নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াতী মূলনীতি ৬। আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতদাতার বিধান (أحكام الدعاة إلى الله) মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী
ছ. দাঈর কর্তব্য (مسؤولية الداعي إلى الله)

মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে চারটি বিষয়ে নির্দেশ দান করেন:

(১) অহীর জ্ঞান শিক্ষা করা (أن يتعلم الوحي)

(২) অহীর জ্ঞানানুসারে আমল করা (وأن يعمل به)

(৩) মানুষকে অহীর জ্ঞান শিক্ষা দেয়া (وأن يعلِّمه الناس)

(ঘ) মানুষকে অহীর জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখা (وأن يقيم الناس عليه)

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর এ করণীয় বিষয়সমূহ আমাদের মুসলিমদের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। সেজন্য, দ্বীনের ধাপ দু’টিঃ

১। ইবাদত করা।

২। আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়া।

আর নিজে সংশোধন হওয়ার প্রচেষ্টা করা এবং অন্যকে সংশোধন করারও চেষ্টা করা। এবিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান, তাকে অনুগ্রহ করেন।

মুসলিমদের জন্য আবশ্যকীয় শিক্ষণীয় বিষয় দু’টিঃ

(ক) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রচেষ্টা। আর তা হচ্ছে, দা‘ওয়াত ।

(খ) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবনাদর্শ। আর এটাই হচ্ছে, পরিপূর্ণ দ্বীন।

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ না করে জাতির মাঝে দা‘ওয়াত চালু থাকলে সে দা‘ওয়াতে কল্যাণ ও মুক্তি নেই, তাতে হেদায়াত লাভ হবে না এবং আল্লাহর সাহায্যও আসবে না। কর্তৃত্ব, রাজত্বও খিলাফত ক্বায়েম হবে না এবং সম্মান ও নিরাপত্তাথাকবে না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ছাহাবীগণের ব্যাপারে এমন প্রচেষ্টা চালান, যাতে তাদের মধ্যে দু’টি বিষয়ের সৃষ্টি হয়ঃ

১। ছাহাবীগণের নিজেদের জীবনে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা (إقامة الدين في حياتهم)

২। সকল মানুষের মাঝে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা (وإقامة الدين في حياة الناس)

প্রত্যেক মুসলিমকে তাদের ব্যক্তিগত আমল তথা ইবাদত এবং সামষ্টিক আমল তথা আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত সম্পর্কে আল্লাহর নিকট অচিরেই হিসাব দিতে হবে। দাঈ ও দা‘ওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি উভয়কে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াবী কাজ-কর্ম সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করবেন।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ (6) فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِمْ بِعِلْمٍ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ (7) وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (8) وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ (9)) .. [الأعراف: 6 - 9]

‘সুতরাং আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব, যাদের নিকট রাসূল প্রেরিত হয়েছিলেন এবং অবশ্যই আমি প্রেরিতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। (৬) অতঃপর অবশ্যই আমি তাদের নিকট জেনে শুনে বর্ণনা করব। আর আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম না। (৭) আর সেদিন পরিমাপ হবে যথাযথ। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারি হবে, তারাই হবে সফলকাম। (৮) আর যাদের পাল্লা হালকা হবে, তারাই হবে সেই সব লোক, যারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কারণ তারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি (অস্বীকার করার মাধ্যমে) যুলম করত’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৬-৯)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (3)) [العصر: 1 - 3].

‘মহাকালের শপথ, (১) মানুষ অবশ্যই ক্ষতিতে আছে। (২) তবে তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়’ (সূরা আল-আছর: ১-৩)।