নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ফাদাকের খেজুর বাগান (أرض فدك ونخلها)

এই সময় ফাদাক (فَدَك)-এর খেজুর বাগান রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য ‘খাছ’ হিসাবে বণ্টিত হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন প্রথম খায়বরে উপস্থিত হন, তখন তিনি ফাদাকের ইহূদীদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেবার জন্য মুহাইয়েছাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-কে পাঠান। কিন্তু তারা বিলম্ব করে। অতঃপর যখন খায়বর বিজিত হ’ল, তখন তারা ভীত হয়ে পড়ল এবং রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে দূত পাঠালো এই মর্মে যে, খায়বরবাসীদের সঙ্গে ফসলের অর্ধাংশ দেবার শর্তে যেরূপ সন্ধি করা হয়েছে, তারাও অনুরূপ সন্ধিতে আগ্রহী। তাদের এ প্রস্তাব কবুল করা হয় এবং ফাদাকের ভূমি রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। কেননা এই ভূমি জয় করতে কোনরূপ যুদ্ধের প্রয়োজন হয়নি। কেবলমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর দাওয়াতের মাধ্যমে তা বিজিত হয়েছিল (ইবনু হিশাম ২/৩৩৭, ৩৫৩)

উল্লেখ্য যে, এই ফাদাকের খেজুর বাগানের উত্তরাধিকার প্রশ্নেই রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে খলীফা আবুবকরের সঙ্গে হযরত ফাতেমা ও আলী (রাঃ)-এর বিরোধ হয়। হাদীছটি ছিল,إنَّا مَعْشَرُ الأنبياءِ لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَاهُ صَدَقَةٌ ‘আমরা নবীরা আমাদের সম্পদের উত্তরাধিকারী কেউ হয় না। যা কিছু আমরা ছেড়ে যাই, সবই ছাদাক্বা হয়ে যায়’।[1] তিনি বলেন,إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَ بِهِ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ ‘নবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম রেখে যান না। তাঁরা রেখে যান কেবল ইল্ম। অতএব যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করেছে, সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে’।[2] বলা বাহুল্য যে, শী‘আরা এখনো উক্ত ফাদাকের সম্পত্তির দাবীতে অটল। তারা খলীফা আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-কে দায়ী করে থাকে। অথচ পরে আলী (রাঃ) নিজে খলীফা হয়েও ঐ সম্পত্তি দাবী করেননি।

এভাবে খায়বর যুদ্ধে বিপুল গণীমত লাভ হয়। যে বিষয়ে আল্লাহ হোদায়বিয়া থেকে ফেরার পথে আয়াত নাযিল করে বলেছিলেন,وَمَغَانِمَ كَثِيرَةً يَأْخُذُونَهَا وَكَانَ اللهُ عَزِيزًا حَكِيمًا- وَعَدَكُمُ اللهُ مَغَانِمَ كَثِيرَةً تَأْخُذُونَهَا فَعَجَّلَ لَكُمْ هَذِهِ وَكَفَّ أَيْدِيَ النَّاسِ عَنْكُمْ وَلِتَكُونَ آيَةً لِلْمُؤْمِنِينَ وَيَهْدِيَكُمْ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا ‘আর তিনি তাদের বিপুল পরিমাণ গণীমত লাভের ওয়াদা দিচ্ছেন, যা তারা লাভ করবে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’। ‘আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ গণীমতের ওয়াদা দিচ্ছেন, যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তোমাদের জন্য এটি ত্বরান্বিত করবেন এবং তোমাদের থেকে লোকদের প্রতিরোধ করবেন। যাতে এটা মুমিনদের জন্য নিদর্শন হয় এবং তিনি তোমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করেন’ (ফাৎহ ৪৮/১৯-২০)

[1]. নাসাঈ হা/৪১৪৮; সুনানুল কুবরা হা/৬৩০৯; কানযুল ‘উম্মাল হা/৩৫৬০০; বুখারী হা/৬৭২৭; মুসলিম হা/১৭৫৮; মিশকাত হা/৫৯৬৭।

[2]. তিরমিযী হা/২৬৮২; আহমাদ হা/২১৭৬৩; আবুদাঊদ হা/৩৬৪১; ইবনু মাজাহ হা/২২৩; মিশকাত হা/২১২।