নামায সম্পর্কিত বিদআত যেমন, ফজরের নামাযে কুনুত, কুনুতের পরিবর্তে ‘কুল’ পাঠ। তকবীরে তাহরীমার সময় হাত তুলে কান স্পর্শ করা। এই সময় উপর দিকে মাথা তোলা। বাঁধা-গড়া নিয়ত পড়া। নিয়ত (যে কোন ভাষাতে) মুখে উচ্চারণ করা। সমস্বরে উচ্চরবে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলা। দুই সিজদাহর মাঝের বৈঠকে অনুরূপভাবে দুআ পড়া। সালাতুত তাহফীয (কুরআন হিফয সহজে হবে নিয়তে বিশিষ্ট) নামায পড়া। সালাতুত তাসবীহ জামাআত করে পড়া। মা-বাপের নামে বিশিষ্ট নামায পড়া। শবেবরাতের বিশেষ নামায পড়া। নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুক দেওয়া, সালাম ফিরে মাথায় হাত রেখে বিশেষ দুআ পাঠ শেষ রাকআতের শেষ সিজদাহ লম্বা করা।
জুমআহ সংক্রান্ত বিদআত যেমন, জুমার দিন সফর করতে নেই মনে করা। এই দিনে কোন কাজ করতে নেই ভাবা। জুমআর জন্য পাপ (যেমন দাড়ি চাচা, সোনা বা রেশম ব্যবহার) দ্বারা সৌন্দর্য ধারণ করা। মসজিদে মুসাল্লা বিছিয়ে স্থান দখল করা। তিন সিড়ির অধিক মিম্বর। জুমআর দিন মিম্বরকে কার্পেটাদি দ্বারা সুসজ্জিত করা। জুমআহ বা ঈদের নামাজের জন্য বিশেষ করে পাগড়ী বাঁধা। দ্বিতীয় আযান। মসজিদের ভিতর খতীবের সামনে দেওয়া। প্রথম আযানের পরিবর্তে কুরআন পাঠ ও ডাক-হাঁক। জুমআর (নামাযীদের নামায পড়ার) সময় মসজিদের উচ্চরবে কুরআন পাঠ। জুমআর পুর্বে নির্দিষ্ট রাকআত কাবলাল জুমআহ’ সুন্নত পড়া। খুতবায়ে হাজাহ (আলহামদু লিল্লাহহি নাহমাদুহু--) পাঠ বর্জন করা। সূরা ক্বাফ দ্বারা উপদেশ না দেওয়া।
সুর করে খুতবা পাঠ। নবীর নাম শুনে (দরূদ না পড়ে) আঙ্গুল দ্বারা চক্ষু স্পর্শ করে তা চুম্বন করা। দুই খুতবার মাঝে কোন দুআ বা সূরা পাঠ। ইমাম বসা কালে হাত তুলে মুনাজাত। খুতবাহ চলাকালীন তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকআত নামায ত্যাগ। দুই খুতবার কোন একটিকে নসীহত থেকে বাদ দেওয়া। (ইস্তিস্কা ছাড়া) খুতবায় ইমামের হাত তুলে দুআ করা এবং মুক্তাদীদের হাত তুলে ‘আমীন-আমীন’ বলা। “ইন্নাল্লাহা ইয়ামুরু বিল আদলে--” আয়াত দ্বারা খুতবা শেষ করাকে অভ্যাস বানানো।
খুতবাহ লম্বা এবং নামায ছোট ও সংক্ষিপ্ত করা। একই স্থানে বড় মসজিদ থাকতে ছোট মসজিদে জুমআহ পড়া। কাতার সোজা না হওয়ার পূর্বেই ইমামের নামায শুরু করে দেওয়া। নামাযের পর ‘তাকাব্বাল্লাহ---’ বলে পরস্পর মুসাফাহ করা। মসজিদের গেটে পানি হাতে দাঁড়িয়ে থেকে মুসল্লীদের ফুক অথবা থুথুর বর্কত নেওয়া ও রোগ মুক্তির আশা রাখা।
তারাবীহতে বিদআত; যেমন, মাঝে ও শেষে হাত তুলে জামাআতী দুআ করা ও দরূদ পড়া। মাগরেবের মত বিতর পড়া। দুআ কুনুত পড়ার সময় রফএ-ইদাইন (অর্থাৎতাহরীমার মত কান বরাবর হাত তোলা)। তারাবীহর পর মিষ্টান্ন বিতরণ। শবে কদরে বিশেষ করে মিষ্টি বিতরণ। কেবল খাওয়া-দাওয়া ও জলসার মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ।।
সালামে বিদআত যেমন, দুই হাতে মুসাফাহ করা এবং বুকে হাত ফিরানো। সালামের পরিবর্তে ‘হেলো ‘আহলান’ গুডমর্নিং’ ইত্যাদি বলা। সালামের সময় প্রণত হওয়া। ঝুকে পা স্পর্শ করে সালাম করা। কদমবুসী করা। সিজদা করা (কুফর)।
দুআর প্রচলিত বিদআত যেমন; উচ্চস্বরে দুআ করা, ফরয নামাযের পর, বিবাহ বন্ধনের পর, ইফতারের পূর্বে, ঈদের নামাযের পর, জানাযার নামাযের পর বা দাফনের পর, জালসার শেষে, দর্সের শেষে একত্রে হাত তুলে জামাআতী দুআ করা ও ‘আমীন আমীন বলা’ হাত তুলে দুআর পর মুখে হাত বুলানো বা বুক স্পর্শ করা অথবা হাত চুমা।
সফর ও ভ্রমণের বিদআত যেমন; সফর মাসে সফর করতে নেই ভাবা। অনুরূপ জুমআর দিনে সফর না করা। ঘর হতে কেউ বের হওয়ার পর ঝাড়ু না দেওয়া। আম্বিয়া ও আওলিয়াদের কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা।
হজ্জ সংক্রান্ত বিদআত যেমন; তাওয়াক্কুলের নাম নিয়ে সম্বল ছাড়া হজ্জে বের হওয়া। হাজীদের নিকট হতে ট্যাক্স নেওয়া। ইহরাম বাঁধার সময় বিশিষ্ট নামায পড়া। ইহরাম বাঁধার পর থেকেই সর্বদা ইযত্বিবা (ডান কাঁধ বের) করে রাখা। মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদের যিয়ারত করা। বিভিন্ন পাহাড় যেমন, গারে হিরা, সওর প্রভৃতি ভ্রমণে বর্কতের আশা করা। মসজিদে আয়েশা (বা অন্যান্য মসজিদে) সওয়াবের উদ্দেশ্যে নামায পড়তে যাওয়া। হজ্জ বা উমরাহকারীর কা’বার মসজিদে প্রবেশ করে তাওয়াফ না করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায পড়া। নামাযে হাত তোলার মত তুলে হাজরে আসওয়াদের প্রতি ইশারা করা। পাথর চুম্বনের জন্য ভিড় করা। চুম্বনের সময় আল্লাহুম্মা ঈমানাম বিকা--- দুআ পড়া। চুম্বন করার জন্য নামায পড়ে (ইমামের সালাম ফিরার পুর্বেই) সালাম ফিরে ছুটে পাথরের নিকট যাওয়া। রুকনে ইয়ামানী চুম্বন করা এবং স্পর্শ করতে না পারলে ইশারা করা।
স্পর্শের সময় বিশিষ্ট দুআ পড়া। কা’বার রুকনে শামী বা অন্যান্য দেওয়াল, গেলাফ, মাকামে ইব্রাহীম স্পর্শ করে তাবারুক গ্রহণ। কাবার দরজার বিপরীত দিকে দেওয়ালের এক উঁচু জায়গা ‘উরওয়া বুসকা’ ধরে তাবারুক গ্রহণ, বৃষ্টি হলে অতিরিক্ত সওয়াব বা বর্কতের আশায় তওয়াফ করা। মীযাবের পানি গায়ে মেখে তাবারুক গ্রহণ। যমযমের পানি দ্বারা গোসল। বৰ্কতের আশায় যমযমের পানিতে টাকা পয়সা ভিজানো। যমযম পানি পান করার সময় কেবলা মুখ করে বিশিষ্ট দুআ পাঠ। তওয়াফ ও সাঈতে প্রতি চক্রে নির্দিষ্ট দুআ পড়া।
আরাফায় নির্দিষ্ট দুআ পড়া। জাবালে রহমতে চড়া, মুযদালিফায় পৌঁছে প্রথমে নামায আদায় না করে পাথর সংগ্রহ করা। মুযদালিফায় রাত্রি জাগরণ করা। মুযদালিফা থেকে পাথর নেওয়া সুন্নত বা জরুরী ভাবা, পাথর মারার পূর্বে পাথর ধৌত করা। পাথর মারার সময় তকবীর পড়ার সাথে অন্যান্য দুআ (যেমন রাজমাল। লিশশায়াত্বীন’ ইত্যাদি) পড়া। পাথর মারার জন্য হাত বা আঙ্গুলের নির্দিষ্ট আকার বা ভঙ্গিমা করা। পাথর মেরে জুতা ইত্যাদি মারা।। কুরবানী না করে তার মূল্য সদকাহ করা। যবেহ করার আগে কুরবানীর পশুকে তেল দেওয়া অথবা তার অন্য কোন প্রকার তোয়া করা।
হাজীর বাম দিক হতে মাথার চুল কামানো। কিছু নেড়া করে কিছু পরে নেড়া করার জন্য চৈতন রাখার মত কিছু চুল ছেড়ে রাখা। নেড়া করার সময় কেবলা মুখ করা, এই সময় বিশিষ্ট দুআ পড়া। | যে হজ্জের ফরয আদায় করে আসে তাকে হাজী’ বা ‘আলহাজ্জ’ বলা। বিদায়ী তওয়াফে পর মসজিদ থেকে উল্টা পায়ে বের হওয়া। একই সফরে বার বার উমরা করা। মক্কার মাটি বর্কতের আশায় সঙ্গে আনা।
দরূদে বিদআত যেমন; বাঁধাগড়া দরূদ পাঠ, দরূদ পড়তে কিয়াম করা, সমস্বরে উচ্চরবে দরূদ পড়া।
যিকরের প্রচলিত বিদআহ যেমন, জামাআতী যিকর, শরীয়তে নির্দিষ্ট সংখ্যায় যিকর করা। হু-হু বা হুয়া-হুয়া’ অথবা কেবল আল্লাহ-আল্লাহ’ করে যিকর করা। কলেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’কে ভেঙ্গে যিকর করা; অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘লা ইলাহা বলা এবং পরে আবার নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘ইল্লাল্লাহ’ বলা বা ইল-ইল’ বলে যিকর হাঁকা। ইয়া মুহাম্মাদ’ বা ‘ইয়া আলী’র যিকর হাঁকা। উচ্চস্বরে যিকর, হেলেদুলে যিকর, নেচে হাততালি দিয়ে যিকর। কোন ওলীর নামে যিকর। তসবীহ দানা ব্যবহার (যাতে রিয়ার আশঙ্কাও থাকে)। কিছু (চিঠি) লিখার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’র পরিবর্তে এলাহি ভরসা’, ‘আল্লাহ মহান’ ইত্যাদি লিখা অথবা ৭৮৬ লিখা।
ওযুর মধ্যে বিদআত যেমন, গর্দান মাসাহ। ওযুর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে। ‘ইন্না আনযালনা বা অন্য কোন সূরা পাঠ। প্রত্যেক অঙ্গ ধৌতের সময় এক এক নির্দিষ্ট দুআ। গোসল করার (ডুব দেওয়ার) সময় কেবলা মুখ করা। গোসল (ডুব দেওয়ার পর বাঁধা হিয়ালি পড়া।
মৃত্যু ও জানাযায় বিভিন্ন বিদআত যেমন; মরণাপন্ন ব্যক্তির শিথানে কুরআন শরীফ রাখা, সূরা ইয়াসিন পড়া, মুমূর্ষকে কেবলামুখ করা। নবী ও আহলে বায়তের ইমামগণের নাম নিয়ে ‘তালকীন’ করা। তার নিকট হতে ঋতুবতী, অপবিত্রা, প্রসূতি ও অন্যান্য অপবিত্র মানুষদিগকে দূর করা। রাতে মৃতব্যক্তির পাশে সকাল পর্যন্ত কোন ভয়ে বাতি রাখা। মৃতব্যক্তির নিকট গোসল না দেওয়া পর্যন্ত কুরআন পড়া। ধূপ ইত্যাদি দিয়ে (অপ্রয়োজনে) সুগন্ধময় করে রাখা। দম যাওয়ার স্থানে। লাতা ও ধূপবাতি দেওয়া। দাফন না হওয়া পর্যন্ত মড়া ঘরের কোন মানুষের পানাহার না করা।
মৃতব্যক্তির পা তুলে দাঁড়াতে নেই মনে করা অথবা দাঁড়াতে ভয় করা। মৃত্যুর খবর ব্যাপকভাবে (যেমন মাইক ও পত্রিকায় প্রচার করা (অবশ্য আশেপাশের লোককে মৃত্যুর খবর জানিয়ে জানাযার প্রস্তুতির কথা বলা দোষাবহ নয়।) মৃতব্যক্তির তাহারতের (পবিত্রতার) জন্য ব্যবহৃত খিরকা (বস্ত্রখন্ড) ইত্যাদি দূরে ফেলতে গিয়ে কোন বিপদের আশঙ্কায়) সঙ্গে লোহা রাখা।
গোসল দেওয়ার সময় প্রত্যেক অঙ্গে পানি ঢালার সময় বার বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা অন্য যিকর অথবা বাংলায় বাঁধা হিয়ালি পড়া। লোয়ানো পানি ডিঙ্গাতে নেই মনে করা। লাশ উঠানো ও নামানোর সময় এবং পথে নিয়ে যাবার সময় উচ্চস্বরে সকলের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র যিকর।।
মহিলার চুল চুটি গেঁথে বুকের উপর খোলা ফেলে রাখা। বর্কতের আশায় বা আযাব মাফ হওয়ার আশায় কোন পীর বা ওলীর-সুপারিশ নামা (!) বা শাজারানামা অথবা তার অন্য কিছু অথবা কুরআনী আয়াত বা দুআ কাফনের ভিতরে রাখা। কোন ওলীর কবরের পাশে কবর দেওয়ার জন্য দূর থেকে লাশ বহন করা। মুর্দার গোসলে ব্যবহৃত সাবান, দাফন কাজে ব্যবহৃত অতিরিক্ত বাঁশ ও দাফনে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার করতে নেই মনে করা অথবা ব্যবহার করতে ভয় করা।
এই বিশ্বাস রাখা যে, মুর্দারা সকলে নিজ নিজ সুন্দর কাফন নিয়ে গর্ব করে। কাফনের উপর কোন আয়াত বা দুআ লিখা। জানাযার খাটকে ফুল ইত্যাদি দ্বারা সঞ্জিত করা। সৌন্দর্যখচিত বা কালেমা অথবা আয়াত লিখিত মখমলের চাদর দ্বারা লাশ ঢাকা। লাশের উপর বা কবরের উপর ফুল দেওয়া। পুষ্পমাল্য দ্বারা শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া। জানাযার সাথে পতাকা বহন করা। কোন খাদ্যদ্রব্য বা পয়সা ছিটানো।
এই বিশ্বাস রাখা যে, মৃত ব্যক্তি নেক হলে তার লাশ হাল্কা অথবা ভারী হয়। জানাযা বের হওয়ার সাথে সাথে সদকা করা। চল্লিশ কদম মাত্র জানাযা বহন করে নির্দিষ্ট সওয়াবের আশা করা। লাশ নিয়ে ধীরে চলা। লাশের উপর ভিড় জমানো। কোন বিশ্বাসে জানাযার নিকটবর্তী বা সম্মুখবর্তী না হওয়া। নীরবতা ত্যাগ করা। আপোসে তর্কাতর্কি ও বচসা করা। জানাযা সহ কোন ওলীর কবর তওয়াফ করা। মৃতের উপর জানাযা পড়া হয়েছে তা জানা সত্ত্বেও পুনরায় গায়েবানা জানাযা পড়া। জানাযার নামাযের কাতারে গোলাপ পানি ছিটানো। জানাযা পড়ার সময় লাশের বাধন খুলে দেওয়া। জুতার ময়লা নেই একীন সত্ত্বেও জানাযার নামাযের জন্য জুতা খুলে ফেলা অথবা খুলে তার উপর দাঁড়িয়ে নামায পড়া। নামাযে ইস্তিফতাহর দুআ পড়া। সূরা ফাতিহাসহ অন্য একটি সূরা পাঠ ত্যাগ করা। নামায শেষে হাত তুলে জামাআতী দুআ করা।
দাফন করার সময় যিকর জোরে-শোরে পড়া। মাথার দিক থেকে লাশ নামানো। মুর্দার জন্য কবরে বালিশ তৈরী করা। কবরকে সুগন্ধিত করা। মাটি দেবার সম ‘মিনহা খালাকনাকুম’ আয়াত পড়া। (কবরে যে লাশ রাখে সে ছাড়া) সকলের ‘বিসমিল্লাহি অআলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ’ দুআ পড়া। লাশের বুকে মাটি রাখা। কবর। এক বিদ্যার অধিক উচু করা। কবরের চার কোণে ও মাঝে খেজুর ডাল গাড়া। (অবশ্য পশুর নষ্ট করা থেকে বাঁচাতে কাটা ইত্যাদি রাখা দুষণীয় নয়।) কবর লোয়ানো। (অবশ্য ‘লহদ কবরে শুষ্ক মাটিকে ভিজিয়ে বসানোর জন্য পানি ঢালা উত্তম।) এই সময় সকলের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়া। দাফন শেষে হাত তুলে দুআ-দরূদ পড়া। মাথার দিকে সূরা ফাতিহা বা সূরা বাক্বারার প্রথমাংশ এবং পায়ের দিকে সূরা বাক্বারার শেষাংশ পাঠ করা। দাফনের পর তালব্দীন দেওয়া। কবরের পাশেই মাটির পাত্র (ব্যবহার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও) ছেড়ে আসা। বিশ্বাস রাখা যে, কবরের মাটি বাড়লে হালে আবার কেউ মরবে!
দাফনের পর কবরের পাশে বাস করা ও (পাহারা দেওয়া। অবশ্য লাশের কোন। অঙ্গ অথবা কাফন চুরি হওয়ার আশঙ্কায় পাহারা দিলে ভিন্ন কথা।) আমাবশ্যার রাতে মরা খারাপ বা অশুভ মনে করা। দাফন করা থেকে ফিরে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে বাড়ি প্রবেশ করতে বা কাউকে স্পর্শ করতে নেই ভাবা। কবরের পাশে কোন খাদ্য বিতরণ বা পশু যবেহ। মরা ঘরের যিয়াফত গ্রহণ করা। মরা ঘরে ভোজ করা। (আত্মীয় বা প্রতিবেশীর কেউ না খাওয়ালে সাধারণভাবে দূরের কুটুমদেরকে খাওয়ানো দোষের নয়)।
মরা ঘরের আত্মীয়-স্বজনকে দেখা করার জন্য এবং সান্ত্বনা দেবার উদ্দেশ্যে তাদের গৃহে জমায়েত হওয়া ও তার জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করা। কেবল শোকপালনের উদ্দেশ্যে দাড়ি-গোফ লম্বা করা। অভ্যাসমত ভালো খাওয়া। ত্যাগ করা। (মৃতব্যক্তির স্ত্রী ব্যতীত) অন্য কারো শোক পালনের উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য ত্যাগ করা। বিধবার মৃত্যু অবধি সৌন্দর্য ত্যাগ করা। (গায়র মাহরামের নিকট সৌন্দর্য প্রকাশ হারাম)। পুনঃ বিবাহ করাকে মন্দ ও দূষণীয় জানা। (অথচ মন্দের পথে পা বাড়াতে এবং ব্যভিচার করতে ভয় করে না!)
মৃতের নামে কুরআনখানী, ফাতেহাখানি ও চল্লিশে (চালশে) করা। মুর্দার দম যাওয়ার স্থানে কয়েক দিন ধরে লাতা দেওয়া, বাতি ও ধূপ জ্বালিয়ে রাখা। এই বিশ্বাস যে বাড়িতে রূহ আসে। মৃত যা খেতে ভালোবাসতো তাই সদকাহ করা। মৃতের ব্যবহৃত পোশাকাদি সদকাহ করা। কারো মরার পুর্বেই কবর খনন করে রাখা। দাফনের পর কয়েকদিন সকালে কবর যিয়ারত করা। যিয়ারতের জন্য কোন দিন নির্ধারিত করা, কারো কবর যিয়ারতে তাবারুক বা নেকীর আশা করা। কবরের সামনে মুসল্লীর মত খাড়া হওয়া।
কোন যিয়ারতকারীর মাধ্যমে সালাম পাঠানো। নামায ও তেলাঅত দ্বারা ঈসালে সওয়াব করা। ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোন অনুষ্ঠান করা। সালেহীনদের কবরের নিকট দুআ কবুল হয় এই বিশ্বাস রাখা এবং এই উদ্দেশ্যে যিয়ারত করা। কবরস্থানের গাছ-পালাকে পবিত্র মানা এবং তা কাটতে নেই মনে করা বা কাটতে ভয় করা। কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে দুর থেকে সফর করা। তাতে এত এত নেকী আছে মনে করা। কবর বাঁধানো, শিয়রদেশে পাথরের উপর নাম খোদাই করা, কোন আয়াত লিখা বা ‘জান্নাতী’ লিখা।
কবরের উপর দর্গা, মাযার ও বাগান তৈরী করা, মসজিদ ও গম্বুজ নির্মাণ করা, বাতি জ্বালানো, ধূপ-ধুনা দেওয়া। মাটির হাতি-ঘোড়া পেশ করা, ন্যর নিয়ায় পেশ করা, পশু যবেহ করা। কবরকে সিজদাহ করা, তার তওয়াফ করা, সম্মুখ করে কবরবাসীর ধ্যান করা, কবরের নিকট বসে বা স্পর্শ করে তাবারুক নেওয়া। কবর বা মাযার চুম্বন বা স্পর্শ করে গায়ে মাখা। কবরের দেওয়ালে বা মাযারে কপাল, গাল পিঠ বা পেট লাগিয়ে দুআ করা। সন্তান লাভের আশায় যোনি। দ্বারা স্পর্শ করা! তাযীম করে কবরের দিকে পিঠ না করা। কবরের প্রতি সম্মুখ করে। নামায পড়া।
কবরবাসীকে নাজাতের অসীলা বা বিপদে সুপারিশকারী মানা, তার অসীলায় দুআ করা। তার নামে আল্লাহর উপর কসম খাওয়া। তার নিকট সাহায্য, সন্তান, সম্পদ, সুখ ও বিপদ মুক্তি চাওয়া। কবরের পাশে ধ্যান ও যিক করা। কবর যিয়ারতের পর উল্টাপায়ে ও কবরকে সামনে করেই ফিরে আসা। মসজিদে কারো কবর দেওয়া। কবরের উপর উরস, মেলা প্রভৃতি পাপের মিলনক্ষেত্র অনুষ্ঠান করা, চাদর চড়ানো।