৪০ হিজরীর রামাদান মাসের ২৩ তারিখে আলী (রা) তাঁর খেলাফতের রাজধানী কূফায় এক গুপ্তঘাতক খারিজীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ্য পুত্র হাসান ইবনু আলী (রা) তাঁর জানাযার সালাতে ইমামতি করেন। জানাযা শেষে কূফাতেই তাঁর বাড়ীর অভ্যন্তরে তাঁকে দাফন করা হয়। কারণ ইমাম হাসান ও অন্যান্যরা ভয় পাচ্ছিলেন যে, সাধারণ গোরস্থানে তাঁকে দাফন করলে খারিজীগণ তাঁর মৃতদেহকে চুরি করবে ও অপমানিত করবে। এ বিষয়টি প্রথম যুগের মুসলিমদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল।
পরবর্তী কালে শিয়াগণ এ বিষয়ে একটি বানোয়াট ও মিথ্যা গল্প প্রচার করেছে। গল্পটির সার সংক্ষেপ হলো, আলী (রা)-কে দাফন না করে উটের পিঠের উপর ছেড়ে দেয়া হয়। উটটি হারিয়ে যায়। ... পরবর্তী কালে ‘নাজাফ’-এর তাঁর কবরের খোঁজ পাওয়া যায়।... ইত্যাদি।
এ সকল কাহিনী শুধু মিথ্যাই নয়, উপরন্তু তা আলী (রা), হাসান (রা), হুসাইন (রা) ও আলীর পরিবারের সকলের জন্যই কঠিন অবমাননাকর। ইন্তিকালের পরে মৃত দেহ দাফন করা জীবিতদের উপর ফরয। এ ফরয দায়িত্বে অবহেলা করে তাঁরা আমীরুল মুমিনীনের মৃত দেহ উটের পিঠে ছেড়ে দিবেন একথা একান্ত কান্ডজ্ঞানহীন মুর্খ ছাড়া কেউই বিশ্বাস করবে না। হাসান-হুসাইন (রা) তো দূরের কথা, একজন অতি সাধারণ মানুষও তার পিতার মৃতদেহ এভাবে ছেড়ে দিতে রাজি হবে না। সেও চাইবে যে, তার পিতার কবরটি পরিচিত থাক, যেন সে ও তার বংশধরেরা তা যিয়ারত করতে পারে...। কিন্তু সমস্যা হলো, কুরআন-সুন্নাহকে পরিত্যাগ করে অতিভক্তির অন্ধকারে হৃদয়কে নিমজ্জিত করার পরে ইমামগণের নামে যা কিছু বাতিল, শরীয়ত বিরুদ্ধ, বুদ্ধি ও বিবেক বিরুদ্ধ কথা বলা হয়েছে, সবই শিয়ারা বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে বিশ্বাস করে নিয়েছে।
এ মিথ্যাচারের ভিত্তিতে নাজাফ শহরে একটি কবরকে শিয়াগণ আলীর কবর বলে বিশ্বাস ও প্রচার করেন। আলী (রা)-এর শাহাদাতের পরে তিন শত বছর পর্যন্ত কেউ বলেন নি যে, আলীর কবর নাজাফে। প্রায় তিন শত বছর পরে বিভিন্ন জনশ্রুতি ও কুসংস্কারের ভিত্তিতে এ কবরটি আলীর (রা) কবর বলে পরিচিতি পেতে শুরু করে। করবটির অবস্থা অবিকল বাবরী মসজিদের স্থলে রাম জন্ম-মন্দিরের কাহিনীর মত। সকল হিন্দু গবেষক ও ঐতিহাসিক একমত যে, অযোধ্যার বাবরী মসজিদের স্থানে কোনো দিনই রাম-মন্দির ছিল না। কিন্তু এ মিথ্যা কথাটি উগ্রপন্থি হিন্দুদের প্রচারে এখন প্রায় স্বতঃসিদ্ধ সত্যে পরিণত হয়েছে। হয়ত এক সময় এখানে ‘রাম-মন্দির’ নির্মিত হবে। ভারতের কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করবে যে, এখানেই রামের জন্ম হয়েছিল! যেমন ভাবে কোটি কোটি শিয়া বিশ্বাস করে যে নাজাফের এ কবরটিই আলীর কবর। এজন্য তারা নাজাফ শহরকে বলে ‘নাজাফ আল-আশরাফ’। মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ ও নাজাফ আশ্রাফ। অর্থাৎ পবিত্র মক্কা, পবিত্র মদীনা ও মহা পবিত্র নাজাফ!!![1]