হিজরতের কাহিনীতে বহু কিছু অতিরঞ্জিত বর্ণনা যুক্ত হয়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই। যেমন, (ক) রাসূল (ছাঃ) ছওর গুহায় প্রবেশের পর আবুবকর (রাঃ) গুহাটি পরিষ্কার করলেন এবং নিজের পায়জামা ছিঁড়ে এর মধ্যেকার গর্তগুলি পূরণ করে দেন। কিন্তু দু’টি গর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি ঐ দু’টি গর্তের মুখে পা দিয়ে রাখেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাঁর উরুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সাপ কিংবা বিচ্ছু আবুবকর (রাঃ)-এর পায়ে দংশন করে। এতে তিনি যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) জেগে উঠবেন সেই ভয়ে নড়াচড়া করেননি। একপর্যায়ে বিষের তীব্র যন্ত্রণায় তার চোখের পানি রাসূল (ছাঃ)-এর মুখে ঝরে পড়লে তিনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। তখন রাসূল (ছাঃ) নিজের মুখের লালা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে বিষের যন্ত্রণা দূর হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার বিষের ব্যথা ফিরে আসে এবং এটাই ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ’।[1] আবুবকর ঐ সময় কাঁদছিলেন এবং বলছিলেন, আল্লাহর কসম! আমি নিজের জন্য কাঁদছিনা, বরং আমি ভয় পাচ্ছি হে রাসূল! আপনার কি হবে? এছাড়া (খ) ছওর গুহার মুখে মাকড়সার জাল বোনা, (গ) একটি বৃক্ষের জন্ম হওয়া ও রাসূল (ছাঃ)-কে ঢেকে দেওয়া (ঘ) সেখানে এসে দু’টি কবুতরের বাসা বাঁধা ও তাতে ডিম পাড়া ইত্যাদি সবই বানোয়াট ও কল্পকাহিনী মাত্র।[2] বরং এটাই সঠিক যে, আল্লাহ ফেরেশতা পাঠিয়ে তাঁদেরকে গায়েবী মদদ করেছিলেন এবং কুরায়েশদের প্রেরিত অনুসন্ধানী দলের দৃষ্টিকে আল্লাহ অন্যদিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। যা আবুবকর (রাঃ)-এর বক্তব্য থেকেই বুঝা যায়। পরবর্তীতে বদরের যুদ্ধে ফেরেশতা পাঠিয়ে আল্লাহ একইভাবে গায়েবী মদদ করেন (আনফাল ৮/৯)। বস্ত্ততঃ এই সাহায্য নবী ও তাঁর সনিষ্ঠ অনুসারী মুমিনগণ সর্বদা পেয়ে থাকেন।[3]
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১১২৮-২৯; মা শা-‘আ ৮০ পৃঃ।
[3]. আম্বিয়া ২১/৮৮; রূম ৩০/৪৭।
(১) জানা আবশ্যক যে, গুহা মুখে মাকড়সা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তা ‘মুনকার’ বা যঈফ। যেমন রাসূল (ছাঃ) আবুবকরকে বলছেন, جَزَى اللهُ عَزَّ وجَلَّ العنكبوتَ عنا خيرًا، فإنها نَسَجَتْ عليَّ وعليكَ يا أبا بكرٍ في الغار، حتَّى لَمْ يَرَنا المشركونَ ولم يَصِلُوا إلينا ‘আল্লাহ আমাদের পক্ষ হ’তে মাকড়সাকে উত্তম পুরস্কার দিন। কেননা সে আমার ও তোমার উপরে হে আবুবকর! গুহাতে জাল বুনেছে। ফলে মুশরিকরা আমাদের দেখতে পায়নি এবং আমাদের কাছে পৌঁছতে পারেনি’ (মুসনাদে দায়লামী; সিলসিলা যঈফাহ হা/১১৮৯, ৩/৩৩৭ পৃঃ)। শায়খ আলবানী উপরোক্ত বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন, গুহার মাকড়সা ও দুই কবুতরের ডিম পাড়া সম্পর্কে যেসব লেখনী ও বক্তব্যসমূহ প্রচলিত রয়েছে, সেগুলির কিছুই সঠিক নয়’ (যঈফাহ ৩/৩৩৯; মা শা-‘আ ৮৩ পৃঃ)।
(২) প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (ছাঃ)-কে না পেয়ে কুরায়েশ নেতারা আলী (রাঃ)-এর উপর নির্যাতন করে (আর-রাহীক্ব ১৬৫ পৃঃ, রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/৯৬)। বর্ণনাটি সূত্র বিহীন। আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, আবু জাহল আবুবকরকে না পেয়ে তার কন্যা আসমা (রাঃ)-এর মুখে থাপ্পড় মারেন (আর-রাহীক্ব ১৬৫ পৃঃ)। কিন্তু এর সনদ মুনক্বাতি‘ বা যঈফ ঐ, তা‘লীক্ব ১০৮-০৯; তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৫১৩।