمَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ أُمَّتِي»
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত লোকটির নাম ছিল কা‘ব ইবনু ‘আমর আল আনসারী আস সুলামাহ্। তবে কেউ কেউ বলেছেনঃ খেজুর বিক্রেতার নাবহান। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেন, তিনি হলেন আবুল ইয়াসার। হাদীসে বর্ণিত ‘‘সৎ কর্মসমূহ’’ দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকেই বুঝানো হয়েছে।
মুহাদ্দিসীনে কিরাম উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, কোন মহিলাকে চুমু দেয়া ও স্পর্শ করার কারণে কারো ওপর ‘‘হাদ্দ’’ কার্যকর করা আবশ্যক নয়। আর কেউ এরূপ করে অনুতপ্ত হলে ও তাওবাহ্ করলে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৭-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি ’হাদ্দ’যোগ্য-এর কাজ (অপরাধ) করে ফেলেছি। আমার ওপর তা প্রয়োগ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অপরাধ সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। বরং সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। লোকটিও রসূলের সাথে সালাত আদায় করলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত শেষ করলে লোকটি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি হাদ্দ-এর কাজ করেছি। আমার ওপর আল্লাহর কিতাবের নির্দিষ্ট হাদ্দ জারী করুন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করনি। লোকটি বলল, হ্যাঁ, করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (এ সালাতের মাধ্যমে) আল্লাহ তোমার গুনাহ বা হাদ্দ মাফ করে দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فأقمه عَليّ قَالَ وَلم يسْأَله عَنهُ قَالَ وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَصَلَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاة قَامَ إِلَيْهِ الرَّجُلُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ حَدًّا فأقم فِي كتاب الله قَالَ أَلَيْسَ قَدْ صَلَّيْتَ مَعَنَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ غَفَرَ لَكَ ذَنْبَكَ أَو قَالَ حدك
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত ব্যাপারটি জানতে চাননি। কেননা তা অপরের গোপন বিষয়ের অনুসন্ধান সম্পর্কিত যা নিষিদ্ধ অথবা তার দোষ গোপন করার জন্যও তিনি তা জানতে চাননি। ইমাম খাত্ত্বাবী, নাবাবী ও কতিপয় ইমামের মতে, তাঁর দ্বারা কতিপয় সগীরাহ্ গুনাহ সংঘটিত হয়েছিল যা সালাতের মাধ্যমেই মিটে যায়। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করেননি। ইমাম ইবনু হাজার-এর মতে, কেউ যদি তার দোষ স্বীকার করে তবে তা বিস্তারিত বর্ণনা না করে তাওবাহ্ করে, সেক্ষেত্রে শাসকের জন্য উক্ত শাস্তি প্রয়োগ করা ওয়াজিব নয়। বরং তা ইচ্ছাধীন।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৮-[৫] [’আবদুল্লাহ (রাঃ)] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ কাজ (’আমল) আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সঠিক সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা। আমি বললাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন্ কাজ? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। রাবী [ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ)] বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এসব উত্তর দিলেন। আমি যদি আরও জিজ্ঞেস করতাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে আরও কথা বলতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَي الْأَعْمَال أحب إِلَى الله قَالَ: «الصَّلَاةُ لِوَقْتِهَا» قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ: «بِرُّ الْوَالِدَيْنِ» قُلْتُ ثُمَّ أَيُّ قَالَ: «الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» قَالَ حَدَّثَنِي بِهِنَّ وَلَوِ استزدته لزادني
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে সর্বোত্তম ‘আমল বলতে নির্দিষ্ট সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কে বুঝানো হয়েছে। এ কথা জেনে রাখা আবশ্যক যে, সালাতের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় সিদ্ধ হবে না। তবে সর্বসম্মত মত অনুসারে প্রথম ওয়াক্তে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করাই সর্বোত্তম ‘আমল।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৬৯-[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মু’মিন) বান্দা ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْلأَوَّلُ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ ترك الصَّلَاة» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসটি দৃঢ়তার সাথে প্রমাণ করে যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বর্জন কুফরীকে অনিবার্য করে দেয়। সকল মুসলিম মনীষীর ঐকমত্যে, বিশ্বাস সহকারে কেউ সালাত বর্জন করলে সে কাফির হয়ে যাবে। তবে সালাত আদায় ওয়াজিব মনে করে ও অলসতাবশত কেউ সালাত বর্জন করলে তার কুফরীর ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭০-[৭] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ), যা আল্লাহ তা’আলা (বান্দার জন্য) ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এ সালাতের জন্য ভালোভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে, সঠিক সময়ে আদায় করবে এবং এর রুকূ’ ও খুশুকে পরিপূর্ণরূপে করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা রয়েছে যে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তা না করবে, তার জন্য আল্লাহর ওয়া’দা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন আর ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
মালিক এবং নাসায়ী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللَّهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لوقتهن وَأتم ركوعهن خشوعهن كَانَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَرَوَى مَالك وَالنَّسَائِيّ نَحوه
ব্যাখ্যা: এখানে সালাতকে জান্নাতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তা হতে হবে নির্দিষ্ট সময়ে এবং তা উত্তমভাবে আদায়ের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। সুফ্ইয়ান সাওরী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাতে একাগ্রতা পোষণ করলো না, তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল হয়ে গেল।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭১-[৮] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ওপর ফরয করা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর, তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করা মাসটির সিয়াম (রোযা) পালন কর, আদায় কর তোমাদের ধন-সম্পদের যাকাত এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের আনুগত্য কর। তাহলে তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (আহমাদ ও তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا ذَا أَمْرِكُمْ تدْخلُوا جنَّة ربكُم» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জের/হজের) খুৎবায় পেশ করেছিলেন। এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ হলো তোমরা তোমাদের পূর্ণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করো।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭২-[৯] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) তার পিতার মাধ্যমে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমার সন্তানদের বয়স সাত বছরে পৌঁছবে তখন তাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য নির্দেশ দিবে। আর (সালাত আদায় করার জন্য) তাদের শাস্তি দিবে যখন তারা দশ বছরে পৌঁছবে এবং তাদের ঘুমানোর স্থান পৃথক করে দিবে। (আবূ দাঊদ)[1]
শারহুস্ সুন্নাহ-তে এভাবে রয়েছে।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُرُوا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرٍ سِنِين وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَكَذَا رَوَاهُ فِي شرح السّنة عَنهُ
ব্যাখ্যা: যেহেতু সাত বছর বয়সেই বাচ্চাদের ভালো-মন্দের পার্থক্যের জ্ঞান বিকশিত হয় সেহেতু এ বয়সেই ইসলামের বিধানাবলী প্রতিপালনের নিমিত্তে অভিভাবককে তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব সচেতন করা হয়েছে। তবে এখানে প্রহার করা দ্বারা হালকা প্রহার বুঝানো হয়েছে। বেদম প্রহার নয়। এর দ্বারা শুধুমাত্র ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষা দেয়াই উদ্দেশ্য। সাত বছর বয়সে নির্দেশ প্রদান করতে হবে আর ১০ বছর বয়সে প্রয়োজনে প্রহার করতে হবে। সেই সাথে বিছানাও পৃথক করে দিতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৩-[১০] কিন্তু মাসাবীহ-তে সাবরাহ্ ইবনু মা’বাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে।
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَفِي المصابيح عَن سُبْرَة بن معبد
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৪-[১১] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও তাদের (মুনাফিক্বদের) মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা হলো সালাত। অতএব যে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করবে, সে (প্রকাশ্যে) কুফরী করলো (অর্থাৎ- কাফির হয়ে যাবে)। (তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِيْ
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে সালাতকে মুসলিম ও কাফিরের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসলামে একমাত্র সালাতকেই সুস্পষ্ট পার্থক্য নিরূপণকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল-এর মতে, উপরোক্ত হাদীসের আলোকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বর্জনকারী কাফির। তবে সর্বসম্মতমতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বর্জনকারী কাফির হলেও মুসলিম মিল্লাতের বাইরে নয়। আল্লাহই প্রকৃত সত্য অবগত।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৫-[১২] ’আবদুল্লাহ (রাঃ) বিন মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি মদীনার উপকণ্ঠে এক মহিলার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর সব রসাস্বাদন করেছি। আমি আপনার দরবারে উপস্থিত, তাই আমার প্রতি এ অপরাধের কারণে যা শাস্তি বিধান করার তা আপনি করুন। ’উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার অপরাধ ঢেকে রেখেছিলেন। তুমি নিজেও তা ঢেকে রাখতে (আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে, তবে তা উত্তম হতো)। বর্ণনাকারী [’আবদুল্লাহ (রাঃ)] বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথার কোন উত্তর দিলেন না। তাই লোকটি উঠে চলে যেতে লাগলো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিছনে লোক পাঠিয়ে তাকে ডেকে আনলেন এবং তার সামনে এ আয়াত পাঠ করলেন- (অর্থ) ’’সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কায়িম কর দিনের দু’ অংশে, রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক কাজ বদ কাজকে দূর করে দেয়, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এটা একটা উপদেশ’’- (সূরাহ্ হূদ ১১: ১১৪)। এ সময় উপস্থিত এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর নবী! এ হুকুম কি বিশেষভাবে তার জন্য। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, না, বরং সকল মানুষের জন্যই। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي عَالَجْتُ امْرَأَةً فِي أَقْصَى الْمَدِينَةِ وَإِنِّي أَصَبْتُ مِنْهَا مَا دُونَ أَنْ أَمَسَّهَا فَأَنَا هَذَا فَاقْضِ فِيَّ مَا شِئْتَ. فَقَالَ عُمَرَ لَقَدْ سَتَرَكَ اللَّهُ لَو سترت نَفْسِكَ. قَالَ وَلَمْ يَرُدَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ شَيْئًا فَقَامَ الرَّجُلُ فَانْطَلَقَ فَأَتْبَعَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا فَدَعَاهُ وتلا عَلَيْهِ هَذِه الْآيَة (أقِم الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَات يذْهبن السَّيِّئَات ذَلِك ذكرى لِلذَّاكِرِينَ)
فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ يَا نَبِيَّ اللَّهِ هَذَا لَهُ خَاصَّة قَالَ: «بل للنَّاس كَافَّة» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, একজন সাহাবীর অন্তরে আল্লাহর ভয় ও পরকালীন শাস্তির ভয়ের পরিমাণ কত বেশী ছিল যে, সামান্য একটু পাপের কারণে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন এবং তৎক্ষণাৎ পবিত্র হওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সুতরাং প্রতিটি মু’মিনের অন্তরে আল্লাহর ‘আযাবের ভয় এ রকমই থাকতে হবে। সামান্যতম পাপ হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তাওবাহ্ করে নিতে হবে। হাদীসের মধ্যে উল্লিখিত আয়াত হতে এ কথা বুঝে আসে যে, আল্লাহ তা‘আলার দয়ার সাগর শুধুমাত্র ঐ সমস্ত বান্দাগণের জন্য যারা ঈমান আনার পর নেক কাজসমূহ সম্পাদন করেন।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৬-[১৩] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক শীতের সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি গাছের দু’টি ডাল ধরে নাড়া দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাতে গাছের পাতা ঝরতে লাগলো। আবূ যার (রাঃ) বলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যার! উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের জন্য খালিস মনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে, তার জীবন থেকে তার গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। (আহমাদ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَرَجَ زَمَنَ الشِّتَاءِ وَالْوَرَقُ يَتَهَافَتُ فَأَخَذَ بِغُصْنَيْنِ مِنْ شَجَرَةٍ قَالَ فَجَعَلَ ذَلِكَ الْوَرَقُ يَتَهَافَتُ قَالَ فَقَالَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ» قُلْتُ لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «إِنَّ العَبْد الْمُسلم ليصل الصَّلَاة يُرِيد بهَا وَجه الله فتهافت عَنهُ ذنُوبه كَمَا يتهافت هَذَا الْوَرَقُ عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে শুধুমাত্র ঐ সালাতের ফাযীলাত বর্ণনা করা হয়েছে যা কোন ইহকালীন স্বার্থের জন্য নয়, বরং এক আল্লাহকে ভয় করে শুধু তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য আদায় করা হয়েছে। তা না হলে ফাযীলাত তো নেই, বরং কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৭-[১৪] যায়দ বিন খালিদ আল জুহানী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছে, আর এতে ভুল করেনি, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ (সগীরাহ্) ক্ষমা করে দিবেন। (আহমাদ ও বায়হাক্বী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن زيد بن خَالِد الْجُهَنِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى سَجْدَتَيْنِ لَا يَسْهُو فِيهِمَا غَفَرَ اللَّهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
ব্যাখ্যা: হাদীসের মধ্যে ঐ সালাতের ফাযীলাত বর্ণনা করা হয়েছে, যে সালাতের মধ্যে মুসল্লী স্বীয় মন ও মস্তিষ্ককে ইহকালীন যাবতীয় খেয়াল ও চিন্তা হতে মুক্ত করে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মহত্বকে ধারণ করে আখিরাতের কথা স্মরণপূর্বক পরিপূর্ণ একাগ্রতার সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এরূপ সালাতের প্রতিদান হবে বান্দার ধারণাতীত।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৮-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বললেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযাত করবে, তা কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি সালাতের হিফাযাত করবে না, তার জন্য এটা জ্যোতি, দলীল ও মুক্তির কারণ হবে না। কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন সে ক্বারূন, ফির্’আওন, হামান ও উবাই বিন খালাফ-এর সাথে থাকবে। (আহমাদ, দারিমী ও বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ: «مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمن لم يحافظ عَلَيْهَا لم يكن لَهُ نور وَلَا برهَان وَلَا نجاة وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যা: হাদীসের মধ্যে এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন জাহান্নাম হতে মুক্তি ও জান্নাত লাভ পরিপূর্ণরূপে নির্ভর করছে সালাতের উপর। শুধু তাই নয় বরং সালাতের ব্যাপারে উদাসীন ব্যক্তি হাদীসের মধ্যে উল্লিখিত চারজন গুরুতর অপরাধীর সাথে অবস্থান করবে।
এখানে কিছু মনীষী একটি সূক্ষ্ম বিষয় বুঝিয়েছেন যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগকারী ব্যক্তি কাফিরে পরিণত হয়ে যায় এবং হাদীসের মধ্যে বর্ণিত চারজন মহা অপরাধীর সাথে চির জাহান্নামী হবে। কারণ মুসলিম হয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করা আল্লাহর দৃষ্টিতে একটি বড় মাপের প্রতারণা।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৭৯-[১৬] ’আবদুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ছাড়া অন্য কোন ’আমল পরিত্যাগ করাকে কুফরী বলে মনে করতেন না। (তিরমিযী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن عبد الله بن شَقِيق قَالَ: كَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَركه كفر غير الصَّلَاة. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে প্রকাশ্য দলীল রয়েছে যে, সাহাবায়ি কিরাম সকলেই এক বাক্যে ফাতাওয়া দিচ্ছেন যে, অলসতাবশত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করাও কুফরী। তাছাড়া ইমাম ইবনু হাযম বলছেন যে, অসংখ্য সাহাবায়ি কিরামের পক্ষ হতে ফাতাওয়া পাওয়া গেছে যে, অলসতাবশত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগকারী ব্যক্তি কাফির মুরতাদ।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৮০-[১৭] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেনঃ (১) তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে খণ্ডবিখন্ড করা হয় বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়; (২) ইচ্ছা করে কোন ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে না, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করবে তার ওপর থেকে ইসলাম প্রদত্ত নিরাপত্তা উঠে যাবে; (৩) মদ পান করবে না, কারণ মদ হচ্ছে সকল মন্দের চাবিকাঠি। (ইবনু মাজাহ্)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن أبي الدَّرْدَاء قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي أَنْ لَا تُشْرِكَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَإِنْ قُطِّعْتَ وَحُرِّقْتَ وَلَا تَتْرُكْ صَلَاةً مَكْتُوبَة مُتَعَمدا فَمن تَركهَا مُتَعَمدا فقد بَرِئت مِنْهُ الذِّمَّةُ وَلَا تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كل شَرّ. رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: এ হাদীস মানবজাতিকে এ শিক্ষা প্রদান করে যে, শির্ক যেহেতু মানব বিবেকের বিপরীত কাজ এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ত্যাগ করা যাবতীয় নেক কাজ ত্যাগ করার শামিল এবং মদ পান যাবতীয় অন্যায়ের মূল। সেজন্য এ তিনটি কাজকে একত্রে বর্ণনা করে জানানো হলো যে, শির্ক, সালাত ত্যাগ ও মদ পান করলে মানুষ ইহ-পরকালের যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকবে।
প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশে সাময়িকের জন্য শির্কী বাক্য উচ্চারণ করা যেতে পারে কিন্তু তা না করে শহীদ হতে পারলে আল্লাহর নিকট একটি বিশেষ মর্যাদা পাওয়া যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (সালাতের) সময়সমূহ
এ অধ্যায়ে সালাতের সময় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে সময় বলতে যে সময়কে আল্লাহ তা’আলা সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেই সময়কেই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু’মিনদের ওপর ফরয।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১০৩)
সালাতের সময় সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সরাসরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সালাতের সময় সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
৫৮১-[১] ’আবদুল্লাহ বিন ’আমর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূর্য ঢলে পড়ার সাথে যুহরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, তখন ’আসরের সালাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়। ’আসরের সালাতের ওয়াক্ত যুহরের সালাতের পর থেকে যে পর্যন্ত সূর্য হলদে রং ধারণ না করে এবং সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিমাকাশের লালিমা মিশে যাবার আগ পর্যন্ত মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত থাকে। আর ’ইশার সালাতের ওয়াক্ত মাগরিবের সালাতের পর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত। ফজরের (ফজরের) সালাতের ওয়াক্ত ফাজর (ফজর) অর্থাৎ- সুবহে সাদিকের উদিত হবার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। অতঃপর সূর্যোদয় হতে শুরু করলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হতে বিরত থাকবে। কেননা সূর্যোদয় হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মধ্য দিয়ে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْـمَوَاقِيْتِ
عَن عبد اللَّهِ ابْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَقْتُ الظُّهْرِ إِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَ ظِلُّ الرَّجُلِ كَطُولِهِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَغِبِ الشَّفَقُ وَوَقْتُ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ الْأَوْسَطِ وَوَقْتُ صَلَاةِ الصُّبْحِ مِنْ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ فَإِذَا طَلَعَتِ الشَّمْسُ فَأَمْسِكْ عَنِ الصَّلَاة فَإِنَّهَا تطلع بَين قَرْني شَيْطَان» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়গুলো পরিষ্কার ভাষা ও শব্দ দিয়ে উম্মাতকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এভাবে যে, ঠিক দুপুর বেলায় যখন সূর্য নিরক্ষরেখার উপর পৌঁছে যাওয়ার পর পশ্চিম দিকে গড়তে আরম্ভ করে ঠিক তখন যুহরের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়ে যায় এবং প্রতিটি বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত যুহরের সময় থাকে। ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার পরপর যুহরের সময় সমাপ্ত হয়ে যায় এবং ‘আসরের সময় আরম্ভ হয়ে যায়। দু’ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) যেমন একই সময়ের মধ্যে একত্রিত হয় না তেমনি দু’ সালাতের মাঝখানে কিছু সময় ফাঁকাও থাকে না যে, এটা যুহরেরও নয় আবার ‘আসরের নয়। বরং এক সালাতের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় সালাতের সময় আরম্ভ হয়ে যায়।
‘আসরের সময় আরম্ভ প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার পর পরই এবং উজ্জ্বল সাদা চকচকে সূর্য লালে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত চালু থাকে। কিন্তু এটা হলো ‘আসরের উত্তম ও আল্লাহর পছন্দনীয় সময়।
কারণ অন্য হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, সূর্য ডুবতে আরম্ভ হওয়ার পূর্বে যদি কোন ব্যক্তি ‘আসরের এক রাক্‘আতও পড়তে পারে তাহলে তার ‘আসর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ‘আসরের সময়েই আদায় হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। এ হাদীস সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য কিতাবে রয়েছে।
ইমাম নাবাবী বলেন, ‘আসরের সময় সূর্য ডুবতে আরম্ভ হওয়া পর্যন্ত চালু থাকে এ কথায় সমস্ত মাযহাবের সকল ইমাম ও মুহাদ্দিস একমত। আর মাগরিবের সময় আরম্ভ হয় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর পরই এবং তা চালু থাকে পশ্চিম গগণে সূর্যের লাল আভা বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত।
তারপর ‘ইশার সময় লাল আভা গায়েব হওয়ার পর থেকে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত। অবশ্য এটা পছন্দনীয় ও উত্তম সময়। কারণ অন্য হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ফজরের (ফজরের) আযানের আগ পর্যন্ত ‘ইশা পড়ে নিতে পারলে তা সঠিক সময়ে আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে।
তারপর ফাজর (ফজর)-এর সময় আরম্ভ হয় সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার সাথে সাথে এবং সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত যদি সূর্য উদিত হয়ে যায় তাহলে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে। কেননা সূর্য উদিত হওয়ার সময় যে কোন সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সে সময় ইবলীস সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড়ায় আর সূর্যের পূজারীগণ সূর্যের পূজা আরম্ভ করলে ইবলীস এ কথা ভেবে নেয় যে, এরা আমার পূজা করছে। এতে সে মনে মনে আনন্দিত হয়। মু’মিন ব্যক্তিকে মুশরিকদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করেছেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - (সালাতের) সময়সমূহ
৫৮২-[২] বুরায়দাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বললেন, আমাদের সাথে এ দু’ দিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় কর। প্রথমদিন সূর্য ঢলে পড়লে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে হুকুম দিলেন আযান দিতে। বিলাল (রাঃ)আযান দিলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশ দিলে বিলাল (রাঃ)যুহরের সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিলেন। অতঃপর (’আসরের সময়) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ’আসরের সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিলেন। তখনও সূর্য বেশ উঁচুতে ও পরিষ্কার সাদা। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি মাগরিবের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিলেন। তখন সূর্য দেখা যাচ্ছে না। এরপর বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ’ইশার সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিলেন, যখন মাত্র লালিমা অদৃশ্য হলো। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি ফজরের (ফজরের) সালাতের ইক্বামাত(ইকামত/একামত) দিলেন। তখন ঊষা (সুবহে সাদিক) দেখা দিয়েছে।
যখন দ্বিতীয় দিন এলো তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন, যুহরের সালাত ঠাণ্ডা পড়া পর্যন্ত দেরী করতে। বিলাল দেরী করলেন। রোদের তাপ ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত দেরী করলেন। তারপর ’আসরের সালাত আদায় করলেন। সূর্য তখন উঁচুতে অবস্থিত, কিন্তু সালাতে পূর্বের দিনের চেয়ে বেশী দেরী করলেন। মাগরিবের সালাত আদায় করলেন লালিমা অদৃশ্য হবার কিছুক্ষণ আগে। আর এ দিন ’ইশার সালাত আদায় করলেন রাতের এক তৃতীয়াংশ শেষ হবার পর। অতঃপর ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করলেন বেশ পরিষ্কার হওয়ার পর। সবশেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারী ব্যক্তি কোথায়? সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! এই যে আমি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের জন্য সালাত আদায় করার ওয়াক্ত হলো, তোমরা যা (দু’ সীমা) দেখলে তার মধ্যস্থলে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْـمَوَاقِيْتِ
وَعَن بُرَيْدَة قَالَ: أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ فَقَالَ لَهُ: «صَلِّ مَعَنَا هَذَيْنِ» يَعْنِي الْيَوْمَيْنِ فَلَمَّا زَالَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِلَالًا فَأَذَّنَ ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الظُّهْرَ ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْمَغْرِبَ حِينَ غَابَتِ الشَّمْسُ ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْفَجْرَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ فَلَمَّا أَنْ كَانَ الْيَوْمُ الثَّانِي أَمَرَهُ فَأَبْرَدَ بِالظُّهْرِ فَأَبْرَدَ بِهَا فَأَنْعَمَ أَنْ يُبْرِدَ بِهَا وَصَلَّى الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ أَخَّرَهَا فَوْقَ الَّذِي كَانَ وَصَلَّى الْمَغْرِبَ قَبْلَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ وَصَلَّى الْعِشَاءَ بَعْدَمَا ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ وَصَلَّى الْفَجْرَ فَأَسْفَرَ بِهَا ثُمَّ قَالَ أَيْنَ السَّائِلُ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ فَقَالَ الرَّجُلُ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «وَقْتُ صَلَاتكُمْ بَين مَا رَأَيْتُمْ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এটা সালাতের সময় সংক্রান্ত ব্যাপারে দ্বিতীয় হাদীস একটি হাদীস অপর হাদীসের ব্যাখ্যা ও পরিপূরক। এ হাদীসে বলা হয়েছে একজন সাহাবী দূর হতে আগমন করে সালাতের সময় সম্পর্কে রসূলের নিকট আবেদন করলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দু’দিন আমাদের সাথে জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে সময়গুলো ঠিক মতো বুঝে নাও। মৌখিক শুনে ঠিক মতো বুঝে নিতে নাও পারো।
যা হোক প্রথম দিন সূর্য নিরক্ষরেখা থেকে পশ্চিম দিকে গড়ানোর সাথে সাথে বিলাল (রাঃ)-কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন যুহরের জন্য আযান দিতে। আযান হলো, সুন্নাতের জন্য কিছুক্ষণ বিরতি দেয়ার পর ইক্বামাতের জন্য আদেশ দিলেন। যুহর আদায় করলেন। ‘আসরের সময় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার পর পরই আযানের জন্য আদেশ হলো। আযান হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা তারপর ‘আসর আদায় করলেন। ‘আসরের সালাতের পর সূর্য ছিল উজ্জ্বল সাদা চকচকে তাতে লালিমার লেশ মাত্র দৃষ্টিগোচর হয়নি।
তারপর সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পরই আযান, অতঃপর ইক্বামাত ও মাগরিব আদায় করলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন সূর্যের লাল আভা মুছে গেল তখন ‘ইশার জন্য আযান হলো, কিছুক্ষণ বিরতি দেয়ার পর ‘ইশা আদায় করলেন। নিদ্রা যাওয়ার পর সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে ফাজরের (ফজরের) আযান দেয়া হলো। কিছুক্ষণ বিরতি দেয়ার পর গালাসের মধ্যে অর্থাৎ- ভোরের অন্ধকারের মধ্যে ফাজর (ফজর) আদায় করলেন।
দ্বিতীয় দিনের সকাল হলো তারপর দুপুর হলো তো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে আদেশ দিলেন, আজ বিলম্ব করো। দুপুরের গরম কম হোক। যুহরে শেষ সময়টি কাছাকাছি হোক। তাই হলো এ দিন যুহরকে তার শেষ সময়ে আদায় করলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সূর্য সাদা উজ্জ্বল থাকা অবস্থায় যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ হলো তখন আযান কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পরে ইক্বামাত ও ‘আসর আদায় করলেন।
তারপর অপেক্ষা করলেন সূর্য অস্তমিত হলো কিন্তু এ দিন সাথে সাথে নয় বিলম্ব করতে বললেন। লাল আভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে মাগরিবের আযান ও ইক্বামাত তারপর সালাত এমনভাবে আদায় করলেন যে, মাগরিবের সালাত শেষের পর পরই সূর্যের লাল আভা গায়িব হয়ে গেল। অর্থাৎ- দ্বিতীয় দিন মাগরিব তার শেষ সময়ে পড়া হলো। মাগরিবের পর পরই আজ ‘ইশার সময় আরম্ভ হয়ে গেল কিন্তু আজ দ্বিতীয় দিন ‘ইশা বিলম্ব করলেন এবং রাত্রের এক-তৃতীয়াংশ পার করার পর ‘ইশার সালাত আদায় করলেন।
নিদ্রা যাওয়ার পর সুবহে সাদিক হলো, কিন্তু আজ গালাস তথা ভোরের অন্ধকারে নয় কিছুক্ষণ বিলম্ব করে যখন একটু আলো হলো তখন ফাজর (ফজর) আদায় করলেন।
অতঃপর উক্ত সাহাবী বললেন, প্রথম দিনের সালাতগুলো আরম্ভ এবং দ্বিতীয় দিনে সালাতগুলো শেষ এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সময়টি তোমাদের সালাতের সময়। কিন্তু এখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, এটা হলো সালাতের উত্তম ও আল্লাহর নিকট পছন্দীয় সময়।
কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য বাণীর ও আ‘মালের মাধ্যমে জানা যায় যে, যুহর আরো একটু বিলম্ব করা যায় এবং ‘আসর সূর্য ডোবা পর্যন্ত এবং ‘ইশা সকল ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের মতে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আদায় করতে পারলে ‘ইশা তার সঠিক সময়ে পড়া হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - (সালাতের) সময়সমূহ
৫৮৩-[৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরীল আমীন খানায়ে ক্বা’বার কাছে দু’বার আমার সালাতে ইমামাত করেছেন। (প্রথমবার) তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, সূর্য তখন ঢলে পড়েছিল। আর ছায়া ছিল জুতার দোয়ালির (প্রস্থের) পরিমাণ। ’আসরের সালাত আদায় করালেন যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার এক গুণ হলো। মাগরিবের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারী (রোযাদার) ইফত্বার করে। ’ইশার সালাত আদায় করালেন যখন ’শাফাক্ব অস্তমিত হলো। ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করালেন যখন সিয়াম পালনকারীর জন্য পানাহার হারাম হয়।
দ্বিতীয় দিন যখন এলো তিনি আমাকে যুহরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার এক গুণ। ’আসরের সালাত আদায় করালেন, যখন কোন জিনিসের ছায়া তার দ্বিগুণ। মাগরিবের সালাত আদায় করালেন, সায়িমগণ (রোযাদাররা) যখন ইফত্বার করে। ’ইশার সালাত আদায় করালেন, তখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি ফাজর (ফজর) আদায় করালেন তখন বেশ ফর্সা। এরপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! এটাই আপনার পূর্বেকার নবীগণের সালাতের ওয়াক্ত। এ দুই সময়ের মধ্যে সালাতের ওয়াক্ত। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّنِي جِبْرِيلُ عِنْدَ الْبَيْتِ مَرَّتَيْنِ فَصَلَّى بِيَ الظُّهْرَ حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ وَكَانَتْ قَدْرَ الشِّرَاكِ وَصَلَّى بِيَ الْعَصْرَ حِين كَانَ ظلّ كل شَيْء مثله وَصلى بِي يَعْنِي الْمغرب حِين أفطر الصَّائِم وَصلى بِي الْعشَاء حِينَ غَابَ الشَّفَقُ وَصَلَّى بِيَ الْفَجْرَ حِينَ حَرُمَ الطَّعَامُ وَالشَّرَابُ عَلَى الصَّائِمِ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ صَلَّى بِيَ الظُّهْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَهُ وَصَلَّى بِيَ الْعَصْرَ حِينَ كَانَ ظِلُّهُ مِثْلَيْهِ وَصَلَّى بِيَ الْمَغْرِبَ حِينَ أَفْطَرَ الصَّائِمُ وَصَلَّى بِيَ الْعِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ وَصَلَّى بِيَ الْفَجْرَ فَأَسَفَرَ ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَيَّ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ هَذَا وَقْتُ الْأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِكَ وَالْوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে, মি‘রাজ হলো রাত্রে, ফরয সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নিয়ে আসলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায়। দিন আরম্ভ হলো। ঠিক দুপুর বেলায় আল্লাহর নির্দেশক্রমে জিবরীল (আঃ) পৌঁছলেন রসূলের নিকট। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পদ্ধতি ও সালাতের সময়গুলো বুঝিয়ে দেয়ার উদ্দেশে।
সুতরাং কা‘বাহ্ গৃহের নিকট জিবরীল (আঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিয়ে পরপর দু’দিন পাঁচ পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করলেন। উদ্দেশ্য ছিল সালাতের সময় কখন আরম্ভ হয় ও কখন শেষ হয় তা হাতে কলমে বুঝানো।
সুতরাং প্রথম দিন যখন সূর্য নিরক্ষরেখা হতে খুব সামান্য পরিমাণ পশ্চিম দিকে গড়ল এবং কোন জিনিসের ছায়া তার পূর্ব দিকে জুতার ফিতা অর্থাৎ- খুব সামান্য পরিমাণ দেখা দিলো তখন যুহর পড়লেন। উল্লেখ্য যে, সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ার পর কোন বস্ত্তর ছায়া যতটুকু পরিমাণে দৃষ্টিগোচর হয়েছিল তা ছিল ঐ ঋতুতে এবং মক্কা নগরীতে খুব সামান্য পরিমাণে। মনে রাখার দরকার যে, এ ছায়াটি ঋতুভেদে এবং দেশভেদে কম বেশী হয়। অর্থাৎ- যে দেশগুলো নিরক্ষরেখার ঠিক সোজাসুজিতে আছে সে দেশগুলোতে এ ছায়াটি খুব কম পরিমাণে দেখা দেয় এবং যে দেশগুলো নিরক্ষরেখা হতে উত্তর দিকে দূরে আছে সে দেশগুলোতে এ ছায়াটি বেশী পরিমাণে দেখা দিবে।
অতঃপর যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলো তখন ‘আসর আদায় করলেন।
উল্লেখ্য যে, কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলেই ‘আসরের সময় আরম্ভ হয়ে যায় এটাই হচ্ছে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল এবং ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র ইমাম আবূ ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম হাসান ও ইমাম যুফার-এর ফাতাওয়া। তাছাড়া হানাফী মাযহাবের গণ্যমান্য ‘আলিম ইমাম তাহাবীর ফাতাওয়াও এটাই। তাছাড়া ইমাম আবূ হানীফার ছাত্র ইমাম হাসান স্বীয় উস্তায (উস্তাদ) ইমাম আবূ হানীফার কাছ হতে একটি উক্তি বা ফাতাওয়া বর্ণনা করেছেন যে, কোন জিনিসের ছায়া তার সমপরিমাণ হলেই ‘আসরের সময় শুরু হয়ে যায়। ইমাম আবূ হানীফার এ ফাতাওয়া হানাফী মাযহাবের সাধারণ কিতাবের মধ্যে দেখা যায়। তাছাড়া হুবহু এ ফাতাওয়াটি ইমাম মুহাম্মাদ ইমাম আবূ হানীফার পক্ষ হতে বর্ণনা করেছেন ‘‘আল মাবসুত’’ নামক কিতাবের মধ্যে।
কিন্তু জনসাধারণের মাঝে এ ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফার যে ফাতাওয়া প্রসিদ্ধ আছে তা হচ্ছে এই যে, কোন জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর ‘আসরের সময় শুরু হয়। হানাফী মাযহাবের একজন বড় ‘আলিম মাওলানা ‘আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌবী সাহেব স্বীয় কিতাব ‘‘আত্ তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ’’-এর মধ্যে বলেছেন যে, ইনসাফের কথা হচ্ছে এই যে, ছায়া সমপরিমাণের হাদীসগুলো স্বীয় অর্থ প্রকাশের দিক দিয়ে পরিষ্কার ও সানাদগত দিক দিয়ে সহীহ এবং ছায়া দ্বিগুণের হাদীসগুলোতে এ কথা পরিষ্কার করে বলা হয়নি যে, ছায়া দ্বিগুণ না হলে ‘আসরের সময় আরম্ভ হয় না। যারা ছায়া দ্বিগুণের কথা বলেছেন তারা হাদীসের মধ্যে ইজতিহাদ করে মাসআলাহ্ বের করেছেন। এ ইজতিহাদী মাসআলাহ্ ঐ পরিষ্কার হাদীসের সমক্ষক হতে পারে না যে হাদীসে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, ছায়া সমপরিমাণ হলে ‘আসরের সময় আরম্ভ হয়ে যায়।
এতক্ষণ পর্যন্ত আলোচনা হলো প্রথম দিনের ‘আসরের সময়ের কথা। এখন আরম্ভ হচ্ছে প্রথম দিনের মাগরিবের সময়। তো প্রথম দিন সূর্য পরিপূর্ণরূপে অস্তমিত হওয়ার পর পরই মাগরিব আদায় করলেন জিবরীল (আঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাথে নিয়ে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর পশ্চিম গগণে সূর্যের লাল আভা গায়িব হওয়ার পর পরই আদায় করলেন ‘ইশা। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর পরই আদায় করলেন ফাজর (ফজর)। এ হলো ২৪ ঘণ্টার পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়ের বিবরণ।
তারপর দ্বিতীয় দিন দুপুর হলো সূর্য পশ্চিম দিকে গড়ে গেল কিন্তু তৎক্ষণাৎ যুহর আরম্ভ করলেন না। কিছুক্ষণ বিলম্ব করার পর যখন কোন বস্ত্তর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়ার কাছাকাছি হলো তখন যুহর শুরু করলেন এবং ছায়া সমপরিমাণ হওয়ার সাথে সাথে সালাম ফিরিয়ে যুহর শেষ করলেন। এতে করে যুহরের জামা‘আত ও যুহরের সময় দু’টি একই সাথে সমাপ্ত হলো।
উল্লেখ্য যে, পরপর দু’দিন সালাত আদায় করে দেখানোর উদ্দেশ্যই ছিল এই যে, একটি সালাতের সময় আরম্ভ হচ্ছে কখন আর তা বুঝালেন প্রথম দিনে এবং ঐ সালাতটির সময় শেষ হচ্ছে কখন আর সেটা বুঝালেন দ্বিতীয় দিনে। তাছাড়া এর সাথে এ কথাও বুঝিয়ে দিলেন যে, যুহরের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় ‘আসরের সময় এবং এ দু’ সালাতের মাঝে সময়ের কোন গ্যাপও নেই এবং এ দু’ সালাত একই সময়ের মধ্যে একত্রিতও হয় না।
এ হলো দ্বিতীয় দিনের যুহরের সময়ের আলোচনা। দ্বিতীয় দিন যুহর সালাতের সালাম ফিরানোর পর পরই শুরু হয়ে গেল ‘আসরের সময়। কিন্তু সময় শুরু হওয়ার সাথে সাথে ‘আসরের সালাত আরম্ভ করলেন না, কিছুক্ষণ বিলম্ব করলেন। যখন কোন জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হলো তখন ‘আসর আদায় করলেন।
আর মাগরিব আদায় করলেন সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই এবং ‘ইশা আদায় করলেন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পর। ফাজর (ফজর) আদায় করলেন বিলম্ব করে, আলো হওয়ার পর।
এভাবে দু’দিন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার পর জীবরীল (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, এ হলো পূর্বেকার নাবীগণের সালাতের সময়। অর্থাৎ- পূর্বেকার নাবীগণের সালাতের সময়ের মধ্যে এ রকমই প্রশস্ততা ছিল যেমন আপনার সালাতের সময়সমূহের মধ্যে প্রশস্ততা রয়েছে।