মুসলিম নিজ চক্ষু দ্বারা কেবল ভালো জিনিস দেখবে। যে দেখাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অথবা অনুমতি আছে কেবল তাই দর্শন করবে।
মুসলিমের চোখের চাহনি হবে অবনত। চোরা চাহনি বা বাঁকা দৃষ্টিতে কোন অবৈধ জিনিস মুসলিম দেখতে পারে না। কারণ এটি এক প্রকার খেয়ানত। আর এ খেয়ানতের খবর আল্লাহ রাখেন। চোখের বাঁকা ছুরি চালিয়ে কাউকে যবাই করতে পারে না। পারে না নজর-বাণ মেরে কাউকে ঘায়েল করতে। কেননা চোখও ব্যভিচার করে। আর চোখের ব্যভিচার হল কাম নজরে অবৈধ নারীর দিকে দৃষ্টিপাত করা। এই জন্য চোখ ঠারা, চোখ মারা বা চোখ দ্বারা কোন অবৈধ প্রণয়ের ইশারা করা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়।
অন্ধ হলে ধৈর্য্য ধরুন। তার বিনিময়ে রয়েছে জান্নাত। মানুষের চোখের ব্যস্ততা বেশী। সুতরাং আপনার অবসর সময়কে কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর যিক্রের জন্য কাজে লাগান। চোখের রোগের জন্য চশমা ব্যবহার তো বৈধই। অবশ্য মাস্তানির জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ নয়। উচিত নয় রঙিন চশমার আড়ালে অবৈধ কিছু দেখা।
সুর্মা হল সুরমাদের প্রসাধন এবং নারী-পুরুষ সকলের জন্য কিছু চক্ষু-পীড়ার ওষুধ। বিশেষ করে ‘ইষমিদ’ নামক সুর্মা ব্যবহার করলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পাতার লোম গজায়।[1]
উল্লেখ্য যে, পুরুষের চোখে ব্যবহৃত কোন প্রসাধন নেই। সুর্মা কিন্তু কোন প্রসাধন নয়। বরং তা ওষুধ বলে ব্যবহার করা সুন্নাত।
সুর্মা দিনে লাগানো যায়। আল্লাহর রসূল (ﷺ) রোযা রেখে সুর্মা ব্যবহার করেছেন।[2] অবশ্য সুর্মা রাত্রে শোবার আগে লাগানোই উত্তম।[3] যেহেতু চোখ বন্ধ রাখলে তার প্রতিক্রিয়া হয় অধিক।
যেমন বেজোড় সংখ্যক (অর্থাৎ ৩ অথবা ৫ বার) সুর্মা লাগানো সুন্নাত।[4] তিনি বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ সুর্মা লাগায় তখন সে যেন বেজোড় সংখ্যক লাগায়--।’’[5]
বেজোড় সংখ্যক লাগাতে হলে ডান চোখে ৩ বার এবং বাম চোখে ৩ বার লাগাতে হবে অথবা ডান চোখে ২ বার এবং বাম চোখে ১ বার লাগাতে হবে অথবা ডান চোখে ১ বার এবং বাম চোখে ২ বার লাগাতে হবে। অবশ্য প্রয়োজনে তার চেয়ে বেশী ৫ বা ৭ বার অনুরূপ ব্যবহার করা যায়।
সতর্কতার বিষয় যে, পুরুষরা মহিলাদের মত চোখের সৌন্দর্যের জন্য সুর্মা ব্যবহার করতে পারে না। বরং শরীয়তে সুর্মা ব্যবহার করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা কেবল চোখের উপকারের জন্য; সৌন্দর্যের জন্য নয়। অতএব পুরুষ সুর্মা লাগাবে কেবল চোখের ভিতরে; চোখের পাতায় বা কোণে (রেখা টেনে) নয়।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, কোন পুরুষের পক্ষেও সৌন্দর্যের জন্য মাথায় নকল চুল লাগানো, হাত বা চেহারায় দেগে নকশা করা, ভ্রূ চাঁছা, দাঁতের মাঝগুলি ঘসে ফাঁক ফাঁক করা ইত্যাদি বৈধ নয়। এমন কাজের মহিলারা আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত হলেও পুরুষরা সে অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবে না।
[2]. ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৬৭৮
[3]. মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ ৪৩
[4]. আহমাদ, সহীহুল জা’মে হা/৪৬৮০
[5]. আহমাদ, সহীহুল জা’মে হা/৩৭৫
দাড়ি রাখা পুরুষের জন্য একটি প্রকৃতিগত ব্যাপার। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘প্রকৃতিগত সুন্নাত হল ১০টি; মোচ ছাঁটা, দাড়ি বাড়ানো, দাঁতন করা, নাকে পানি নেওয়া (নাক পরিষ্কার করা), নখ কাটা, আঙ্গুল ধোয়া, বোগলের লোম তুলে পরিষ্কার করা, নাভির নীচের লোম চেঁছে সাফ করা, পেশাব-পায়খানার পর পানি ব্যবহার করা এবং কুলি করা।’’[1]
দাড়ি চাঁছা, ছিঁড়া বা ছোট করে ছাঁটা হারাম ও কাবীরা গোনাহ। যেহেতুঃ
(ক) দাড়ি বর্ধনের উপর রসূলের আদেশ লংঘন এবং তাতে তাঁর বিরোধিতা করা হয়।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘তোমরা দাড়ি ছেড়ে দাও, মোচ ছেঁটে ফেলো, পাকা চুল রঙিয়ে ফেলো এবং ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।’’[2]
তিনি আরো বলেন, ‘‘মোচ ছেঁটে ও দাড়ি রেখে অগ্নিপূজকদের বৈপরীত্য কর।’’[3]
(খ) দাড়ি না রাখলে কাফেরদের প্রতিরূপ ধারণ করা হয়। অথচ রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য ধারণ করে, সে তাদেরই শ্রেণীভুক্ত।’’[4]
(গ) দাড়ি চেঁছে ফেললে নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। অথচ রাসুল (ﷺ) নারীদের আকৃতি ধারণকারী পুরুষদেরকে অভিসম্পাত করেছেন।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) নারীদের বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষদের বেশধারিণী নারীদেরকে অভিশাপ করেছেন।[5]
(ঘ) দাড়ি কাটলে (আল্লাহর বিনা অনুমতিতে) আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন এবং শয়তানের প্রতিজ্ঞার আনুগত্য হয়। আল্লাহ তাআলা (শয়তানের প্রতিজ্ঞা উল্লেখ করে) বলেন,
وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ
অর্থাৎ, আর আমি তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব, যাতে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই।’’[6]
আর যেহেতু তাতে সেই প্রকৃতি বিনাশ করা হয়, যে প্রকৃতির উপর আল্লাহ সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন। কারণ দাড়িকে (নিজের অবস্থায়) বর্জন করা প্রকৃতিগত নিয়মের পর্যায়ভুক্ত।
(ঙ) দাড়ি রাখা সকল নবী-রসূলগণের সুন্নাতী পদ্ধতি (তরীকা)। আর তাঁদের তরীকা থেকে বিচ্যুত হওয়া কোন মুসলিমের উচিত নয়।
(চ) দাড়ি মুসলিমদের এক প্রতীক। এই প্রতীক নিশ্চিহ্ন করা কোন মুসলিমের উচিত নয়।
(ছ) দাড়ি হল পৌরুষ ও সম্মানের নিদর্শন, পুরুষের সৌন্দর্য ও সমীহপূর্ণ ভূষণ। বৃদ্ধ বয়সে টোল পড়া গালের আবরণ।
[2]. আহমাদ, সহীহুল জা’মে হা/১০৬৭
[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬০
[4]. আহমাদ ২/৫০, আবূ দাঊদ হা/৪০৩১, সহীহুল জা’মে হা/৬০২৫
[5]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৮৫, আসহাবে সুনান
[6]. সূরা নিসা-৪:১১৯
দাড়ির সীমা; দুই গণ্ড ও তার পার্শ্বদ্বয় এবং চিবুকের লোমকে দাড়ি বলা হয়; যেমন আভিধানিকদের কথা এটাই প্রমাণ করে। আর রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘তোমরা দাড়ি বৃদ্ধি কর।’’ কিন্তু দাড়িকে কোন শরয়ী সীমায় সীমাবদ্ধ করেননি। আর যখন দলীল বা উক্তি আসে অথচ তার কোন শরয়ী সীমা থাকে না তখন তাকে আভিধানিক সীমায় আরোপ করা হয়। তাছাড়া তিনি নিজে দাড়ি ছেঁটেছেন বা কাউকে ছাঁটতে আদেশ করেছেন বলে কোন সহীহ হাদীস নেই। আর এই জন্যই দাড়িকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াই উত্তম।
অবশ্য যে সাহাবীগণ রসূল (ﷺ) এর উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাঁরা কোন কোন সময় এক মুঠোর অতিরিক্ত দাড়ি ছেঁটে সৌন্দর্য অবলম্বন করেছেন বলে একাধিকভাবে প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং রসূল (ﷺ) এর ঐ আদেশকে সাহাবায়ে কেরামের বুঝ নিয়ে বুঝলে আমরা বুঝতে পারব যে, এক মুঠোর কম পরিমাণ ছোট করে কাটা বা ছাঁটা বৈধ নয় এবং এর অতিরিক্ত ছেঁটে ফেলা গোনাহর কাজ নয়।[1]
নাকের পরিচ্ছন্নতার খেয়াল রাখা মুসলিমের একটি কর্তব্য। বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠে তিনবার নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করা কর্তব্য। কারণ শয়তান মানুষের নাকের গভীর রন্ধ্রে রাত্রিবাস করে থাকে।[1]
নাকের লোম বড় হলে তা তুলে বা কেটে ফেলা বৈধ। আর এ কথা উল্লেখিত হয়েছে যে, নাক কাটা গেলে তার বিনিময়ে স্বর্ণের নাক লাগানো যায়।
পুরুষের অধরে (নিচের ঠোঁটে) থাকবে দাড়ি এবং ওষ্ঠে (উপরের ঠোঁটে) থাকবে মোচ। আর এই মোচ হবে ছেঁটে ছোট করা।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমরা দাড়ি ছেড়ে দাও, মোচ ছেঁটে ফেলো।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার মোচ ছাঁটে না, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’[2]
তিনি সাহাবী মুগীরাহ বিন শো’বাকে (ঠোঁটের নিচে) দাঁতন রেখে মোচ ছাঁটার নির্দেশ দিয়েছেন অথবা তিনি নিজে মুগীরার মোচ ঐভাবে ছেঁটে দিয়েছেন।[3]
তিনি বলেন, ‘‘তোমরা মোচ খুব ছোট করে ছেঁটে ফেল।’’ (বুখারী)
বলাই বাহুল্য যে, খুব ছোট করে (চামড়া বের করে) অথবা দাঁতন রেখে (কাঁচি দিয়ে) মোচ ছেঁটে ফেলা সুন্নাত। (ব্লেড বা ক্ষুর দিয়ে) গোঁফ চাঁছা সুন্নাত নয়। বরং সুন্নাত হল, ছেঁটে ছোট করা। সুন্নাত নয় কিছু চেঁছে এবং মাঝে বা উপরে সরু করে গোঁফ ছেড়ে রাখা।
বৈধ নয় মাঝখান কামিয়ে দুই সাইডে লম্বা টাঙ্গি মোচ রাখা। যেহেতু তাতে রয়েছে বিজাতির সাদৃশ্য।
অবশ্য মোচ লম্বা হলে পানি বা অন্য কিছু পান করার সময় মোচের সাথে স্পর্শ হলে তা হারাম হয়ে যায় না। কারণ ‘মোচের পানি হারাম’ কথাটির দলীল পাওয়া যাচ্ছে না।
[2]. তিরমিযী, ২৭৬২, সহীহুল জা’মে হা/৬৫৩৩
[3]. আহমাদ, আবূ দাঊদ হা/১৮৮, মিশকাত হা/ ৪২৩৬
মানুষের জন্য দাঁতও একটি অমূল্য সম্পদ। সুতরাং দাঁত থাকতে দাঁতের কদর করা উচিত প্রত্যেকের। ইসলামে সেই কদরের রয়েছে বিভিন্ন আদব; যা নিম্নরূপঃ
খাবার পর দাঁতে লেগে থাকা অবশিষ্ট খাদ্যাংশ খিলাল করে ছাড়িয়ে ফেলা কর্তব্য। যেহেতু তা না করলে দাঁতের রোগ হতে পারে এবং তা পচে গিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
এই জন্য খিলালকারীদের প্রশংসা করে রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘আমার উম্মতের খিলালকারীগণ উত্তম (বা প্রশংসনীয়)।’’[1]
ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘যে খিলাল ত্যাগ করে, তার দাঁত দুর্বল হয়ে যায়।’ [2]
[2]. ত্বাবারানীর কাবীর, ইরওয়াউল গালীল ১৯৭৪
প্রত্যেক ওযূর আগে, ওযূ না করলেও নামাযের আগে, কুরআন তিলাওয়াতের আগে, ঘুম থেকে জেগে উঠে, বাইরে থেকে স্বগৃহে প্রবেশ করে, মুখ দুর্গন্ধময় অথবা দাঁত হলুদবর্ণ হলে দাঁতন করা সুন্নাত।
প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, ‘‘আমি উম্মতের জন্য কষ্টকর না জানলে এশার নামাযকে দেরী করে পড়তে এবং প্রত্যেক নামাযের সময় দাঁতন করতে আদেশ দিতাম।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর না জানলে (প্রত্যেক) ওযুর সাথে দাঁতন করা ফরয করতাম এবং এশার নামায অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরী করে পড়তাম।’’[2]
তাই সাহাবী যায়েদ বিন খালেদ জুহানী (রাঃ) মসজিদে নামায পড়তে হাজির হতেন, আর তাঁর দাঁতনকে কলমের মত তাঁর কানে গুঁজে রাখতেন। নামাযে দাঁড়াবার সময় তিনি দাঁতন করে পুনরায় কানে গুঁজে নিতেন।[3]
মুসলিমের প্রকৃতিগত কর্মসমূহের একটি হল, মিসওয়াক করে মুখ সাফ করা।[4]
বিশেষ করে জুমআর দিন গোসল ও দাঁতন করা এবং আতর ব্যবহার করা কর্তব্য।[5]
মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘জিবরীল (আঃ) আমাকে (এত বেশী) দাঁতন করতে আদেশ করেছেন, যাতে আমি আমার দাঁত ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’’[6] অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘‘---এতে আমার ভয় হয় যে, দাঁতন করা আমার উপর ফরয করে দেওয়া হবে।’’[7]
বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র তিনি প্রথম যে কাজ করতেন, তা হল দাঁতন।[8] তাহাজ্জুদ পড়তে উঠলেই তিনি দাঁতন করে দাঁত মাজতেন।[9] আবার রাত্রের অন্যান্য সময়েও যখন জেগে উঠতেন, তখন মিসওয়াক করতেন।[10] আর এই জন্যই রাত্রে শোবার সময় শিথানে দাঁতন রেখে নিতেন।[11]
তিনি বলেন, ‘‘দাঁতন করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা এবং প্রতিপালক আল্লাহর সন্তুষ্টি। [12]
একদা হযরত আলী (রাঃ) দাঁতন আনতে আদেশ করে বললেন, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘বান্দা যখন নামায পড়তে দণ্ডায়মান হয় তখন ফিরিশ্তা তার পিছনে দণ্ডায়মান হয়ে তার ক্বিরাআত শুনতে থাকেন। ফিরিশ্তা তার নিকটবর্তী হন; পরিশেষে তিনি নিজ মুখ তার (বান্দার) মুখে মিলিয়ে দেন! ফলে তার মুখ হতে কুরআনের যেটুকুই অংশ বের হয় সেটুকু অংশই ফিরিশ্তার পেটে প্রবেশ করে যায়। সুতরাং কুরআনের জন্য তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর।’’[13]
তিনি বলেন, ‘‘মিসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর। কারণ, মুখ হল কুরআনের পথ।’’[14]
১। দাঁতন করা বিধেয় দিবারাত্রির যে কোন সময়। এমনকি রোযার দিনেও সকালে-বিকালে যে কোন সময় দাঁতন করা বিধেয়।
২। একটি দাঁতন স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ব্যবহার করতে পারে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (ﷺ) মিসওয়াক করে আমাকে তা ধুতে দিতেন। কিন্তু ধোয়ার আগে আমি মিসওয়াক করে নিতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।’[15]
তাঁর নিকট মিসওয়াকের এত গুরুত্ব ছিল যে, তিরোধানের পূর্ব মুহূর্তেও তিনি হযরত আয়েশার দাঁতে চিবিয়ে নরম করে নিজে দাঁতন করেছেন।[16]
৩। দাঁতন করুন ভিজে বা শুকনা গাছের ডাল বা শিকড় দিয়ে। তিনি আরাক (পিল্লু) গাছের (ডাল বা শিকড়ের) দাঁতন করতেন।[17]
আঙ্গুল দ্বারা দাঁত মাজা যায়। তবে এটা সুন্নাত কি না বা এতেও ঐ সওয়াব অর্জন হবে কি না, সে ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস মিলে না। হাফেয ইবনে হাজার (রঃ) তালখীসে (১/৭০) এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, ‘এগুলির চেয়ে মুসনাদে আহমাদে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটি অধিকতর সহীহ।’ কিন্তু সে হাদীসটিরও সনদ যয়ীফ।[18]
৪। আপনার ডান চোয়ালের দাঁত থেকে দাঁতন ঘষতে শুরু করুন। এটাই হল সুন্নাত।
৫। দাঁতন করার সময় কোন দু‘আ নেই। দাঁতন আধ হাতের বেশী লম্বা হলে তার উপর শয়তান চাপে ধারণা অমূলক।
হেঁটে হেঁটে দাঁতন করলে পরিবারে ও জীবনে অশান্তি নেমে আসে ধারণা করা একটি বিদআত।
[2]. হাকেম, বাইহাক্বী, সহীহুল জা’মে হা/৫৩১৯
[3]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৩৯০
[4]. মুসলিম, মিশকাত হা/ ৩৭৯
[5]. আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, সহীহুল জা’মে হা/৪১৭৮
[6]. সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৫৫৬
[7]. সহীহুল জা’মে হা/১৩৭৬
[8] (মুসলিম, মিশকাত হা/ ৩৭৭
[9]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৩৭৮
[10] (সহীহুল জা’মে হা/৪৮৫৩
[11] (ঐ ৪৮৭২
[12]. আহমাদ, দারেমী, নাসাঈ, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিববান, বুখারীঃ বিনা সনদে, মিশকাত হা/ ৩৮১
[13]. বায্যার, সহীহ তারগীব ২১০
[14]. বায্যার, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১২১৩
[15]. আবূ দাঊদ, মিশকাত হা/ ৩৮৪
[16]. বুখারী, মিশকাত হা/ ৫৯৫৯
[17]. আহমাদ, ইরওয়াউল গালীল ১/১০৪
[18]. মুসনাদে আহমাদ, তাহক্বীক্ব আহমাদ শাকের ১৩৫৫
জিভ পরিষ্কার রাখাও মুসলিমের পরিচ্ছন্নতার একটি কর্তব্য। রাসুল (ﷺ) দাঁতনের সাহায্যেই নিজের জিভ মেজে পরিষ্কার করতেন এবং সেই সময় তাঁর মুখে বমি করার মত শব্দ হত।[1]
মুসলিমের গলার আওয়াজ হবে মিষ্টি ও বিনত। মু’মিন কর্কশভাষী হয় না।
গলার লেবাস হিসাবে গলাবন্ধ (কম্ফর্টার) বা মাফলার ব্যবহার অবৈধ নয়। তবে টাই ব্যবহার বৈধ নয়। যেহেতু তা বিজাতির বিশেষ প্রতীক।