লগইন করুন
ইফতারের সময় সাওম পালনকারীর আনন্দ হলো, মানুষ সর্বদা তার উপযোগী জিনিস যেমন, খাদ্য, পানীয় ও সহবাস ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট থাকে। এগুলো যখন নির্দিষ্ট সময় তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয় অতঃপর অন্য সময় তা আবার হালাল করা হয় তখন সে নিষিদ্ধ হওয়ার পরে হালাল হওয়ার কারণে আনন্দিত হয়, বিশেষ করে উক্ত জিনিসের প্রতি যখন তার তীব্র প্রয়োজন দেখা দেয়।
অতএব, মানুষের অন্তর স্বাভাবিকভাবেই তখন আনন্দিত হয়, যখন সে কাজটি আল্লাহর প্রিয় কাজ হবে এবং শরী‘আতের দৃষ্টিতেও পছন্দনীয়। সায়িমের ইফতার এমনই একটি কাজ। দিনের বেলায় আল্লাহ তার জন্য প্রবৃত্তির সেসব কাজ করা হারাম করেছেন কিন্তু তিনি রাতের বেলায় উক্ত কাজগুলো হালাল করেছেন; বরং রাতের প্রথমভাগে ও শেষভাগে সেগুলো (ইফতার) তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা তাঁর কাছে খুবই পছন্দনীয়। এমনকি তাঁর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় বান্দা সে ব্যক্তি যে দ্রুত ইফতার গ্রহণ করে। কেননা সহীহাইনে সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছন,
«لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الفِطْرَ».
“লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে”।[1]
....
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ».
“আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফিরিশতাগণ সাহরী গ্রহণকারীদের ওপর সালাত পেশ করেন, অর্থাৎ তাদের কথা আলোচনা করেন”।[2]
সায়িম আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তাঁর আনুগত্য করতে দিনের বেলায় নিজের প্রবৃত্তিকে দমন করেছে এবং আবার তাঁর সন্তুষ্টি ও আনুগত্যের জন্যই রাতের বেলায় সেসব প্রবৃত্তির দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়। সুতরাং সে যা কিছু পরিহার করে তা তার রবেরই সন্তুষ্টি ও আদেশের জন্য আবার যখন সে সেসব বৈধ প্রবৃত্তির দিকে ফিরে যায় তখনও তার রবের আদেশেই ফিরে যায়। সুতরাং সে দু’ অবস্থায়ই তার রবের অনুগত। তাই সে যখন তার রবের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার করতে দ্রুত এগিয়ে যায় এবং তাঁর প্রশংসা করে তখন তার মাগফিরাত ও সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি আশা করা যায়।
হাদীসে এসেছে,
«إِنَّ اللهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الْأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا».
“আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দার প্রতি অবশ্যই সন্তুষ্ট হন যে বান্দা কোন খানা খেয়ে এর জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা পানীয় পান করে এর জন্য আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করে”।[3] হয়ত তখন তার দো‘আ কবুল করা হয়। ... আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ: الصَّائِمُ حَتَّى يُفْطِرَ».
“তিন ব্যক্তির দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। সাওম পালনকারী যতক্ষণ না ইফতার করে।”[4]
.....
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন,
«ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ».
“তৃষ্ণা চলে গেছে, শিরাগুলো আদ্র হয়েছে আর ছাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে”।[5]
সাওম পালনকারী যদি রাতে সালাত আদায় ও দিনের বেলায় সাওম পালনের উদ্দেশ্যে শরীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য পানাহার করে তাহলে তা তার জন্য সাওয়াব হিসেবে ধর্তব্য হবে যেমনিভাবে সে রাতে ও দিনে কাজের জন্য শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘুমালে সেটি তার জন্য ইবাদত হবে। .....
আবু ‘আলিয়াহ রহ. বলেছেন: সাওম পালনকারী গীবত না করা পর্যন্ত ইবাদতে থাকে, যদিও সে বিছানায় ঘুমায়”।
অতএব, সায়িম রাত-দিন সব সময়ই ইবাদতে থাকে এবং সাওম অবস্থায় ও ইফতারির সময় তার দো‘আ কবুল করা হয়। সে দিনের বেলায় সাওম পালনকারী ও ধৈর্যশীল এবং রাতের বেলায় আহার গ্রহণকারী ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী। ইমাম তিরমিযী ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেন,
«الطَّاعِمُ الشَّاكِرُ بِمَنْزِلَةِ الصَّائِمِ الصَّابِرِ».
“আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী আহারকারীর মর্যাদা হলো ধৈর্যশীল সাওম পালনকারীর মতো”।[6] সুতরাং যে ব্যক্তি উপরোক্ত অর্থ বুঝবে সে সাওম পালনকারীর ইফতারের সময়ের আনন্দের অর্থও বুঝতে পারবে। কেননা ইফতার আল-কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়ার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ٥٨﴾ [يونس : ٥٨]
“বলুন ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়’। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৮] তবে এ আনন্দের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল ইফতার। কিন্তু তার ইফতার যদি হারাম হয় তাহলে সে ঐসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে যারা আল্লাহর হালালকৃত বস্তু থেকে সাওম পালন করে; কিন্তু আল্লাহর হারামকৃত বস্তু দ্বারা ইফতার করে। তাদের দো‘আ কবুল করা হবে না।
আর তার রবের সাথে মিলিত হওয়ার সময় তার আনন্দ হলো, তার সাওমের গচ্ছিত সাওয়াব আল্লাহর কাছ থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনের সময় প্রাপ্ত হবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗا٢٠﴾ [المزمل: ٢٠]
“আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে”। [সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ২০]
«فَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ».
“(সাওম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে) এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে”।[7]
... ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন: নিশ্চয় এ রাত-দিন দু’টি খাজাঞ্চি। তাই লক্ষ্য করো এ দু’টি ভাণ্ডারে তোমরা কী জমা করছ? দিনসমূহ মানুষের ভালো-মন্দ দ্বারা ভর্তি ভাণ্ডার। কিয়ামতের দিনে ব্যক্তির জন্য এ ভাণ্ডার খোলা হবে। মুত্তাকীরা তাদের ভাণ্ডারে ইজ্জত ও সম্মান পাবে আর অপরাধীরা তাতে পাবে আফসোস ও লাঞ্ছনা।
>[2] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১১৩৯৬; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৪৬৭, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তবে গ্রন্থকারের বর্ণিত হাদীসের নস হুবহু পাওয়া যায়নি।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৪।
[4] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৯৮, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘ঈফ বলেছেন, তবে তিনি হাদীসের প্রথম অংশ ইমামুল ‘আদিলের পরিবর্তে মুসাফিরের কথা বা অন্য বর্ণনায় আল-ওয়ালিদের কথা উল্লেখ পূর্বক সহীহ বলেছেন। মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ৮০৪৩, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে তার অন্যান্য বর্ণনাসূত্র ও শাওয়াহেদের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন।
[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৭। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[6] তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৮৬, তিরমিযী রহ. হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৮৯৬।