ইমাম যুহরী বলেন- বর্তমানে যেখানে মসজিদে নববী অবস্থিত সেখানে এসেই নাবী (ﷺ) এর উটনী বসে পড়েছিল। সেই স্থানেই তাঁর হিজরতের পূর্বে মুসলিমগণ সলাত আদায় করতেন। এই জায়গাটি ছিল আসআদ বিন যুরারার প্রতিপালনাধীন সাহল ও সুহাইল নামক দুইজন ইয়াতীম বালকের। তাতে সে সময় উট বাঁধা হত। নাবী (ﷺ) জায়গাটি খরীদ করে তাতে মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে কথা বললেন। বালক দু’টি বলল- বরং আমরা তা বিনা মূল্যে দান করতে চাই। কিন্তু নাবী (ﷺ) তা বিনা মূল্যে নিতে অস্বীকার করলেন। পরিশেষে তিনি উহা দশ দ্বীনারের বিনিময়ে ক্রয় করে নিলেন।

সে সময় মসজিদে নববীর চারটি দেয়াল ছিল। কোন ছাদ ছিলনা। কিবলা ছিল বাইতুল মাকদিস। রসূল (ﷺ) এর মদ্বীনায় আগমনের পূর্বে আসআদ বিন যুরারা সেখানে মুসলিমদেরকে সলাত ও জুমআ পড়াতেন। সেখানে ছিল গারকাদ ও খেজুর গাছ এবং মুশরিকদের কবর। রসূল (ﷺ) এর আদেশে মুশরিকদের কবরগুলোকে উঠিয়ে ফেলা হয় এবং খেজুর ও অন্যান্য গাছগুলোকে কেটে কিবলার দিকে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেয়া হয়। মসজিদটি কিবলার দিক থেকে পিছনের দেয়াল পর্যন্ত একশ হাত লম্বা ছিল। বাকী দুই দিকেও অনুরূপ বা তার চেয়ে একটু কম ছিল। ভিত্তিমূল ছিল তিন হাত পরিমাণ। এর উপরই মুসলিমগণ তা কাঁচা ইট দিয়ে তৈরী করেছেন। রসূল (ﷺ) ও তাদের সাথে নির্মাণ কাজে অংশ গ্রহণ করেছেন এবং পাথর ও ইট বহন করেছেন। এ সময় তিনি নিম্নের লাইনগুলো পাঠ করতেন-

اللَّهم لا عَيْشَ إلاَّ عَيْشُ الآخِرةْ + فَاغْفِـرْ للأَنْصَارِ وَالمُهَـاجِـرَةْ

‘‘হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই আসল জীবন। তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে ক্ষমা কর’’। তিনি আরও বলতেন-

هَذَا الحِمَالُ لا حِـمَالُ خَيْبَر + هَــذَا أَبَـرُّ رَبَّــنَا وَأَطْهَرُ

‘‘এগুলো খায়বার থেকে আগত খেজুর বা পণ্যের বোঝা নয়; বরং এগুলো ইটের বোঝা এবং এই কাজ আমাদের প্রভুর আনুগত্যের প্রতি ও পবিত্র জীবনের প্রতি উৎসাহ দানকারী’’। সাহাবীগণও রসূল (ﷺ)-এর সাথে ইট বহন করতেন আর এই ধরণের ছন্দ পাঠ করতেন। তাদের কেউ কেউ বলতেন-

لَئِنْ قَعَدْنَا وَالرَّسُولُ يَعْمـل + لَـذَاكَ مِـنَّا العَـمَلُ المُضَـلَّلُُ

‘‘আমরা যদি বসে থাকি, আর আল্লাহর রসূল কাজ করেন, তাহলে আমাদের জন্য হবে এটি মারাত্মক ভুল।

তিনি বাইতুল মাকদিসের দিকে মসজিদের কিবলা নির্ধারণ করেন। পিছনের দিকে তিনটি দরজা রাখেন। আরেকটি দরজা রাখেন, যার নাম ছিল বাবে রহমত। তৃতীয় আরেকটি দরজা রাখেন, যা দিয়ে রসূল (ﷺ) মসজিদে প্রবেশ করতেন। খেজুরের কাঠ দিয়ে এর খুঁটি নির্মাণ করেন আর ছাদে খেজুর গাছের শাখা স্থাপন করেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল- আপনি কি এর উপর ছাদ নির্মাণ করবেন না? তিনি বললেন- না, বরং এটি মুসা (আঃ) এর চালাঘরের ন্যায়ই থাকবে।

মসজিদে নববীর পাশেই তিনি তাঁর স্ত্রীদের ঘরও কাঁচা ইট দিয়ে তৈরী করেন। খেজুরের শাখা ও কাঠ দিয়ে তার ছাদ নির্মাণ করেন। গৃহ নির্মাণ শেষে তিনি আয়িশা (রাঃ) এর সাথে সেই নব নির্মিত ঘরে বাসর করেন, যেটি তিনি মসজিদে নববীর পূর্ব প্রান্তে নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী সাওদার জন্য আরেকটি গৃহ নির্মাণ করেন।