আল-ফিকহুল আকবর ইমাম আবূ হানীফা ও আল-ফিকহুল আকবার ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৯. ৩. ইমামুল হারামাইন (৪১৯-৪৭৮ হি)

পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধতম শাফিয়ী ফকীহ আবুল মাআলী আব্দুল মালিক ইবন আব্দুল্লাহ আল-জুআইনী (রাহ)। সে যুগের শ্রেষ্ঠ ফকীহ হিসেবে তাঁকে ‘‘ইমামুল হারামাইন’’ বা মক্কা-মদীনার ইমাম বলে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি ছিলেন ‘‘আশআরী’’ মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবুল হাসান আশআরী: আলী ইবন ইসমাঈল ইবন ইসহাক (২৬০-৩২৪ হি)-এর প্রসিদ্ধ ও বিশিষ্ট ছাত্র এবং ইমাম গাযালীর খাস উস্তাদ। তিনি তাঁর ‘‘আল-বুরহান’’ নামক উসূল ফিকহের গ্রন্থে ইমাম শাফিয়ীকে সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম বলে প্রমাণ করতে যেয়ে ইমাম মালিক ও ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুমাল্লাহ)-এর অনেক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। বিশেষত ইমাম আবূ হানীফার বিষয়ে তিনি বলেন:


وأما أبو حنيفة فما كان من المجتهدين أصلا لأنه لم يعرف العربية... ولم يعرف الأحاديث حتى رضي بقبول كل سقيم ومخالفة كل صحيح ولم يعرف الأصول حتى قدم الأقيسة على الأحاديث ولعدم فقه نفسه اضطرب مذهبه وتناقض وتهافت..وكان يقول لا يضر مع الإيمان معصية كما لا ينفع مع الكفر طاعة... فإن هذا مذهب المرجئة فكيف يظن وحاله هذا مجتهدا؟!


‘‘আর আবূ হানীফা তো মূলত মুজতাহিদই ছিলেন না। কারণ তিনি আরবী ভাষাই জানতেন না।... তিনি হাদীসও জানতেন না; এজন্য তিনি সকল বাতিল হাদীস গ্রহণ করেছেন এবং সকল সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করেছেন। তিনি উসূলুল ফিকহও জানতেন না; এজন্য তিনি কিয়াসকে হাদীসের উপর স্থান দিয়েছেন। তাঁর মন-মানসিকতায় ফিকহ ছিল না; যে কারণে তাঁর মাযহাবে বৈপরীত্য, স্ববিরোধিতা ও দুর্বলতা বিদ্যমান।... তিনি বলতেন: ঈমান ঠিক থাকলে পাপ করলে কোনো অসুবিধা নেই; যেমন কাফিরের নেক কর্ম তার কাজে লাগবে না।... এ হলো মুরজিয়া মত। আর যে ব্যক্তির অবস্থা এরূপ তিনি কিভাবে মুজতাহিদ হতে পারেন!’’[1]

মাযহাবী কোন্দল ও বিদ্বেষ সে যুগে কি নোংরা পর্যায়ে গিয়েছিল তা আমরা বুঝতে পারছি ইমামুল হারামাইনের এ বক্তব্য থেকে। ইমাম আবূ হানীফা নিজে, ইমাম তাহাবী এবং সকল হানাফী ফকীহ তাঁদের আকীদা বিষয়ক গ্রন্থে মুরজিয়াদের উপরোক্ত মতের বিরুদ্ধে অনেক কথা লিখেছেন; কিন্তু তা সত্ত্বেও ইমামুল হারামাইন এ কথাগুলি ইমাম আবূ হানীফার নামে বললেন! আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা ও রহমত করুন।

[1] ইমামুল হারামাইন, আল-বুরহান ২/৮৭৩-৮৭৪।