যখন রমযান মাস আসতো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে রমযান মাসের সু-সংবাদ দিতেন এবং জানিয়ে দিতেন যে, এটি এমন একটি মাস যাতে রহমত ও জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিতাড়িত শয়তানকে শিকলবদ্ধ করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الجَنَّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَيُنَادِي مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ
“রমযান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও খারাপ জিন্নদের শিকল পরানো হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে এ মাসে জাহান্নামের দরজা খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, তার কোনো দরজা বন্ধ করা হয় না। একজন আহ্বানকারী এ বলে আহ্বান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী! কল্যাণের দিকে অগ্রসর হও। আর হে অনিষ্টতার পথিক! অনিষ্টতা থেকে বিরত থাক। আর আল্লাহর জন্য রয়েছে বহু সংখ্যক লোককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান এবং তা প্রতি রাতেই”।[1]
« أتاكم شهر رمضان شهر بركة فيه خير يغشيكم الله فينزل الرحمة ويحط فيه الخطايا، ويستجاب فيه الدعاء، ينظر الله إلى تنافسكم ويباهي بكم ملائكته فأدوا الله من أنفسكم خيرا، فإن الشقي من حرم فيه رحمة الله عز وجل».
“তোমাদের সামনে রমযান মাস উপস্থিত হয়েছে, বরকতের মাস। তাতে রয়েছে কল্যাণ যা দিয়ে আল্লাহ তোমাদের ঢেকে ফেলবেন। ফলে রহমত নাযিল হবে, আর তাতে গুনাহ দূরীভূত হবে, দো‘আ কবুল হবে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতিযোগিতার প্রতি লক্ষ্য করবেন এবং তিনি তার ফিরিশতাদের মাঝে তোমাদের নিয়ে গর্ব করেন। সুতরাং তোমরা তোমাদের নিজেদের থেকে আল্লাহর জন্য ভালো ও নেক আমলসমূহ তুলে ধরো। কারণ, হতভাগা সেই ব্যক্তি, যে এ মাসে মহান আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়”।[2]
«مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশায় রমযান মাসের সাওম পালন করবে তার অতীত জীবনের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর যে ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশায় কদরের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে, তার অতীতের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”।[3]
«مَا مِنْ حَسَنَةٍ عَمِلَهَا ابْنُ آدَمَ إِلَّا كُتِبَ لَهُ عَشْرُ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ، قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: إِلَّا الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي، الصِّيَامُ جُنَّةٌ. لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ. وَلَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ»
“আদম সন্তানের যে কোনো নেক আমল যা সে পালন করে থাকে তার বিনিময় হিসেবে তার জন্য দশ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লিপিবদ্ধ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তবে সাওম, তা কেবল আমার জন্যই পালন করা হয়, ফলে আমি নিজেই তার বিনিময় দিয়ে থাকি। কারণ, সাওম পালনকারী খানা-পিনা ও পানাহার কেবল আমার কারণেই ছেড়ে দেয়। সাওম মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। আর সাওম পালনকারীদের জন্য রয়েছে দু’টি আনন্দ। একটি ইফতারের সময় আর অপরটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। একজন সাওম পালনকারীর মুখের না খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহ তা‘আলার নিকট মিশকের সুগন্ধির থেকেও অধিক প্রিয়”।[4]
রমযানের সাওম পালন করা ও কিয়াম করার ফযীলত বিষয়ক হাদীস অসংখ্য। সুতরাং একজন মুমিনের জন্য উচিত হবে এ সুযোগটি যথাযথভাবে কাজে লাগানো। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের ওপর রমযান মাস পাওয়ার সুযোগ দিয়ে যে দয়া করেছেন তা নেক আমলের প্রতি অগ্রসর হওয়া ও মন্দ আমল থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে কাজে লাগানো। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর যা ফরয করেছেন তা আদায় করতে সচেষ্ট হওয়া এবং বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়া। কারণ, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হলো ইসলামের আসল খুঁটি এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সবচেয়ে বড় ফরয। প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর দায়িত্ব হলো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং অত্যন্ত মনোযোগ ও ধীরস্থীরভাবে সময়মত আদায় করা। পুরুষদের ক্ষেত্রে সালাতের গুরুত্বপূর্ণ ফরয হলো, সালাতসমূহকে আল্লাহ যে সব ঘরকে সমুন্নত রাখতে আদেশ করেছেন সে ঘরসমূহে জামা‘আতের সাথে আদায় করা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱرۡكَعُواْ مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ٤٣﴾ [البقرة: ٤٣]
“আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪৩]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [البقرة: ٢٣٨]
“তোমরা সালাতসমূহ ও মধ্যবর্তী সালাতের হিফাযত কর এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩৮]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢﴾ [المؤمنون : ١، ٢]
“অবশ্যই মুমিনগণ সফল হয়েছে, যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১, ২]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَلَىٰ صَلَوَٰتِهِمۡ يُحَافِظُونَ ٩ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡوَٰرِثُونَ ١٠ ٱلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلۡفِرۡدَوۡسَ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ١١﴾ [المؤمنون : ٩، ١١]
“আর যারা নিজদের সালাতসমূহ হিফাযত করে তারাই হবে ওয়ারিস, যারা ফিরদাউসের অধিকারী হবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৯, ১১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«العَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ»
“আমাদের মধ্যে আর তাদের (অমুসলিমদের) মধ্যে চুক্তি হলো সালাত। সুতরাং যে সালাত ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল”।[5]
সালাতের পর গুরুত্বপূর্ণ ফরয হলো, যাকাত আদায় করা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [البينة: ٥]
আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হলো সঠিক দীন। [সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ٥٦﴾ [النور : ٥٦]
“আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পার”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৫৬]
[2] কানযুল উম্মাল, হাদীস নং ২৩৬৯১
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬০
[4] নাসাঈ, হাদীস নং ২২১৫
[5] তিরমিযী, হাদীস নং ২৬২১; নাসাঈ হাদীস নং ৪৬৩