ত্বাওয়াফে এফাযাহ শেষে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মিনায় ফিরে এসে যোহর পড়েন। এদিন রাসূল (ছাঃ) কোথায় যোহর পড়েছিলেন, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। আয়েশা (রাঃ)-এর হাদীছ অনুযায়ী তিনি হারামে যোহর পড়েছিলেন। এতে সমস্যা এই যে, মক্কায় থাকাকালে রাসূল (ছাঃ) নিজের অবস্থানস্থল আবত্বাহ (الْأَبْطَح) ব্যতীত অন্য কোথাও মুসলমানদের নিয়ে জামা‘আত করেননি (যাদুল মা‘আদ ২/২৬০)। দ্বিতীয়তঃ আয়েশার হাদীছে এটি স্পষ্ট নয় যে, তিনি ঐদিন মক্কায় যোহর পড়েছিলেন। কেননা সেখানে বলা হয়েছে, أَفَاضَ رَسُولُ اللهِ- صلى الله عليه وسلم- مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ حِينَ صَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مِنًى‘রাসূল (ছাঃ) দিন শেষে তাওয়াফে এফাযাহ করেন। যখন তিনি যোহরের ছালাত আদায় করেন। অতঃপর মিনায় ফিরে আসেন’। উক্ত হাদীছ সম্পর্কে শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি ছহীহ হ’লেও حِينَ صَلَّى الظُّهْرَ ‘যখন তিনি যোহরের ছালাত আদায় করেন’ বাক্যটি ‘মুনকার’ বা যঈফ (আবুদাঊদ হা/১৯৭৩)। অতএব এক্ষেত্রে ইবনু ওমরের স্পষ্ট হাদীছই অগ্রাধিকারযোগ্য। যেখানে তিনি বলেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَفَاضَ يَوْمَ النَّحْرِ ثُمَّ رَجَعَ فَصَلَّى الظُّهْرَ بِمِنًى ‘কুরবানীর দিন রাসূল (ছাঃ) তাওয়াফে এফাযাহ করেন। অতঃপর মিনায় ফিরে এসে যোহরের ছালাত আদায় করেন’।[1] জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে হারামে তাওয়াফ শেষের দু’রাক‘আত নফল ছালাতকে (মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭) সম্ভবতঃ যোহরের দু’রাক‘আত ধারণা করা হয়েছে (যাদুল মা‘আদ ২/২৫৮-৬১)।
অতঃপর ১১, ১২, ১৩ আইয়ামে তাশরীক্বের তিনদিন সেখানে অবস্থান করেন। ১১ ও ১২ তারিখে সূর্য ঢলার পর ১ম, ২য় ও ৩য় জামরায় প্রতিটিতে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করেন এবং হজ্জের বিভিন্ন নিয়ম-কানূন জনগণকে শিক্ষা দেন। এ সময় তিনি শিরকের নিদর্শনগুলি ধ্বংস করে দেন। তিনি যিকর-আযকারে লিপ্ত থাকেন এবং জনগণকে বিভিন্ন বিষয়ে হেদায়াত দান করেন।
১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর একটু দূরে গিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দো‘আ করেন। হাদীছ সমূহের বর্ণনা অনুযায়ী সূর্য ঢলার পর কংকর নিক্ষেপ করতেন।[2] ফলে ফিরে এসে যোহর পড়তেন বলেই প্রতীয়মান হয় (যাদুল মা‘আদ ২/২৬৩-৬৪)। এসময় হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্বশীল হওয়ায় আববাস (রাঃ)-কে মক্কায় অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হয়।[3] একইভাবে রাখালদেরও অনুমতি দেওয়া হয় মিনার বাইরে গিয়ে উট চরানোর জন্য। তাদেরকে বলা হয় ১১-১২ দু’দিনের কংকর যেকোন একদিনে একসাথে মারার জন্য।[4] ইমাম মালেক বলেন, আমি ধারণা করি, তাদেরকে বলা হয় ১১ তারিখে কংকর মারতে এবং ফেরার দিন ১৩ তারিখে কংকর মারতে। সুফিয়ান বিন ওয়ায়না বলেন, এর ফলে তাদেরকে একদিন পর একদিন কংকর মারার অনুমতি দেওয়া হয়। তাছাড়া তারা মিনায় রাত্রি যাপন থেকে রুখছত পায় এবং দিনের বদলে রাত্রিতে কংকর মারার অনুমতি পায়। অতএব তাদেরকে যখন ওযর বশতঃ রুখছত দেওয়া হয়েছে সে হিসাবে রোগ কিংবা অন্যকোন বাধ্যগত কারণে অন্যেরাও উক্ত রুখছত পেতে পারে’ (যাদুল মা‘আদ ২/২৬৭)।
[2]. তিরমিযী হা/৮৯৮; ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৪; যাদুল মা‘আদ ২/২৬৪।
[3]. বুখারী হা/১৬৩৪; মুসলিম হা/১৩১৫; মিশকাত হা/২৬৬২।
[4]. তিরমিযী হা/৯৫৫; আবুদাঊদ হা/১৯৭৫; মিশকাত হা/২৬৭৭।