কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নিষিদ্ধ কর্মকান্ড মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ৩৪৪ টি
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে নিষিদ্ধ কর্মকান্ড মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ৩৪৪ টি

إِنَّ الْحَمْدُ للهِ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার জন্য। আমরা সবাই তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁরই নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁরই নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও খারাপ আমল থেকে। যাকে আল্লাহ্ তা’আলা হিদায়াত দিবেন তাকে পথভ্রষ্ট করার আর কেউ নেই এবং যাকে আল্লাহ্ তা’আলা পথভ্রষ্ট করবেন তাকে হিদায়াত দেয়ারও আর কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ্ তা’আলার বান্দাহ্ ও একমাত্র তাঁরই প্রেরিত রাসূল।

ইতিপূর্বে আমি সর্বসাধারণের জন্য গুনাহ্’র পর্যায় ও স্তরগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করার সুবিধার্থে শির্কের উপর দু’টি এবং হারাম ও কবীরা গুনাহ্’র উপর তিনটি পুস্তিকা রচনা করেছি। যা ইতিপূর্বে ছাপানোও হয়েছে। কুফরির উপরও আরেকটি সবিস্তারিত পুস্তিকা রচনার পরিকল্পনা হাতে রয়েছে।

এরপরও এমন কিছু নিষিদ্ধ কাজ রয়ে গেছে যা কুর’আন ও হাদীসে নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়েছে ঠিকই ; অথচ তা হারাম ও কবীরা গুনাহ্ হওয়ার ব্যাপারটি সুস্পষ্ট নয়। তবে তা হারামও হতে পারে কিংবা মাকরূহ্ বা অপছন্দনীয়ও। এতদসত্ত্বেও একজন মু’মিনের কর্তব্য হবে এই যে, সে আল্লাহ্ তা’আলার আযাবের ভয়ে এমন সকল কর্মকান্ডও পরিহার করবে যা আল্লাহ্ তা’আলা ও তদীয় রাসূল নিষিদ্ধ করেছেন। চাই তা হারাম হোক অথবা মাকরূহ্। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এর আমলও এমনটিই ছিলো। তাঁরা রাসূল (সা.) এর পবিত্র মুখে যে কোন নিষিদ্ধ কাজের কথা শুনলেই তা পরিহার করতেন। তাঁরা কখনো রাসূল (সা.) কে দ্বিতীয়বার এ প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করতেন না যে, উক্ত নিষিদ্ধ কাজটি হারাম না কি মাকরূহ্। উপরন্তু কোন মানুষ মাকরূহ্ কাজগুলো করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তা ধীরে ধীরে তাকে হারাম কাজ করতেই উৎসাহী করে তুলবে। শুধু একটি হারাম কাজ নয় বরং অনেকগুলো হারাম কাজ করাই তখন আর তার গায়ে বাধবে না। এ ছাড়াও মাকরূহ্ কাজ থেকে বেঁচে থাকা সাওয়াব অর্জনের এক বিশেষ মাধ্যম।

নিম্নে উক্ত নিষিদ্ধ কর্মগুলো ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত হয়েছে।

১. আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিস্টানদের সাথে অমূলক ঝগড়া-ফাসাদ করা

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ ۖ وَقُولُوا آمَنَّا بِالَّذِي أُنزِلَ إِلَيْنَا وَأُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَإِلَٰهُنَا وَإِلَٰهُكُمْ وَاحِدٌ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

‘‘তোমরা অমূলকভাবে আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। বরং তাদের সাথে বিতর্কের সময় সর্বোত্তম পন্থাই অবলম্বন করবে। তবে এ ব্যাপারে তাদের যালিমদের কথা একেবারেই ভিন্ন। তোমরা শুধু বলবেঃ আমরা মূলত তোমাদের প্রতি ও আমাদের প্রতি অবতীর্ণ সকল প্রত্যাদেশেই বিশ্বাসী। আমাদের মা’বূদ ও তোমাদের মা’বূদ একই। আর আমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণকারী’’। (আনকাবূত : ৪৬)

২. পানপাত্রে নিশ্বাস ত্যাগ এবং ডান হাত দিয়ে পবিত্রতার্জন ও লিঙ্গ স্পর্শ করা

আবু ক্বাতাদাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِيْ الْإِنَاءِ ، وَإِذَا أَتَى الْخَـلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِيْنِهِ ، وَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِيْنِهِ

‘‘তোমাদের কেউ যেন পানি পান করার সময় পানপাত্রে নিশ্বাস ত্যাগ না করে। বাথরুমে প্রবেশ করলে যেন ডান হাত দিয়ে নিজ লজ্জাস্থান স্পর্শ না করে। এমনকি ডান হাত দিয়ে যেন ঢিলা-কুলুখও না করে’’।[1]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,

وَلاَ يَسْتَنْجِ بِيَمِيْنِهِ

‘‘এমনকি ডান হাত দিয়ে যেন ইস্তিঞ্জাও না করে’’।[2]

[1] (বুখারী, হাদীস ১৫৩ মুসলিম, হাদীস ২৬৭)

[2] (বুখারি, হাদীস ১৫৩, ১৫৪ মুসলিম, হাদীস ২৬৭)
৩. নামাযের ভেতর বাম হাতের উপর ভর দিয়ে বসা

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَجْلِسَ الرَّجُـلُ فِيْ الصَّلاَةِ وَهُـوَ مُعْتَمِدٌ عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى ، وَقَالَ: إِنَّهَا صَلاَةُ الْيَهُوْدِ

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন নামাযের ভেতর বাম হাতের উপর ভর দিয়ে বসতে এবং তিনি বলেন: এ জাতীয় নামায ইহুদিদেরই নামায’’।[1]

[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৮২২)
৪. পেয়ালার ভগ্নস্থল দিয়ে পানি পান করা ও পানিতে ফুঁ দেয়া

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الشُّرْبِ مِنْ ثُلْمَةِ الْقَدَحِ ، وَأَنْ يُنْفَخَ فِيْ الشَّرَابِ

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন পেয়ালার ভগ্নস্থল দিয়ে পানি পান করতে এবং পানিতে ফুঁ দিতে’’।[1]

[1] (আবু দাউদ, হাদীস ৩৭২২)

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ اِخْتِنَاثِ الْأَسْقِيَةِ أَنْ يُشْرَبَ مِنْ أَفْوَاهِهَا

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন কলসি কাত করে উহার মুখ দিয়ে পানি পান করতে’’।[1]

[1] (মুসলিম, হাদীস ২০২৩ আবু দাউদ, হাদীস ৩৭১৯, ৩৭২০)
৬. ইশার আগে ঘুম ও ’ইশার পর গল্প-গুজব করা

ইবনু ’আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّوْمِ قَبْلَ الْعِشَاءِ ، وَعَنِ الْـحَدِيْثِ بَعْدَهَا

‘‘রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন ইশার আগে ঘুম যেতে এবং ইশার পর গল্প-গুজব করতে।[1]

তবে নিতান্ত প্রয়োজনে অথবা সাওয়াবের কাজে ব্যস্ত থাকলে তাতে কোন অসুবিধে নেই।

ইবনু মাস্’ঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ سَمَرَ إِلاَّ لِـمُصَلٍّ أَوْ مُسَافِرٍ

‘‘’ইশার পর কোন গল্প-গুজব চলবে না। তবে কেউ ইচ্ছে করলে তখন নামায পড়তে পারবে অথবা সফর করতে পারবে’’।[2]

[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৯১৫)

[2] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৭৪৯৯)
৭. কারোর বায়ু নির্গমনের আওয়াজে হেঁসে উঠা

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الضَّحِكِ مِنَ الضَّرْطَةِ

‘‘রাসূল (সা.) কারোর বায়ু নির্গমনের আওয়াজে হাঁসতে নিষেধ করেছেন’’।[1]

[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৬৮৯৬)
৮. খাওয়ার শেষে আঙুলগুলো না চেটে হাত খানা ধুয়ে বা মুছে ফেলা

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأْخُذْهَا ، فَلْيُمِطْ مَا كَـانَ بِهَا مِنْ أَذًى ، وَلْيَأْكُلْهَا ، وَلاَ يَدَعْـهَا لِلشَّيْطَانِ ، وَلاَ يَمْسَحْ يَدَهُ بِالْمِنْدِيْلِ حَتَّى يَلْعَقَ أَصَابِعَهُ، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِيْ فِيْ أَيِّ طَعَامِهِ الْبَرَكَةُ

‘‘তোমাদের কারোর হাত থেকে খাবারের লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা উঠিয়ে নেয়। অতঃপর তাতে কোন ধরনের ময়লা লেগে থাকলে সে যেন তা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য সে যেন তা ফেলে না রাখে। তেমনিভাবে তোমাদের কেউ যেন তার হাত খানা না চেটে টিসু বা রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কারণ, সে তো জানে না খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে’’।[1]

>
[1] (মুসলিম, হাদীস ২০৩৩)
৯. সূর্যাস্তের পর থেকে ফজর পর্যন্ত রাত্রি বেলায় কোন কিছু না খেয়ে পরস্পর একাধিক রোযা রাখা

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تُوَاصِلُوْا ، فَأَيُّكُمْ أَرَادَ أَنْ يُوَاصِلَ فَلْيُوَاصِلْ حَتَّى السَّحَرِ ، قَالُوْا: فَإِنَّكَ تُوَاصِلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ ، إِنِّيْ أَبِيْتُ لِيْ مُطْعِمٌ يُطْعِمُنِيْ وَسَاقٍ يَسْقِيْنِ

‘‘তোমরা রাত্রি বেলায় কিছু না খেয়ে পরস্পর একাধিক রোযা রেখো না। এরপরও তোমাদের কেউ এমন করতে চাইলে সে যেন তা সেহ্রী পর্যন্ত পালন করে। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি তো এমনটি করছেন? তখন তিনি বললেন: আরে আমি তো আর তোমাদের মতো নই। বরং আমাকে তো রাত্রি বেলায় খাবার সরবরাহ্কারী আল্লাহ্ তা’আলা খাইয়ে দেন এবং পানীয় পরিবেশনকারী আল্লাহ্ তা’আলা পান করান’’।[1]

নিষেধের পরও সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এমনটি করলে রাসূল (সা.) তাঁদেরকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন।

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) একদা রাত্রি বেলায় কিছু না খেয়ে পরস্পর একাধিক রোযা রাখতে নিষেধ করেন। তখন জনৈক মুসলমান বলে উঠলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি তো এমনটি করছেন? তখন রাসূল (সা.) বললেনঃ

وَأَيُّكُمْ مِثْلِيْ ؟ إِنِّيْ أَبِيْتُ يُطْعِمُنِيْ رَبِّيْ وَيَسْقِيْنِ

‘‘আরে তোমাদের কেই বা আর আমার মতো? বরং আমাকে তো আমার প্রভুই রাত্রি বেলায় খাওয়ান ও পান করান’’।

সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) যখন এ কাজে নিবৃত্ত হলেন না তখন রাসূল (সা.) পরস্পর দু’ দিন রাত্রি বেলায় কিছু না খেয়ে রোযা রাখলেন। এরই মধ্যে তাঁরা নতুন চাঁদ দেখতে পেলো। তখন রাসূল (সা.) বললেন:

لَوْ تَأَخَّرَ لَزِدْتُكُمْ

‘‘চাঁদটি উঠতে দেরি করলে আমি অবশ্যই আরো রোযা বাড়িয়ে দিতাম। আর তা হতো তাঁদের জন্য শাস্তি স্বরূপ’’।[2]

>
[1] (বুখারী, হাদীস ১৯৬৩, ১৯৬৭)

[2] (বুখারী, হাদীস ১৯৬৫ মুসলিম, হাদীস ১১০৩)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৪৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 32 33 34 35 পরের পাতা »