ইহরাম অবস্থায় কেউ মারা গেলে

আরাফার ময়দানে এক লোক তার বাহন থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেলে রসূল (ﷺ) তাকে ইহরামের দুই কাপড়েই কাফন পরাতে বলেছেন এবং তার শরীরে খুশবো না লাগানোর আদেশ দিয়েছেন। তিনি তাকে বড়ই পাতা ও পানি দিয়ে (গরম পানিতে বড়ই পাতা মিশিয়ে) গোসল দিতে বলেছেন। তার চেহারা ও মাথা ঢাকতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও সংবাদ দিয়েছেন যে, উক্ত সাহাবীকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তালবীয়া পাঠরত অবস্থায় পুনরুজ্জিবীত করবেন। এই ঘটনা বিশেস্নষণ করলে বারটি হুকুম পাওয়া যাচ্ছে। যথা-

১. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ওয়াজিব।

২. মুমিন ব্যক্তি মারা যাওয়ার কারণে অপবিত্র হয়না। কেননা মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার মাধ্যমে নাপাক হলে গোসল দিলেও তার অপবিত্রতা দূর হবেনা।

৩. মৃত ব্যক্তিকে বড়ই পাতা ও পানি দিয়ে গোসল দিতে হবে।

৪. পানিতে পবিত্র জিনিস পতিত হওয়ার কারণে পানির রং বদল হয়ে গেলেও তার পবিত্রতা নষ্ট হয় না। কারণ হাদীছে পানির সাথে বড়ই পাতা মিশানোর আদেশ করা হয়েছে।

৫. মুহরিম ব্যক্তির জন্য গোসল করা জায়েয।

৬. মুহরিম ব্যক্তির জন্য পানি ও বরই পাতা ব্যবহার করা অবৈধ নয়।

৭. মীরাছ ও ঋণ পরিশোধ করার পূর্বে কাফন-দাফনকে প্রাধান্য দিতে হবে। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি যদি সম্পদ, ওয়ারিছ এবং ঋণ রেখে যায় তাহলে সেই সম্পদ দ্বারা প্রথমে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা নাবী (ﷺ) দু’টি কাপড়ে ইহরাম পরিহিত অবস্থায় মৃত্যু বরণকারীকে তা দিয়েই কাফন পরাতে আদেশ করেছেন। এ কথা জিজ্ঞেস করেন নি যে, তার কোন ঋণ ও ওয়ারিছ আছে কি না? কাফন-দাফন সম্পন্ন করার পর যদি সম্পদ বাকী থাকে তাহলে তা থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তারপর অন্যান্য হক আদায় করার পর কিছু বাকী থাকলে তা ওয়ারিছদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।

৮. মাত্র দুই কাপড়ে কাফন পরানো জায়েয আছে।

৯. মুহরিম ব্যক্তির জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ।

১০. মুহরিমের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ।

১১. মুহরিমের জন্য মুখ ঢাকাও নিষেধ। ছয়জন সাহাবী থেকে মুখ ঢাকা জায়েয হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। যারা জায়েয বলেন, তারা এই ছয়জন সাহাবীর কথা থেকেই দলীল গ্রহণ করেছেন। তারা বলেন- মুখ ঢাকার আদেশটি নাবী (ﷺ) থেকে সংরক্ষিত তথা সুসাব্যস্ত হয়নি।

১২. মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মারা গেলেও সে ইহরাম অবস্থার হুকুমেই থাকে।

পরিশেষে যখন সূর্য ডুবে গেল এবং হলুদ রং অপসারিত হওয়ার মাধ্যমে সূর্য ডুবার বিষয়টি নিশ্চিত হলেন তখন তিনি আরাফা থেকে মুযদালাফার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। এই সময় তিনি উসামা বিন যায়েদকে বাহনের পিছনে বসালেন। তিনি ধীরস্থীরতার সাথে চলতে থাকলেন। উটের লাগামকে তিনি এমনভাবে টেনে ধরলেন যে, তার মাথা হাওদার সাথে মিশে যাওয়ার উপক্রম হল। তিনি তখন বলছিলেনঃ হে লোক সকল! তোমরা ধীরস্থীরতার সাথে চল। কেননা দ্রুত চলার মধ্যে কোন নেকীর কাজ নেই। তিনি মাযামাইনের পথ ধরে তথা দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী রাস্তা দিয়ে চলতে লাগলেন। এর আগে আরাফায় যাওয়ার সময় তিনি যব্-এর পথ দিয়ে (ডান পাশের রাস্তা দিয়ে) গমণ করেছেন। ঈদের দিনগুলোতেও এমনি ছিল তাঁর পবিত্র অভ্যাস। এক রাস্তা দিয়ে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরত আসতেন। অতঃপর তিনি সাইরে আনাক তথা মধ্যম গতিতে চলতে লাগলেন। প্রশস্ত ময়দান পেলে দ্রুত চলতেন। সামনে টিলা বা উঁচু স্থান পড়লে তিনি উটের লাগাম ঢিলা করতেন, যাতে উপরে উঠা তার জন্য সহজ হয়।

চলার পথে তালবীয়া পাঠ অব্যাহত রাখতেন; তা বন্ধ করতেন না। রাস্তায় কোন এক স্থানে তিনি অবতরণ করলেন এবং পেশাব করার পর হালকা ওযূ করলেন। তখন উসামা তাকে বললেন- হে আল্লাহর রসূল! সলাত পড়তে হবে। তিনি বললেন- সলাতের স্থান তোমার সামনে (মুযদালিফায়)।