সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্য যিনি আমাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত সফল জীবন অতিবাহনের পথ বাতলেছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।
প্রতিনিয়ত রাস্তা-ঘাটে বিচরণকারী প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমই ঘরে-বাইরে, শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে, স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে, হাট-বাজারে এমনকি যাত্রীবাহী সব ধরনের যানবাহনে তথা সর্বস্থানে ধূমপায়ীদের সস্পর্ধ অবাধ ধূমপান অবলোকন করে কমবেশি মর্মব্যথা অনুভব না করে পারেন না। আমি ও তাদেরই একজন। তাই সর্বনাশা এ প্রকাশ্য ব্যাধি থেকে উত্তরণের জন্য যে কোনো সঠিক পন্থা অনুসন্ধান করা নিজস্ব ধর্মীয় কর্তব্য বলে আমি জ্ঞান করি। তাই প্রথমতঃ সবাইকে মৌখিকভাবে এ ঘৃণিত বস্তুটির সার্বিক প্রতিরোধের প্রতি প্রয়োজনীয় উৎসাহ প্রদান এবং এর ভয়ঙ্কর পরিণতি বুঝাতে সচেষ্ট হই। কিন্তু তাতে আশানুরূপ তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় নি। ভাবলাম হয়তো বা কেউ মনযোগ দিয়ে শুনছেন না অথবা তা দীর্ঘক্ষণ ক্রিয়াশীল থাকার জন্য প্রয়োজনান্দাযকাল মনোন্তকরণে বিদ্ধকরণকর্ম সম্পাদিত হচ্ছে না। তাই লেখালেখিকে দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি। অথচ আমি এ ক্ষেত্রে নবাগত। কতটুকু সফলকাম হতে পারবো তা আল্লাহ মা‘লুম। তবুও প্রয়োজনের খাতিরে ভুল-ত্রুটির প্রচুর সম্ভাবনা পশ্চাতে রেখে ক্ষুদ্র কলম খানা হস্তে ধারণের দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছি। সফলতা তো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই হাতে। তবে “নিয়্যাতের ওপরই সকল কর্মের ফলাফল নির্ভরশীল” রাসূল মুখনিঃসৃত এ মহান বাণীই আমার দীর্ঘ পথসঙ্গী।
অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লেখ হয়েছে সাধ্যমত এর বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা নাসেরুদ্দীন আলবানী রহ.-এর হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধনির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।
শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল গুরুসামান্য যতটুকুই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা সবার সহায় হোন।
এ পুস্তিকা প্রকাশে যে কোনো জনের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কৃপণতা করছি না। ইহপরকালে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেককে আকাঙ্খাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ প্রত্যাশা। আমীন, সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।
সর্বশেষে জনাব শাইখ আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছিনে। যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে পাণ্ডলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তাঁর অতীব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এর উত্তম প্রতিদান দিন এবং তার জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।
লেখক
মদ্য পান অথবা যে কোনো নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ তথা সেবন (চাই তা খেয়ে কিংবা পান করেই হোক অথবা ঘ্রাণ নেওয়া কিংবা ইঞ্জেকশান গ্রহণের মাধ্যমেই হোক) একটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ, যার ওপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিশাপ ও অভিসম্পাত রয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে মদ্যপান তথা যে কোনো নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ অথবা সেবনকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। শয়তান চায় এরই মাধ্যমে মানুষে মানুষে শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে মানুষকে গাফিল করতে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١﴾ [المائدة: ٩٠، ٩١]
“হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারীর তীর এ সব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। শয়তানের কাজও বটে। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকে। তাহলেই তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো এটিই চায় যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ ও সালাত থেকে তোমরা বিরত থাকো। সুতরাং এখনো কি তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকবে না?” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯০-৯১]
উক্ত আয়াতে মদ্যপানকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করা, তাকে অপবিত্র ও শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা, তা থেকে বিরত থাকার ইলাহী আদেশ, তা বর্জনে সমূহ কল্যাণ নিহিত থাকা, এরই মাধ্যমে শয়তান কর্তৃক মানুষে মানুষে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা এবং আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ ও সালাত থেকে গাফিল রাখার চেষ্টা এবং পরিশেষে ধমকের সুরে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ থেকে মদ্যপানের ভয়ঙ্করতার পর্যায়টি সুস্পষ্টরূপেই প্রতিভাত হয়।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَـمَّا حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ مَشَى أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ e بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، وَقَالُوْا: حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ وَجُعِلَتْ عِدْلاً لِلشِّرْكِ»
“যখন মদ্যপান হারাম করে দেওয়া হলো তখন সাহাবীগণ একে অপরের নিকট গিয়ে বলতে লাগলো: মদ হারাম করে দেওয়া হয়েছে এবং সেটাকে শির্কের পাশাপাশি অবস্থানে রাখা হয়েছে”।[1]
>আবূদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ মর্মে অসিয়ত করেন:
«لاَ تَشْرَبِ الْـخَمْرَ؛ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ»
“(কখনো) তুমি মদ পান করো না। কারণ, তা সকল অকল্যাণ ও অঘটনের চাবিকাঠি”।[1]
একদা বনী ইসরাঈলের জনৈক রাষ্ট্রপতি সে যুগের জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তিকে চারটি কাজের যে কোনো একটি করতে বাধ্য করে। কাজগুলো হলো: মদ্যপান, মানব হত্যা, ব্যভিচার ও শূকরের মাংস খাওয়া। এমনকি তাকে এর কোনো না কোনো একটি করতে অস্বীকার করলে তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিশেষে উক্ত ব্যক্তি বাধ্য হয়ে মদ্য পানকেই সহজ মনে করে তা করতে রাজি হলো। যখন সে মদ্য পান করে সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে গেলো তখন উক্ত সকল কাজ করাই তার জন্য সহজ হয়ে গেলো।
এ কথা সবারই জানা থাকা দরকার যে, হাদীসের পরিভাষায় সকল মাদক দ্রব্যকেই ‘খামর’ বলা হয় তথা সবই মদের অন্তর্ভুক্ত। আর মদ বলতেই তো সবই হারাম।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ»
“প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই মদ বা মদ জাতীয়। আর প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই তো হারাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, প্রত্যেক মদ জাতীয় বস্তুই হারাম”।[2]
আয়েশা, আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ, মু‘আবিয়া ও আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মধুর সুরার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
«كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ ، وَبِعِبَارَةٍ أُخْرَى: كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ»
“প্রত্যেক পানীয় যা নেশাকর তা সবই হারাম। অন্য শব্দে, প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই হারাম”।[3]
তেমনিভাবে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, যে বস্তুটি বেশি পরিমাণে সেবন করলে নেশা আসে তা সামান্য পরিমাণে সেবন করাও হারাম।
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ্, আব্দুল্লাহ ইবন আমর ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَمَا أَسْكَرَ كَثِيْرُهُ فَقَلِيْلُهُ حَرَامٌ»
“প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই হারাম এবং যে বস্তুটির বেশি পরিমাণ নেশাকর তার সামান্যটুকুও হারাম”।[4]
শুধু আঙ্গুরের মধ্যেই মদের ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা যে কোনো বস্তু থেকেও বানানো যেতে পারে এবং তা সবই হারাম।
নু‘মান ইবন বাশীর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ مِنَ الْعِنَبِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ التَّمْرِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْعَسَلِ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْبُرِّ خَمْرًا، وَإِنَّ مِنَ الشَّعِيْرِ خَمْرًا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: وَمِنَ الزَّبِيْبِ خَمْرًا»
“নিশ্চয় আঙ্গুর থেকে যেমন মদ হয় তেমনিভাবে খেজুর, মধু, গম এবং যব থেকেও তা হয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কিসমিস থেকেও মদ হয়।[5]
নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الْـخَمْرَ مِنَ الْعَصِيْرِ، وَالزَّبِيْبِ، وَالتَّمْرِ، وَالْحِنْطَةِ، وَالشَّعِيْرِ، وَالذُّرَةِ، وَإِنِّيْ أَنْهَاكُمْ عَنْ كُلِّ مُسْكِرٍ»
“নিশ্চয় মদ যেমন যে কোনো ফলের রস বিশেষভাবে আঙ্গুরের রস থেকে তৈরি হয় তেমনিভাবে কিসমিস, খেজুর, গম, যব এবং ভুট্টা থেকেও তা তৈরি হয়। আর আমি নিশ্চয় তোমাদেরকে প্রত্যেক নেশাকর দ্রব্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করছি”।[6]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মিম্বারে উঠে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পাঠের পর বললেন,
«نَزَلَ تَحْرِيْمُ الْـخَمْرِ وَهِيَ مِنْ خَمْسَةٍ: الْعِنَبِ وَالتَّمْرِ وَالْعَسَلِ وَالْحِنْطَةِ وَالشَّعِيْرِ، وَالْـخَمْرُ مَا خَامَرَ الْعَقْلَ»
“মদ হারাম হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। তখন পাঁচটি বস্তু দিয়েই মদ তৈরি হতো। আর তা হচ্ছে, আঙ্গুর, খেজুর, মধু, গম এবং যব। তবে মদ বলতে এমন সব বস্তুকেই বুঝানো হয় যা মানব ব্রেইনকে প্রমত্ত করে”।[7]
আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশ শ্রেণির লোককে লা‘নত তথা অভিসম্পাত করেছেন, আনাস ইবন মালিক ও আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন
«لَعَنَ رَسُوْلُ اللهِ رسول الله صلى الله عليه وسلم فِيْ الْـخَمْرِ عَشْرَةً: عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالْـمَحْمُوْلَةَ إِلَيْهِ، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَآكِلَ ثَمَنِهَا، وَالْـمُشْتَرِيَ لَهَا، وَالْـمُشْتَرَاةَ لَهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لُعِنَتِ الْـخَمْرُ بِعَيْنِهَا، وَفِي رِوَايَةٍ: لَعَنَ اللهُ الْـخَمْرَ وَشَارِبَهَا»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের ব্যাপারে দশজন ব্যক্তিকে লা‘নত বা অভিসম্পাত করেন: যে মদ বানায়, যে মূল কারিগর, যে পান করে, বহনকারী, যার নিকট বহন করে নেওয়া হয়, যে অন্যকে পান করায়, বিক্রেতা, যে লাভ খায়, খরিদদার এবং যার জন্য খরিদ করা হয়।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সরাসরি মদকেই অভিসম্পাত করা হয়।
কোনো কোন বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা অভিসম্পাত করেন মদ ও মদপানকারীকে ...”।[8]
কেউ দুনিয়াতে মদ পান করে থাকলে আখিরাতে সে আর মদ পান করতে পারবে না। যদিও সে জান্নাতী হোক না কেন। যদি না সে দুনিয়াতে তা থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে নেয়। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ فِيْ الدُّنْيَا لَمْ يَشْرَبْهَا فِيْ الْآخِرَةِ إِلاَّ أَنْ يَّتُوْبَ، وَفِيْ رِوَايَةِ الْبَيْهَقِيْ: وَإِنْ أُدْخِلَ الْـجَنَّةَ»
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করলো সে আর আখিরাতে মদ পান করতে পারবে না; যদি না সে দুনিয়াতে তা থেকে খাঁটি তাওবা করে নেয়। ইমাম বায়হাক্বীর বর্ণনায় রয়েছে, যদিও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়”।[9]
>[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০০৩; আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৫০, ৩৪৫৩
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০০১; আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৯, ৩৪৫১, ৩৪৫২, ৩৪৫৪
[4] আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮১; তিরমিযী, হাদীস ১৮৬৪, ১৮৬৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং৩৪৫৫, ৩৪৫৬, ৩৪৫৭
[5] আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৬; তিরমিযী, হাদীস ১৮৭২
[6] আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৭
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং নং ৪৬১৯, ৫৫৮১, ৫৫৮৮, ৫৫৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩০৩২; আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৬৯
[8] তিরমিযী, হাদীস ১২৯৫; আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৩, ৩৪৪৪
[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৫৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০০৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৩৬; বায়হাক্বী খণ্ড ৩, হাদীস নং ৫১৮১; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৬১
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مُدْمِنُ الْـخَمْرِ كَعَابِدِ وَثَنٍ
“অভ্যস্ত (Adicted) মাদকসেবী মূর্তিপূজক সমতুল্য”।[1]
আবু মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«مَا أُبَالِيْ شَرِبْتُ الْـخَمْرَ أَوْ عَبَدتُّ هَذِهِ السَّارِيَةَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عَزَّ وَ جَلَّ»
“মদ পান করা এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতিরেকে এ (কাঠের) খুঁটিটির ইবাদাত করার মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য করি না। কারণ, উভয়টিই আমার ধারণা মতে একই পর্যায়ের অপরাধ”।[2]
আবূদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ»
“অভ্যস্ত মাদকসেবী জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।[3]
তাছাড়া কোনো ব্যক্তি কোনো মাদকদ্রব্য সেবন করে নেশাগ্রস্ত বা মাতাল হলে আল্লাহ তা‘আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোনো সালাত কবুল করবেন না। আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّـارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْـخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا رَدْغَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ»
“কেউ মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হলে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবে যদি সে খাঁটি তাওবা করে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তাহলে আবারো তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবুও যদি সে খাঁটি তাওবা করে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তাহলে আবারো তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবুও যদি সে খাঁটি তাওবা করে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এরপর আবারো যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব হবে কিয়ামতের দিন তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজ”।[4]
[2] নাসাঈ, হাদীস ৫১৭৩; সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৬৫
[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৩৯
[4] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪০
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَزْنِيْ الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلا يَشْرَبُ الْـخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ؛ وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوْضَةٌ بَعْدُ»
“ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেওয়া হয়”।[1]
অনুরূপভাবে কোনো এলাকায় মদের বহুল প্রচলন ঘটলে তখন পৃথিবীতে স্বভাবতই ভূমি ধস হবে, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি ঘটবে এবং আকাশ থেকে আল্লাহর আযাব নিক্ষিপ্ত হবে। ইমরান ইবন হুসাইন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«فِيْ هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْـمُسْلِمِيْنَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَتَى ذَاكَ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْـمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْـخُمُوْرُ»
“এ উম্মতের মাঝে ভূমি ধস, মানুষের আঙ্গিক অথবা মানসিক বিকৃতি এবং আকাশ থেকে আল্লাহর আযাব নিক্ষিপ্ত হবে। তখন জনৈক মুসলিম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেটা আবার কখন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন গায়ক-গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ্য প্রচলন ঘটবে এবং মদ্য পান করা হবে”।[2]
এতদুপরি মদ পানের পাশাপাশি মদ পান করাকে হালাল মনে করা হলে সে জাতির ধ্বংস তো একেবারেই অনিবার্য। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اسْتَحَلَّتْ أُمَّتِيْ خَمْسًا فَعَلَيْهِمُ الدَّمَارُ: إِذَا ظَهَرَ التَّلاَعُنُ، وَشَرِبُوْا الْـخُمُوْرَ، وَلَبِسُوْا الْـحَرِيْرَ، وَاتَّخَذُوْا الْقِيَانَ، وَاكْتَفَى الرِّجَـالُ بِالرِّجَالِ، وَالنِّسَاءُ بِالنِّسَاءِ»
“যখন আমার উম্মত পাঁচটি বস্তুকে হালাল মনে করবে তখন তাদের ধ্বংস একেবারেই অনিবার্য। আর তা হচ্ছে, একে অপরকে যখন প্রকাশ্যে লা‘নত করবে, মদ্য পান করবে, সিল্কের কাপড় পরিধান করবে, গায়িকাদেরকে সাদরে গ্রহণ করবে, (যৌন ব্যাপারে) পুরুষ পুরুষের জন্য যথেষ্ট এবং মহিলা মহিলার জন্য যথেষ্ট হবে”।[3]
>[2] তিরমিযী, হাদীস নং ২২১২
[3] সাহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৮৬
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«ثَلاَثَةٌ لاَ تَقْرَبُهُمُ الْـمَلاَئِكَةُ: الْـجُنُبُ وَالسَّكْرَانُ وَالْـمُتَضَمِّخُ بِالْـخَلُوْقِ»
“ফিরিশতারা তিন ধরনের মানুষের নিকটবর্তী হয় না। তারা হচ্ছে, জুনুবী ব্যক্তি (যার গোসল ফরয হয়েছে) মদ্যপায়ী এবং খালূক্ব (যাতে জাফ্রানের মিশ্রণ খুবই বেশি) সুগন্ধি মাখা ব্যক্তি”।[1]
ঈমানদার ব্যক্তি যেমন মদ পান করতে পারে না তেমনিভাবে সে মদ পানের মজলিসেও উপস্থিত হতে পারে না। জাবির ও আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلاَ يَشْرَبِ الْـخَمْرَ، مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلاَ يَجْلِسْ عَلَى مَائِدَةٍ يُشْرَبُ عَلَيْهَا الْـخَمْرُ»
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন মদ পান না করে এবং যে মজলিসে মদ পান করা হয় সেখানেও যেন সে না বসে”।[2]
যে ব্যক্তি জান্নাতে মদ পান করতে ইচ্ছুক সে যেন দুনিয়াতে মদ পান না করে এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করতে সক্ষম হয়েও তা পান করে নি আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে জান্নাতে মদ পান করাবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّسْقِيَهُ اللهُ الْـخَمْرَ فِيْ الْآخِرَةِ فَلْيَتْرُكْهَا فِيْ الدُّنْيَا، وَمَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّكْسُوَهُ اللهُ الْـحَرِيْرَ فِيْ الْآخِرَةِ فَلْيَتْرُكْهُ فِيْ الدُّنْيَا»
“যার মন আনন্দিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে আখিরাতে মদ পান করাবেন সে যেন দুনিয়াতে মদ পান করা ছেড়ে দেয় এবং যার মনে আনন্দ অনুভূত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে আখিরাতে সিল্কের কাপড় পরাবেন সে যেন দুনিয়াতে সিল্কের কাপড় পরা ছেড়ে দেয়”।[3]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: مَنْ تَرَكَ الْـخَمْرَ وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ لَأَسْقِيَنَّهُ مِنْهُ فِيْ حَظِيْرَةِ الْقُدُسِ»
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যে ব্যক্তি মদ পান করতে সক্ষম হয়েও তা পান করেনি আমি তাকে অবশ্যই পবিত্র বিশেষ স্থান জান্নাতে মদ পান করাবো”।[4]
যে ব্যক্তি প্রথম বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে সালাত পড়তে পারলো না সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সব কিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ سُكْرًا مَرَّةً وَاحِدَةً؛ فَكَأَنَّمَا كَانَتْ لَهُ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا فَسُلِبَهَا، وَمَنْ تَرَكَ الصَّلاَةَ أَرْبَعَ مَرَّاتٍ سُكْرًا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ طِيْنَةِ الْـخَبَالِ، قِيْلَ: وَمَا طِيْنَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ جَهَنَّمَ»
“যে ব্যক্তি প্রথমবারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে সালাত ছেড়ে দিলো সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সব কিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি চতুর্থ বারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে সালাত ছেড়ে দিলো আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব হবে তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করানো। জিজ্ঞাসা করা হলো: ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজরক্ত”।[5]
[2] আহমদ, হাদীস নং ১৪৬৯২; ত্বাবারানী/কাবীর খণ্ড ১১, হাদীস ১১৪৬২; আওসাত্ব, হাদীস নং ২৫১০; দারেমী, হাদীস নং ২০৯২
[3] ত্বাবারানী/আওসাত্ব খণ্ড ৮, হাদীস নং ৮৮৭৯
[4] সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ২৩৭৫
[5] হাকিম, হাদীস নং ৭২৩৩; বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৬৯৯, ১৭১১৫; ত্বাবারানী/আওসাত্ব, হাদীস নং ৬৩৭১; আহমদ, হাদীস নং ৬৬৫৯
ত্বারিক ইবন সুওয়াইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিকিৎসার জন্য মদ তৈরি করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
«إِنَّهُ لَيْسَ بِدَوَاءٍ، وَلَكِنَّهُ دَاءٌ»
“মদ তো ঔষুধ নয়, বরং তা রোগই বটে”।[1]
উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيْمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ»
“আল্লাহ তা‘আলা হারাম বস্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য কোনো চিকিৎসা রাখেন নি”।[2]
নামের পরিবর্তনে কখনো কোনো জিনিস হালাল হয়ে যায় না। সুতরাং নেশাকর দ্রব্য যে কোনো আধুনিক নামেই সমাজে চালু হোক না কেন তা কখনো হালাল হতে পারে না। অতএব, তামাক, সাদাপাতা, জর্দা, গুল, পচা তথা মদো সুপারি ইত্যাদি হারাম। কারণ, তা নেশাকর। সামান্য পরিমাণেই তা খাওয়া হোক অথবা বেশি পরিমাণে। পানের সাথেই তা খাওয়া হোক অথবা এমনিতেই চিবিয়ে চিবিয়ে। ঠোঁট ও দাঁতের মাড়ির ফাঁকেই সামান্য পরিমাণে তা রেখে দেওয়া হোক অথবা তা গিলে ফেলা হোক। নেশা হিসেবেই তা ব্যবহার করা হোক অথবা অভ্যাসগতভাবে। মোটকথা, এটার সর্বপ্রকার ও সর্বপ্রকারের ব্যবহার সবই হারাম।
আবু উমামাহ বাহিলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تَذْهَبُ اللَّيَالِيْ وَالْأَيَّامُ حَتَّى تَشْرَبَ فِيْهَا طَائِفَةُ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ؛ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا»
“রাত-দিন যাবে না তথা কিয়ামত আসবে না যতক্ষণ না আমার একদল উম্মত মদ পান করে। তবে তা মদের নামেই পান করবে না বরং অন্য নামে”।[3]
‘উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَشْرَبُ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِيْ الْـخَمْرَ بِاسْمٍ يُسَمُّوْنَهَا إِيَّاهُ»
“আমার একদল উম্মত মদ পান করবে। তবে তা নতুন নামে যা তারা তখন আবিষ্কার করবে”।[4]
কেউ কেউ আবার মদ পান না করলেও মদের ব্যবসার সাথে যে কোনোভাবে অবশ্যই জড়িত। মদ পান না করলেও মদ বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও সিগারেট ও বিড়ি বিক্রির টাকা খান। ধূমপান না করলেও তিনি সাদাপাতা, গুল ও জর্দা খাওয়ায় সরাসরি জড়িত। বরং কেউ কেউ তো কথার মোড় ঘুরিয়ে অথবা কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে তা হালাল করতে চান। অন্যকে ধূমপান করতে নিষেধ করলেও নিজের পেটে কেজি কেজি সাদাপাতা ও জর্দা ঢুকাতে লজ্জা পান না। তাদের অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা উচিৎ। নিজে ভালো হতে না পারলেও অন্যকে ভালো হতে সুযোগ দেওয়া উচিৎ। আল্লাহর লা‘নতকে অবশ্যই ভয় পেতে হবে।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَـمَّا نَزَلَتِ الْآيَاتُ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ فِيْ الرِّبَا؛ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ e فَحَرَّمَ التِّجَارَةَ فِيْ الْـخَمْرِ»
“যখন সুদ সংক্রান্ত সূরা বাক্বারাহ্’র শেষ আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয় তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘর থেকে বের হয়ে মদের ব্যবসা হারাম করে দেন”।[5]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللهَ حَرَّمَ الْـخَمْرَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـمَيْتَةَ وَثَمَنَهَا، وَحَرَّمَ الْـخِنْزِيْرَ وَثَمَنَهُ»
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও। মৃত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও। শূকর হারাম করে দিয়েছেন এবং তার বিক্রিমূল্যও”।[6]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَعَنَ اللهُ الْيَهُوْدَ ـ ثَلاَثًا ـ إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَيْهِمُ الشُّحُوْمَ فَبَاعُوْهَا وَأَكَلُوْا أَثْمَانَهَا، وَإِنَّ اللهَ إِذَا حَرَّمَ عَلَى قَوْمٍ أَكْلَ شَيْءٍ حَرَّمَ عَلَيْهِمْ ثَمَنَهُ وَفِيْ رِوَايَةِ ابْنِ مَاجَةَ: فَجَمَلُوْهَا فَبَاعُوْهَا»
“আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত পড়ুক ইয়াহূদীদের ওপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বদ-দো‘আটি তিন বার দিয়েছেন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর চর্বি হারাম করে দিয়েছেন। তখন তারা তা সরাসরি না খেয়ে বিক্রি করে বিক্রিলব্ধ পয়সা খেলো। অথচ তাদের এ কথা জানা নেই যে, আল্লাহ তা‘আলা কোনো সম্প্রদায়ের উপর কোনো কিছু খাওয়া হারাম করে দিলে তার বিক্রিমূল্যও হারাম করে দেন। ইবন মাজাহর বর্ণনায় রয়েছে, যখন তাদের উপর চর্বি হারাম করে দেওয়া হয় তখন তারা চর্বিগুলো একত্র করে আগুনের তাপে গলিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিলো”।[7]
>[2] বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৯৪৬৩; ইবন হিব্বান খণ্ড ৪, হাদীস নং ১৩৯১
[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৭
[4] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৮
[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৯০, ৩৪৯১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৫
[6] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৮৫
[7] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৪৮৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৪৪৬
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَّظْهَرَ الْـجَهْلُ، وَيَقِلَّ الْعِلْمُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتُشْرَبَ الْـخَمْرُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ، حَتَّى يَكُوْنَ لِخَمْسِيْنَ اِمْرَأَةً قَيِّمُهُنَّ رَجُلٌ وَاحِدٌ»
“কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে এও যে, মূর্খতা বিস্তার লাভ করবে, জ্ঞান কমে যাবে, ব্যভিচার বেড়ে যাবে, মদ পান করা হবে, পুরুষ কমে যাবে এবং মহিলা বেড়ে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন মহিলার দায়িত্বশীল শুধু একজন পুরুষই হবে”।[1]
ক. নিয়মিত প্রচুর মাদকদ্রব্য সেবনে মানব মেধা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়।
খ. এরই মাধ্যমে সমাজে বহু প্রকারের খুন ও হত্যাকাণ্ড বিস্তার লাভ করে। তথা সামাজিক সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়।
গ. এরই মাধ্যমে অনেক পবিত্র চরিত্রবিশিষ্টা মহিলার ইজ্জত বিনষ্ট হয়। এরই সুবাদে দিন দিন সকল প্রকারের অপকর্ম, ব্যভিচার ও সমকাম বেড়েই চলছে। এমনো শোনা যায় যে, অমুক মদ্যপায়ী নেশার তাড়নায় নিজ মেয়ে, মা অথবা বোনের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে। এমন অঘটন করতে তো মুসলিম দুরে থাক, অনেক সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধও লজ্জা পায়।
মদ্যপায়ী ব্যক্তি কখনো কখনো নেশার তাড়নায় তার নিজ স্ত্রীকেও তালাক দিয়ে দেয়, অথচ সে তখন তা এতটুকু অনুভবও করতে পারে না। মূলত এ জাতীয় ব্যক্তির মুখে তালাক শব্দ বেশির ভাগই উচ্চারিত হতে দেখা যায়। আর এমতাবস্থায় সে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে সহবাস করার দরুন তা ব্যভিচার বলেই পরিগণিত হয়।
ঘ. এরই পেছনে কতো কতো মানব সম্পদ যে বিনষ্ট হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মাদকসেবীরা কখনো কখনো এক টাকার নেশার বস্তু একশ টাকা দিয়ে কিনতেও রাজি। তা হাতের নাগালে না পেলে তারা ভারী অস্থির হয়ে পড়ে।
ঙ. এরই মাধ্যমে কোনো জাতির সার্বিক শক্তি ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিনষ্ট হয়। কারণ, যুবকরাই তো জাতির শক্তি ও ভবিষ্যৎ। মাদকদ্রব্য সেবনের সুবাদে বহুবিধ অঘটন ঘটিয়ে কতো যুবক যে আজ জেলহাজতে রাত পোহাচ্ছে তা আর কারোর অজানা নেই।
চ. এরই কারণে কোনো জাতির অর্থনৈতিক, সামরিক ও উৎপাদন শক্তি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। কারণ, এ সকল ক্ষেত্র তো স্বভাবত যুবকদের উপরই নির্ভরশীল। ইতিহাসে প্রসিদ্ধ যে, খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে চাইনিজ ও জাপানীরা যখন পরস্পর যুদ্ধের সম্মুখীন হয় তখন চাইনিজরা পরাজয় বরণ করে। তারা এ পরাজয়ের খতিয়ান খুঁজতে গিয়ে দেখতে পায় যে, তাদের সেনাবাহিনীর মাঝে তখন আফিমসেবীর সংখ্যা খুবই বেশি ছিলো। তাই তারা পরাজিত হয়েছে।
ছ. মাদকদ্রব্য সেবন করার অনেকগুলো শারীরিক ক্ষতিও রয়েছে। তম্মধ্যে ফুসফুস প্রদাহ, বদহজমী, ব্যথা, অনিদ্রা, অস্থিরতা, খিঁচুনি ইত্যাদি অন্যতম। এ ছাড়াও মাদক সেবনের দরুন আরো অনেক মানসিক ও শারীরিক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যা বিস্তারিত বলার অবকাশ রাখে না।
জ. মাদকদ্রব্য সেবনের মাধ্যমে হিফাযতকারী ফিরিশ্তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়। কারণ, তারা এর দুর্গন্ধে কষ্ট পায় যেমনিভাবে কষ্ট পায় মানুষরা।
ঝ. মাদকদ্রব্য সেবনের কারণে মাদকসেবীর কোনো নেক ও দো‘আ চল্লিশ দিন পর্যন্ত কবুল করা হয় না।
ঞ. মৃত্যুর সময় মাদকসেবীর ঈমানহারা হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে।
ক. পরকালে যে সর্বকাজের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট জবাবদিহি করতে হবে সে চেতনা ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া।
খ. সন্তান প্রতিপালনে মাতা-পিতার বিশেষ অবহেলা। যে বাচ্চা ছোট থেকেই গান-বাদ্য, নাটক-ছবি দেখে অভ্যস্ত তার জন্য এ ব্যাপারটি অত্যন্ত সহজ যে, সে বড় হয়ে ধূমপায়ী, মদ্যপায়ী, আফিমখোর ও গাজাখোর হবে। এমন হবেই না কেন অথচ তার হৃদয়ে কুরআন ও হাদীসের কোনো অংশই গচ্ছিত নেই; যা তাকে সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম হবে। কিয়ামতের দিন এ জাতীয় মাতা-পিতাকে অবশ্যই কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।
গ. অধিক অবসর জীবন যাপন। কারণ, কেউ আল্লাহ তা‘আলার যিকির ও তাঁর আনুগত্য থেকে দূরে থাকলে, এমনকি দুনিয়ার যে কোনো লাভজনক কাজ থেকে দূরে থাকলেও শয়তান অবশ্যই তাকে বিপথগামী করবে।
ঘ. অসৎ সাথীবন্ধু। কারণ, অসৎ সাথীবন্ধুরা তো এটাই চাবে যে, তাদের দল আরো ভারী হোক। সবাই একই পথে চলুক। এ কথা তো সবারই মুখে মুখে রয়েছে যে, সৎ সঙ্গে সর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।