আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ- (إسراء 101)- ‘আমরা মূসাকে নয়টি নিদর্শন প্রদান করেছিলাম’ (ইসরা ১৭/১০১; নামল ২৭/১২)। এখানে ‘নিদর্শন’ অর্থ একদল বিদ্বান ‘মু‘জেযা’ নিয়েছেন। তবে ৯ সংখ্যা উল্লেখ করায় এর বেশী না হওয়াটা যরূরী নয়। বরং এর চেয়ে অনেক বেশী মু‘জেযা তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। যেমন পাথরে লাঠি মারায় ১২টি গোত্রের জন্য বারোটি ঝর্ণাধারা নির্গমন, তীহ্ প্রান্তরে মেঘের ছায়া প্রদান, মান্না-সালওয়া খাদ্য অবতরণ প্রভৃতি। তবে এ নয়টি ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত, যা ফেরাঊনী সম্প্রদায়কে প্রদর্শন করা হয়েছিল।
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) উক্ত ৯টি মু‘জেযা নিম্নরূপে গণনা করেছেন। যথা- (১) মূসা (আঃ)-এর ব্যবহৃত লাঠি, যা নিক্ষেপ করা মাত্র অজগর সাপের ন্যায় হয়ে যেত (২) শুভ্র হাত, যা বগলের নীচ থেকে বের করতেই জ্যোতির্ময় হয়ে সার্চ লাইটের মত চমকাতে থাকত (৩) নিজের তোতলামি, যা মূসার প্রার্থনাক্রমে দূর করে দেওয়া হয় (৪) ফেরাঊনী কওমের উপর প্লাবণের গযব প্রেরণ (৫) অতঃপর পঙ্গপাল (৬) উকুন (৭) ব্যাঙ (৮) রক্ত এবং অবশেষে (৯) নদী ভাগ করে তাকে সহ বনু ইস্রাঈলকে সাগরডুবি হ’তে নাজাত দান। তবে প্রথম দু’টিই ছিল সর্বপ্রধান মু‘জেযা, যা নিয়ে তিনি শুরুতে ফেরাঊনের নিকটে গিয়েছিলেন (নমল ২৭/১০, ১২)।
অবশ্য কুরআনে বর্ণিত আয়াত সমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রথমে ফেরাঊনের সম্প্রদায়ের উপরে দুর্ভিক্ষের গযব এসেছিল। যেমন আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَونَ بِالسِّنِينَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ- (الأعراف ১৩০)- ‘আমরা পাকড়াও করেছিলাম ফেরাঊনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল-ফসলাদির ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’ (আ‘রাফ ৭/১৩০)।
হাফেয ইবনু কাছীর ‘তোতলামী’টা বাদ দিয়ে ‘দুর্ভিক্ষ’সহ নয়টি নিদর্শন বর্ণনা করেছেন। অবশ্য ফেরাঊন সম্প্রদায়ের উপরে আরও একটি নিদর্শন এসেছিল ‘প্লেগ-মহামারী’ (আ‘রাফ ৭/১৩৪)। যাতে তাদের ৭০ হাযার লোক মারা গিয়েছিল এবং পরে মূসা (আঃ)-এর দো‘আর বরকতে মহামারী উঠে গিয়েছিল। এটাকে গণনায় ধরলে সর্বমোট নিদর্শন ১১টি হয়। তবে ‘নয়’ কথাটি ঠিক রাখতে গিয়ে কেউ তোতলামি ও প্লেগ বাদ দিয়েছেন। কেউ দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ বাদ দিয়েছেন। মূলতঃ সবটাই ছিল মূসা (আঃ)-এর নবুঅতের অকাট্ট দলীল ও গুরুত্বপূর্ণ মু‘জেযা, যা মিসরে ফেরাঊনী সম্প্রদায়ের উপরে প্রদর্শিত হয়েছিল। এগুলি সবই হয়েছিল মিসরে। অতএব আমরা সেখানে পৌঁছে এসবের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করব ইনশাআল্লাহ।