رابعا: السحر - চতুর্থত: যাদু করা

যাদু ঐ জিনিসকে বলা হয়, যার উপাদান খুব গোপন ও সুক্ষ্ম। যাদুকে সিহর হিসাবে নামকরণ করার কারণ হলো, এমন গোপন জিনিস দ্বারা সেটার চর্চা করা হয়, যা চোখ দ্বারা দেখা যায়না। গিরা-বন্ধন, ঝাড়-ফুঁক ও বিশেষ এক ধরণের কথা এবং ধূম্রময় বিশেষ এক ধরণের বস্তুকে যাদু নামে আখ্যায়িত করা হয়। যাদুর ক্রিয়া-কর্মের মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা মানুষের অন্তর ও শরীরে প্রভাব ফেলে। তা কখনো মানুষের মন ও শরীরকে অসুস্থ করে ফেলে। কখনো এটি মানুষকে হত্যাও করে ফেলে এবং কখনো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায়। তবে বিশ্বাস রাখতে হবে যাদুর ক্রিয়া ও প্রভাব আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিগত ইচ্ছা ও অনুমতির বাইরে নয়। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা না হলে এটি কারো ক্ষতি করতে পারে না।

যাদু শয়তানের কাজ। অনেক যাদু এমন রয়েছে যা শিরকের আশ্রয় নেয়া এবং পাপাত্মার নৈকট্য অর্জন করা ব্যতীত কার্যকর হয় না। শয়তান ও পাপাত্মা যা পছন্দ করে সেটা থেকে কিছু উৎসর্গ করার মাধ্যমে, ফন্দি ও চাতুরির আশ্রয় নিয়ে পাপাত্মাগুলো ব্যবহার করে যাদু করা হয়। এ জন্যই শরী‘আতে যাদুকে শিরকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দুই দিক থেকে যাদু শিরকের মধ্যে পড়ে।

(১) যাদুর মধ্যে শয়তানদেরকে ব্যবহার করা হয় এবং তাদের উপর নির্ভর করা হয়। কখনো কখনো শয়তানেরা যা পছন্দ করে যাদুর মধ্যে সেটা তাদের জন্য উৎসর্গ করা হয়। এতে করে শয়তানেরা যাদুকরের খেদমত করে।

(২) যাদুতে ইলমুল গায়েবের দাবি করা হয় এবং তাতে আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করা হয়। আর এটি হচ্ছে কুফুরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآَخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ﴾

‘‘তারা অবশ্যই অবগত আছে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করে নিয়েছে, পরকালে তার কোনো অংশ নেই’’। (সূরা বাকারা: ১০২)

আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

قَالَ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ

‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে দূরে থাক। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, সেগুলো কী কী? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) যাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ তা‘আলা হারাম করেছেন (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা এবং (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলার প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া’’।[1]


[1]. বুখারী, অধ্যায়: সতী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।