নিজ কওমের প্রতি হযরত লূত (আঃ)-এর দাওয়াতের ফলশ্রুতি মর্মান্তিক রূপে প্রতিভাত হয়। তারা এতই হঠকারী ও নিজেদের পাপকর্মে অন্ধ ও নির্লজ্জ ছিল যে, তাদের কেবল একটাই জবাব ছিল, তুমি যে গযবের ভয় দেখাচ্ছ, তা নিয়ে আস দেখি? কিন্তু কোন নবীই স্বীয় কওমের ধ্বংস চান না। তাই তিনি ছবর করেন ও তাদেরকে বারবার উপদেশ দিতে থাকেন। তখন তারা অধৈর্য হয়ে বলে যে,أَخْرِجُوْهُم مِّنْ قَرْيَتِكُمْ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَّتَطَهَّرُوْنَ- ‘এদেরকে তোমাদের শহর থেকে বের করে দাও। এই লোকগুলি সর্বদা পবিত্র থাকতে চায়’ (আ‘রাফ ৭/৮২; নমল ২৭/৫৬)। তারা আল্লাহভীতি থেকে বেপরওয়া হয়ে অসংখ্য পাপকর্মে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। কুরআন তাদের তিনটি প্রধান পাপ কর্মের উল্লেখ করেছে। (১) পুংমৈথুন (২) রাহাজানি এবং (৩) প্রকাশ্য মজলিসে কুকর্ম করা (আনকাবূত ২৯/২৯)।
বলা বাহুল্য, সাদূমবাসীদের পূর্বে পৃথিবীতে কখনো এরূপ কুকর্ম কেউ করেছে বলে শোনা যায়নি। এমনকি অতি বড় মন্দ ও নোংরা লোকদের মধ্যেও কখনো এরূপ নিকৃষ্টতম চিন্তার উদ্রেক হয়নি। উমাইয়া খলীফা অলীদ ইবনে আবদুল মালেক (৮৬-৯৭/৭০৫-৭১৬ খৃঃ) বলেন, কুরআনে লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা উল্লেখ না থাকলে আমি কল্পনাও করতে পারতাম না যে, কোন মানুষ এরূপ নোংরা কাজ করতে পারে’।[3] তাদের এই দুষ্কর্মের বিষয়টি দু’টি কারণে ছিল তুলনাহীন। এক- এ কুকর্মের কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত ছিল না এবং একাজ সম্পূর্ণ নতুনভাবে তারা চালু করেছিল। দুই- এ কুকর্ম তারা প্রকাশ্য মজলিসে করত, যা ছিল বেহায়াপনার চূড়ান্ত রূপ।
বস্ত্ততঃ মানুষ যখন দেখে যে, সে কারু মুখাপেক্ষী নয়, তখন সে বেপরওয়া হয়’ (আলাক্ব ৯৬/৬-৭)। সাদূমবাসীদের জন্য আল্লাহ স্বীয় নে‘মত সমূহের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তার শুকরিয়া আদায় না করে কুফরী করে এবং ধনৈশ্বর্যের নেশায় মত্ত হয়ে বিলাস-ব্যসন, কাম-প্রবৃত্তি ও লোভ-লালসার জালে এমনভাবে আবদ্ধ হয়ে পড়ে যে, লজ্জা-শরম ও ভাল-মন্দের স্বভাবজাত পার্থক্যবোধটুকুও তারা হারিয়ে ফেলে। তারা এমন প্রকৃতি বিরুদ্ধ নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়, যা হারাম ও কবীরা গোনাহ তো বটেই, কুকুর-শূকরের মত নিকৃষ্ট জন্তু-জানোয়ারও এর নিকটবর্তী হয় না। তারা এমন বদ্ধ নেশায় মত্ত হয় যে, লূত (আঃ)-এর উপদেশবাণী ও আল্লাহর গযবের ভীতি প্রদর্শন তাদের হৃদয়ে কোন রেখাপাত করেনি। উল্টা তারা তাদের নবীকেই শহর থেকে বের করে দেবার হুমকি দেয় এবং বলে যে, ‘তোমার প্রতিশ্রুত আযাব এনে দেখাও, যদি তুমি সত্যবাদী হও’ (&আনকাবূত ২৯/২৯)। তখন লূত (আঃ) বিফল মনোরথ হয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করলেন। ফলে যথারীতি গযব নেমে এল। উল্লেখ্য যে, বর্তমান বিশ্বে মহামারী আকারে যে মরণ ব্যাধি এইড্সের বিস্তৃতি ঘটেছে, তার মূল কারণ হ’ল পুংমৈথুন, পায়ু মৈথুন ও সমকামিতা। ইসলামী শরী‘আতে এই কুকর্মের একমাত্র শাস্তি হ’ল উভয়ের মৃত্যুদন্ড (যদি উভয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে একাজ করে)।[4]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ملعونٌ منْ عَمِلَ عَمَلَ قومِ لوط অভিশপ্ত ঐ ব্যক্তি, যে লূতের কওমের মত কুকর্ম করে।[5] অন্যত্র তিনি বলেন, لاينظرُ اللهُ عزَّ وجلَّ إِلى رجلٍ أتى رجُلاً أو امرأةً فى دُبرها আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি ফিরে তাকাবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষ বা নারীর মলদ্বারে মৈথুন করে’।[6] তিনি বলেন, إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِى عَمَلُ قَوْمِ لُوطٍ আমি আমার উম্মতের জন্য সবচেয়ে (ক্ষতিকর হিসাবে) ভয় পাই লূত জাতির কুকর্মের’।[7] এইড্সের আতংকে ভয়ার্ত মানবজাতি শেষনবীর উক্ত বাণীগুলির প্রতি দৃষ্টি দিবে কি?
[4]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, সনদ হাসান হা/৩৫৭৫ ‘দন্ডবিধি সমূহ’ অধ্যায়।
[5]. রাযীন, সনদ হাসান, মিশকাত হা/৩৫৮৩।
[6]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৫৮৫।
[7]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৫৭৭।