ফিকহী গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান হাদীসগুলি যাচাই ছাড়া গ্রহণ করা সমাজে জাল হাদীস প্রসারের অন্যতম কারণ। আল্লামা রুহুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন: ‘‘এইরূপ ফেকহের কেতাবে দুই চারটি জাল হাদিছ আছে, হেদায়া কেতাবে দুই একটি জাল হাদিছ আছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকেরা হেদায়া শিক্ষা দেওয়া কালে জাল হাদিছ গুলির অবস্থা শিষ্যদিগকে জ্ঞাত করাইয়া দিবেন, ইহাই তাহাদের কর্ত্তব্য। ফেকহের কেতাবে দুই চারিটি জাল হাদিছ আছে বলিয়া কি ফেকহ শিক্ষা করা নিষেধ হইয়া যাইবে?’’[1]
অন্যত্র তিনি বলেন: উক্ত পুস্তক (কদমবুছির ফতোয়া) ৬ পৃষ্ঠা: ‘‘হজরত রছুলে করিম (ﷺ) আরও ফরমাইয়াছেন ‘‘যে ব্যক্তি আপন মায়ের পায়ে চুমা দিল, সে যেন বেহেস্তের চৌকাঠে চুমা দিল।’’ দোর্রোল মোখতার, পঞ্চম খন্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা। আমাদের উত্তর: মিছরি ছাপা দোর্রোল মোখতারের পঞ্চম খন্ড নাই। অবশ্য মিছরি ছাপা শামি কেতাবের পাঁচ খন্ড আছে। উক্ত শামি কেতাবের হাসিয়াতে দোর্রোল মোখতার মুদ্রিত হইয়াছে। এস্তাম্বুলের মুদ্রিত শামি কেতাবের হাশিয়ায় দোর্রোল মোখতারের ৫ম খন্ডে ৩৬১ পৃষ্ঠার এবং মিসরি ছাপার ৫/২৫৯ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি বিনা ছনদে উল্লিখিত হইয়াছে। দোর্রোল মোখতার ইত্যাদি ফেকহের কেতাবে কোন কথা হাদিস বলিয়া লিখিত থাকিলেও উহা যে প্রকৃতপক্ষে হজরতের হাদিস হইবে ইহা বলা যায় না। দোর্রোল মোখতারেরর ১/৩৫ পৃষ্ঠায় এই কথাটি: ‘বেহেস্তবাসিদিগের ভাষা আরবি এবং দরি ফার্সি হইবে’- হাদিছ বলিয়া লিখিত হইয়াছে। কিন্তু মোহাদ্দেছ প্রবর আল্লামা মোল্লা আলিকারী মওজুয়াত কবির কেতাবের ৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন যে, উহা হাদিস নহে, বরং জাল কথা। এজন্য কেবল ফেকহের কেতাবে কোন কথা হাদিস বলিয়া লেখা থাকিলে, দেখিতে হইবে যে, উহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে কিনা? উহার সহিহ ছনদ আছে কি না? যতক্ষণ ইহা না জানা যায়, ততক্ষণ উহা হাদিস বলিয়া দাবি করা যায় না। এক্ষণে মুফতি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি যে, উল্লিখিত হাদিসটি কোন হাদিসের কেতাবে আছে? উহার ছনদ কি? তিনি যতক্ষণ উহা প্রকাশ করিতে না পারেন ততক্ষণ উহা হাদিস বলিয়া গণ্য হইবে না।’’[2]
তিনি আরো বলেন: ‘‘উক্ত পুস্তক (কদমবুছির ফতোয়া) ৮ পৃষ্ঠা: ... আল্লামা জয়লয়ি তাবইনো হাকায়েক কেতাবের ৬ষ্ঠ খন্ডের ২৫ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন, কাফি কেতাবে আছে যে, প্রান্তরবাসীগণ নবি (ﷺ) এর হস্তপদ চুম্বন করিতেন। .... কাফি ফেকহের কেতাব, উহা কোন হাদিসের কেতাব নহে, উহাতে কোন কথা হাদিস বলিয়া লিখিত থাকিলেই যে হাদিস হইবে, ইহা স্বীকার করা যাইতে পারে না। মওজুয়াতে কবিরের ৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে, কাফি প্রণেতা বলিয়াছেন যে, হাদিসে আছে, বেহেশতবাসীদিগের ভাষা আরবি ও ফার্সি হইবে কিন্তু ইহা হাদিস নহে, বরং জাল কথা। এক্ষণে আমাদের বক্তব্য এই যে, কাফি কেতাবের লিখিত কথাটি কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে? উহার সনদ কি? মুফতি সাহেব অগ্রে উহার ছনদ বর্ণনা করুন, পরে উহা প্রমাণস্থলে ব্যবহার করিবেন।’’[3]
তিনি আরো বলেন: ‘‘উক্ত কেতাব ৯ পৃষ্ঠা: ফতোয়া হাবি কেতাবে আসিয়াছে একব্যক্তি নবী করিম ﷺ এর নিকট আসিয়া বলিয়াছিল, হে রছুলুল্লাহ ﷺ, আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, বেহেশতের চৌকাঠে এবং হুরগণকে চুম্বন করিব, তখন হজরত তাহাকে তাহার মায়ের পায়ে এবং বাপের কপালে চুম্বন করিতে আদেশ করিলেন। আমাদের উত্তর: ইহা ফেকহের কেতাবের হাদিস, ইহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে এবং ইহার সনদ কি, মুফতি সাহেব যতক্ষণ প্রকাশ করিতে না পারেন, ততক্ষণ ইহা হাদিস বলিয়া প্রকাশ করা জায়েজ হইতে পারে না। মোল্লা আলি কারী মওজুয়াতে কবির কেতাবের ৭৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষে জুমায় একটি ফরজ নামাজ কাজা পড়িবে তাহার জীবনের ৭০ বৎসরের প্রত্যেক নামাজের কাজা আদায় হইয়া যাইবে’, এই হাদিসটি নিশ্চয় বাতীল কেননা কোন এবাদত বহু বৎসরের কাজার বিনিময় হইতে পারে না, ইহার উপর এজমা হইয়াছে। নেহায়া কিম্বা হেদায়ার অবশিষ্ট টীকাগুলিতে কাজায় ওমরির কথা উল্লিখিত থাকিলেও উহা অগ্রাহ্য, যেহেতু তাহারা মোহাদ্দেস ছিলেন না এবং তাহারা কোন মোহাদ্দেস পর্যন্ত হাদিসের সনদ উল্লেখ করেন নাই। জনাব মুফতি সাহেব, যখন নেহায়া, কেফায়া, এনায়া কেতাবের বিনা ছনদের হাদিস বাতীল হইল, তখন হাবি কেতাবের বিনা ছনদের হাদিস কেন অগ্রাহ্য হইবে না? এমাম জালালদ্দিন সিউতি লয়ালিয়ে মছনুয়া কেতাবের ৯০ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: ‘এবনো আদি ও বয়হকি এই হাদিসটি উল্লেখ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি মাতার ললাট চুম্বন করে উহা তাহার পক্ষে দোজখের অন্তরাল স্বরূপ হইবে। ইহা জইফ হাদিস।’ ইহাতে বুঝা যায় যে, হাবি কেতাবের হাদিসটি বাতীল।’’[4]
[2] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক, পৃ ৬-৭।
[3] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, প্রাগুক্ত, পৃ ১২-১৩।
[4] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক, পৃ ১৪-১৬।