সাঈ করতে যাচ্ছেন এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করুন। সাঈর পূর্বে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ করুন। চুম্বন-স্পর্শ সম্ভব না হলে, এ ক্ষেত্রে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করার কোনো বিধান নেই।[1] এরপর সাফা পাহাড়ের দিকে আগান। সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে, রাসূলুল্লাহ (স) এর অনুসরণে বলুন—

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ، أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ.

উচ্চারণ: ইন্নাস্সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআয়িরিল্লাহ। আব্দায়ু বিমা বাদায়াল্লাহু বিহি

অর্থ: নিশ্চয়ই সাফা মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। আমি শুরু করছি আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন।[2]

এরপর সাফা পাহাড়ে ওঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন এবং আল্লাহর একত্ববাদ, বড়ত্ব ও প্রশংসার ঘোষণা দিয়ে বলবে—

اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، اللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ اْلَحمْدُ وَهَوُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ.

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল্মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ইউহয়ী ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাছারা আব্দাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ্।

অর্থ: আল্লাহ সুমহান, আল্লাহ সুমহান, আল্লাহ সুমহান ![3] আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, এবং আল্লাহ মহান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসাও তাঁর। তিনি জীবন ও মৃত্যু দেন, ও সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক। তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন, ও তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রুদেরকে পরাজিত করেছেন।[4] এবং উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করবে।[5] উপরোক্ত দোয়া এবং ইহ-পরকালের জন্য কল্যাণকর অন্যান্য দোয়া সামর্থ্য অনুযায়ী তিন বার পড়বে। পদ্ধতি এমন হবে যে, উক্ত দোয়াটি একবার পাঠ করে তার সাথে সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যান্য দোয়া পড়বে। অত:পর পুনরায় উক্ত দোয়াটি পাঠ করবে এবং তার সাথে অন্যান্য দোয়া পাঠ করবে। এভাবে তিন বার করবে।[6]

দোয়া শেষ হলে মারওয়ার দিকে রওয়ানা হোন। যেসব দোয়া আপনার মনে আসে পড়ুন। সাফা থেকে নেমে কিছু দূর এগোলেই ওপরে ও ডানে-বামে সবুজ বাতি জ্বালানো দেখবেন। এই জায়গাটুকু, পুরুষ হাজিগণ, দৌড়ানোর মত করে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলুন। পরবর্তী সবুজ বাতির আলামত এলে চলার গতি স্বাভাবিক করুন। তবে নারীদের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় চলার গতি থাকবে স্বাভাবিক। সবুজ দুই আলামতের মাঝে চলার সময় নীচের দোয়াটি পড়ুন-

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ ، إِنَّكَ أَنْت َالأَعَزُّ الأَكْرَمُ.

উচ্চারণ: রাবিবগ্ফির্ ওয়ার্হাম্, ইন্নাকা আন্তাল্ আয়া’য্যুল আকরাম্

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি সমধিক শক্তিশালী ও সম্মানিত।

মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছার পূর্বে, সাফায় পৌঁছার পূর্বে যে আয়াতটি পড়েছিলেন, তা পড়তে হবে না। মারওয়ায় উঠে সাফার মতো পবিত্র কাবার দিকে মুখ করে একই কায়দায় হাত উঠিয়ে মোনাজাত করুন। মারওয়া থেকে সাফায় আসার পথে সবুজ বাতির এখান থেকে আবার দ্রুত গতিতে চলুন। দ্বিতীয় সবুজ আলামতের এখানে এলে চলার গতি স্বাভাবিক করুন। সাফায় এসে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে আবার মোনাজাত ধরুন। সাফা মারওয়া উভয়টা দোয়া কবুলের জায়গা। কাজেই তাড়াতাড়ি সাঈ সেরে নিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার চিন্তা করবেন না। ধীরে সুস্থে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)যেখানে যা করেছেন সেখানে সেটা সেভাবেই করার চেষ্টা করুন। কতটুকু করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে, এই চিন্তা মাথায় আনবেন না। বরং এটা টারগেট বানাবেন যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কোথায় কোন কাজ কীভাবে ও কত সময় করেছেন, আমিও ঠিক সেভাবেই করব।

একই নিয়মে সাঈর বাকি চক্করগুলোও আদায় করুন। সাঈ করার সময় সালাত দাঁড়িয়ে গেলে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করুন। সাঈ করার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে আরাম করে নিন। এতে সাঈর কোনো ক্ষতি হবে না।

আপনার শেষ সাঈ—অর্থাৎ সপ্তম সাঈ—মারওয়াতে গিয়ে শেষ হবে। শেষ হওয়ার পর মাথা মুন্ডন বা চুল খাটো করতে যাবেন। মারওয়ার পাশেই চুল কাটার সেলুন রয়েছে। সেখানে গিয়ে মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছোট করে নিন। যদি হজ্জের জন্য মাথা মুন্ডানোর সময় পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ জিলহজ্জ এর পূর্বে আপনার মাথার চুল গজাবে না এরূপ আশঙ্কা হয় তবে উমরার পর চুল ছোট করা উত্তম। বিদায় হজ্জের সময় তামাত্তুকারী সাহাবাগণ কসর - চুল ছোট-করেছিলেন।[7] কেননা তাঁরা হজ্জের পাঁচ দিন পূর্বে উমরা আদায় করেছিলেন। তবে অন্যসব ক্ষেত্রে মাথা মুন্ডন করা উত্তম।

মনে করিয়ে দেয়া ভাল যে, পবিত্র কুরআনে ‘হলক’ এবং’কসর’ এর কথা এসেছে। মাথার চুল গোড়া থেকে কেটে ফেলাকে হলক বলে আর ছোট করাকে বলে কসর। কারও কারও মতে এক আঙুল চুল ছেঁটে ফেলাকে কসর বলে। তাই মাথায় যদি একেবারেই চুল না থাকে তাহলে সত্যিকার অর্থে হলক ও কসর কোনোটাই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। মুন্ডিত মাথায় নতুন করে ক্ষুর চালালে এটাকে কেউ মাথা মুন্ডন বলে না, বরং এটা হবে تمرير الموسى (ক্ষুর সঞ্চালন) যা কেবল টাক-মাথা ওয়ালাদের জন্য প্রযোজ্য।

মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করার পর গোসল করে স্বাভাবিক সেলাই করা কাপড় পরে নেবেন। ৮ জিলহজ্জ পর্যন্ত হালাল অবস্থায় থাকবেন। এহরাম বাঁধতে হবে না। এখন আপনার কাজ হবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করা, ও হজ্জের ব্যাপারে পড়াশোনা করে খুব সুন্দরভাবে বড় হজ্জের জন্য প্রস্ত্ততি নেয়া। সাধ্য-মত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা।

[1] - কেননা রাসূলুল্লাহ (স) এর হজ্জের বর্ণনায় সাঈর পূর্বে (استلام ) ইস্তিলাম এর কথা আছে। আর ইস্তিলাম শব্দের অর্থ চুম্বন বা স্পর্শ। ইশারা করাকে ইস্তিলাম বলা হয়না। (দেখুন : লিসানুল আরব: খন্ড ১২, পৃ:২৯৭)

[2] ইমাম মুসলিম কর্তৃক জাবের রা. হতে বর্ণিত হাদিস : কিতাবুল মুগনি : ৩১০

[3] নাসায়ি : ২/ ৬২৪

[4] - আলবানী : সহিহুন্নাসায়ী, ২/২২৪ ও মুসলিম : ২/২২২

[5] আবু দাউদ : ১/৩৫১

[6] মুসলিম : হাদিসে জাবের : ২১৩৭

[7] - فحل الناس كلهم وقصروا (হাদিসে জাবের: মুসলিম)