কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ব্যভিচার ও সমকামিতার ভয়াবহ পরিণতি ইসলামহাউজ.কম ৩৬ টি
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ব্যভিচার ও সমকামিতার ভয়াবহ পরিণতি ইসলামহাউজ.কম ৩৬ টি

সমাজ নিয়ে যারা গবেষণা করেন এবং সমাজ-জমির বুক থেকে যারা আগাছা তুলে ফেলার চেষ্টা করেন, তাদের মধ্যে লেখক মোস্তাফিজুর রহমান মাদানী সাহেব একজন। হক জেনে ও মেনে নিয়ে তার প্রচার করার গুরুদায়িত্ব এবং তার পথে তার অদম্য প্রয়াস ও প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

সমাজ-সংস্কারের সহায়করূপে কাজে দেবে তার এ পুস্তিকাটিও। সমাজে এত পাপ ও পাপীর দাপট যে, অনেকের সাপ থেকে বাঁচা সম্ভব, কিন্তু পাপ থেকে বাঁচা সহজ নয়। বিশ্বায়নের যুগে দীন-বিমুখ সমাজ বহুবিধ পাপের বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। তা দেখে-শুনে প্রত্যেক দায়িত্বশীলের যে কর্তব্য হওয়া উচিৎ, তার কিঞ্চিৎ বহিঃপ্রকাশ এ পুস্তিকার প্রণয়ন।

মহান আল্লাহর কাছে আকুল মিনতি, তিনি যেন আমাদেরকে ও লেখককে কলমের জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন। দেশ-বিদেশে ইসলামী সর্বাঙ্গ-সুন্দর পরিবেশ গড়ার মহান লক্ষ্যে পুস্তক রচনার কাজ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন এবং পাঠক-পাঠিকাকে পুস্তিকার নির্দেশানুযায়ী আমল করার প্রেরণা ও মুসলিম ঘর ও সমাজ গড়ার চেতনা দান করুন। আমীন।

বিনীত-

আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী

আল-মাজমাআহ, সঊদী আরব

৩০/১১/১১

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্য যিনি আমাদেরকে তা-কিয়ামত সফল জীবন অতিবাহনের পথ বাতলিয়েছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।

প্রতিনিয়ত লোকমুখে কিংবা পত্র-পত্রিকায় ব্যভিচার ও সমকামিতার দীর্ঘ ফিরিস্তি শুনে বা পড়ে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমই কমবেশি মর্মব্যথা অনুভব না করে পারেন না। আমি ও তাদেরই একজন। এমনকি সকল আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষই সর্বদা এ কথা ভেবে কম শঙ্কিত নন যে, হয়তো বা এক দিন আমাকেও এ কথা শুনতে হবে যে, তোমার পরিবার কিংবা বংশেও তো এ রকম গর্হিত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে; অথচ এ সম্পর্কে তোমার এতটুকুও খবর নেই। তাই অতি সত্বর এ সর্বনাশা ব্যাপক ব্যাধি থেকে উত্তরণের জন্য যে কোনো সঠিক পন্থা অনুসন্ধান করা নিজস্ব ধর্মীয় কর্তব্য বলে জ্ঞান করি। তাই প্রথমতঃ সবাইকে মৌখিকভাবে এ গর্হিত কর্ম প্রতিরোধের প্রতি প্রয়োজনীয় উৎসাহ প্রদান এবং এর ভয়ঙ্করতা বুঝাতে সচেষ্ট হই। কিন্তু তাতে আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ভাবলাম হয়তো বা কেউ মনযোগ দিয়ে শুনছেন না অথবা তা দীর্ঘক্ষণ ক্রিয়াশীল থাকার জন্য প্রয়োজন আন্দাযকাল মনোন্তকরণে বিদ্ধকরণকর্ম সম্পাদিত হচ্ছে না। তাই লেখালেখিকে দ্বিতীয় মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি; অথচ আমি এ ক্ষেত্রে নবাগত। কতটুকু সফলকাম হতে পারবো তা আল্লাহ মালুম। তবুও প্রয়োজনের খাতিরে ভুল-ত্রুটির প্রচুর সম্ভাবনা পশ্চাতে রেখে ক্ষুদ্র কলম খানা হস্তে ধারণের দুঃসাহসিকতা দেখাচ্ছি। সফলতা তো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই হাতে। তবে “নিয়্যাতের ওপরই সকল কর্মের ফলাফল নির্ভরশীল” রাসূল মুখনিঃসৃত এ মহান বাণীই আমার দীর্ঘ পথসঙ্গী।

অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লেখ হয়েছে সাধ্যমত উহার বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা নাসেরুদ্দীন আলবানী রহ.-এর হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।

শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল গুরুসামান্য যতটুকুই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোনো কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা সবার সহায় হোন।

এ পুস্তিকা প্রকাশে যে কোনো জনের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কোতাহী করছি না। ইহ ও পরকালে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেককে আকাঙ্খাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ প্রত্যাশা। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।

সর্বশেষে জনাব শাইখ আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছিনে। যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে পাণ্ডুলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তার অতীব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এর উত্তম প্রতিদান দিন এবং তার জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।

লেখক

ব্যভিচার একটি মারাত্মক অপরাধ। হত্যার পরই যার অবস্থান। কারণ, তাতে বংশ পরিচয় সঠিক থাকে না। লজ্জাস্থানের হিফাযত হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সামাজিক সম্মান রক্ষা পায় না। মানুষে মানুষে কঠিন শত্রুতার জন্ম নেয়। দুনিয়ার সুস্থ পারিবারিক ব্যবস্থা এতটুকুও অবশিষ্ট থাকে না। একে অন্যের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে দেয়। এ কারণেই তো আল্লাহ তা‘আলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যার পরই এর উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠﴾ [الفرقان: ٦٧، ٦٩]

“আর যারা আল্লাহ তা‘আলার পাশাপাশি অন্য কোনো উপাস্যকে ডাকে না। আল্লাহ তা‘আলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন যথার্থ (শরী‘আত সম্মত) কারণ ছাড়া তাকে হত্যা এবং ব্যভিচার করে না। যারা এগুলো করবে তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেওয়া হবে এবং তারা ওখানেই চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিতাবস্থায় থাকবে, তবে যারা তাওবা করে নেয়, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে; আল্লাহ তা‘আলা তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৮-৭০]

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ؟ قَالَ: أَنْ تَدْعُوَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَّطْعَمَ مَعَكَ ، قَالَ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: أَنْ تُزَانِيَ بِحَلِيْلَةِ جَارِكَ»

“জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহর রাসূল! কোনো পাপটি আল্লাহ তা‘আলার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বললো, অতঃপর কী? তিনি বললেন, নিজ সন্তানকে হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। সে বললো, অতঃপর কী? তিনি বললেন, নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা”।[1]

আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ব্যভিচারের কঠিন নিন্দা করেন। তিনি বলেন,

﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [الاسراء: ٣٢]

“তোমরা যিনা তথা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। কারণ, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩২]

তবে এ ব্যভিচার মুহরিমা (যে মহিলাকে বিবাহ করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে হারাম) এর সাথে হলে তা আরো জঘন্য। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা নিজ বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা সম্পর্কে বলেন,

﴿وَلَا تَنكِحُواْ مَا نَكَحَ ءَابَآؤُكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَۚ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَمَقۡتٗا وَسَآءَ سَبِيلًا ٢٢﴾ [النساء: ٢٢]

“তোমরা নিজেদের বাপ-দাদার স্ত্রীদেরকে বিবাহ করো না, তবে যা গত হয়ে গেছে তা আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয় তা অশ্লীল, অরুচিকর ও নিকৃষ্টতম পন্থা”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২২]

বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার চাচার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার হাতে ছিলো একখানা যুদ্ধের ঝাণ্ডা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বললেন,

«بَعَثَنِيْ رَسُوْلُ اللهِ e إِلَى رَجُلٍ نَكَحَ اِمْرَأَةَ أَبِيْهِ ؛ فَأَمَرَنِيْ أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ ، وَآخُذَ مَالَهُ»

“আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির নিকট পাঠিয়েছেন, যে নিজ পিতার স্ত্রী তথা তার সৎ মায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন তার গর্দান কেটে দিতে এবং তার সম্পদ হরণ করতে”।[2]মুহরিমাকে বিবাহ করা যদি এতো বড় অপরাধ হয়ে থাকে তা হলে তাদের সাথে ব্যভিচার করা যে কতো বড়ো অপরাধ হবে তা সহজেই বুঝা যায়।

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬

[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৪৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬৫৬
১. যৌনাঙ্গ হিফাযত সফলতা অর্জনের একটি বিশেষ মাধ্যম:

আল্লাহ তা‘আলা লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে সফলকাম বলেছেন। এর বিপরীতে অবৈধ যৌন সংযোগকারীকে ব্যর্থ, নিন্দিত ও সীমালঙ্ঘনকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ١ ٱلَّذِينَ هُمۡ فِي صَلَاتِهِمۡ خَٰشِعُونَ ٢ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِلزَّكَوٰةِ فَٰعِلُونَ ٤ وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٥ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٦ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٧﴾ [المؤمنون: ١، ٧]

“মুমিনরা অবশ্যই সফলকাম। যারা সালাতে অত্যন্ত মনোযোগী। যারা অযথা ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত। যারা যাকাত দানে অত্যন্ত সক্রিয়। যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারী অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী”। [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১-৭]

২. যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী কখনো নিন্দিত নয়, বরং সে একান্তভাবে সবার প্রশংসা পাওয়ার উপযুক্ত:

আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ব্যাপকভাবে মানব জাতির নিন্দা করেছেন। তবে যারা নিন্দিত নয় তাদের মধ্যে যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী অন্যতম।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ هُمۡ لِفُرُوجِهِمۡ حَٰفِظُونَ ٢٩ إِلَّا عَلَىٰٓ أَزۡوَٰجِهِمۡ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُمۡ فَإِنَّهُمۡ غَيۡرُ مَلُومِينَ ٣٠ فَمَنِ ٱبۡتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡعَادُونَ ٣١﴾ [المعارج: ٢٩، ٣١]

“আর যারা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী। তবে যারা নিজ স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীদের সঙ্গে যৌনকর্ম সম্পাদন করে তারা অবশ্যই নিন্দিত নয়। এ ছাড়া অন্যান্য পন্থায় যৌনক্রিয়া সম্পাদনকারীরা অবশ্যই সীমালংঘনকারী”। [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত: ২৯-৩১]

লজ্জাস্থান হিফাযতের কারণেই মারইয়াম আলাইহাস সালাম মহিলাদের মধ্যে বিশেষ পূর্ণতা লাভ করেছেন এবং পবিত্র কুর‘আন মাজীদে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَرۡيَمَ ٱبۡنَتَ عِمۡرَٰنَ ٱلَّتِيٓ أَحۡصَنَتۡ فَرۡجَهَا فَنَفَخۡنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا وَصَدَّقَتۡ بِكَلِمَٰتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِۦ وَكَانَتۡ مِنَ ٱلۡقَٰنِتِينَ ١٢﴾ [التحريم: ١٢]

“আল্লাহ তা‘আলা আরো দৃষ্টান্ত দিয়েছেন ইমরান তনয়া মারইয়ামের। যে নিজ সতীত্ব রক্ষা করেছে। ফলে আমরা তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছি এবং সে তার প্রভুর বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছে। সে ছিলো অনুগতদের অন্যতম”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১২]

৩. লজ্জাস্থান হিফাযত জান্নাতে প্রবেশের একটি বিশেষ চাবিকাঠি:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লজ্জাস্থান হিফাযতকারীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يَا شَبَابَ قُرَيْشٍ! احْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، لاَ تَزْنُوْا، أَلاَ مَنْ حَفِظَ فَرْجَهُ فَلَهُ الْـجَنَّةُ»

“হে কুরাইশ যুবকরা! তোমরা নিজ যৌনাঙ্গ হিফাযত করো। কখনো ব্যভিচার করো না। জেনে রাখো, যে ব্যক্তি নিজ লজ্জাস্থান হিফাযত করতে পেরেছে তার জন্যই তো জান্নাত”।[1]

সাহল ইবন সা‘আদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ يَّضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَـحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْـجَنَّةَ»

“যে ব্যক্তি উভয় চোয়ালের মধ্যভাগ তথা জিহ্বা এবং উভয় পায়ের মধ্যভাগ তথা লজ্জাস্থান হিফাযত করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো”।[2]

উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اِضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْـجَنَّةَ: اُصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا الْأَمَانَةَ إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ»

“তোমরা নিজ থেকেই ছয়টি কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করলে আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবো। তোমরা কথা বললে সত্য বলবে। ওয়াদা করলে তা পুরা করবে। কেউ তোমাদের নিকট কোনো কিছু আমানত রাখলে তা যথাযথভাবে আদায় করবে। লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। চোখকে নিম্নগামী করবে এবং হাতকে অসৎ কর্ম থেকে বিরত রাখবে”।[3]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا صَلَّتِ الْـمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْـرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا؛ دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْـجَنَّةِ شَاءَتْ»

“কোন মহিলা যদি রীতি মতো পাঁচ বেলা সালাত পড়ে, রামাদানের সাওম পালন করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে; উপরন্তু তার স্বামীর আনুগত্য করে তা হলে সে জান্নাতের যে কোনো গেট দিয়ে চায় ঢুকতে পারবে”।[4]

>
[1] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ২৪১০

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৭৪

[3] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ১৯০১

[4] সহীহুত তারগীবী ওয়াত তারহীবী, হাদীস নং ১৯৩১
৪. লজ্জাস্থান হিফাযত একান্তভাবে নেককারের পরিচয় বহন করে:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُ﴾ [النساء: ٣٤]

“সুতরাং যে সমস্ত নারী পুণ্যবতী তারাই স্বামীর আনুগত্য করে এবং তার অনুপস্থিতে তার সম্পদ ও নিজ সতীত্ব রক্ষা করে। যা আল্লাহ তা‘আলা রক্ষা করলেই তা রক্ষা পাওয়া সম্ভব”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]

৫. লজ্জাস্থান হিফাযত আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা পাওয়ার এক বিশেষ মাধ্যম:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ وَٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡقَٰنِتَٰتِ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰبِرَٰتِ وَٱلۡخَٰشِعِينَ وَٱلۡخَٰشِعَٰتِ وَٱلۡمُتَصَدِّقِينَ وَٱلۡمُتَصَدِّقَٰتِ وَٱلصَّٰٓئِمِينَ وَٱلصَّٰٓئِمَٰتِ وَٱلۡحَٰفِظِينَ فُرُوجَهُمۡ وَٱلۡحَٰفِظَٰتِ وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥﴾ [الاحزاب: ٣٥]

“নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মহিলা, মুমিন পুরুষ ও মহিলা, অনুগত পুরুষ ও মহিলা, সত্যবাদী পুরুষ ও মহিলা, ধৈর্যশীল পুরুষ ও মহিলা, বিনয়ী পুরুষ ও মহিলা, সাদাকাকারী পুরুষ ও মহিলা, সাওম পালনকারী পুরুষ ও মহিলা, নিজ লজ্জাস্থান হিফাযতকারী পুরুষ ও মহিলা এবং আল্লাহ তা‘আলাকে অধিক স্বরণকারী পুরুষ ও মহিলা এদের জন্যই আল্লাহ তা‘আলা রেখেছেন তাঁর ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]

৬. লজ্জাস্থান হিফাযত আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ ডাকে সাড়া দেওয়া:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ ٣١﴾ [النور: ٣٠، ٣١]

“(হে মুহাম্মাদ) তুমি মুমিনদেরকে বলে দাও, যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য প্রবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত। তেমনিভাবে তুমি মুমিন মহিলাদেরকেও বলে দাওঃ যেন তারা নিজ দৃষ্টিকে সংযত করে এবং নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০-৩১]

৭. লজ্জাস্থান হিফাযত অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের এক বিশেষ মাধ্যম:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلۡيَسۡتَعۡفِفِ ٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغۡنِيَهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِ﴾ [النور: ٣٣]

“যাদের বিয়ে করার (অর্থনৈতিক) কোনো সামর্থ্য নেই তারা যেন নিজ লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করে দেন”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৩]

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 পরের পাতা »