কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ৪১ টি
কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ৪১ টি
সফরের কতিপয় আদব-কায়দা এবং বিধি-বিধান (في السفر وشيء من آدابه وأحكامه)

সফরের সংজ্ঞা: পরিবার ও জন্মভূমী ত্যাগের নাম হচ্ছে সফর।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: সফর অনেক রকমের উদ্দেশ্যে হতে পারে, সে উদ্দেশ্য দ্বীনের (ইসলামের) জন্যও হতে পারে এবং দুনিয়াবী সংক্রান্তও হতে পারে।

সফরের হুকুম বা বিধান: যে উদ্দেশ্যে সফর করা হয় তার যা হুকুম (বিধান) তাই হবে সেই সফরের হুকুম।

  • অতএব সফর যদি কোন ইবাদাতের উদ্দেশ্যে শুরু করা হয় তবে উক্ত সফরও ইবাদাত বলে গণ্য হবে। যেমন, হাজ্জ, উমরা ও জিহাদের সফর।
  • আর যদি সফর কোন জায়েয (বৈধ) কাজের উদ্দেশ্যে শুরু করা হয় তবে উক্ত সফরও জায়েয বলে গণ্য হবে। যেমন, বৈধ ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর করা।
  • পক্ষান্তরে যদি কোন হারাম কাজের উদ্দেশ্যে সফর করা হয় তাহলে সফরের হুকুমও (বিধান) হারাম হবে। যেমন, কোন পাপ কাজ বা ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সফর করা।

আর যে ব্যক্তি হাজ্জ বা অন্য কোন ইবাদাতের উদ্দেশ্যে সফর করবে তার জন্য নিম্নের বিষয়সমূহের প্রতি গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক:

১। মহান আল্লাহর জন্য নিয়্যাতকে বিশুদ্ধ/নিখুঁত করা:

আর তা এভাবে যে, সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের সৎ উদ্দেশ্য রাখবে। যাতে করে তার যাবতীয় কথা, কাজ এবং খরচ-খরচা তার জন্য মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের উপায় হতে পারে। তার নেকী বৃদ্ধি পাবে, গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং তার মর্যাদা সুউচ্চ হবে।

নাবী (মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন:

وَإِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فِي امْرَأَتِكَ

তুমি যে কোন খরচে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা কর তাহলে তাতে তোমাকে তার নেকী দেয়া হবে, এমন কি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে তাতেও নেকী রয়েছে (ছহীহ বুখারী হা/১২৯৫, ছহীহ মুসলিম হা/১৬২৮)।

২। আল্লাহ যেসব সৎ কাজ ফরয করেছেন তা পালন করার এবং যে সব কথা ও কাজ হারাম করেছেন তা হতে বিরত থাকার জন্য আগ্রহী হওয়া।

  • সুতরাং যথা সময়ে জামা‘আত সহকারে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত কায়েম করায়, নিজ সফর সঙ্গীদের কল্যাণ কামনায়, সৎ কাজের উপদেশ দানে ও অন্যায় কাজে বাধা দানে এবং কৌশলের সাথে ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে আহবান করায় যত্নবান হবে।
  • অনুরূপ হারাম কথা ও হারাম কাজ হতে বিরত থাকায় তৎপর হবে। সুতরাং মিথ্যা, গীবত (পরনিন্দা), চুগোলখোরী, প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও অন্যান্য আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকবে।

৩। উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হবে। যেমন: দৈহিক শ্রম, জ্ঞান ও অর্থ দ্বারা দানশীলতার প্রমাণ পেশ করবে।

  • তাই সাহায্য-সহযোগিতার মুখাপেক্ষী ব্যক্তিকে সাহায্য করবে,
  • জ্ঞানপিপাষু ও শিক্ষার মুখাপেক্ষী ব্যক্তিকে জ্ঞান দান করবে এবং
  • নিজ ধন-সম্পদ নিজ প্রয়োজনে এবং মুসলিম ভাইদের প্রয়োজনে ব্যয় করে দানশীলতার বাস্তব রূপ দান করবে।
  • আর সফরে বের হওয়ার পূর্বে কিছুটা বেশী করে টাকা-পয়সা এবং সফর সম্বল নিয়ে নেয়া উচিৎ; কারণ, হঠাৎ তার প্রয়োজন হতে পারে অথবা অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
  • আর সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় যেন আপনি হাঁসিমুখে থাকেন, মনে উদারতা রাখেন, সন্তুষ্ট চিত্তে সময় কাটান, নিজ সাথী-সঙ্গীদেরকে খুশী রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং আপনি যেন তাদেরকে ভালবাসেন যাতে করে তারাও আপনাকে ভালবাসে। আর যদি সাথী-সঙ্গীদের পক্ষ হতে আপনার সাথে কোন রকম দুর্ব্যবহার করা হয় বা আপনার মতের উল্টো কাজ হয় তাহলে তাতে ধৈর্য ধারণ করা এবং ভাল পন্থায় তার সমাধান করা আবশ্যক। যাতে করে আপনি তাদের মাঝে মান সম্মান নিয়ে চলতে পারেন এবং তাদের মন জয় করতে সক্ষম হন।

৪। সফরের শুরুতে ও সফরকালীন যে সব দু‘আ-যিকির পাঠ করা নাবী (সা.) হতে প্রমাণিত, তার প্রতি আমল করবেন।

  • যার একটি হচ্ছে যানবাহনে পা রেখে (بِسْمِ الله) বিসমিল্লাহ পাঠ করবে।
  • যানবাহনে ভালভাবে বসে আল্লাহ পাকের নিয়ামত স্মরণ করবে যে, তিনি এ বাহন আমার জন্য সহজলভ্য করেছেন। অতঃপর নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করবে:

اللهُ أكْبَر، اللهُ أكْبَر، اللهُ أكْبَر، سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ . اللّهُمَّ إنا نسألكَ في سفرنا هذا البرّ والتَّقوى ، ومنَ العملِ ما ترضى ، اللَّهُمَّ هَوِّن عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا ، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ . اللَّهُمَّ أنْتَ الصَّاحِبُ في السَّفَرِ ، والخَلِيفَةُ في الأهْلِ . اللَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ ، وَكَآبَةِ المَنْظَرِ وَسُوءِ المُنْقَلَبِ في المالِ وَالأَهْلِ

[আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, সুবহা-নাল্লাযী সাখখারা লানা হাযা, ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুন ক্ব-লিবূন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্আলুকা ফী সাফারিনা হাযাল বিররা ওয়াত্তাক্বওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তারযা, আল্লাহুম্মা হাওয়িন আলাইনা সাফারানা হাযা, ওয়াত্‌য়ি আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আন্তাস্ সাহিবু ফিস্‌সাফারি, ওয়াল খলীফাতু ফিল আহলি। আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন ওয়া-সাইস্ সাফারি, ওয়া কাআ-বাতিল মানযারি, ওয়া সুইল মুনক্বালাবি ফিল মালি ওয়াল আহ্‌ল]

আল্লাহ সর্বাধিক মহান, আল্লাহ সর্বাধিক মহান, আল্লাহ সর্বাধিক মহান, আমি পবিত্রতা ঘোষনা করি তাঁর যিনি, এগুলোকে আমাদের (ব্যবহারের) জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন, অথচ আমরা এগুলোকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমরা আমাদের এই সফরে আপনার নিকট সৎ কর্ম ও পাপমূক্ত জীবন কামনা করি এবং এমন কাজ-কর্ম কামনা করি যাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ করে দাও এবং তার দূরত্ব সঙ্কুচিত করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি সফরের সঙ্গী এবং পরিবারে স্থলাভিসিক্ত। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সফরের কষ্ট হতে, খারাপ দৃশ্য দর্শন হতে এবং ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের অপ্রীতিকর অবস্থা থেকে আশ্রয় গ্রহণ করছি (ছহীহ মুসলিম হা/১৩৪২, ছহীহ: আবূ দাউদ হা/২৫৯৯, মুসনাদে আহমাদ হা/৬৩৭৪।)।

  • আর কোন উঁচু জায়গায় উঠার সময় তাকবীর (اَللهُ أَكْبَرُ আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে এবং কোন নীচু জায়গায় অবতরণের সময় তাসবীহ (سُبْحَانَ اللهِ সুবহানাল্লাহ) পাঠ করবেন (ছহীহ বুখারী হা/২৯৯৩, সুনানে দারিমী হা/২৭১৬, সুনানুল কুবরা বাইহাকী হা/১০৩৬)।
  • আর কোন স্থানে অবস্থানের সময় বলবে:

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

[আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত্ তা-ম্মা-তি মিন শার্‌রি মা খলাক্বা]

আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ বাণী দ্বারা আশ্রয় গ্রহণ করছি তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট হতে (ছহীহ মুসলিম হা/২৭০৮, সুনানে দারিমী হা/২৭২২, ইবনে মাজাহ হা/৩৫৪৭, তিরমিযী হা/৩৪৩৭)।

এ দু‘আ পাঠ করলে অন্যত্র না যাওয়া পর্যন্ত কোন কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারবে না।

 মুসাফিরের প্রতি সময়মত জামা‘আত সহকারে সলাত সম্পাদন করা অনুরূপ ফরয, যেমন মুক্বীম অবস্থায় জামা‘আতে সলাত আদায় করা ফরয।

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ইরশাদ করেন:

﴿وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلاَةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُواْ فَلْيَكُونُواْ مِن وَرَآئِكُمْ وَلْتَأْتِ طَآئِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّواْ فَلْيُصَلُّواْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُواْ حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ﴾ النساء102

আর যখন তুমি মু’মিনদের মাঝে অবস্থান করবে ও তাদের সঙ্গে সলাত কায়েম করবে তখন তাদের একটি দল যেন তোমার সঙ্গে দাঁড়ায় এবং সশস্ত্র থাকে, তাদের সাজদাহ করা হলে তারা যেন তোমাদের পশ্চাতে অবস্থান করে এবং যে দলটি সলাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সঙ্গে সলাত আদায় করে এবং সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে।[1]

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা যুদ্ধ অবস্থায় ভয় থাকা সত্ত্বেও উভয় দলের উপর জামা‘আত সহকারে সলাত আদায় করা ফরয করেছেন। সুতরাং শান্তি ও নিরাপত্তার অবস্থায় জামা‘আতে সলাত আদায় করা আরো বেশী ফরয। আর আল্লাহর রসূল (সা.) ও তাঁর সহচরগণ বাড়িতে মুক্বীম অবস্থায় এবং সফরে সর্বদা জামা‘আত সহকারে সলাত আদায় করতেন। এমনকি প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা.) বলেছেন:

وَلَقَدْ رَأيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إلاَّ مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ ، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤتَى بهِ ، يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ في الصَّفِّ

আমরা নিজেদেরকে (সাহাবীগণকে) দেখেছি যে, (তাঁরা সকলে জামা‘আতে সলাত আদায় করতেন,) জামা‘আত থেকে পিছনে থাকত একমাত্র মুনাফিক্ব (কপট ব্যক্তি) যার কপটতা ছিল সর্বজন বিদিত। আর এমনও কিছু মানুষ ছিল যাদেরকে দু‘জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে (বাড়ি থেকে মসজিদে) নিয়ে এসে কাতারে দাঁড় করানো হতো।[2]

আর উযূ ও পবিত্রতার ক্ষেত্রে যত্নবান হবে। তাই ছোট নাপাকী দূরীকরণের জন্য উযূ করবে; যেমন, পেশাব, পায়খানা, বায়ু নির্গত হওয়া এবং গভীর নিদ্রা।

আর বড় নাপাকী দূরীকরণের জন্য গোসল করবে। যেমন, বীর্যপাত বা সহবাস। আর যদি পানি না পাওয়া যায় অথবা যদি পানির পরিমাণ কম থাকে যা পানাহরের ক্ষেত্রে প্রয়োজন, তাহলে তায়াম্মুম করবে।

কেননা আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ইরশাদ করেছেন:

﴿وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاء أَحَدٌ مَّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاء فَلَمْ تَجِدُواْ مَاء فَتَيَمَّمُواْ صَعِيداً طَيِّباً فَامْسَحُواْ بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾ المائدة-6

আর যদি পীড়িত হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ যদি মলত্যাগ করে আসে কিংবা যদি তোমরা নারীদের সঙ্গে সঙ্গত হও আর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে, তা দিয়ে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের উপর সংকীর্ণতা চাপিয়ে দিতে চান না, তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান আর তোমাদের প্রতি তাঁর নি’আমাত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।[3]

উযূ এবং গোসলের পদ্ধতি তো সকলের জানা। আর তায়াম্মুমের পদ্ধতি হচ্ছে যে, উভয় হাত মাটিতে একবার মেরে তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে।

যেমন, নাবী (সা.) আম্মার বিন ইয়াসির (রা.) কে বললেন: তোমার জন্য মুখমণ্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করাই যথেষ্ট হবে।[4]

অপর একটি বর্ণনায় আছে: নাবী (সা.) নিজ হাত মাটিতে মেরে তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও নিজ হস্তদ্বয় মাসাহ করলেন।[5]

আর মনে রাখবে যে, তায়াম্মুমের পবিত্রতা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী পবিত্রতা। সুতরাং পানি পেলেই তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যাবে এবং পানি ব্যবহার করা ফরয হয়ে যাবে।

অতএব বড় অপবিত্রতার ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি তায়ম্মুম করার পর পানি পেলেই তার প্রতি তার অপবিত্রতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে গোসল করা ফরয হবে।

অনুরূপ মলত্যাগ করার পর তায়াম্মুম করে পবিত্রতা হাসিল করার পর পানি পেলে ছোট নাপাকী (অপবিত্রতা) দূরীকরণের উদ্দেশ্যে উযূ করা ফরয হয়ে পড়বে। একটি হাদীসে এসেছে:

إِنَّ الصَّعِيدَ الطَّيِّبَ طَهُورُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدْ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِينَ فَإِذَا وَجَدَ الْمَاءَ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَتَهُ فَإِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ

নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলিমের জন্য পবিত্রতার উপায়, যদিও সে ব্যক্তি দশ বছর ধরে পানি না পায়। অতঃপর পানি পেলে নিজ শরীরকে পানি স্পর্শ করাবে (উযু ফরয থাকলে উযূ করবে আর গোসল ফরয থাকলে গোসল করবে) ইহা তার জন্য কল্যাণকর।[6]

[1]. সূরাহ নিসা ৪:১০২

[2]. সহীহ মুসলিম ৬৫৪।

[3]. সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫:৬

[4]. সহীহ বুখারী ৩৪১।

[5]. সহীহ বুখারী ৩৪৩।

[6]. মুসনাদ আহমাদ, আবূ দাউদ ৩৫৭ ও তিরমিযী, হাদীসটি সহীহ, দেখুন, ইরওয়া হাঃ নং ১৫৩, মিশকাতুল মাসাবিহ ৫৩০।

মুসাফিরের জন্য সুন্নাত হলো, চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি কসর করে দুই রাক‘আত আদায় করা।

কারণ, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সা.)-এর সফর সঙ্গী হয়েছি, তিনি (চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি) কখনও দুই রাক‘আতের বেশী পড়তেন না। আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রা.) ও তাই করতেন।

মা আয়িশাহ (রা.) হতে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, সর্ব প্রথম সলাত দুই দুই রাক‘আত ফরয করা হয়। অতঃপর নাবী (সা.) মদীনায় হিজরাত করলে সেখানে চার চার রাক‘আত ফরয করা হয়, তবে সফরের সলাত আগের মতই (দুই দুই রাকাআত) বহাল রাখা হয়।[1]

তাই মুসাফিরের জন্য সুন্নাত হচ্ছে চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি কসর করে দুই রাক‘আত আদায় করা। আর এর সময় হচ্ছে মুসাফিরের নিজ শহর থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত। তার এই সফরের সময়সীমা দীর্ঘ হোক কিংবা অল্প হোক।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত যে নাবী (সা.) মাক্কায় উনিশদিন পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন যাতে তিনি চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি কসর করে দুই রাক‘আত আদায় করেছিলেন।[2]

তবে কোন মুসাফির যদি এমন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করে যে চার রাক‘আত পড়েন, সে ইমামকে সলাতের শুরু থেকে কিংবা সলাতের মধ্যে যে অবস্থায় পাবে, সর্বাবস্থায় মুসাফির মুকতাদীকেও চার রাক‘আত পড়া আবশ্যক।

কেননা নাবী (সা.) বলেছেন:

(إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَلَا تَخْتَلِفُوا عَلَيْه)

ইমাম এ জন্য বানানো হয়েছে যেন তাঁর অনুসরণ করা হয়, সুতরাং তাঁর বিরোধিতা করবে না।[3] নাবী (সা.) আরো বলেন:

(فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا)

যতটা ইমামের সঙ্গে পেলে তা আদায় কর আর যা ছুটে যায় তা পুরো করে নাও।[4]

প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, মুসাফির একা সলাত আদায় করলে দু‘রাকাআত পড়ে, আর যদি কোন মুক্বীম ইমামের পিছনে সলাত আদায় করে তবে চার রাক‘আত পড়ে এর কারণ কি? তখন তিনি উত্তরে বলেন, ইহাই হচ্ছে রসূল (সা.) এর সুন্নাত।

আর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) সফরে যখন ইমামের পিছনে সলাত আদায় করতেন তখন চার রাক‘আত পড়তেন। আর যখন একা সলাত আদায় করতেন তখন চার রাক‘আত বিশিষ্ট সলাতগুলি কসর করে দুই রাক‘আত সলাত আদায় করতেন।[5]

[1]. সহীহ বুখারী ১০৯০

[2]. সহীহ বুখারী ১০৮০

[3]. সহীহ বুখারী ৩৭৮ ও সহীহ মুসলিম ৪১১

[4]. সহীহ বুখারী ৬৩৬ ও সহীহ মুসলিম ৬০২

[5]. সহীহ মুসলিম ৬৯৪।
সফরে দুই ওয়াক্তের সলাত একত্রে আদায় করা

যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশার সলাত একত্রে পড়ার প্রয়োজন হলে মুসাফিরের জন্য ইহা সুন্নাত। বিশেষ করে যখন সফররত অবস্থায় থাকবে। সুতরাং দুই ওয়াক্ত সলাত একত্রিত করার ক্ষেত্রে সলাতের প্রথম ওয়াক্ত বা শেষ ওয়াক্তের মধ্যে যেটা সহজ হয় তাই করবে।

আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সা.) যদি সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে সফর শুরু করতেন তাহলে যুহর সলাতকে আসর পর্যন্ত বিলম্ব করে কোন স্থানে অবতরণ করতেন। অতঃপর দুই ওয়াক্ত জমা করে সলাত আদায় করতেন।[1] আর ভ্রমণ করার পূর্বে সূর্য ঢলে গেলে যুহর সলাত আদায় করে বাহনে আরোহণ করতেন।[2]

আর সুনানু বায়হাক্বীতে রয়েছে যে, আল্লাহর রসূল (সা.) এর সফর অবস্থায় সূর্য ঢলে পড়লে যুহর ও আসর একত্রিত করে আদায় করে নিতেন।

আর যদি মুসাফিরের দুই ওয়াক্ত সলাত জমা করে আদায় করার কোন প্রয়োজন না থাকে তাহলে জমা করবে না, যেমন কোন ব্যক্তি যদি এমন স্থানে অবস্থান করে থাকে যেখান থেকে পরবর্তী সলাতের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার প্রস্থান করার ইচ্ছা নেই তাহলে দুই ওয়াক্ত সলাত একত্রিত না করাই উত্তম; কারণ, এর কোন প্রয়োজন নেই। এ জন্যই নাবী (সা.) যখন বিদায় হাজ্জে মিনায় অবস্থান করেছিলেন তখন দু’ওয়াক্তের সলাত একত্রিত করে আদায় করেননি। কেননা এর কোন প্রয়োজন ছিল না।

[1]. সহীহ বুখারী ১১১১

[2]. সহীহ বুখারী ১১১২

মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম ব্যক্তির মতই সুন্নাত ও নফল সলাত আদায় করবে। যেমন, যুহার (চাশত) সলাত, তাহাজ্জুদ সলাত, বিতর সলাত, ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত ও অন্যন্য নফল সলাত আদায় করবে।

তবে যুহর, মাগরিব ও ইশার সুন্নাতে রাতিবা না পড়াই হচ্ছে সুন্নাত। মহান আল্লাহ পাক একমাত্র সর্বাধিক জ্ঞাত।

ইসলামী শরীয়াত মহান আল্লাহর পক্ষ হতে আগত যিনি প্রজ্ঞাময় ও মহাজ্ঞানী। সুতরাং তার প্রত্যেকটি বিধানে রয়েছে প্রজ্ঞা ও ন্যায়-নীতি। এজন্যই কোন ফরয-ওয়াজিব বিষয় পালন করা কোন মানুষের জন্য তখনই আবশ্যক হবে যখন তার শর্তাবলী বিদ্যমান হবে, যাতে করে তা ফরয হওয়া যুক্তি সংগত হয়। তারই একটি বিষয় হলো হাজ্জ ফরয হওয়া, যা কোন বান্দার উপর ফরয হয় না যতক্ষণ তা ফরয হওয়ার শর্তসমূহ না পাওয়া যায়। আর তা হলো:

১। প্রথম শর্ত: মুসলিম হওয়া (أن يكون مسلماً)। তাই কোন কাফিরের প্রতি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হাজ্জ ফরয নয়। অতএব আমরা তাকে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের জন্য আহবান করব, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে ইসলামের অন্যান্য ফরয বিষয় পালন করার নির্দেশ দিব। কারণ ইসলাম না থাকলে কোন আমল আল্লাহর নিকটে কবুল হবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেন:

وَمَا مَنَعَهُمْ أَن تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلاَّ أَنَّهُمْ كَفَرُواْ بِاللّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلاَ يَأْتُونَ الصَّلاَةَ إِلاَّ وَهُمْ كُسَالَى وَلاَ يُنفِقُونَ إِلاَّ وَهُمْ كَارِهُونَ

তাদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য গ্রহণ নিষিদ্ধ করার কারণ এ ছাড়া আর কিছু নয় যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অস্বীকার করে, সলাতে আসলে আসে শৈথিল্যভরে আর দান করলেও করে অনিচ্ছা নিয়ে।[1]

২। দ্বিতীয় শর্ত: বিবেক সম্পন্ন হওয়া (العقل)। তাই কোন পাগলের প্রতি হজ্জ ফরয নয়। আর পাগল থাকা অবস্থায় তাকে হজ্জ করালেও শুদ্ধ হবে না। কারণ, হজ্জের জন্য নিয়ত (মনের সংকল্প) হওয়া ফরয, আর ইহা পাগল দ্বারা সম্ভব নয়।

৩। তৃতীয় শর্ত: সাবালক হওয়া (البلوغ)। আর তার লক্ষণ হচ্ছে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়ের কোন একটি:

(১) বির্যপাত বা স্বপ্নদোষ হওয়া: কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

(وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ )النور59

তোমাদের শিশুরা যখন বয়োঃপ্রাপ্ত হবে তখন তারা যেন তোমাদের নিকট আসতে অনুমতি নেয়, যেমন তাদের বয়োজ্যোষ্ঠরা অনুমতি নেয়। এভাবে আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ খুবই স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, কারণ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।[2] নাবী (সা.) এর বাণী:

غُسْلُ يَوْمِ الجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ

জুমআর দিনে গোসল করা প্রত্যেক সাবালক ব্যক্তির উপর ওয়াজীব।[3]

(২) নাভীর নিচের চুল গজানো: আর তা হলো এমন খশখশে চুল যা লজ্জাস্থানের চার পার্শ্বে হয়ে থাকে। যার প্রমাণ আত্বীয়া কুরাযী -এর বর্ণিত হাদীস; তিনি বলেন, আমাদেরকে কুরায়যার যুদ্ধের দিনে নাবী (সা.) এর সামনে পেশ করা হয়। সুতরাং আমাদের মধ্যে যারা সাবালক ছিল কিংবা তার নাভীর নিচের চুল গজিয়ে ছিল তাকে শাস্তিমূলক হত্যা করা হয় আর যার এমনটি হয়নি তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।[4]

(৩) পনের বছর বয়স পূর্ণ হওয়া: যার প্রমাণ আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) এর বর্ণিত হাদীস; তিনি বলেন, আমাকে ওহোদ যুদ্ধের সময় নাবী (সা.) এর সামনে (যুদ্ধে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে পেশ করা হয় যখন আমার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর কিন্তু তিনি (এ বয়সে) আমাকে যুদ্ধের অনুমতি দেননি।[5]

ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম ইবনু হিববান (রহঃ) আরো অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, আমাকে নাবী (সা.) সাবালক বলে গণ্য করলেন না।

আর আমাকে খন্দক যুদ্ধের সময় নাবী (সা.) এর সামনে (যুদ্ধে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে পেশ করা হয় যখন আমার বয়স ছিল পনের বছর তখন তিনি আমাকে যুদ্ধে অংশ নেয়ার অনুমতি দেন। ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম ইবনু হিববান (রহঃ) বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে যে, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, আমাকে নাবী (সা.) সাবালক বলে গণ্য করলেন।

প্রখ্যাত তাবেঈ ইমাম নাফি’ (রহঃ) বলেন, আমি খালীফা উমার বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) এর খেলাফত আমলে তাঁর নিকট গেলে তাঁকে এই হাদীসটি শুনাই তখন তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে নাবালক ও সাবালকের মধ্যে সীমানা। অতঃপর তিনি নিজ গভর্ণরগণকে লিখেন যে, যে ব্যক্তি পনের বছর বয়সে পর্দাপণ করেছে তার সরকারী ভাতা নির্ধারিত করা হোক।

(৪) আর মেয়েদের সাবালিকা হওয়ার লক্ষণ ছেলেদের মতই। তবে চতুর্থ আর একটি বিষয় রয়েছে যা মেয়েদের সাবালিকা হওয়ার লক্ষণ, আর তা হলো, হায়য (মাসিক ঋতুস্রাব)। তাই কোন মেয়ের মাসিক ঋতুস্রাব হলেই সাবালিকা হয়ে যায়, যদিও তার বয়স দশ বছরের কম হয়।

সুতরাং ছেলে-মেয়েরা সাবালক সাবলিকা না হওয়া পর্যন্ত তাদের বয়সের স্বল্পতা এবং সাধারণতঃ ফরয বিষয়ের গুরু দায়িত্ব পালনে অযোগ্য হওয়ার কারণে তাদের প্রতি হাজ্জ ফরয হয় না। এর দলীল হচ্ছে নাবী (সা.) এর বাণী: তিন শ্রেণীর লোকের উপর থেকে শরিয়াতের কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে: ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ জাগ্রত না হয়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক যতক্ষণ সাবালক না হয়ে যায় এবং পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ বুদ্ধিমত্তা ফিরে না আসে।[6]

তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের হাজ্জ শুদ্ধ হবে। যার দলীল আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.)-এর বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন যে, নাবী (সা.) এর কোন এক কাফেলার সাথে রাওহা নামক স্থানে সাক্ষাৎ ঘটে। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কারা? তারা বলে, আমরা মুসলিম, তারা জিজ্ঞেস করে, আপনি কে? তিনি (সা.) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল। তখন জনৈকা মহিলা এক শিশুকে তাঁর সামনে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করেন, এর কি হাজ্জ হবে? তখন নাবী (সা.) বলেন: হ্যাঁ, আর তাতে তোমার (পরিশ্রমের জন্য) নেকী রয়েছে।[7]

সুতরাং নাবী (সা.) যখন শিশুর হাজ্জ সাব্যস্ত রাখলেন তাহলে হাজ্জের সাথে সংশিস্নষ্ট সব কিছুই সাব্যস্ত হবে। তাই তাকে ঐ সমস্ত ইহরামের অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে যা হতে প্রাপ্তবয়স্করা ইহরাম অবস্থায় বিরত থাকে। তবে বড়দের সাথে শিশুদের পার্থক্য হলো যে, শিশুরা ইহরামের অবস্থায় কোন নিষিদ্ধ কাজ ইচ্ছাকৃত ভাবে করে ফেললেও তা ভূলবশতঃ বলে গণ্য হবে। ফলে তারা যদি ইহরামের কোন নিষিদ্ধ কাজ করে ফেলে তাহলে তাদের উপর বা তাদের অভিভাবকদের উপর কোন ফিদয়া (মুক্তিপণ) দেয়া ফরয হবে না।

৪। চতুর্থ শর্ত: স্বাধীন হওয়া (الحرية)। সুতরাং কোন কৃতদাস বা কৃতদাসীর প্রতি দাসত্ব অবস্থায় থাকাকালীন হাজ্জ ফরয হবে না। কারণ, তাদের কোন ব্যক্তি মালিকানা নেই। (তারা যা কিছুই উপার্জন করে তা মনিবের) যার ফলে তারা অসামর্থবান।

৫। পঞ্চম শর্ত: আর্থিক ও দৈহিক দিক থেকে সামর্থবান হওয়া (الاستطاعة بالمال والبدن)। যাতে করে তার নিকট এতটা পরিমাণ সম্পদ থাকে যা দ্বারা তার হাজ্জের যাতায়াত এবং খাওয়া-থাকার খরচের ব্যবস্থা হয়ে যায়। আর এ হাজ্জে যাওয়ার পয়সা তার ঋণ পরিশোধ ও তার প্রতি ফরয ব্যয়বহন এবং তার পরিবারের পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, বিবাহ-শাদী, বাসস্থান, প্রয়োজনীয় বাহন ও বই-পুস্তক ইত্যাদীর উপর অতিরিক্ত যেন হয়। এর প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী:

(وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ )آل عمران97

আল্লাহর জন্য উক্ত ঘরের হাজ্জ করা লোকেদের উপর অবশ্য কর্তব্য যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে। আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে, (সে জেনে রাখুক) নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্ব জাহানের মুখাপেক্ষী নন।[8]

৬। আর মহিলাদের জন্য সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের সফর সঙ্গী হিসাবে মাহরামের (স্বামী বা এমন সাবালোক পুরুষ যার সাথে সফরে ইচ্ছুক মহিলার স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম) ব্যবস্থা হওয়া।

সুতরাং এমন মহিলার প্রতি হাজ্জ ফরয নয় যার কোন মাহরাম সফর সঙ্গীর ব্যবস্থা হবে না; কারণ, মহিলার জন্য বিনা মাহরামে সফর করা ইসলামী বিধানে নিষিদ্ধ। তাই কোন মহিলার জন্য বিনা মাহরামে হাজ্জ বা অন্য কোন সফর জায়েয নয়, সে সফর দূরের হোক কিংবা কাছের, তার সঙ্গে আরো অন্যন্য মহিলারা থাক বা না থাক, উক্ত মহিলা যুবতী, সুন্দরী হোক অথবা বৃদ্ধা ও কুৎসিত। আর সে সফর বিমানে হোক কিংবা অন্য কোন যানবাহনে হোক।

যার প্রমাণ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এর বর্ণিত হাদীস, তিনি প্রিয় নাবী (সা.)-কে খুতবায় বলতে শুনেছেন:

لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ وَلَا تُسَافِرْ الْمَرْأَةُ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ امْرَأَتِي خَرَجَتْ حَاجَّةً وَإِنِّي اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا قَالَ انْطَلِقْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِك) متفقٌ عَلَيْهِ

কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে তার মাহরাম ছাড়া নির্জনতা অবলম্বন না করে, আর কোন মহিলা যেন বিনা মাহরামে সফর না করে। তখন জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার স্ত্রী হাজ্জের উদ্দেশ্যে প্রস্ত্তত হয়েছে, আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লিখিয়ে ফেলেছি (এখন আমি কী করব?) নাবী (সা.) বললেন: যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হাজ্জ কর।[9]

নাবী (সা.) ঐ ব্যক্তিকে বিস্তারিত কিছু জিজ্ঞেস করেননি যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোন মহিলা আছে কি না? বা তার স্ত্রী যুবতী, সুন্দরী কি না? অথবা ইহাও জিজ্ঞেস করেননি যে, রাস্তায় নিরাপত্তা আছে কি না?

আর বিনা মাহরামে মহিলাদের সফর করতে নিষেধ করার রহস্য হচ্ছে মহিলাদের যাবতীয় অনিষ্ট ও ফিতনা থেকে সুরক্ষিত রাখা এবং তাদেরকে বদ প্রকৃতি মানুষ ও পাপিষ্টদের থেকে রক্ষা করা। কারণ, নারী জাতি জ্ঞানে-বুদ্ধির দিক থেকে দুর্বল এবং নিজের প্রতিরক্ষায় অপারগ, তার সাথে খারাপ চরিত্রের পুরুষরা তাদের সম্পর্কে অসৎ উদ্দেশ্য রাখতে পারে, ফলে কখনো মহিলা পুরুষদের দ্বারা প্রতারিতা হতে পারে বা ধর্ষিতাও হতে পারে। তাই যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে যে, মহিলা যেন মাহরামের সঙ্গে সফর করে যাতে করে সে তার সুরক্ষা ও হেফাযত করতে পারে। এজন্যই মাহরামের জন্য সাবালক এবং বিবেকসম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। সুতরাং মাহরাম নাবালক বা পাগল হলে তা যথেষ্ট নয়।

আর মাহরাম বলা হয়, স্বামী বা এমন সাবালক পুরুষ ব্যক্তিকে যার সাথে সফরে ইচ্ছুক মহিলার স্থায়ীভাবে বংশীয় সম্পর্কের কারণে, স্তন্যদানের সম্পর্কের কারণে কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বিবাহ হারাম।

ক। বংশীয় সম্পর্কের কারণে সাত প্রকারের পুরুষের সঙ্গে বিবাহ হারাম:

১। বংশের মূল ব্যক্তিরা, আর তারা হলেন বাবা, দাদা বা নানা এবং তাঁদের বাপ-দাদারা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই উপরের হোক না কেন, তাঁরা মায়ের পক্ষ থেকে হোক কিংবা বাবার পক্ষ থেকে হোক (অর্থাৎ বাবার দাদা ও নানা এবং মায়ের দাদা ও নানা)

২। বংশের শাখা-প্রশাখা: আর তারা হচ্ছে ছেলেরা, ছেলের ছেলেরা এবং মেয়ের ছেলেরা তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

৩। ভাইয়েরা, তারা আপন ভাই হোক, বৈ মাত্রীয় ভাই হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় ভাই হোক।

৪। চাচারা, আপন চাচা হোক, বৈ মাত্রীয় চাচা হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় চাচা হোক। আর তারা মহিলার চাচা হোক কিংবা মহিলার বাপ-দাদার চাচা কিংবা মহিলার মা বা দাদী-নানীর চাচা হোক। কারণ, ইসলামী বিধানে কোন ব্যক্তির চাচা তার ও তার ছেলে-মেয়ে পোতা-পোতিন ও নাতী-নাতিন সকলের চাচা বলে গণ্য হয়, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

৫। মামারা, আপন মামা হোক, বৈ মাত্রীয় মামা হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় মামা হোক। আর তারা মহিলার মামা হোক কিংবা মহিলার বাপ-দাদার মামা কিংবা মহিলার মা বা দাদী-নানীর মামা হোক। কারণ, ইসলামী বিধানে কোন ব্যক্তির মামা তার ও তার ছেলে-মেয়ে পোতা-পোতিন ও নাতী-নাতিন সকলের মামা বলে গণ্য হয়, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

৬। ভাইয়ের ছেলেরা (ভাস্তে), তাদের ছেলেরা এবং তাদের মেয়েদের ছেলেরা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন। তারা আপন ভাস্তে হোক, বৈ মাত্রীয় ভাস্তে হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় ভাস্তে হোক।

৭। বোনের ছেলেরা (ভাগ্নে), তাদের ছেলেরা এবং তাদের মেয়েদের ছেলেরা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন। তারা আপন বোনের ছেলে হোক, বৈ মাত্রীয় বোনের ছেলে হোক কিংবা বৈ পিত্রীয় বোনের ছেলে হোক।

খ। স্তন্যদানের সম্পর্কের কারণে ঐ সমস্ত মহিলাদের বিবাহ করা হারাম যারা বংশীয় সম্পর্কের কারণে হারাম। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

(يَحْرُمُ مِنْ الرَّضَاعِ مَا يَحْرُمُ مِنْ النَّسَب) متفق عليه

যে সব মহিলাদের বিবাহ করা বংশীয় সম্পর্কের কারণে হারাম তারা দুধ পানের করণেও হারাম হয়ে যায়।[10]

গ। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা মাহরাম তারা চার প্রকারের:

১। কোন মহিলার স্বামীর ছেলেরা (স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভের), তার স্বামীর ছেলেদের ছেলেরা (পৌত্র) এবং স্বামীর মেয়েদের ছেলেরা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

২। মহিলার স্বামীর বাবা, দাদা ও নানা, তারা বংশ পরম্পরায় যতই উপরের হোক না কেন।

৩। মহিলার মেয়েদের স্বামীরা (জামাই), তার ছেলেদের কন্যাদের স্বামীরা (পোতা জামাই) এবং তার মেয়েদের কন্যাদের স্বামীরা (নাতী জামাই), তারা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন। এই তিন শ্রেণীর লোকেরা বিবাহ বন্ধন হওয়া মাত্রই স্থায়ীভাবে হারাম হয়ে যাবে, যদিও স্ত্রীর সাথে নির্জনতা অবলম্বন বা মিলনের পূর্বে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

৪। মহিলার মায়ের স্বামীরা এবং মহিলার দাদী ও নানীর স্বামীরা তারা বংশ পরম্পরায় যতই উপরের হোক না কেন। তবে এই শ্রেণীর লোকেরা তাদের স্বামী-স্ত্রীর মিলন না হওয়া পর্যন্ত (শুধুমাত্র বিবাহ বন্ধনের কারণে) মাহরাম (স্থায়ীভাবে হারাম) সাব্যস্ত হবে না। সুতরাং কোন পুরুষ বিবাহ করার পরে মিলনের পূর্বেই যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয় তবে উক্ত পুরুষ তার এই তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর মেয়েদের জন্য মাহরাম বলে গণ্য হবে না, এই মেয়েরা বংশ পরম্পরায় যতই নিচের হোক না কেন।

যদি কোন ব্যক্তি আর্থিকভাবে সামর্থবান না হয় তাহলে তার প্রতি হাজ্জ ফরয নয়। আর যদি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয় কিন্তু শারীরিক দিক থেকে অপারগ, তাহলে দেখতে হবে যে, তার এই অক্ষমতা বিদূরিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? যদি তার এই বাধা দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যেমন এমন ব্যধি যার আরোগ্যের আশা রয়েছে তবে রোগের আরোগ্যতা লাভ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, অতঃপর নিজের হাজ্জ নিজেই সম্পাদন করবে। আর যদি অপারগতা এমন হয় যে তা বিদূরিত হওয়ার আশা করা যায় না; যেমন বার্ধক্য বা দূরারোগ্য ব্যধি, তাহলে যে কোন আল্লাহভীরু মুসলিম ব্যক্তিকে (পুরুষ হোক বা নারী) দিয়ে বদল হাজ্জ করিয়ে নিবে।

এর দলীল আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) এর বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন, খাস্’আম গোত্রের জনৈক মহিলা জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতার প্রতি তাঁর চরম বার্ধক্য অবস্থায় হাজ্জ ফরয হয়ে পড়েছে, কিন্তু তিনি বাহনের উপর বসতে মোটেই সক্ষম নন ? তিনি (সা.) উত্তরে বললেন: তুমি তার পক্ষ হতে হাজ্জ করে নাও।[11]

এই হচ্ছে হাজ্জের শর্তাবলী, কোন ব্যক্তির উপর হাজ্জ ফরয হওয়ার জন্য যা আবশ্যক। আর তা মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা, দয়া ও ন্যায়- নীতির অনুকুলে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:

(وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ حُكْماً لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ ) المائدة50

দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আইন-বিধান প্রদানে আল্লাহ হতে কে বেশী শ্রেষ্ঠ?[12]

>
[1]. সূরা তাওবাহ ৯: ৫৪

[2]. সূরাহ আন্-নূর ২৪:৫৯

[3]. সহীহ বুখারী ৮৭৯ ও সহীহ মুসলিম।

[4]. তিরমিযী, হাদীসটি সহীহ। এটা ছিল কুরায়যার গোত্রের ইয়াহুদীদের ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মহান আল্লাহর চুড়ান্ত ফায়সালা।

[5]. বুখারী ৪০৯৭ ও মুসলিম

[6]. মুসনাদ আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসঈ, এবং ইমাম হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

[7]. সহীহ মুসলিম

[8]. সূরা আল ইমরান ৩:৯৭

[9]. বুখারী ও মুসলিম ১৩৪১।

[10]. বুখারী ২৬৪৫ ও মুসলিম, ইবনে মাজাহ ১৯৩৭, নাসাঈ ৩৩০১।

[11]. মুসনাদ আহমাদ, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ

[12] সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫ঃ ৫০

মীক্বাত (ইবাদাতের স্থান ও সময়) দুই ভাগে বিভক্ত:

(১) মীক্বাত যামানী (কালগত মীক্বাত)

(২) মীক্বাত মাকানী (স্থানগত মীক্বাত)

মীক্বাত যামানী (কালগত মীক্বাত) একমাত্র হাজ্জের সাথে সংশিস্নষ্ট। পক্ষান্তরে উমরার জন্য কোন বিশেষ সময়কাল নির্ধারিত নেই। এর দলীল-প্রমাণ: আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:

الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ

হাজ্জ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে।[1] আর তা হল শাওয়াল, যুলকা’দাহ এবং যুলহাজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিন।[2]

আর মীক্বাত মাকানী (স্থানগত মীক্বাত) হলো পাঁচটি, যা আল্লাহর রসূল (সা.) নির্ধারিত করেছেন।

যেমন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) মীক্বাত নির্ধারিত করেছেন: মদীনাবাসীদের জন্য “যুলহুলাইফা” নামক স্থানকে (যার বর্তমান নাম আবয়ার আলী), শামবাসীদের জন্য “জুহফা” নামক স্থানকে, নজদবাসীদের জন্য “কারনুল মানাযিল” নামক স্থানকে (যার বর্তমান নাম আসসায়ল) এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য “ইয়ালামলাম” নামক স্থানকে।[3]

এই মীক্বাতগুলি এই এলাকাবাসীদের জন্যে এবং ঐ সব লোকের জন্যে যারা অন্য এলাকা থেকে এই পথ হয়ে আগমন করবে, যদি তারা হাজ্জ বা উমরার নিয়্যাতে আসে। (তাই কেউ যদি এই দুই উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে মক্কা আসে তাহলে তার বিনা ইহরামে মক্কা প্রবেশে কোন বাধা নেই)। আর যে ব্যক্তি মীক্বাতের ভিতরে অবস্থান করে সে নিজ গৃহ হতেই ইহরাম করবে, এমন কি মক্কাবাসী মক্কা হতেই ইহরাম করবে।[4]

আরো আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নাবী (সা.) ইরাক্ববাসীদের জন্যে “যাতু ইরক” নামক স্থানকে মীক্বাত নির্ধারিত করেন।[5]

১। প্রথম মীক্বাত: যুল হুলায়ফা, যাকে আব্য়ার আলীও বলা হয়। যা মদীনা থেকে প্রায় ১০ কি.মি. দূরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং মক্কা থেকে প্রায় চার শত পঞ্চাশ (৪৫০ কি. মি.) দূরে উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। ইহা মদীনাবাসী এবং যারা সেপথ হয়ে অতিক্রম করবে তাদের মীক্বাত।

২। দ্বিতীয় মীক্বাত: জুহ্ফা, ইহা একটি প্রাচীন গ্রাম, (যা মক্কা থেকে উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত) যেখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় এক শত পঁচাশী (১৮৫ কি. মি.)। এ গ্রামটি অনাবাদ হয়ে যাওয়ার কারণে লোকেরা বর্তমানে (জুহফার নিকটস্থ) রাবিগ শহর হতে ইহরাম বাঁধে। ইহা শাম বা সিরিয়া, মরোক্ক, মিসরের অধিবাসী এবং যারা সেই পথ হয়ে অতিক্রম করবে তাদের মীক্বাত। যদি তারা তার পূর্বে যুলহুলায়ফা হয়ে অতিক্রম না করে থাকে, কেননা যদি যুলহুলায়ফা হয়ে অতিক্রম করার পর যুহফা হয়ে আসে তাহলে যুলহুলায়ফা থেকেই ইহরাম করতে হবে।

৩। তৃতীয় মীক্বাত: কার্নুল মানাযিল, যার বর্তমান নাম “আস্সায়লুল কাবীর”। (যা মক্কা থেকে উত্তর-পূর্বে অবস্থিত) যেখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় পঁচাশি (৮৫ কি. মি.)। ইহা নাজদবাসী এবং যারা তাদের পথ হয়ে অতিক্রম করবে তাদের মীক্বাত।

৪। চতুর্থ মীক্বাত: ইয়ালামলাম্, যা তিহামা নামক এলাকার একটি পর্বত বা বিশেষ স্থানের নাম। (যা মক্কা থেকে দক্ষিনে অবস্থিত) যেখান থেকে মাক্কার দূরত্ব প্রায় বিরানব্বই (৯২ কি. মি.) যার বর্তমান নাম ‘সা’দিয়াহ’ ইহা ইয়মানবাসী এবং তাদের পথ হয়ে অতিক্রকারীদের মীক্বাত।

[বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে যে সব হাজীরা (জলপথে) জাহাজে ভারত মহাসাগর হয়ে হাজ্জের উদ্দেশ্যে আসতেন তাদেরও মীক্বাত ছিল ইয়ালামলাম্। কিন্তু বর্তমানে উড়োজাহাজে পূর্ব দিক থেকে আসার কারণে তাদের মীক্বাত হবে “কারনুল মানাযিল” যার বর্তমান নাম “আস্সায়লুল কাবীর”। সুতরাং উপমহাদেশ থেকে আগত হাজী সাহেবগণকে জেদ্দা অবতরণের পূর্বেই ইহরাম করে নিতে হবে]

৫। পঞ্চম মীক্বাত: যাতু ইর্ক, নাজদবাসীরা ইহাকে “যারীবাহ” বলে থাকে, (যা মক্কা থেকে পূর্ব উত্তরে অবস্থিত) যেখান থেকে মক্কার দূরত্ব প্রায় চুরানব্বই (৯৪ কি. মি.)। ইহা ইরাকবাসী এবং যারা এই পথ হয়ে অতিক্রম করবে তাদের মীক্বাত।

আর যে সকল লোকেরা এসমস্ত মীক্বাতের ভিতরে বসবাস করে তাদের মীক্বাত হচ্ছে নিজ নিজ গৃহ। সুতরাং তারা নিজ বাসস্থান থেকেই ইহরাম করবে। এমন কি মক্কাবাসীরা মক্কা থেকেই ইহরাম করবে, তবে উমরার ক্ষেত্রে হারাম এলাকায় বসবাসকারীরা ইহরাম বাঁধার উদ্দেশ্যে নিকটবর্তী হালাল এলাকায় গমন করবে।

কারণ, মা আয়িশা (রা.) যখন উমরা করার আকাঙ্খা প্রকাশ করলেন তখন প্রিয় নাবী (সা.) আব্দুর রাহমান বিন আবু বাকরকে বলেন: তোমার বোন আয়িশা (রা.)-কে হারাম এলাকা থেকে তানঈম নামক স্থানে (যা কা’বা ঘর থেকে নিকটবর্তী হালাল এলাকা, মাসজিদুল হারাম থেকে ৬ কি.মি. উত্তরে অবস্থিত) নিয়ে যাও, সে যেন সেখান থেকে উমরার ইহরাম করে।[6]

আর যে সব লোকের রাস্তা এ মীক্বাতগুলি থেকে ডানে বা বামে অবস্থিত তারা নিকটবর্তী মীক্বাতের বরাবর এসে ইহরাম বাঁধবে। আর যদি তারা এমন এলাকার লোক হয় যা কোন মীক্বাত বরাবর পড়ছে না যেমন সুডানের সাওয়াকিন নামক স্থানের অধিবাসীরা এবং যারা তাদের পথ হয়ে অতিক্রম করবে তারা জেদ্দা হতে ইহরাম করবে।

আর যদি কোন ব্যক্তি হাজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে এ মীক্বাতগুলি হয়ে অতিক্রম করে তাহলে বিনা ইহরামে মীক্বাত অতিক্রম করা জায়েয নয়। অতএব যদি কোন ব্যক্তি উড়োজাহাজে হাজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে সফর করে তাহলে আকাশ পথে মীক্বাত বরাবর হলেই ইহরাম করা ওয়াজিব। তাই এরকম ব্যক্তি মীক্বাত বরাবর হওয়ার পূর্বেই ইহরামের কাপড় পরিধান করে প্রস্ত্তত থাকবে। অতঃপর মীক্বাত বরাবর হলেই দ্রুত ইহরামের নিয়ত করে ফেলবে, এরকম লোকের জন্য জেদ্দা বিমান বন্দরে নেমে বিলম্বে ইহরাম করা জায়েয নয়। কারণ, ইহা মহান আল্লাহর সীমানালঙ্ঘন করার অমর্ত্মভুক্ত। আর আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

(وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ)

এগুলো আল্লাহর সীমারেখা, আর যে কেউ আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করে, সে নিজের উপরই যুলুম করে।[7]

(تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَعْتَدُوهَا وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللّهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ)

এগুলো আল্লাহর আইন, কাজেই তোমরা এগুলোকে লঙ্ঘন করো না, আর যারা আল্লাহর আইনসমূহ লঙ্ঘন করে তারাই যালিম।[8]

(وَمَن يَعْصِ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَاراً خَالِداً فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ)

আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন, সে তাতে চিরবাসী হবে এবং সে অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে।[9]

আর কোন ব্যক্তি যদি মীক্বাত হয়ে অতিক্রম করার সময় হাজ্জ কিংবা উমরার কোন উদ্দেশ্য না রাখে, অতঃপর মীক্বাতের ভিতরে গিয়ে তার হাজ্জ বা উমরা করার ইচ্ছা হয়, তাহলে যেখানে সে সংকল্প করেছে সেখান থেকেই ইহরাম করবে।

এর প্রমাণ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত মীক্বাত সম্পর্কীত হাদীস, নাবী (সা.) বলেন: যে ব্যক্তি মীক্বাতের ভিতরে অবস্থান করবে তার ইহরাম সেই স্থান থেকেই করবে যেখানে সে সংকল্প করেছে।[10]

আর যদি কেউ মীক্বাত হয়ে অতিক্রম করল, কিন্তু তার হাজ্জ বা উমরা করার কোন ইচ্ছা নেই বরং সে অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মক্কায় যাচ্ছে, যেমন বিদ্যার্জনের জন্য বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কিংবা রোগের চিকিৎসার জন্য অথবা ব্যবসা-বানিজ্য বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে, তাহলে তার প্রতি ইহরাম করা আবশ্যক নয় বিশেষ করে সে যদি এর পূর্বে তার ফরয হাজ্জ ও উমরা আদায় করে নিয়ে থাকে।

এর প্রমাণ ইবনু আব্বাস (রা.)-এর বর্ণিত উপরোল্লিখিত হাদীস, তাতে রয়েছে: এই মীক্বাতগুলি এই এলাকবাসীদের জন্যে এবং ঐ সব লোকের জন্যে যারা অন্য এলাকা থেকে এই পথ হয়ে আগমন করবে, যদি তারা হাজ্জ বা উমরার নিয়তে আসে। সুতরাং এই হাদীসের অর্থ ইহাই প্রকাশ পায় যে, কেউ যদি এই দুই উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে মক্কা আসে তাহলে তার প্রতি ইহরাম করা ওয়াজিব নয়।

আর মনে রাখবেন, যে ব্যক্তি ফরয হাজ্জ ও উমরা আদায় করে ফেলেছে তার প্রতি হাজ্জ ও উমরার নিয়ত করে মক্কা আসা আবশ্যক নয়; কেননা হাজ্জ ও উমরা জীবনে মাত্র একবার ফরয।

যার দলীল নাবী (সা.) এর হাদীস, যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়; হাজ্জ কি প্রতি বছর ফরয? উত্তরে তিনি (সা.) বলেন:

اَلْحَجُّ مَرَّةٌ, فَمَا زَادَ فَهُوَ تَطَوُّعٌ

হাজ্জ জীবনে একবার ফরয, তার বেশী যা হবে তা নফল।[11] আর উমরাও হাজ্জের মতই জীবনে মাত্র একবার ফরয। তবে যে ব্যক্তি হাজ্জের মাসে মীক্বাত হয়ে অতিক্রম করবে তার জন্য উত্তম হচ্ছে হাজ্জ বা উমরার ইহরাম করে মক্কায় প্রবেশ করা, যদিও পূর্বে সে ফরয হাজ্জ আদায় করে ফেলেছে। যাতে করে হাজ্জ ও উমরার নেকী হাসিল হয়ে যায় এবং মক্কায় প্রবেশের ইহরাম করার আবশ্যকতা সম্পর্কে যে ইমাগণের মতভেদ রয়েছে তা থেকে মুক্ত হতে পারে।

>
[1]. সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২ঃ ১৯৭

[2]. সহীহ বুখারী ১৫৬০ নং হাদীসের বাব দেখুন।

[3]. সহীহ বুখারী ১৫২৪, ১৫২৬, সহীহ মুসলিম ১১৮১, সুনানে দারিমী ১৮৩৩, নাসাঈ ২৬৫৩।

[4]. সহীহ বুখারী ১৫২৪, সহীহ মুসলিম ১১৮১, সুনানে দারিমী ১৮৩৩, নাসাঈ ২৬৫৩।

[5]. সুনান আবূ দাউদ ১৭৩৯ ও সুনান নাসঈ ২৬৫৩, সহীহ বুখারী ১৫৩১।

[6]. সহীহ বুখারী ১৫১৮ ও মুসলিম।

[7]. সূরাহ্ ত্বালাক্বঃ ১

[8]. সূরা আল-বাক্বারা: ২২৯

[9]. সূরাহ্ আন্-নিসাঃ ১৪

[10]. সহীহ বুখারী ১৫২৬, সহীহ মুসলিম।

[11]. সহীহ: মুসনাদে আহমাদ ২৩০৪, আবূ দাউদ ১৭২১ ও নাসাঈ ২৬২০।

হাজ্জ তিন ভাগে বিভক্ত:

(১) হাজ্জে তামাত্তু (২) হাজ্জে ক্বিরান ও ৩) হাজ্জে ইফরাদ।

প্রথম: হাজ্জে তামাত্তু অর্থাৎ হাজ্জের সঙ্গে উমরা পালনের মাধ্যমে লাভবান হওয়া। তার নিয়ম হলো, হাজ্জের মাসে শুধু মাত্র উমরার ইহরাম করবে, অতঃপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা ও মারওয়ার সাঈ ও চুল ছোট করার মাধ্যমে তা সমাপ্ত করে ইহরাম হতে হালাল হয়ে যাবে। অতঃপর সেই বছরেই হাজ্জের সময়ে (তারবিয়াহর দিন অর্থাৎ আটই যিলহাজ্জ) হাজ্জের ইহরাম করবে।

দ্বিতীয়: হাজ্জে ক্বিরান। তার নিয়ম হলো, হাজ্জের মাসে উমরা ও হাজ্জের এক সঙ্গে নিয়ত করে ইহরাম করা, কিংবা প্রথমত উমরার ইহরাম করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ আরম্ভ করার পূর্বেই তার সাথে হাজ্জে নিয়ত মিলিয়ে নেয়া। অতএব মক্কা পৌঁছালে তাওয়াফে কদূম করবে এবং উমরা ও হাজ্জের উদ্দেশ্যে সাফা ও মারওয়ার একটিমাত্র সাঈ করবে, তারপর ঈদের দিন পর্যন্ত নিজ ইহরামে অব্যাহত থাকবে। আর যদি কেউ তাওয়াফে কদূমের সাথে সাঈ না করে হাজ্জের তাওয়াফের (তাওয়াফে ইফাযা বা যিয়ারা) পর সাঈ করে তবুও জায়েয হবে। বিশেষ করে যদি সে ব্যক্তি মক্কায় বিলম্বে পৌঁছে থাকে এবং সাঈ করায় ব্যস্ত হয়ে গেলে হাজ্জ (আরাফায় অবস্থান) ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সাঈ পরে সম্পাদন করবে।

তৃতীয়: হাজ্জে ইফরাদ। তার নিয়ম হলো, হাজ্জের মাসে শুধু মাত্র হাজ্জের ইহরাম করা। অতএব মক্কা পৌঁছালে তাওয়াফে কদূম করবে এবং হাজ্জের উদ্দেশ্যে সাফা ও মারওয়ার সাঈ করবে, তারপর ঈদের দিন পর্যন্ত নিজ ইহরামে অব্যাহত থাকবে। আর যদি কেউ তাওয়াফে কদূমের সাথে সাঈ না করে কিরান হাজ্জকারীর মতই হাজ্জের তাওয়াফের (তাওয়াফে ইফাযা বা যিয়ারা) পর সাঈ করে তবুও জায়েয হবে।

এ বাখ্যা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, ইফরাদ হাজ্জকারী এবং ক্বিরান হাজ্জকারীর কর্যাবলী একই রকম। শুধুমাত্র পার্থক্য হচ্ছে যে, ক্বিরানকারীর প্রতি হাদী (কুরবানী) যবহ করা ওয়াজিব, ইফরাদ হাজ্জকারীর উপর ওয়াজিব নয়। কেননা ক্বিরান হাজ্জকারী হাজ্জের মাসে উমরা ও হাজ্জ দুটোই ইবাদাত সম্পাদন করে, পক্ষান্তরে ইফরাদ হাজ্জকারী ব্যক্তি শুধুমাত্র হাজ্জ সম্পাদন করে।

এ তিন প্রকারের হাজ্জের মধ্যে উত্তম হল হাজ্জে তামাত্তু। কারণ, নাবী (সা.) নিজ সহচরগণকে হাজ্জে তামাত্তুর নির্দেশ প্রদান করেন ও তার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। শুধু তাই নয়, বরং তাঁদেরকে তামাত্তু হাজ্জের উদ্দেশ্যে হাজ্জের নিয়ত উমরার নিয়তে পরিবর্তন করার আদেশ প্রদান করেন।

যেমন ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তাঁকে হাজ্জে তামাত্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তখন তিনি বলেন, মুহাজির, আনসারীগণ এবং নাবী (সা.) এর বিবিগণ বিদায় হাজ্জে ইহরাম করেন এবং আমরাও ইহরাম করি। অতএব মক্কা পৌঁছিলে নবী (সা.) বলেন: তোমাদের হাজ্জের ইহরামকে উমরায় পরিবর্তন করে নাও, তবে যারা হাদীর (কুরবানী) পশু সঙ্গে নিয়ে এসেছে তারা ইহরাম অবস্থায় থেকে কুরবানীর দিন কুরবানী যবহ করে হালাল হবে। (তারা উমরাহ্ করে হালাল হয়ে হাজ্জে তামাত্তু করতে পারবে না।) সুতরাং আমরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলাম, সাফা ও মারওয়ার সাঈ করলাম এবং নিজ নিজ স্ত্রীদের সঙ্গে মিলা-মেশা করলাম ও বিভিন্ন প্রকারের সিলাইকৃত কাপড় পরলাম।[1]

জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সা.) এর সঙ্গে হাজ্জের (হাজ্জে ইফরাদ) ইহরাম করে বের হয়েছিলাম, আমাদের সঙ্গে মহিলারা ছিল এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরাও ছিল। সুতরাং মক্কায় পদার্পণ করে বায়তুল্লার তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ করলাম। অতঃপর আল্লাহর রসূল (সা.) আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন: যার কাছে হাদী (কুরবানীর পশু) নেই সে যেন হালাল হয়ে যায়। জাবির (রা.) বলেন, আমরা বললাম, কোন ধরণের হালাল হবো? তিনি (সা.) উত্তরে বললেন: সম্পূর্ণরূপে হালাল হয়ে যাও। জাবির (রা.) বলেন, সুতরাং আমরা নিজ নিজ স্ত্রীদের সঙ্গে মিলা-মেশা করলাম, বিভিন্ন প্রকারের সিলাইকৃত কাপড় পরলাম এবং সুগন্ধী ব্যবহার করলাম। তারপর তারবিয়ার দিন (আটই যিলহাজ্জ) হলে আমরা হাজ্জের ইহরাম করি।[2]

মুসলিমের অপর একটি বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাদের মাঝে বক্তব্যের জন্য দাঁড়ালেন, অতঃপর বললেন:

قَدْ عَلِمْتُمْ أَنِّي أَتْقَاكُمْ لِلَّهِ وَأَصْدَقُكُمْ وَأَبَرُّكُمْ وَلَوْلَا هَدْيِي لَحَلَلْتُ كَمَا تَحِلُّونَ وَلَوْ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقْ الْهَدْيَ فَحِلُّوا فَحَلَلْنَا وَسَمِعْنَا وَأَطَعْنَا

তোমরা ভাল করে জানো যে, আমি সর্বাপেক্ষা বেশী আল্লাহকে ভয় করি, সর্বাপেক্ষা সত্য কথা বলি এবং সর্বাধিক নেক কর্ম করি। আমার নিকট যদি হাদী (কুরবানীর পশু) না থাকত তাহলে তোমাদের মতই (উমরা করে) হালাল হয়ে যেতাম আর যদি আমি পূর্বে জানতে পারতাম যা পরে জানলাম (যে, হাজ্জে তামাত্তু করা যাবে) তাহলে আমি হাদীর পশু সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম না। অতএব তোমরা হালাল হয়ে যাও। তাই আমরা নাবী (সা.) এর কথা শুনে তা মেনে (উমরা করে) হালাল হয়ে গেলাম।[3]

ইহা তামাত্তু হাজ্জের উত্তম হওয়ার স্পষ্ট দলীল। কারণ নাবী (সা.) বলেছেন:

لَوْ أَنِّي اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقْ الْهَدْيَ وَجَعَلْتُهَا عُمْرَةً فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ لَيْسَ مَعَهُ هَدْيٌ فَلْيَحِلَّ وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَة

যদি আমি পূর্বে জানতে পারতাম যা পরে জানলাম (যে, হাজ্জের মাসে উমরাহ্ পালনের মাধ্যমে হাজ্জে তামাত্তু করা যাবে) তাহলে আমি হাদীর (কুরবানীর) পশু সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম না এবং ইহাকে উমরাহ করে নিতাম। অতএব তোমাদের মধ্যে কারো সঙ্গে যদি হাদীর (কুরবানীর) পশু না থাকে তাহলে যেন সে উমরাহ করে হালাল হয়ে যায়।[4]

তাহলে রসূল (সা.) এর উমরা করে হালাল হওয়াই বাধা ছিল একমাত্র হাদী (কুরবানীর পশু) সঙ্গে নিয়ে আসা। আর হাজীর জন্য তামাত্তু করাই হচ্ছে সহজতর, কেননা তাতে হাজ্জ ও উমরার মাঝখানে হালাল হয়ে সম্ভোগ করতে পারে। আর ইহাই মহান আল্লাহর এই বাণীর উদ্দেশ্যের অনুকুলে, তাই ইরশাদ হচ্ছে:

(يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ )البقرة185

আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান, যা কষ্টদায়ক তা চান না।[5]

নাবী (সা.) বলেন: আমাকে সহজ-সরল ধর্মাদর্শ দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।[6]

কখনো হাজ্জে তামাত্তুর নিয়তে ইহরামকারী আরফায় অবস্থানের পূর্বে উমরা সম্পাদন করতে সক্ষম হয় না। যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে উমরার তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে উমরার মধ্যে হাজ্জকে ঢুকিয়ে নিয়ে ক্বিরান করে নিবে। এর দুটি দৃষ্টান্ত রয়েছে:

প্রথম দৃষ্টান্ত: কোন মহিলা তামাত্তুর নিয়তে উমরার ইহরাম করল, অতঃপর তাওয়াফ সম্পাদন করার পূর্বেই হায়য (মাসিক ঋতু) বা নিফাস (সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরে রক্তস্রাব) আরম্ভ হয়ে গেল। এমন কি আরাফায় অবস্থানের সময়ের পূর্বে সে পবিত্রতা অর্জন করতে পারল না, তাহলে সে হাজ্জের ইহরাম করে নিবে এবং নিজ হাজ্জকে হাজ্জে ক্বিরানে রূপান্তরিত করে ফেলবে। আর হাজীগণ যে সমস্ত কাজ করে তাই করবে একমাত্র বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ ছাড়া, পবিত্রতা অর্জন এবং গোসলের পরে তাওয়াফ করবে। (আর সাঈ তাওয়াফের পরে হওয়াই শরিয়াত সম্মত বিধান)।

দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত: কোন ব্যক্তি যদি তামাত্তুর নিয়তে উমরার ইহরাম করল, অতঃপর যদি আরাফায় অবস্থানের সময়ের পূর্বে সে মক্কায় প্রবেশ করতে সক্ষম না হয়, তাহলে হাজ্জকে উমরায় ঢুকিয়ে নিয়ে হাজ্জে ক্বিরান করে নিবে। কেননা সে উমরাহ সম্পাদন করার মত যথেষ্ট সময় পেল না।

[1]. সহীহ বুখারী ১৫৭২।

[2]. সহীহ মুসলিম ১২১৩।

[3]. সহীহ মুসলিম ১২১৬।

[4]. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২১৮।

[5] সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ১৮৫

[6]. আহমাদ, হাদীসটিকে ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সিলসিলা সহীহা হাঃ নঃ ২৯২৪
হাজ্জে কুরবানী ওয়াজিব এবং কুরবানীর পশুর বিবরণ

তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে যে, হাজ্জ হচ্ছে তিন প্রকার: হাজ্জে তামাত্তু, হজ্জে ক্বিরাণ এবং হাজ্জে ইফরাদ।

আর যে হাজ্জে কুরবানী ওয়াজিব তা হলো, হাজ্জে তামাত্তু ও হাজ্জে ক্বিরাণ।

তামাত্তুকারী ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে হাজ্জের মাসগুলিতে উমরার ইহরাম করে, অতঃপর তা হতে হালাল হয়ে সেই বছরের একই সফরে হাজ্জের ইহরাম করে। (আর হাজ্জের মাস হচ্ছে শাওয়াল, যিলক্বাদ এবং যিলহাজ্জ মাসেরর প্রথম দশ দিন।[1])

সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি শাওয়াল মাস আসার পূর্বেই উমরার ইহরাম করে এবং (বাকি সময়টা) মক্কায় অবস্থান করে সেই বছরেই হাজ্জও করে তাহলে তার প্রতি হাদী (কুরবানী) যবহ করা ওয়াজিব হবে না। কারণ, সে তামাত্তুকারী নয়; কেননা সে হাজ্জের মাস আসার পূর্বেই উমরার ইহরাম করেছে।

তেমনি কোন ব্যক্তি যদি শাওয়াল মাস আসার পর উমরার ইহরাম করে এবং হাজ্জ পরের বছর সম্পাদন করে তাহলে তার প্রতিও হাদী (কুরবানী) যবহ করা ওয়াজিব হবে না। কারণ, সে তামাত্তুকারী নয়; কেননা সে উমরা এক বছরে এবং হাজ্জ পরের বছরে আদায় করল।

অনুরূপ যদি কোন ব্যক্তি হাজ্জের মাসে উমরার ইহরাম করে এবং ইমরা হতে হালাল হয়ে নিজ দেশে বা বাড়িতে ফিরে চলে আসে, অতঃপর শুধু হাজ্জের ইহরাম করে মক্কায় ফিরে আসে তবুও সে তামাত্তুকারী বলে গণ্য হবে না; কারণ, সে পৃথক সফরে শুধু হাজ্জের নিয়তে ইহরাম করেছে।

আর ক্বিরাণ হাজ্জ এমন হাজ্জকে বলা হয় যে, কোন ব্যক্তি উমরা ও হাজ্জের ইহরাম একই সঙ্গে করল কিংবা প্রথম উমরার ইহরাম করল। অতঃপর উমরার তাওয়াফ শুরু করার পূর্বেই তার সাথে হাজ্জের নিয়ত মিলিয়ে নিল। যেমন এর পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

হাজ্জে তামাত্তুকারী ও ক্বিরাণকারীর প্রতি হাদী (কুরবানী) যবহ করা ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে যে, সে যেন মক্কা বা হারামের এলাকার অধিবাসী না হয়। সুতরাং যারা মক্কা বা হারামের এলাকার অধিবাসী তাদের উপর হাদী (কুরবানী) যবহ করা ওয়াজিব নয়। যার দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ )البقرة 196

যে কেউ উমরাহকে হাজ্জের সঙ্গে মিলিয়ে উপকার লাভ করতে উচ্ছুক, সে যেমন সম্ভব কুরবানী দিবে এবং যার পক্ষে সম্ভব না হয়, সে ব্যক্তি হাজ্জের দিনগুলোর মধ্যে তিনদিন এবং গৃহে ফেরার পর সাতদিন, এ মোট দশদিন সিয়াম পালন করবে। এটা সেই লোকের জন্য, যার পরিবারবর্গ মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়।[2]

আর জেদ্দাবাসীরা হাজ্জে তামাত্তু বা ক্বিরান করলে তাদের প্রতি হাদী (কুরবানী) করা ওয়াজিব। কারণ, তারা মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়। তবে যদি মক্কার অধিবাসী বিদ্যার্জনের জন্য বা অন্য কোন উদ্দেশে মক্কার বাইরে সফর করে, অতঃপর হাজ্জে তামাত্তু বা ক্বিরানের নিয়তে মক্কা ফিরে আসে তাহলে তার প্রতি হাদী (কুরবানী) করা ওয়াজিব হবে না। কারণ, এক্ষেত্রে তার বাসস্থানকে কেন্দ্র করতে হবে, আর তা হলো মক্কাহ্ মুকার্রামাহ্।

আর যদি কোন মক্কার অধিবাসী বসবাসের উদ্দেশ্যে অন্য কোন এলাকায় চলে যায়, তারপর তামাত্তু বা ক্বিরাণ হাজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় ফিরে আসে তাহলে তার প্রতি হাদী (কুরবানী) করা ওয়াজিব। কারণ, সে বর্তমান মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়।

হাজ্জে তামাত্তুকারী বা ক্বিরাণকারী যদি হাদী (কুরবানীর পশু) না পায় বা তার খরচ-খরচা এবং বাড়ি ফিরে আসার মত পয়সার অতিরিক্ত কুরবানী ক্রয় করার পয়সা না থাকে তাহলে তার প্রতি হাদী (কুরবানী) ওয়াজিব হবে না, বরং তার সিয়াম পালন করা আবশ্যক হবে। যার দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ذَلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ) البقرة 196

যে কেউ উমরাকে হাজ্জের সঙ্গে মিলিয়ে উপকার লাভ করতে উচ্ছুক, সে যেমন সম্ভব কুরবানী দিবে এবং যার পক্ষে সম্ভব না হয়, সে ব্যক্তি হাজ্জের দিনগুলোর মধ্যে তিনদিন এবং গৃহে ফেরার পর সাতদিন, এই মোট দশদিন সিয়াম পালন করবে। এটা সেই লোকের জন্য, যার পরিবারবর্গ মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়।[3]

আর এ তিনদিনের সিয়াম তাশরীক্বের দিনগুলিতে রাখা জায়েয। আর তা হলো, যিলহাজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারীখ।

এর প্রমাণ, আয়িশা ও আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.)-এর উক্তি: তাশরীক্বের দিনগুলিতে একমাত্র ঐ সব লোকেদের ছাড়া যারা হাদী (কুরবানী) করতে সক্ষম নয়, অন্য লোকেদের সিয়াম রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি।[4]

আর যদি উপলব্ধী করতে পারে যে, সে কুরবানী দিতে পারবে না তাহলে উমরার ইহরাম করার পরেই তিনটি সিয়াম পালন করা জায়েয। এর প্রমাণ, নাবী (সা.) এর বাণী:

دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ إلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

কিয়ামাত পর্যন্ত উমরা হাজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে।[5]

সুতরাং কেউ যদি উমরার অবস্থায় তিনটি সিয়াম পালন করে তাহলে সে হাজ্জের দিনেই সিয়াম পালন করল। তবে ঈদের দিনে এই সিয়াম পালন করবে না।

কেননা আবূ সাঈদ খুদরী (রা.)-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, নাবী (সা.) দুই দিনে সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন: ঈদুল ফিতিরের দিন এবং ঈদুল আযহার দিন।[6]আর এই সিয়ামগুলি পরস্পর রাখা এবং বিরতি দিয়েও রাখা জায়েয। তবে তাশরীক্বের দিনগুলির পরে রাখবে না। আর অবশিষ্ট সাতটি সিয়াম নিজ গৃহে ফিরার পরে মন চাইলে বিনা বিরতিতে অথবা বিরতি দিয়ে আদায় করবে। কারণ, আল্লাহ পাক এই সিয়াম ওয়াজিব করেছেন, কিন্তু এক নাগাড়ে সিয়াম পালনের শর্তারোপ করেননি।

>
[1]. সহীহ বুখারী ১৫৬০ নং হাদীসের বাব দেখুন।

[2]. সূরা বাক্বারা ২ঃ ১৯৬

[3]. সূরা বাক্বারা ২ঃ ১৯৬

[4]. সহীহ বুখারী ১৯৯৭-১৯৯৮।

[5]. সহীহ: তিরমিযী ৯৩২, আবূ দাঊদ ১৭৯০, মুসনাদে আহমাদ ২১১৫

[6]. সহীহ মুসলিম ১১৩৮, সহীহ বুখারী ১৯৯৩
কুরবানীর পশু সম্পর্কীয় কতিপয় মাসায়িল

প্রথম মাস’আলা: কুরবানীর পশুর ধরণ

কুরবাণীর পশুর ধরণ হচ্ছে: উঁট, গরু, ছাগল, দুম্বা বা মেষ। এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكاً لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ)الحج 34

আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি। তাদেরকে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিযক্ দেয়া হয়েছে সেগুলোর উপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। কারণ, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য, কাজেই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর আর সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে।[1]

আর গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হলো: উঁট, গরু, ছাগল, দুম্বা বা মেষ। আর কুরবানীতে একটি ছাগল, মেষ বা দুম্বা একজনের পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে।

পক্ষান্তরে একটি উঁট বা গরু সাতজনের পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে।

এর দলীল জাবির (রা.)-এর বর্ণিত হাদীস; তিনি বলেন, আমাদেরকে আল্লাহর রসূল (সা.) উঁট ও গরুর ক্ষেত্রে সাতজনকে একটি পশুতে ভাগ নিতে নির্দেশ করেন।[2]

দ্বিতীয় মাস’আলা: কুরবানীর পশুতে যে সব গুণ থাকা আবশ্যক

আর তা হচ্ছে দু’টি:

১। পশুর শরীয়াত নির্ধারিত বয়স হওয়া। আর তা হচ্ছে, উঁটের বয়স পাঁচ বছর সম্পূর্ণ হওয়া, গরুর বয়স দুই বছর সম্পূর্ণ হওয়া, ছাগলের বয়স এক বছর সম্পূর্ণ হওয়া, মেষ বা দুম্বার বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়া। এর কম বয়সের হলে তা কুরবানীতে যথেষ্ট হবে না। এর দলীল নবী (সা.) এর হাদীস:

لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنْ الضَّأْنِ

তোমরা দাঁতা পশু ব্যতীত অন্য কোন পশু (কুরবানীতে) যবহ করবে না। তবে যদি তোমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে তাহলে দুম্বা বা মেষের জায্’আ (যার বয়স ছয় মাস) যবহ্ করবে।[3]

২। চারটি দোষ হতে কুরবানীর পশুর মুক্ত হওয়া, যা থেকে নাবী (সা.) কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে বেঁচে থাকতে বলেছেন। আর তা হলো:

  1. স্পষ্ট কানা হওয়া। আর দুই চোখের অন্ধ হওয়া আরো বড় দোষ, তাই তা যথেষ্টে হবে না।
  2. স্পষ্ট রোগী হওয়া, যেমন চুলকানী-পাচড়া বা অন্য কোন ব্যধীতে আক্রান্ত হওয়া।
  3. স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া এবং এমন অচল হওয়া যা চলতে পারে না। তাই কোন একটি পা কাটা হওয়া আরো বড় দোষ।
  4. আর এমন দুর্বল হওয়া যার শরীরে কোন মাংস নেই।[4]

এর দলীল ইমাম মালিক মু‘আত্তা নামক হাদীস গ্রন্থে বারা বিন আযিব (রা.) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়; কোন্ কোন্ ধরণের পশু কুরবানী করা হতে বিরত থাকতে হবে? তখন তিনি (সা.) নিজ হাতের ইঙ্গিতে বলেন: চারটি দোষেযুক্ত পশুর কুরবানী করা হতে বিরত থাকবে। আর বারা (রা.) নিজ হাতের ইশারা করতেন এবং বলতেন, আমার হাত আল্লাহর রসূল (সা.) এর হাত হতে খাট। (তিনি যে চারটি দোষের কথা বলেন তা হল) স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া, স্পষ্ট কানা হওয়া, স্পষ্ট রোগী হওয়া এবং এমন দুর্বল হওয়া যার গায়ে কোন মজ্জা নেই। তবে এর থেকে ছোট ধরণের দোষ যেমন, পশুর কান কাটা বা সিং ভাঙ্গা হওয়া; এমন পশুর কুরবানী করা মাকরূহ (অপছন্দনীয়), কিন্তু সঠিক মতে তার কুরবানী শুদ্ধ হওয়াতে কোন বাধা নেই।

আর কুরবানীর পশুতে যে সব গুণ থাকা উত্তম: তা হলো, কুরবানীর পশুর মোটা হওয়া, শক্তিশালী হওয়া, দৈহিক গঠনে বড় হওয়া এবং দেখতে সুন্দর হওয়া। সুতরাং কুরবানীর পশু যত ভাল হবে ততই মহান আল্লাহর নিকট তা প্রিয় হবে। আর সহীহ হাদীসে রয়েছে, আল্লাহ সুন্দর ও উত্তম, তাই তিনি সুন্দর ও উত্তম ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না।

তৃতীয় মাস’আলা: (হাদী) কুরবানীর পশু যবাহ করার স্থান

তা হচ্ছে ‘মিনা’। তবে মক্কায় বা হারামের যে কোন এলাকায় (হাদী) হাজ্জের কুরবানী যবহ করা জায়েয। এর দলীল নবী (সা.) এর বাণী:

كُلُّ عَرَفَةَ مَوْقِفٌ وَكُلُّ مِنًى مَنْحَرٌ وَكُلُّ الْمُزْدَلِفَةِ مَوْقِفٌ وَكُلُّ فِجَاجِ مَكَّةَ طَرِيقٌ وَمَنْحَرٌ

সমস্ত আরাফার ময়দান অবস্থান স্থল, সমস্ত মিনার মাঠ কুরবানীর স্থান, সমস্ত মুযদালিফা অবস্থান স্থল এবং মক্কার সমস্ত গলী হচ্ছে রাস্তা এবং কুরবানীর স্থান।[5]

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, হারামের সমস্ত এলাকা হচ্ছে কুরবানীস্থল, সুতরাং হাজ্জে বা উমরায় হারামের যে কোন স্থানে কুরবানী করলেই যথেষ্ট হবে। তাই যদি দেখা যায় যে, কুরবানী মক্কায় করলে দরিদ্রদের বেশী লাভ হবে তাহলে মক্কাতেই করবানী করবে, তা ঈদের দিন হোক কিংবা তার পরের তিন দিনে হোক। আর যদি কেউ হারামের এলাকার বাইরে, যেমন আরফায় বা অন্য কোন হালাল স্থানে হাদী (হাজ্জের সাথে সম্পর্কিত কুরবানী) যবহ করে তাহলে তা প্রসিদ্ধ মতে যথেষ্ট হবে না।

চতুর্থ মাস’আলা: কুরবানীর পশু যবহ করার সময়

তা হলো ঈদের দিন সূর্য এক বর্ষা পরিমাণ উদয় হওয়া ও ঈদের সলাত সমাপ্ত হওয়ার পর হতে তাশরীকের শেষ দিন (১৩ই যিলহাজ্জ) সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কারণ নাবী (সা.) নিজ কুরবানীর পশু ঈদের দিন সকাল বেলা যবাহ করেছেন। আর নাবী (সা.) হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:

كُلُّ أيَّامِ التَّشْرِيْقِ ذَبْحٌ

তাশরীকের সব দিনগুলি কুরবানী যবহ করার দিন।[6]

সুতরাং হাজ্জে তামাত্তু বা কিরানের হাদী (কুরবানী) ঈদের দিনের পূর্বে যবহ করা জায়েয নয়। কারণ, নাবী (সা.) ঈদের দিনের পূর্বে তা কখনও যবহ করেননি। আর তিনি ইহাও বলেছেন:

خُذُوْا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُمْ

তোমরা আমার থেকে হাজ্জের বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[7]

অনুরূপ তাশরীকের দিনগুলি অতিবাহিত হওয়ার পর কুরবানী করা জায়েয নয়। কারণ, ইহা কুরবানীর জন্য নির্ধারিত দিনের বাইরে। আর এই চার দিনের রাত দিন যে কোন সময় কুরবানী করা জায়েয, তবে দিনে কুরবানী করা উত্তম।

পঞ্চম মাস’আলা: পশু যবহের ইসলামী পদ্ধতি

উট যবহ করার ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, পশু দাঁড় করে সামনের বাম পা বাঁধা অবস্থায় কুরবানী করা। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে পশু দাঁড়ান অবস্থায় বা বসা অবস্থায় যবহ করবে। পক্ষান্তরে উঁট ছাড়া অন্য পশু যবহের ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, পশুকে কাত করে শুয়ে দিয়ে যবহ করা।

আর ‘নাহর’ ও ‘যাবাহ’ অর্থাৎ দাঁড় করে যবহ করা এবং শুইয়ে যবহ করার মধ্যে পার্থক্য হল যে, দাঁড় করে যবহ করা পশুর বুকের দিক থেকে গলার নিচভাগে হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে শুইয়ে যবহ করা পশুর মাথার দিক থেকে গলার উপরভাগে হয়ে থাকে। দাঁড় করে যবহ করা হোক কিংবা শুইয়ে যবহ করা, উভয় ক্ষেত্রে পশুর গলার ‘ওয়াদাজ’ নামক দুটো শিরা কেটে রক্ত প্রবাহিত করা আবশ্যক। যার দলীল, নাবী কারীম (সা.)-এর বাণী:

مَا أَنْهَرَ الدَّمَ وَذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ فَكُلُوهُ مَا لَمْ يَكُنْ سِنٌّ وَلَا ظُفُر

(পশু হালাল হবে) এমনভাবে যবহ করলে যাতে রক্ত প্রবাহিত হয় এবং আল্লাহর নাম নেয়া হয়, তাহলে তা খাও। তবে যেন দাঁত বা নখ দ্বারা রক্ত প্রবাহিত না করা হয়।[8]

  • আর রক্ত প্রবাহিত করার শরীয়াত সম্মত পদ্ধতি হলো, গলার দুটো শিরা কেটে দেয়া। দুই ওয়াদাজ হলো, খাদ্য নালীর দুই পাশ্বের মোটা শিরা। আর তা সম্পূর্ণভাবে কাটতে হলে খাদ্যনালী এবং কণ্ঠনালীও তার সাথে কাটতে হবে।
  • পশু যবহকারীকে যবহ করার সময় (بسْمُ اللَّهِ) ‘বিসমিল্লাহ’ বলা আবশ্যক; কারণ, কোন পশুর যবহ করার পূর্বে আল্লাহর নাম না পাঠ করলে সেই পশুর মাংস খাওয়া হারাম।

এর দলীল মহান আল্লাহর বাণী:

(وَلاَ تَأْكُلُواْ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ) الأنعام121

যাতে (যবহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তা তোমরা মোটেই খাবে না, তা হচ্ছে পাপাচার।[9]

সুতরাং এ অবস্থায় তা কুরবানী হিসাবে যথেষ্ট হবে না; কারণ, তা মৃত বলে গণ্য যা খাওয়া হালাল নয়।

ষষ্ঠ মাস’আলা: কুরবানীর মাংস বিতরণের নিয়ম-পদ্ধতি

এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন:

(فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ )الحج 28

সুতরাং তোমরা (নিজেরা) তা থেকে খাও, আর দুঃস্থ-অভাবীদের খাওয়াও।[10]

আর নাবী (সা.) তাঁর হাজ্জের অবস্থায় প্রত্যেকটি কুরবানীর পশু হতে এক-এক টুকরো মাংস নিয়ে পাত্রে একত্রিত করে রান্না করতে বলেন, অতঃপর তা হতে কিছু খান এবং তার ঝোল পান করেন।[11]

তাই সুন্নাত হলো, কুরবানীর মাংস নিজে খাওয়া এবং তা হতে অন্যদেরও খাওয়ানো। আর কুরবানীর মাংস নিজে না খেয়ে এবং অপরকে তা দান না করে শুধু-শুধু যবহ করে ফেলে রেখে দেয়া যথেষ্ট নয়; কারণ, ইহা ধন-সম্পদ বিনষ্ট করার শামিল। তাই যতক্ষণ এমন স্থানে না যবহ করবে যেখানে নিজের আশে-পাশ্বে দরিদ্র-অভাবীরা থাকবে, অতঃপর কুরবানীর পশু যবহ করে তাদেরকে দান করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কুরবানীকারী দায়িত্ব মুক্ত হবে না।

সুতরাং হাজীর জন্য উচিত যে, সার্বিক দিক থেকে নিজ কুরবানীর প্রতি গুরুত্ব দিবে, যাতে করে তার কুরবানী মহান আল্লাহর নিকট গৃহিত হয় ও তার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয় এবং আল্লাহর বান্দাদের জন্য তা যেন লাভজনক হয়।

আরো মনে রাখবেন যে, হাজ্জে তামাত্তু ও কিরানকারীর প্রতি কুরবানী ওয়াজিব করে বা কুরবানী করতে সক্ষম না হলে সিয়াম ওয়াজিব করে হাজি সাহেবের প্রতি জরিমানা আরোপ করা হয়নি বা তাকে অনর্থক কষ্ট দেয়া হয়নি; বরং ইহা হাজ্জের পূর্ণতা। আর আল্লাহর রাহমাত ও অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে যে, তিনি নিজ বান্দাহদের জন্য এমন বিধি-বিধান পাঠিয়েছেন যাতে রয়েছে তাদের ইবাদাতের পূর্ণতা, তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য অর্জন, তাদের নেকীর প্রাচুর্য এবং তাদের মর্যাদার উন্নয়ন। আর এ পথে ব্যয় করলে তার উত্তম বিকল্প পাওয়া যায় এবং যে মেহনত-পরিশ্রম করা হয় তার মহান আল্লাহ মুল্যায়ন করেন। সুতরাং ইহা হচ্ছে মহান আল্লাহর নিয়ামাত ও অনুগ্রহ যার জন্য হাদী (কুরবানী) যবহের মাধ্যমে বা তার বিকল্প (দশটি সিয়াম) সম্পাদনের মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আবশ্যক। তাই এই কুরবানী হচ্ছে শুকরিয়া প্রকাশের কুরবানী, ইহা জরিমানা বা ঘাটতি পূরণের কুরবানী নয়। অতএব হাজি সাহেব তা হতে নিজে খাবে, স্বচ্ছলদের উপঢৌকন দিবে এবং অভাবীদের প্রতি সাদাক্বাহ করবে। এ মহা উপকারিতার কথা অনেক লোকের কল্পনাতেও আসে না, ফলে এর প্রতি কোন গুরুত্বও দেয় না; তাই দেখা যায় যে, তারা হাদী (কুরবানী করা হতে সাধ্যমত পালায়ন করতে চেষ্টা করে। এমন কি বহু হাজি হাজ্জে ইফরাদ এ জন্য করে যাতে করে তাদের উপর কুরবানী বা তার বিকল্প (দশটি) সিয়াম ওয়াজিব না হয়। তারা এভাবে নিজেকে তামাত্তু বা কিরান হাজ্জের (হাজ্জ ও উমরার) ফযীলত থেকে এবং কুরবানী বা তার বিকল্পের ফযীলত থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখল। আল্লাহ যেন আমাদের সুমতি দান করেন। (আমীন)

>
[1]. সূরাহ আল-হাজ্জ ২২: ৩৪

[2]. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১৩১৮।

[3]. সহীহ মুসলিম ১৯৬৩।

[4]. সহীহ: ইবনে মাজাহ ৩১৪৪।

[5]. আবূ দাঊদ ১৯৩৭, হাদীসটি হাসান সহীহ।

[6]. মুসনাদ আহমাদ ও বায়হাকী, হাদীসটি হাসান, দেখুন, সিলসিলা সহীহা ২৪৭৬

[7]. সহীহ মুসলিম ১২৯৭, আবূ দাউদ ১৯৭০, নাসাঈ ৩০৬২ ও বায়হাকী।

[8]. সহীহ বুখারী ৫৫৪৩।

[9] সূরাহ্ আনআ’মঃ ১২১

[10]. সূরাহ আল-হাজ্জ ২২ঃ ২৮

[11]. সহীহ মুসলিম
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 পরের পাতা »