হাদীসের নামে জালিয়াতি অশুদ্ধ হাদীসের বিষয়ভিত্তিক মূলনীতি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৯-১৭. আর কিছু ভিত্তিহীন বিষয়...
- শারাফ বালখী রচিত ‘ফাযলুল উলামা’ বইয়ের সকল হাদীস।
- ‘কিতাবুল আরূস’ নামক একটি প্রচলিত গ্রন্থ। এ গ্রন্থে নব দম্পতি ও বিবাহিতদের বিষয়ে অনেক জাল কথা সংকলিত। জালিয়াত বইটি ইমাম জাফর সাদিকের নামে প্রচার করেছে।
- তৃতীয়-চতুর্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ আলিম ‘হাকিম তিরমিযী’ মুহাম্মাদ ইবনু আলী (মৃত্যু আনু. ৩২০ হি)। তিনি নাওয়াদিরুল উসূল’ ও অন্যান্য প্রসিদ্ধ পুস্তক রচনা করেন। তাঁর গ্রন্থগুলোতে অনেক জাল হাদীস রয়েছে। এমনকি মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, তিনি তাঁর গ্রন্থগুলোকে জাল হাদীস দিয়ে ভরে ফেলেছেন। ফলে তাঁর গ্রন্থের কোনো হাদীস নিরীক্ষা ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না।
- ইমাম গাযালী (৫০৫ হি) রচিত ‘এহইয়াউ উলূমিদ্দীন’ গ্রন্থে বিদ্যমান কোনো হাদীস নিরীক্ষা ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না। ইমাম গাযালীর মহান মর্যাদা অনস্বীকার্য। তবে তিনি হাদীস উল্লেখের ব্যাপারে কোনো যাচাই বাছাই করেন নি। প্রচলিত কিছু গ্রন্থ ও জনশ্রুতির উপর নির্ভর করে অনেক জাল ও ভিত্তিহীন হাদীস তিনি তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
- আল্লামা ইমাম আবুল লাইস সামারকান্দী নাস্র ইবনু মুহাম্মাদ (৩৭৩ হি) রচিত ‘তানবীহুল গাফিলীন’ গ্রন্থের অবস্থাও অনুরূপ। এ গ্রন্থে অনেক জাল ও বানোয়াট হাদীস রয়েছে।
- ৬ষ্ঠ শতকের প্রসিদ্ধ আলিম শু‘আইব ইবনু আব্দুল আযীয খুরাইফীশ (৫৯৭ হি)। তিনি ওয়ায উপদেশ ও ফযীলত বিষয়ে ‘আর-রাওদুল ফাইক’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যা প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ গ্রন্থটিতেও অনেক জাল হাদীস স্থান পেয়েছে।
- তাসাউফের গ্রন্থগুলোতে সূফী বুযুর্গগণের সরলতার কারণে অনেক জাল হাদীস স্থান পেয়েছে।
- ইমাম হাকিম (৪০৫হি) তাঁর ‘আল-মুসতাদরাক’ গ্রন্থে অনেক যয়ীফ, মাউযূ ও বাতিল হাদীসকে ‘সহীহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। হাদীসের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে তিনি খুবই দুর্বলতা দেখিয়েছেন। এজন্য তাঁর মতামতের উপর নির্ভর করা যায় না।
- কুদা‘য়ীর ‘আস-শিহাব’ গ্রন্থের ব্যাখ্যা লিখেন ৬ষ্ঠ শতকের একজন মুহাদ্দিস ‘মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাবীব আল-আমিরী (৫৩০ হি)। তিনিও হাদীসের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের বিষয়ে বিশেষ দুর্বলতা ও ঢিলেমি প্রদর্শন করেছেন। এ গ্রন্থের অনেক দুর্বল, জাল ও ভিত্তিহীন হাদীসকে সহীহ বা হাসান বলে উল্লেখ করেছেন। আব্দুর রাঊফ মুনাবী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস তাঁর এ সকল ভুল উল্লেখ করেছেন। এজন্য নিরীক্ষা ছাড়া তাঁর মতামত অগ্রহণযোগ্য।