বিদআত দর্পণ আবদুল হামীদ ফাইযী ৪৭ টি
বিদআত দর্পণ আবদুল হামীদ ফাইযী ৪৭ টি

জ্ঞাতব্য বিষয় যে, সালাফী বা আহলে সুন্নাহ কোন মযহাব বা দলের নাম নয়। বরং তা এক নীতি ও পদ্ধতির নাম; যার ভিত্তি আল্লাহর রসুল ঐ স্থাপন করেছেন এবং তাঁর পর তাঁর সাহাবাবৃন্দ যার অনুসরণ করেছেন; আর তাঁরাই সলফ এবং পরবর্তীতে যাঁরা তাঁদের অনুগমন করেন ও ঐ আসল নীতির অনুসরণ করেন। তাঁরাও সলফ। আল্লাহ পাক বলেন,

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

অর্থাৎ, মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রাথমিক অগ্রানুসারী এবং (এক বিশ্বাস, এক কথা ও এক আমল ইত্যাদি) সদনুষ্ঠানের সাথে তাদের অনুগমন করে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে (আল্লাহতে) সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন; যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ হল মহাসাফল্য। (সুরা তওবা ১০০ আয়াত)

অতএব যাঁরা তাঁদের অনুগমন করেন, তাঁদের বুঝে কুরআন ও সুন্নাহ বুঝেন, তাঁদের মত আল্লাহ ও তদীয় রসুলকে ভালোবাসেন এবং তাঁদের পদ্ধতি মত শরীয়তের আনুগত্য করেন, তাঁরাই সালাফী। যাঁরা দ্বীনী কোন কথা বিশ্বাস করতে, বলতে অথবা কোন কাজ করতে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল খোঁজেন। যাঁরা সহীহ হাদীস ও সলফদের সহীহ উক্তি অনুসারে কুরআনের ব্যাখ্যা করেন, তাঁরাই আহলে সুন্নাহ। সেই সলফে সালেহীনদের জামাআতই একমাত্র ইসলামী জামাআত। ইসলামে আর ভিন্ন কোন জামাআত নেই। এই জামাআতই পৃথিবীতে সাহায্য প্রাপ্ত এবং আখেরাতে মুক্তি প্রাপক। অন্যথা কুরআন ও হাদীস তথা সলফের জ্ঞান ব্যতিরেকে যারা মনের খেয়ালবশে অন্য পথ রচনা করে বা বরণ করে ও এই জামাআত ও তার নীতি হতে ভিন্ন নাম ও নীতি নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়, তারাই ধ্বংস প্রাপক।

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট দুরদর্শী চিন্তানায়ক মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, “বানী ইস্রাঈলরা বাহাত্তর ফিকায় বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত তিয়াত্তর ফির্কায় বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে বাহাত্তরটি ফির্কা জাহান্নামে যাবে এবং একটি মাত্র ফির্কা জান্নাতবাসী হবে। ঐ জান্নাতী ফির্কা তাদের, যারা আমার ও আমার সাহাবার আদর্শের উপর কায়েম থাকবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ)

পীরশ্রেষ্ঠ হযরত আব্দুল কাদের জীলানী (রঃ) বলেন, জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্ত ঐ দলটি আহলে সুন্নাহ অল-জামাআহর দল। যার একটি মাত্র নাম আছে তা হল ‘আহলে হাদীস। (গুনিয়াতুত তালেবীন)।

সুতরাং আহলে সুন্নাহ, হাদীস বা আসার অথবা সালাফীর নীতি এক পূর্ণাঙ্গ সঠিক ইসলামের নীতি যে নীতির উপরে ছিলেন আল্লাহর রসুল প্লঃ তাঁর সাহাবাগণ , তাবেঈন ও সকল আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন - ইমাম আবু হানীফা, মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ বিন হাম্বল এবং অন্যান্য ইমাম (রাহেমাহুমুল্লাহ)গণ। আয়েম্মাগণ এ বিষয়ে বিভিন্ন বাক্যে একই কথা বলে গেছেন, ‘সহীহ হাদীসই আমার মযহাব।”

সেই শ্রেষ্ট ও চিরন্তননীতি সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ

(১) আলকুরআনে বর্ণিত সমস্ত কথা ও কাজকে নিঃসন্দেহে ও নিঃসংকোচে বিশ্বাস ও ধারণ করা (যে কুরআনে) পূর্ববর্তী কোন প্রকার মিথ্যা ও বাতিল প্রক্ষিপ্ত হয় না।

(২) সহীহ সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, যা আল-কুরআনের ব্যাখ্যাতা ও দ্বিতীয় ওহী (ঐশীবাণী)। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,

وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

অর্থাৎ, তোমার প্রতি গ্রন্থ অবতীর্ণ করা হয়েছে তা তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বোঝাবার জন্য--[{সূরা নাহল ৪৪ আয়াত) তিনি অন্যত্র বলেন,

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَىٰ * إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَىٰ

অর্থাৎ, এবং সে (নবী) নিজের ইচ্ছামত কোন কথা বলেন না। তা তো অহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম ৩-৪ আয়াত)

(৩) আল্লাহকে একমাত্র প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, বিধায়ক এবং একমাত্র উপাস্য ও মাবুদরূপে বিশ্বাস করা। তিনি ছাড়া আর কেউই (সত্য) উপাস্য নেই। গুপ্ত ও প্রকাশ্য বিশ্বাস্য, কথনীয় এবং করণীয় যাবতীয় ইবাদত কেবল তাঁরই সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্যলাভের উদ্দেশ্যে তাঁকেই নিবেদন করা।

(৪) তাঁর সমুদয় আসমা ও সিফাত (নাম ও গুণাবলী)র উপর সেই মত ঈমান রাখা, যে মত তিনি তাঁর কিতাবে নিজে বর্ণিত ও ব্যক্ত করেছেন এবং যে মত তাঁর রসুল ও তাঁর সুন্নাহতে বর্ণনা দিয়েছেন। তার স্পষ্ট অর্থ ও সহজাৰ্থ গ্রহণ করা এবং কোন প্রকার বিকৃতি, হেরফের বা দুর ব্যাখ্যার অনুপ্রবেশ না ঘটানো। অথবা সেই সমুহকে অর্থহীন কিংবা আল্লাহ জাল্লাহ তাআলার ঐ অর্থবহগুণহীন না মনে করা এবং ঐ অর্থের বা গুণের কোন প্রকার উপমা, উদাহরণ, সাদৃশ্য বা সূরূপতা বর্ণনা না করা। বরং তা কেমন, কি প্রকার, কিরূপ ইত্যাদি প্রশ্নও মনে না আনা। মহান আল্লাহ বলেন,

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

অর্থাৎ, কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শুরা ১১ আয়াত)

(৫) আল্লাহ পাক যা অবতীর্ণ করেছেন তা নিজেদের এবং রাষ্ট্রের (জীবন) সংবিধান করা এবং রসূল ৪-এর আদর্শ ও বিধান দ্বারা সকল সমস্যার ও বিপদবিসম্বাদের ও বিচার-মীমাংসা করা। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

অর্থাৎ, কিন্তু না, তোমার প্রতি পালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার-ভার তোমার উপর অর্পণ করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়। (সুরা নিসা ৬৫ আয়াত)।

(৬) সৎকার্যের আদেশ এবং অসৎ বাধা দান করা এবং সৎপথের প্রতি মানুষকে আহবান করা। আল্লাহ পাক বলেন,

قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ

অর্থাৎ, বল, এটিই আমার পথ; আমি এবং আমার অনুসারীগণ সজ্ঞানে আল্লাহর প্রতি (মানুষকে) আহবান করি, আল্লাহ মহিমান্বিত এবং যারা আল্লাহর অংশী স্থাপন। করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সুরা ইউসুফ ১০৮ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

অর্থাৎ, তুমি (মানুষকে) প্রজ্ঞা (যুক্তি) ও সদুপদেশ দ্বারা তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর এবং ওদের সাথে সদ্ভাবে আলোচনা কর। অবশ্য তোমার প্রতিপালক। তাঁর পথ ছেড়ে যে বিপথগামী হয়; সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং যারা সৎপথে আছে তাও তিনি সবিশেষ জানেন। (সুরা নাহল ১২৫ আয়াত)

অতএব সৎকার্যের আদেশ ও অসৎকার্যে নিষেধ এবং আল্লাহর পথে আহবান। (তবলীগ) এই দুটি আয়াতের ভিত্তিতে করা। প্রথমতঃ ইলম বা শরয়ী জ্ঞান ও দ্বিতীয়তঃ হিকমত বা প্রজ্ঞা বা যুক্তি ও দুরদর্শিতা। প্রত্যেক মুসলিম তার সম্বল ও সামর্থ্যানুযায়ী নিজের নির্দিষ্ট ক্ষেত্র ও কর্মসীমার ভিতরে এই দাওয়াত কার্যে অংশ গ্রহণ করবে। আর আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতীত দায়িত্বভার অর্পণ করেন না। যেমন তাঁর রসুল প্ল বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন মন্দ কাজ দেখবে সে তার হাতের দ্বারা অপসারণ (বাধা দান করবে। যদি তাতে সক্ষম না হয় তবে তার জিভের দ্বারা, যদি তাতেও সক্ষম না হয় তবে তার অন্তর দ্বারা (ঘৃণা জানবে) এবং তা দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক। (মুসলিম)

সুতরাং হস্ত দ্বারা বাধা দেওয়া শাসন কর্তৃপক্ষের কর্তব্য এবং অনুরূপভাবে পরিবারের জন্য তার অভিভাবকের কাজ। মুখ দ্বারা বাধা দেওয়া প্রত্যেক মুসলিমের কাজ। যদি কথার সাহায্যেও গর্হিত কর্ম দুর করতে (ফিতনা ইত্যাদির ভয়ে) সক্ষম না হয়, তাহলে তার উচিত অন্তর থেকে ঐ মন্দকে ঘৃণা করা; নচেৎ ঈমান হারিয়ে যায়।

(৭) দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে এবং মানুষকে মানুষ অথবা জড়ের ইবাদত করা হতে রক্ষা করে একমাত্র মানুষ ও জড়ের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক একক উপাস্যের ইবাদত করতে পথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আল্লাহর পথে সর্বপ্রকার জিহাদ করা।

(৮) কারো প্রতি বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ কিতাব ও সুন্নাহর নির্দেশমত করা (কোন দল বা ব্যক্তিত্বের খাতিরে নয়।) আহলে সুন্নাহ বা হাদীসকে ভালোবাসা এবং আহলে বিদআতকে ঘৃণা করা।

(৯) প্রথমে সংশোধন ও তরবিয়তের, অতঃপর সংগঠন ও রচনার পথ অনুসরণ করা।

(১০) কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রতিকূল কোনও বক্তার ব্যক্তিপুজা না করা। এই দুয়ের উপর কোন ইমাম, আলেম বা চিন্তাবিদের কথাকে প্রাধান্য না দেওয়া, এ দুয়ের পরিপন্থী সকল মত ও সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে একমাত্র এ দুয়েরই অনুসরণ করা।

(১১) নেতা, আমীর বা রাজার আনুগত্য করা, যদি তারা কোন পাপ কার্যের আদেশ না দেয় এবং স্পষ্ট সপ্রমাণ কুফরীর প্রকাশ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা না করা।

(১২) সংখ্যায় কম হলেই পথ চলতে আতঙ্কিত ও ভীত না হওয়া। কেবল মাত্র হক ও দলীলের সাথে সম্মত হওয়া; যদিও বা সারা দুনিয়া বিরোধী হয়।

(১৩) দ্বীনের যাবতীয় আদর্শ ও শিক্ষায়, ব্যবহার ও আচরণে পরস্পর সহানুভূতিশীল হওয়া। সকলে মিলে যেন একটি দেহ, যার কোন একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে জাগরণ ও জ্বরে সারা দেহ সমব্যথী হয়। যেমন রসুল ঐ-এর চরিত্র ছিল আলকুরআন, তদনুরূপ ছিলেন তাঁর সাহাবাবৃন্দ যাঁরা আমাদের আদর্শ ও সলফ।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রঃ) বলেন, 'ইলম ও ইবাদত বিষয়ক (প্রায়) সর্বপ্রকার বিদআত খুলাফায়ে রাশেদীনের খোলাফত কালের শেষের দিকেই প্রকাশ পায়। যেমন, এ বিষয়ে সতর্ক করে নবী (সা.) বলেছিলেন, “যে আমার পর যে জীবিত থাকবে সে বহু মতানৈক্য দেখতে পাবে, সুতরাং তোমরা আমার ও আমার পরবর্তী খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ (আদর্শ)কে আঁকড়ে ধরো।” (ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ ৩০/৩৫৪)

সর্বপ্রথম কদরের (তকদীর বলে কিছু নেই এই বিশ্বাসের) বিদআত বিকাশ লাভ করে অতঃপর ‘ইরজা’ (আমল ঈমানে শামিল নয় এই বিশ্বাস), ‘তাশাইয়ু’ (হযরত আলী প্রথম খলীফা হওয়ার যোগ্য ও অধিকারী এই ধারণার উপর ঘটিত) বিদআত এবং খাওয়ারেজ (যারা বলে কাবীরাহ গুনাহকারী কাফের এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামবাসী তাদের) বিদআত প্রকাশ পায়। এ সমস্ত বিদআতগুলি প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে সাহাবাদের বর্তমানেই ঘটে। যাতে তাঁরা অসম্মতি প্রকাশ করেছিলেন এবং উচিত মত সে সবের প্রতিবাদ ও খনও করেছিলেন। বরং আলী (রাঃ) খাওয়ারেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।

অতঃপর মু’যিলা আকলানীদের (যারা আকল বা জ্ঞান ও বিবেকের নিক্তিতে শরীয়ত বুঝে তাদের) বিদআত দেখা দেয় এবং মুসলিমদের মাঝে বড় বিঘ্ন ও ফিতনার সৃষ্টি হয়। বিভিন্নমুখী মতানৈক্যে, কলহ-বিবাদ ও খেয়াল-খুশীর পূজা বাড়তে থাকে। তাসাউবুফ (সুফীবাদ) ও কবর। পূজার বা মাজারের বিদআত প্রকাশ হয় ইসলামী স্বর্ণযুগের পর এবং সেইভাবে পর পর যুগ অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আরো অন্যান্য রকমারী বিদআতের প্রাদুর্ভাব ঘটে। প্রধান প্রধান বিদআত দেখা দেয় বসরা, কুফা ও শাম থেকে, যা পরবর্তীকালে অন্যান্য দেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বীন বিষয়ে যথার্থ পড়াশুনা না করা বা না জানা, ধর্মের আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা, সঠিক আরবী ভাষাজ্ঞান না থাকা প্রভৃতি। এসব বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলে অবশ্যই মানুষ বিদআত ও ভ্রষ্টতায় পড়তে বাধ্য। যেমন পথ না চিনলে অবশ্যই মানুষ ভ্রান্ত পথে বিপথগামী হতে বাধ্য হয়।

শরীয়ত মুসলিমকে জ্ঞান শিক্ষার উপর ফরযরূপে উদ্বুদ্ধ করে। অজান্তে কোন কথা আন্দাজে বলতে সাবধান করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

অর্থাৎ, বল, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ (হারাম) করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপাচারকে ও অসঙ্গত বিরোধিতাকে এবং কোন কিছুকে আল্লাহর শরীক করাকে - যার কোন দলীল তিনি অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উপর এমন। কিছু বলাকে যে সম্বন্ধে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই। (সূরা আরাফ ৩৩ আয়াত) তিনি আরো বলেন,

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا

অর্থাৎ, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সুরা ইসরা ৩৬ আয়াত)

আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, “আল্লাহ বান্দাদের নিকট থেকে ইলম ছিনিয়ে নেওয়ার মত তুলে নেবেন না। বরং উলামা তুলে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন। এমতাবস্থায় যখন কোন আলেম অবশিষ্ট রাখবেন না, তখন মানুষ মুখদেরকে গুরু (ও নে) রূপে বরণ করবে। ফলে তারা জিজ্ঞাসিত হলে বিনা ইমে ফতোয়া দেবে, যাতে তারা নিজে ভ্রষ্ট হবে এবং অপরকে ভ্রষ্ট করবে। (বুখারী ও মুসলিম ২৬৭৩ নং)

তিনি আরো বলেন, “আমার পূর্বে কোন উম্মতের মাঝে আল্লাহ যে কোনই নবী পাঠিয়েছেন তাঁর জন্যই তার মধ্য হতে সাহায্যকারী ও সহচরবর্গ ছিল; যারা তাঁর আদর্শের অনুসারী ছিল। অতঃপর তাদের পর এমন উত্তরসুরিদের জন্ম হয় যারা যা কাজে করে না তা মুখে বলে এবং যা করতে তারা আদিষ্ট নয় তাই করে। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন লোকদের বিরুদ্ধে নিজ হস্ত দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিহ্বা দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করে সে মুমিন। আর এর পশ্চাতে এক সরিষা দানা পরিমাণও ঈমান নেই।” (মুসলিম)

সুতরাং জ্ঞান এমন আলোকবর্তিকা যার দ্বারা মুসলিম আখেরাতের পথ সুস্পষ্টরূপে দেখতে পায় এবং কর্তব্যাকর্তব্য ঐ আলোকে প্রকটিত হয়। ফলে সে নিজে ভ্রষ্ট ও ধ্বংস হয় না এবং অপরকেও ভ্রষ্ট ও ধ্বংস করে না। পক্ষান্তরে জাহেল এক অন্ধ। যে নিজে পথের দিশা পায় না, সুতরাং অপরকে তো পথের সন্ধান বলতেই পারে না। (কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর) এমন অন্ধ নিজে বিদআতী হয় এবং ভুল ফতোয়া দিয়ে, জাল ও যয়ীফ হাদীসকে ভিত্তি করে আহকাম রচনা করে ও তা প্রচার করে অপরকেও বিদআতী বানায়।

অনেকে কিসা-কাহিনী এবং স্বপ্নবৃত্তান্ত দ্বারা আমল করে এবং তাই দিয়ে দাওয়াতের কাজ করে। এরা এমন কাঠুরে যারা রাতের অন্ধকারে কাঠ কুড়ায় এবং সাপও কুড়ায়। ফলে নিজেদের ধ্বংস ডাকে এবং যারা তাদের কাঠ ক্রয় করে তাদেরও সর্বনাশ আনে। প্রয়োজন সত্ত্বেও আলো জরুরী মনে করে না। বরং ইলম ও উলামার নামে নাক সিটকায়। যেহেতু উলামারা ওদের মত কাঠুরে নন তাই। হযরত জাবের এts বলেন, একদা আমরা সফরে বের হলাম। আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তির মাথায় পাথরের আঘাত লেগে ক্ষত ছিল। পরে তার স্বপ্নদোষ হল। লোকটি (পবিত্রতা সম্পর্কে) তার সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞাসা করল, আমার জন্য তায়াম্মুমের অনুমতি আছে কি? তারা বলল, 'না, তোমার জন্য সে অনুমতি নেই। কারণ তুমি পানি ব্যবহার করতে সক্ষম। (এই ফতোয়া শুনে) লোকটি গোসল করল। (এবং ক্ষতস্থানে পানি পৌছে ক্ষত বর্ধিত হলে) তাতে সে মারা গেল।

অতঃপর যখন। আমরা নবী -এর নিকট ফিরে এলাম তখন ঐ লোকটির কথা জানালাম। তখন। ঘটনা শুনে তিনি বললেন, “ওরা ওকে হত্যা করেছে, আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করেন, কেন তারা জিজ্ঞাসা করেনি। যদি তারা জানত না? মুখতা রোগের নিরাময় তো প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসাই। ওর জন্য তো তায়াম্মুমই যথেষ্ট ছিল।” (আবু দাউদ, ইবন মাজাহ মুঃ আহমাদ ১/৩৩০) এতো ইহকালের ধ্বংসের কথা। কিন্তু ঐ গদ্দিনশীন জাহেল মুশরিকরা তো মানুষের পরকাল মন্দ করে এবং চিরস্থায়ী সর্বনাশের মুখে ঠেলে দেয়। কিতাব ও সুন্নাহর জ্ঞানকে কিতাবী জ্ঞান বা জাহেরী ইলম বলে অপদার্থ জ্ঞান করে এবং ওদের কল্পিত বাতেনী বা গুপ্ত কলবী জ্ঞানকেই প্রকৃত জ্ঞান বলে গুপ্তভাবেই কেবল নিজেদের ভক্তদের মাঝে প্রচার করে। ফলে ঐ জ্ঞানের কৃষ্ণতমসে নিজেদেরকে ও তার সাথে মুরীদদেরকেও সর্বনাশগ্রস্ত করে। পথের দিশা দিতে গিয়ে হতের দিশা দান করে থাকে।

পক্ষান্তরে অনেকে মনে করে যে, আমলটাই আসল। কোন আলেমের নিকট অযথা সময় নষ্ট করে ইলম শিক্ষায় কোন লাভ নেই। কিন্তু তারা জানে না যে, ইলম শিক্ষা। করাও এক বড় আমল। বরং বিনা ইমে আমল সম্ভবই নয়। যাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই অধিক হয়ে থাকে। ইন্ম মুমিনের অস্ত্র ও ঈমানের জ্যোতি, তার চিরশত্রু শয়তান তাকে এই অস্ত্র হতে দুর এবং এই জ্যোতিকে নির্বাপিত করতে সফল হলে তাকে ধ্বংস ও ভ্রষ্ট করা খুবই সহজ হয়। অন্ধকারে পথ ভুল হয়। বিদআত বেড়ে চলে।

‘আমপারা পড়ে হামবড়া করে আর দু’পাতা উর্দু পড়ে ওস্তাজী সেজে অথবা ইমামরূপে প্রত্যেক মহল্লায় ‘খাস-খাস’ ফতোয় চলে। কেউ বা মকসুদুল মুমেনীন’ অথবা ‘বেহেস্তী যেওর’কে বুখারী-মুসলিমের দর্জা দিয়ে চোখ বুজে আমল করে। কেউ বা নিম-মৌলভী অথবা শুন-মৌলভীর কথায় ঈমানদার ও পরহেযগার সাজে। সে ক্ষেত্রে কিতাব ও সুন্নাহর প্রকৃত জ্ঞানী আলেম ও মুফতিদের কোন প্রয়োজনই বোধ হয় না। ফলে ঐ সমাজের অবস্থা এই যে, কিতাব ও সুন্নাহর কোন আলেম সঠিক পথ দেখাবার চেষ্টা করলে গদ্দিনশীনরা নিজেদের গদি যাবার ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কাফের ফতোয়া দিয়ে নিজ ভক্তদের কানে তালা ঝুলিয়ে দেয় অথবা ‘নতুন হাদীস’ বলে নাক সিটকে দেয় ফলে সংস্কার ও সংশোধন কঠিন হয়ে পড়ে, বিদআতের অন্ধকার আরো ঘনীভূত হতে থাকে।

বিদআত জন্মের এক কারণ প্রবৃত্তি পূজা। কোনও কর্মকে উত্তম মনে করা হয়, অতঃপর শয়তান সেই কর্মকে অধিক সুন্দর ও সুশোভিতরূপে তার মনে প্রবেশ করিয়ে দেয়। মন তা পছন্দ ও বরণ করে। কখনো বা অভ্যাসগতভাবে ঐ কর্মকেই ধর্ম বলে পালন করে। যখন কারো সতর্কবাণীও গ্রাহ্য হয় না। | বিদআত ঐ প্রবৃত্তিরই বোনা জাল। যে প্রবৃত্তির কাছে কিতাব ও সুন্নাহর ততটা বা কিছুটাও মান নেই। বস্তুতঃ যারাই কিতাব ও সুন্নাহর পথ ছেড়ে অন্য পথে চলতে চায় তারাই প্রবৃত্তির পূজা করে এবং নিজ মনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ ۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

অর্থাৎ, অতঃপর ও যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয় তাহলে জানবে যে, ওরা তো কেবল নিজেদের খেয়াল-খুশীরই অনুসরণ করে। আর আল্লাহর পথনির্দেশ বিনা যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে? (সূরা কাসাস ৫০ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الْأَنفُسُ ۖ وَلَقَدْ جَاءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ الْهُدَىٰ

অর্থাৎ, ওরা তো কেবল অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। অথচ ওদের নিকট ওদের প্রতিপালকের তরফ হতে পথনির্দেশ এসেছে। (সুরা নাম ২৩ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَن يَهْدِيهِ مِن بَعْدِ اللَّهِ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

অর্থাৎ, তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজের উপাস্য করে নিয়েছে? আল্লাহ (তার ভ্রষ্টতা) জেনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তার কর্ণ ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তার চক্ষর উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহ মানুষকে বিভ্রান্ত করার পর কে তাকে পথ নির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? (সুরা জাসিয়াহ ২৩ আয়াত) সুতরাং প্রবৃত্তি পূজা এমন এক বিপজ্জনক হৃদরোগ যার কারণে পূজারী মানুষ। বিভ্রান্ত ও কুটিলতায় পড়ে সরল পথ থেকে সুদূরে অপসৃত হয়। এমন বক্রপথ অবলম্বন করে যে, সঠিক পথ-নির্দেশ সত্ত্বেও সত্য পথে প্রত্যাবর্তন করতে সম্মত। হয় না।

পর্বতসম দলীল তার কাছে পেশ করলেও তা অগ্রাহ্য করে নিজের মতের উপরই সুদৃঢ়ভাবে নির্বিচল থাকে। যেহেতু ঐ খেয়াল তার মনে এমনভাবে বদ্ধমূল হয় যে, ন্যায় শুনতে কর্ণ বধির এবং সরল ও সত্য পথ দেখতে চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। কখনো বা কিতাব ও সুন্নাহ থেকেই এমন দলীল বক্রতার সহিত বের করে, যা তার প্রবৃত্তি ও মতের বাহ্যতঃ অনুকূল মনে হয়। কখনো বা একটি মাত্র আয়াত বা হাদীসঅথবা তার কোন একাংশ ধরে তা নিজের মতের উপর দলীলরূপে পেশ করে নিজেকে কৃতার্থ মনে করে। কিন্তু অন্যান্য আয়াত, হাদীস বা তার পুণাংশের প্রতি ভ্রক্ষেপ করে না। এমন গোঁয়ার ও ভ্রষ্টলোকের সৃষ্ট বিদআত সবচেয়ে অধিক মারাত্মক।

বিদআত সৃষ্টির এক কারণ সন্দিহান ও রূপক (দুর্বোধ্য) আয়াত বা হাদীসের মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করা। যাতে ব্যাখ্যাতা অসঙ্গত তাৎপর্য করে আসল উক্তির পরিবর্তন ঘটায় এবং এক উক্তির সহিত অন্য অক্তি পরস্পর-বিরোধিতা ব্যক্ত করে। কিতাবের কিছু অংশের উপর ঈমান আনে এবং কিছু অংশকে অস্বীকার। করে। ঐ সমস্ত রূপক আয়াতের মনগড়া ইলম মনে সঞ্চার করে বাতেনী ইলমের খাজানা পেয়েছে বলে দাবী করে। অথচ এরাই হচ্ছে বক্রতা ও ভ্রষ্টতার ভান্ডার। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সা.) এই আয়াত তেলাঅত করলেন:

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ

অর্থাৎ, তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন; এগুলি কিতাবের মূল অংশ। আর অন্যগুলি রূপক। যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফিৎনা (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা সুবিজ্ঞ তারা বলে, আমরা এ বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে আগত। বস্তুতঃ বুদ্ধিমান লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আলে ইরান ৭ আয়াত)

অতঃপর তিনি (রসুল) বলেন, “সুতরাং যাদেরকে রূপক আয়াতের অনুসরণ করতে দেখবে আল্লাহ তাদেরকেই উদ্দেশ্য করেছেন, তাই তাদের থেকে সাবধান থেকো। (বুখারী ও মুসলিম) | রূপক আয়াত নিয়ে বিদ্যা জাহিরকারী (ভেদ প্রকাশকারী) ও বিভিন্ন সংশয় সৃষ্টিকারী এক ব্যক্তিকে উমার (রাঃ) প্রচন্ডভাবে প্রহার করে এমন শায়েস্তা করেছিলেন যে, অতঃপর আর কোন দিন তার মনে কোন সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। এমন লোক যে এ যুগে কম, তা নয়। কিন্তু সে উমার আর নেই। তাই তো এমন কেরামতবাজদের বিদআতে ভ্রষ্টতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে মুসলিম সমাজ অধঃপতনের শিকার হয়েছে।

সংশয় এক এমন ভয়ানক ব্যাধি যে, ঐ ব্যাধিগ্রস্ত মানুষের নিকট আসল ও প্রকৃত বিষয় চাপা পড়ে, হক ও বাতিলের মাঝে তালগোল খেয়ে যায়। কখনো বা এমনও হয় যে, ঐ মানুষ ইসলামী গন্ডি থেকে অজান্তে বের হয়ে যায়। আবার এই ব্যাধির মাধ্যমেই ইসলাম-দুশমনরা মুসলিমদের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে দুর্বল ঈমানের মানুষদের মনে বিপজ্জনক ঈমান-ধ্বংসী জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটায়। ফলে মুসলিম নিজ ঈমানে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করে এবং এক সময় ঈমান-হারা হয়ে যায়। তাইতো এসব বিষয়ে মুসলিমকে বড় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে যে সব বিষয়ে অধিক সন্দেহ জাগার সম্ভাবনা থাকে; (যেমন তকদীর, সিফাত প্রভৃতি) সে সব বিষয়ে ঈমান পাক্কা ও মজবুত করা উচিত।

প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহর সিফাত (গুণ) সম্বলিত আয়াতসমুহের কোনটাই রূপক (মুতাশা-বিহ) নয়। কেননা, তাঁর সিফাতের অর্থ আমাদের সুস্পষ্ট জানা, অবশ্য তার রকমত্ব ও স্বরূপ সকলের কাছে অজানা। সুতরাং সে বিষয়ে কারো কোন সংশয় হওয়ার কথা নয়।।

ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলতেন, 'আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁর নিকট হতে আগত সকল বিষয়ের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যেরই অনুবর্তী হয়ে ঈমান। এনেছি। রসুলের উপর ঈমান এনেছি এবং তাঁর নিকট আগত সকল বিষয়ের উপর রসূলের উদ্দেশ্যেরই অনুবর্তী হয়ে ঈমান এনেছি।” (যাম্মুত তাবীল)

ইমাম মালেক (রঃ) আল্লাহর আরশে থাকার কেমনত্ব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে। বলেছিলেন, আরশে থাকা বিদিত, তার কেমনত্ব অবিদিত এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন (কৈফিয়ত) করা বিদআত।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে শ্রেষ্ঠতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর সৃষ্টজগতে অনেকের চেয়ে মানুষকেই অধিকতম শ্রেষ্টত্ব ও সম্মান প্রদান করেছেন। মানুষের দেহ সৃষ্টি-বিচিত্রে তাঁর বিস্ময়কর শক্তি এবং সীমাহীন প্রজ্ঞার অভিব্যক্তি ঘটেছে। মানুষের দেহ-বিচিত্রে মস্তিষ্ক ও বুদ্ধি আল্লাহর এক মহাদান। যার দ্বারা মানুষ ভালোকে মন্দ হতে এবং হককে বাতিল হতে পার্থক্য করতে পারে। শরীয়তের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ জ্ঞানকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। এই জ্ঞান ও বিবেক যাতে বিনষ্ট হয়ে যায়, তার বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু মানুষ এই অমূল্য জ্ঞান-সম্পদকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন ও অবহেলার শিকার হয়েছে। কিছু মানুষ আছে যারা কোন বিষয়ে জ্ঞান খাটাতেই চায় না; বরং অন্ধভাবেই সবকিছু বিশ্বাস করে ও মেনে নেয়। এমন কি যেখানে শরীয়ত আদেশ করেছে, সেখানেও জ্ঞানকে ব্যবহার করতে কার্পণ্য বা আলস্য করে। আল্লাহ পাক বলেন,

سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ ۗ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ

অর্থাৎ, আমি ওদের জন্য আমার নিদর্শনাবলী বিশ্বজগতে ব্যক্ত করব এবং ওদের নিজেদের (দেহ) মধ্যেও; ফলে ওদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, তা সত্য। একি যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ববিষয়ে সাক্ষী? (সুরা ফুসসিলাত ৫৩ আয়াত) তিনি আরো বলেন,

كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ

অর্থাৎ, এভাবে আল্লাহ সকল নিদর্শন তোমাদের জন্য প্রকাশ করেন; যাতে তোমরা চিন্তা কর। (সূরা বাকারাহ ২১৯ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ ۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ

অর্থাৎ, বল অন্ধ ও চক্ষুষ্মন কি সমান? তোমরা কি অনুধাবন কর না? (সুরা আনআম ৫০ আয়াত)

এইভাবে কুরআন মাজীদের বহু স্থানে “তোমরা কি বুঝনা? যাতে তোমরা বুঝ, যদি তোমরা বুঝ, ওরা কি জ্ঞান করে না? জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, তোমরা কি

চিন্তা কর না? যাতে তোমরা চিন্তা কর, যাতে ওরা চিন্তা করে, চিন্তাবিদদের জন্য নিদর্শন রয়েছে” প্রভৃতি বলে জ্ঞান ও চিন্তা করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু অনেকে জ্ঞান খাটায় না।

পক্ষান্তরে কতক মানুষ আছে, যারা সর্ববিষয়ে নিজের আকেলকেই প্রাধান্য দেয়, সবকিছুকেই বিবেকের নিক্তিতে ওজন করে। জ্ঞানকেই ভালো-মন্দ বুঝার উৎস। মনে করে। নিজেদের জ্ঞান যাকে সত্য বলে তারা তাকে সত্য মানে এবং যাকে অসত্য বলে তাকে তাই মানে যদিও তা কিতাব ও সুন্নাহর (প্রকৃত জ্ঞানের) প্রতিকূল হয়। যার ফলে বহু বিদআত এই আকেলের ছাঁচে সৃষ্টি হয়েছে। আর এরই জন্য ভ্রষ্টতা ও বহু সংখ্যক ফিতনা, বিশৃঙ্খলা ও হানাহানি সংঘটিত হয়েছে, কত সুন্নত উঠে গেছে, উম্মাহর মাঝে বিছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে এবং কিতাব ও সুন্নাহর। বিভিন্ন উক্তিকে বিকৃত ও হেরফের করা হয়েছে।

অথচ শরীয়তে এমন কিছু নেই যা মানুষের জ্ঞান ও বিবেকের প্রতিকূল। অবশ্য অনেক বিষয় আছে, মানুষের সীমিত জ্ঞান যার প্রকৃতত্বের ছোঁয়া পায় না। ফলে সে তাতে বিমুঢ় ও হয়রান হয়ে যায়। কিন্তু তা বলে জ্ঞানের বাহুবলে তা অমান্য নয়। যেহেতু মানুষের জ্ঞান থাকলেও তার পরিসর সীমাবদ্ধ এবং সৃষ্টিকর্তা শরীয়তদাতার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অপরিসীম। তাঁর সকল হিকমত বুঝে ওঠা মানুষের সাধ্য নয়। সুতরাং শরীয়তের উপর জ্ঞানের চাকা সর্বক্ষেত্রে সচল নয়।

কিন্তু বিরলভাবে কতক মানুষ এই নিয়মের বিরোধিতা ও ব্যতিক্রম করে তারা নিজেদের অপরিসর জ্ঞানের বহরকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে ঊর্ধ্বে। বাড়িয়ে থাকে, তাদের শাক-বেচা দাড়িপাল্লাতে সুবৃহৎ পর্বত ওজন করতে চায়! কেবল বিবেককেই ধর্মাধর্মের কষ্টিপাথর মনে করে। শরীয়তের বিষয়াবলীকে জ্ঞানের মিটারে মেপে থাকে। তাদের জ্ঞানে ধরে না -এমন ইলাহী খবরকে র করে দেয় এবং জ্ঞান ও রুচি থেকে হালাল ও হারাম মানে; যদিও ইলাহী কানুনে তার বিপরীত বলে ঘোষিত থাকে। এতো ভালো জিনিস, ওতে ক্ষতি কি? এটা কুসংস্কার ইত্যাদি বলে নবনব ভিত্তিহীন ইবাদত-অনুষ্ঠান রচনা করে থাকে অথবা ধ্বংস করে থাকেযার অনুমতি মাবুদ দেননি।

আকেলের ঘোড়া ছুটিয়ে বাস্তববাদীরা বহু দ্বীনী প্রকৃতত্বকে অস্বীকার ও রদ করে থাকে। বিশেষ করে অদৃশ্য ও ইন্দ্রিয়-অগ্রাহ্য বিভিন্ন ইলাহী ও নববী খবরকে অবিশ্বাস করে; যদিও বা তা শুদ্ধভাবে প্রমাণিত। যেমন ফিরিশ্যা ও জিন-জগৎ, কবরের আযাব, যাদু-প্রতিক্রিয়া, ইমাম মাহদী ও হযরত ঈসার (আঃ) আবির্ভাব, দাজ্জালের ফিতনা, রসুলের মিরাজ, সিনাচাক, পরকালে মীযান, হাওয, পুলসীরাত প্রভৃতি গায়বী বিষয়কে তারা অবিশ্বাস করে।

পক্ষান্তরে, প্রত্যেক সুস্থ-মস্তিষ্কের মুসলিমের নিকট বিদিত যে, আল্লাহ বা তাঁর রসুল থেকে যখন কোন খবর শুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়, তখন তা মান্য করা অথবা রদ্দ। করাতে আকেলের কোন হাত থাকে না। বরং তাতে দৃঢ় প্রত্যয় রাখা এবং মান্য করা ওয়াজেব হয়ে যায়; চাহে অজ্ঞান ও বিবেক সেই খবরের প্রকৃতত্বের নাগাল পায় অথবা না পায়। যেহেতু জ্ঞান প্রত্যেক বিষয়েরই প্রকৃতত্ব উপলব্ধি করতে অক্ষম। হাজারে আসওয়াদকে চুম্বনকালে হযরত উমার ফারূক (রাঃ) এই তত্ত্বকেই সামনে। রেখে বলেছিলেন, 'আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর; তুমি না কারো উপকার সাধন করতে পার, আর না-ই কারো অপকার। যদি রসুল (সা.)-কে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।” (বুখারী)

সুতরাং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এই যে, “যখন মুমিনদের আপোসের কোন বিষয়ের ফায়সালার জন্য তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা তো কেবল এ কথাই বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও মান্য করলাম। আর ব্রাই হল সফলকাম।” (সুরা নুর ৫১ আয়াত)।

(৫) ইমাম ও বুযুর্গদের অন্ধানুকরণ ও পক্ষপাতিত্ব

বিদআত প্রসারের এটি অন্যতম প্রধান কারণ। আকীদা ও আহকামে আল্লাহ ও রসুলের উক্তি এবং মীমাংসার উপর বিদআতীরা নিজেদের বুযুর্গদের কথা ও ফায়সালাকে অগ্রাধিকার দেয়। অন্ধভাবে তাই বিশ্বাস করে যা তাদের মাননীয় বুযুর্গ বলে। অতিরঞ্জনে অনেকে তাদের বুযুর্গকে ত্রুটিহীন নিস্পাপ মনে করে। মনের আসনে মান্যবর বুযুর্গ বা আলেমকে এমন স্থান দেয় যে, সে যা বলে বা যা করে, তাই। তাদের ধর্ম, কর্তব্য ও বিশ্বাস্য হয়। আর এর বিপরীত সবকিছু অধর্ম ও অমান্য হয়; যদিও বা এই বিপরীত কর্ম ও বিশ্বাস কুরআন ও সহীহ সুন্নায় বর্তমান থাকে। ব্যক্তি পূজার এই অতিরিক্ততায় অনেকে মনে করে যে, তাদের বুযুর্গ যা জানে তা আর অন্য কেউ জানে না বা জানতে পারে না।

ঠিক অনুরূপ অবস্থা বহু মযহাবের মুকাল্লেগণেরও হয়ে থাকে, তাদের ইমাম বা ফকীহ যা বলেন, অন্ধভাবে তাই তারা মান্য করে এবং প্রতিকুল সমস্ত কথা ও অভিমতকে অনায়াসে রদ করে দেয়; যদিও বা তা কুরআন ও সহীহ সুন্নায় থাকে। কেবলমাত্র ইমামের কথায় সম্পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখে। বরং এখানেই শেষ নয়। ওদের অনেকে বলে থাকে যে, প্রতি সেই আয়াত ও হাদীস যা আমাদের মযহাবের বিপরীত ও বিরোধী হয়, তা ব্যাখ্যেয় অথবা রহিত (মনসুখ)!' (রেসালা কারখী) এই তাকলীদ মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কঠিন অন্ধ পক্ষপাতিত্বের ফলে বিদআত বেড়ে চলেছে। যার কারণে কেউ আর কুরআন-হাদীস। শুনতে চায় না। ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করে অনেকে বলে, “ওসব আমাদের বুঝার ক্ষমতা নেই, তাঁরা সব বুঝে প্রকাশ করে গেছেন।

অথচ একথা বিদিত যে, ইমামগণের নিকট সকল সহীহ হাদীস পৌছেনি। পৌঁছলে নিশ্চয়ই তার বিপরীত কোন রায় তাঁরা দিতেন না। কারণ তাঁরা সকলেই কুরআন ও হাদীসেরই অনুসারী ছিলেন -এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তাঁরা মুজতাহেদীন মানুষ ছিলেন। তাঁদেরও ভুল হতে পারে। যেমন তাঁরা সকলেই তাঁদের কারো অন্ধানুকরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে গেছেন এবং তাঁদের কোন কথা কোন সহীহ হাদীসের প্রতিকূল বা খেলাফ হলে হাদীসের মতকেই গ্রহণ করতে আদেশ করে গেছেন। সুতরাং মানুষ কিয়ামতে জিজ্ঞাসিত হবে যে, তারা কুরআন ও সুন্নাহর উপর আমল করেছিলেন কিনা? কোন ইমাম বা বুযুর্গের অনুসরণ করেছিল অথবা না করেছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে কৈফিয়ত করা হবে না।

পক্ষান্তরে স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণ করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা। ভ্রষ্ট জননেতা ও তাদের অনুসারীদের প্রসঙ্গে বলেন,

يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا * وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا * رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا

অর্থাৎ, যেদিন অগ্নিতে ওদের মুখমণ্ডল উল্টে-পাল্টে দগ্ধ করা হবে সেদিন ওরা বলবে, 'হায় আমরা যদি আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করতাম। ওরা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও গুরুদের আনুগত্য করেছিলাম এবং ওরা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; হে আমাদের প্রভু! ওদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা অভিসম্পাত করুন।” (সূরা আহযাব ৬৬-৬৮, আয়াত)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) সকলকে তামাত্তু' হজ করতে আদেশ করতেন। (যেহেতু রসূল প্লঃ সকলকে সেই আদেশই করেছিলেন।) কিন্তু এক প্রতিবাদী। বলল, 'না, তামা’ করা জরুরী না। কারণ, আবু বাকর ও উমার ও তা করতে নিষেধ করেন। (আর তারা আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী ও আনুগত্যের অধিক হকদার।) তা শুনে ইবনে আব্বাস ৩৬ বললেন, অবিলম্বে তোমাদের উপর। আকাশ থেকে প্রস্তর বর্ষণ হবে। আমি তোমাদেরকে বলছি, আল্লাহর রসুল ! বলেছেন আর তোমরা বলছ, আবু বকর ও উমার বলেছেন?’ (যাদুল মাআদ ২/১৯৫, ২০৬নং)

সুতরাং উদার ও অকুণ্ঠ মনে যে এই নীতিকে বুঝে নেবে তার নিকট সকল পাঁচ ও সমস্যা বন্ধন হারিয়ে সহজ হয়ে যাবে। ইসলাম ও আনুগত্যের ব্যাপারে তার মনে কোন জটিলতা জট পাকাবে না। আর মুসলিমদের মাঝেও কোন দ্বন্দ্ব অবশিষ্ট থাকবে না। বিদআত আখড়া ছেড়ে পলায়ন করবে এবং উক্ত স্থানে সুন্নাহ। শোভমান হবে।।

বিদআতীর সংসর্গ ও সাহচর্য বিদআত প্রসারে সহায়ক হয়; বিশেষ করে যদি সহচরের কোন পার্থক্য জ্ঞান না থাকে। আবার সময়-কাল দীর্ঘতার সাথে সাথে বিদআতকে লঘু জ্ঞান (বরং সুন্নাহ মনে করা হয়। ফলে সাথীর মত সাথীও ঐ বিদআতে আমল শুরু করে বসে। এই সংসর্গ প্রসংঙ্গে বহু সকর্তবাণী পুর্বেই আলোচিত হয়েছে।

(৭) উলামাদের নীরবতা ও স্বার্থান্বেষিতা

আল্লাহ পাক বলেন,

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থাঃ, তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎকার্য থেকে নিষেধ করবে এবং ওাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান ১০৪ আয়াত)

কিন্তু এই উম্মাহ যে সমস্ত বিপদ ও দুর্বলতার সম্মুখীন, তার মধ্যে উলামাদের আলস্য ও নীরবতা অন্যতম। আল্লাহর অর্পিত এই মহান দায়িত্ব পালনে উলামাগণ তোষামদ ও মনোরঞ্জনের পথ অবলম্বন করেছেন। উদরপূর্তি, অর্থ লাভ, কিছু আনন্দোপভোগ, পদ ও গদি বহাল প্রভৃতি স্বার্থলাভের খাতিরে বিদআত থেকে নিষেধ করা তো দুরের কথা বরং তাতে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। বরং তার চেয়েও বিস্মৃকর কথা এই যে, স্বার্থবশে তাতে শরীক হয়ে তার সুষ্ঠু উদ্যাপন করে থাকেন। যাদের অনেকে বেনামাযীর জানাযা পড়েন। কিন্তু তার চালশে (মীলাদ) পড়তে বা তার নামে কুরআনখানী বা শবীনা পড়তে কখনো ভুল করেন না।

অবশ্য এ কথার অর্থ এই নয় যে, কর্তব্যপরায়ণ আলেমই সমাজে নেই। এমন। আলেম তো প্রতি দেশ ও যুগে থেকেছেন ও আছেন, যাঁরা সুন্নাহ থেকে বিদআতের পার্থক্য-নির্বাচন করেন এবং ভালো-মন্দ বিচার করে ভালোর পথে চলতে সমাজকে আদেশ করেন। বিদআতকে দস্তুরমত খন্ডন করেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম। আর লোকেরাও তাদেরকে চিনতে ভুল করে।

প্রতিহত না হলে বাতিল খুব শীঘ্রই বেড়ে উঠতে থাকে। উলামাদের তরফ থেকে কোন। বাধা না পেলে বিদআত অবলীলাক্রমে বিস্তার লাভ করতে থাকে। বরং এই নীরবতা অনুমতি ও সমর্থনের লক্ষণ হয় এবং সমাজে তা সুন্নাহ বলে সুপরিচিত হতে থাকে। বর্তমানে মুসলিম জাহানের প্রতি দৃষ্টি ফিরালে দেখা যাবে যে, কত স্বনামধন্য উলামার কর্ণ ও চক্ষুর সামনে ছোট-বড় কত বিদআত ঘটছে ও বেড়ে চলেছে। অথচ তার প্রতিবাদ ও প্রতিকারে স্বল্প কয়েকজন ব্যতীত কেউ মুখ খুলেন না বা কলম ধরেন না।

বরং গদি ও পজিশন যাবার আশঙ্কায় অথবা কোন কূটনীতির খাতিরে অনেকে তাতে অংশ গ্রহণ করে থাকেন। যাতে সাধারণ মানুষের মনে এই ধারণা জন্মে যে, ‘তা বিদআত নয় বরং সুন্নাহ। তা না হলে অমুক সাহেব করবেন। কেন?” আবার কেউ যদি বাধা দিতে চান তাহলে তিনি শুনবেন, তুমি আর কতটুকু জানো? বিদআত হলে অমুক (জাদরেল) সাহেব বলে যেতেন না, বলতেন না বা করতেন না। তারা কি আলেম ছিলেন না? ওঁরা কি আলেম নন, ওঁরা কি কুরআন হাদীস জানেন না বা বুঝেন না? যত নতুন আলেম তত নতুন নতুন ফতোয়া নতুন নতুন হাদীস ইত্যাদি।

কিন্তু এ মিসকীনরা জানে না যে, সব বিষয় সবারই পক্ষে জানা বা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। যেমন, সুন্নাহর সহীহ-যয়ীফ-মওযু’র পার্থক্যজ্ঞান সকলের কাছে থাকে না। আবার সমস্যা আরো অধিক ঘোরতর হয় তখনই যখন প্রতিবাদ শুনে পূর্বোক্ত সাহেব মানহানির ভয়ে হক কবুল করতে না চান। পক্ষান্তরে যারা হক বলতে চুপ থাকে তারা বোবা শয়তান। (অবশ্য যেখানে ফিতনার ভয় থাকে সেখানকার কথা ভিন্ন।)

বলা বাহুল্য, অন্যায়ের প্রতিবাদে আলস্য সাজে না। ভয়, দুর্বলতা বা তোষামদ মানায় না। দুর্বল ঈমানের পরিচয় দিয়ে কেবলমাত্র অন্তর দ্বারা ঘৃণাই যথেষ্ট নয়। আল্লাহর দ্বীন, আল্লাহই সকলের উচিত বিচার করবেন বলে গড়িমসি চলে না, অথবা এ কাজের জন্য আমি ছাড়া আরো অনেক লোক আছে বলে কর্তব্যহীনতা প্রকাশ শোভা পায় না। আলেম হয়ে (সামর্থ্যানুযায়ী) আলেমের ভূমিকা ও কর্তব্য পালন না করলে তিনি বড় যালেম হবেন নিজের জন্য এবং সমাজের জন্যও।

অনেকে বলেন, ‘সুন্নাহ প্রচার করতে গিয়ে জামাআতের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য সৃষ্টি হয়, ফলে সুন্নাহর প্রচার ফিতনার কারণ হয়; তাই চুপ থাকাই ভালো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুন্নাহর প্রচার ফিতনার কারণ হয় না। বরং সুন্নাহর প্রতি। অজ্ঞতাই ফিতনার মূল কারণ। যেমন সহীহ সুন্নাহ প্রচার করলে যে বলে, 'এটা নতুন হাদীস’ সে এই কথা দ্বারা এই দাবী করে যে, সে যাবতীয় হাদীস শুনে ফেলেছে এবং দ্বীনের সমস্ত আহকাম জেনে ফেলেছে, তাই এই সুন্নাহ তাকে নতুন লেগেছে।

অথচ বাস্তবপক্ষে সুন্নাহ নতুন হয় না। সুন্নাহ তো সেই চৌদ্দ শতাব্দীর পুরাতন। অবশ্য সুন্নাহর প্রচার নতুন হতে পারে। কিন্তু ঐ মিসকীন ‘নতুন’ বলে না জেনে তা রদ করতে চায়। অথচ তার উচিত কেবল মান্য করা এবং নিজের অজ্ঞতার উপর। আক্ষেপ করা। মোট কথা, বিদআত ও কুসংস্কারাদি দেখে আলেমের নির্বাক থাকা মোটেই উচিত নয়। হিকমত ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে নিজের ইলম প্রয়োগ করা উচিত। যে জ্ঞান আল্লাহ তাকে দান করেছেন তা গোপন করা আদৌ বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ

অর্থাৎ, আমি যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, মানুষের জন্য খোলাখুলিভাবে আমি কিতাবে ব্যক্ত করার পরও যারা ঐ সকল গোপন রাখে, আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদেরকে অভিশাপ করে। (সূরা বাকারা ১৫৯ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ

অর্থাৎ, (স্মরণ কর) যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের নিকট প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন যে, তোমরা উহা স্পষ্টভাবে মানুষের নিকট প্রকাশ করবে এবং উহা গোপন করবে না। এরপরও তারা উহা পৃষ্ঠপিছে নিক্ষেপ করে (অগ্রাহ্য করে) ও স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে। সুতরাং তারা যা ক্রয় করে তা কত নিকৃষ্ট! (সূরা আলে ইমরান ১৮৭ আয়াত)।

প্রিয় রসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জানা কোন ইলম (দ্বীনী জ্ঞান) সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার মুখে আগুনের লাগাম দেবেন। (সহীহহুল জামে’ ৬৫১৭নং)

বিজাতির অনুকরণ করেও মুসলিম নিজের পরিবেশে বিদআত সৃষ্টি করে থাকে। অমুসলিমের কর্মকে পছন্দ করে তা নিজের করণীয় ধর্ম ভেবে বসে। যেমন সাহাবী আবু ওয়াকেদ আল-লাইষী বলেন, রসূল (সা.) এর সহিত আমরা হুনাইনের পথে বের হলাম। তখন আমরা সদ্য নও মুসলিম ছিলাম। মুশরিকদের একটি কুল গাছ ছিল; যার নিকটে ওরা ধ্যানমগ্ন হত এবং (বর্কতের আশায়) তাদের অস্ত্র-শস্ত্রকে তাতে ঝুলিয়ে রাখত; যাকে যা-তে আনওয়াত্ব’ বলা হত। সুতরাং একদা আমরা এক কুল গাছের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। (তা দেখে) আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের জন্য একটি ‘যা-তে আনওয়াত্ব’ করে দিন যেমন ওদের রয়েছ। (তা শুনে) তিনি বললেন, 'আল্লাহু আকবার! এটাই তো পথরাজি! যার হাতে আমার জীবন আছে তাঁর কসম! তোমরা সেই কথাই বললে যে কথা বানী ইস্রাঈল মুসাকে বলেছিল, আমাদের জন্য এক দেবতা গড়ে দিন যেমন ওদের অনেক দেবতা রয়েছে!’ মুসা বলেছিলেন, 'তোমরা মূর্খ জাতি। অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী (জাতির) পথ অনুসরণ করবে।” (তিরমিযী ২ ১৮০, মুসনাদ আহমাদ ৫/২ ১৮ নং)

অতএব উক্ত হাদীসে স্পষ্ট হয় যে, কাফেরদের অনুকরণই বানী ইসরাঈল এবং কিছু নও মুসলিম সহাবীকে এমন নিকৃষ্ট আবেদনে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর সে আবেদন ছিল এমন মাবুদ গড়া বা নির্দিষ্ট করা যেমন কাফেরদের ছিল; যার নিকট তারা ধ্যানমগ্ন হত, বর্কতের আশায় তার উপর অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত এবং আল্লাহকে ছেড়ে তার আরাধনা করত।

বস্তুতঃ এই পরিস্থিতিই বর্তমান কালেও বিরাজমান। যেহেতু অধিকাংশ মুসলিম দলই কাফেরদের অনুকরণ করে বিদআত, শির্ক, কুসংস্কার যেমন; দুর্গাপূজা, কবরের উপর পুষ্পার্ঘ-দান, জন্মদিন, বার্থ ডে, নবী দিবস পালন, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট খাদ্য ভক্ষণ, ইসলামী কোন ঐতিহাসিক দিনকে কেন্দ্র করে উৎসব পালন, স্মারক দিবস উদযাপন, স্মারক মূর্তি প্রতিষ্ঠাকরণ, শোক দিবস পালন, জানাযার বিভিন্ন বিদআত রচনা, সমাধির উপর মাযার নির্মাণ প্রভৃতি কর্ম ধর্ম ও নাজাতের অসীলা ভেবে আবিষ্কার করেছে; যার কোন দলীল আল্লাহ অবতীর্ণ করেন নি।

আল্লাহর রসুল (সা.) সত্যই বলেছেন, “অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত বিঘত এবং হাত হাত পরিমাণ (সম্পূর্ণরূপে)। এমনকি তারা যদি সান্ডার (গোসাপ জাতীয় একপ্রকার হালাল জন্তুর) গর্তে প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাদের অনুসরণ করবে (এবং তাদের কেউ যদি রাস্তার উপর (প্রকাশ্যে) স্ত্রী-সংগম করে তবে তোমরাও তা করবে)!” সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহর রসূল ইয়াহুদ ও খ্রীষ্টানরা?” তিনি বললেন “তবে আবার কারা?” (বুখারী, মুসলিম ও হাকেম)

আর সাহাবী হুযাইফাহ বিন আল-ইয়ামানও সঠিকই বলেছেন, 'তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথের অনুসরণ করবে জুতার পরিমাপের মত (পুরাপুরি খাপে-খাপে), তোমরা পথ ভুল করবে না এবং তারাও তোমাদেরকে (সঙ্গে করতে) ভুল করবে না। এমনকি তারা যদি শুষ্ক অথবা নরম পায়খানা খায় তাহলে তোমরাও তা (তাদের অনুসরণে ‘নিউ ফ্যাশন মনে করে) খাবে!’ (আল-বিদাউ অন্‌নাহয়্যু আনহা, ইবনে অযযাহ্ ৭১পৃঃ, তানবীহ উলিল আবসার ১৭২ পৃঃ)

দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 পরের পাতা »