তারাবীহর সালাতের রাকাত সংখ্যার সমাধান

ছয়- আরও যে সব বিধান কতক মানুষের নিকট অস্পষ্ট তা হলো, কতক মানুষ মনে করে তারাবীহর সালাত বিশ রাকাতের কম পড়া যাবে না, আবার কতক মনে করে এগার বা তের রাকাতের বেশি পড়া যাবে না। এগুলো সবই অমূলক এবং কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী ধারণা।

অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাতের সালাতে বেশি বা কম করার অবকাশ ইসলামে রয়েছে। রাতের সালাতের এমন কোন সংখ্যা নির্ধারিত করা নেই যার বিরোধিতা করা যাবে না; বরং বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত রমযান ও রমযানের বাহিরে কখনো এগারো রাকাত কখনো তের রাকাত আবার কখনো তার চেয়ে কম বা বেশি আদায় করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,

«مَثْنَى مَثْنَى، فَإِذَا خَشِيَ الصُّبْحَ صَلَّى وَاحِدَةً، فَأَوْتَرَتْ لَهُ مَا صَلَّى»

“দুই রাকাত দুই রাকাত। আর যখন সকাল হওয়ার আশঙ্কা কর, এক রাকাত পড়ে নাও। তাহলে তুমি যা পড়লে তাকে বিজোড় বানিয়ে দিলে”।[1]

রমযান ও রমযানের বাহিরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতের রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করেন নি। আর এ কারণেই সাহাবীগণ উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে কখনো তেইশ রাকাত আবার কখনো এগারো রাকাত আদায় করেছেন। সুতরাং উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতের যুগে তেইশ রাকাত এগারো রাকাত উভয়টিই সাহাবীগণের আমল থেকে প্রমাণিত।

পূর্বসূরিদের কেউ কেউ রাতের সালাত ছত্রিশ রাকাত এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। আবার কেউ কেউ একচল্লিশ রাকাত পড়তেন বলেও প্রমাণিত। সাহাবীগণের এ আমলগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ ও অন্যান্য আহলে ইলমগণ। তিনি বলেন, রাতের সালাতের ক্ষেত্রে রাকাত বিষয়ে কমোবেশ করার অবকাশ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তবে উত্তম হলো, যে ব্যক্তি ক্বিরাত, রুকু ও সাজদাহ দীর্ঘ করবে সে রাকাত সংখ্যা কম করবে আর যে ক্বিরাত, রুকু, সাজদাহ ও রুকু সংক্ষেপ করবে সে রাকাত সংখ্যা বাড়াবে। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-এর কথার অর্থ এটিই।

আর যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতে গভীরভাবে চিন্তা করবে সে অবশ্যই জানতে পারবে, উত্তম হলো, রমযান ও রমযানের বাহিরে এগারো রাকাত বা তের রাকাত সালাত আদায় করা। কারণ, এগারো রাকাত আদায় করা অধিকাংশ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের সাথে মিলে। এ ছাড়াও এগারো রাকাত সালাত মুসল্লীদের প্রতি সহানুভূতি এবং সালাতে বিনয় ও ধীর-স্থিরতার অধিক সহায়ক হয়। আর যদি কোনো ব্যক্তি বেশি আদায় করে তাতে কোনো অসুবিধা বা ক্ষতি নেই। যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করেছি। আর যে ব্যক্তি রমযানে কিয়ামু-ললাইল ইমামের সাথে পালন করে, তার জন্য উত্তম হলো, ইমামের অনুকরণ করা এবং তার সাথে সালাত শেষ করা। ইমাম যত রাকাত পড়বে সেও তত রাকাত আদায় করবে। ইমামের আগে সে বাড়ি ফিরে যাবে না। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ الرجل مَنْ قَامَ مَعَ الْإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ، كَتَبَ اللَّهُ لَهُ قِيَامَ لَيْلَةٍ»

“যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ করে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত কিয়ামুল-লাইল করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য পুরো রাত কিয়ামুল-লাইল করার সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন”।[2]

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭২

[2] তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৮; নাসাঈ হাদীস নং ১৬০৫