মুহাজির ভাইদের জন্য আনছারগণের সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ছিল তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির উপরে প্রতিষ্ঠিত। যার মাধ্যমে বংশ, বর্ণ, অঞ্চল, ভাষা প্রভৃতি আরবের চিরাচরিত বন্ধন সমূহের উপরে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত ভিত্তিক নবতর এক জাতীয়তার বন্ধন স্থাপিত হয়। যা পরবর্তীতে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম দেয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় আল্লাহর দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের সমানাধিকার ভিত্তিক ইসলামী খেলাফতের দৃঢ় ভিত্তি। উপ্ত হয় প্রকৃত অর্থে এক অসাম্প্রদায়িক ও উদারনৈতিক ইসলামী সমাজের বীজ।
‘আল্লাহর দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের অধিকার সমান’- এই মহান সাম্যের বাণী ও তার বাস্তব প্রতিফলন দেখে আজীবন মানুষের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ মযলূম জনতা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নিগৃহীত ও শোষিত মানবতা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। জান্নাত লাভের প্রতিযোগিতায় সর্বোত্তমরূপে বিকশিত মানবতা মদীনার আদি বাসিন্দাদের চমকিত করল। যা তাদের স্বার্থান্ধ জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। নোংরা দুনিয়াপূজা হ’তে মুখ ফিরিয়ে আখেরাতমুখী মানুষের বিজয় মিছিল এগিয়ে চলল। কাফির-মুশরিক, ইহূদী-নাছারা ও মুনাফিকদের যাবতীয় অপচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করল বিশ্বজয়ী ইসলামী খেলাফত। যা কয়েক বছরের মধ্যেই তৎকালীন বিশ্বের সকল পরাশক্তিকে দমিত করে অপরাজেয় বিশ্বশক্তিরূপে আবির্ভূত হ’ল। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।
বস্ত্ততঃ আনছার ও মুহাজিরগণের মধ্যে যদি এইরূপ নিখাদ ভালবাসা ও ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি না হ’ত এবং স্থানীয় ও বহিরাগত দ্বন্দ্বের ফাটল দেখা দিত, তাহ’লে মদীনায় মুসলমানদের উঠতি শক্তি অংকুরেই বিনাশ হয়ে যেত। পরিণামে তাদেরকে চিরকাল ইহূদীদের শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হ’তে হ’ত। যেভাবে ইতিপূর্বে মক্কায় কুরায়েশ নেতাদের হাতে তারা পর্যুদস্ত হয়েছিল।