লগইন করুন
(৮) কবর যিয়ারত (زيارة القبور) :
কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। এর দ্বারা মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। কবর আযাবের ভীতি সঞ্চারিত হয়। হৃদয় বিগলিত হয়। চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়। অন্যায় থেকে তওবা এবং নেকীর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরকালীন মুক্তির প্রেরণা সৃষ্টি হয়। উপরোক্ত উদ্দেশ্যেই কেবল কবর যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নইলে প্রথমে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল। নারী-পুরুষ সবার জন্য এই অনুমতি রয়েছে। তবে ঐসব নারীদের জন্য লা‘নত করা হয়েছে, যারা কবর যিয়ারতের সময় সরবে কান্নাকাটি ও বিলাপ ধ্বনি করে।
যিয়ারতের সময় এমন কাজ করা যাবে না, যা করলে আল্লাহ নাখোশ হন। যেমন : লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বা দুনিয়াবী স্বার্থে যিয়ারত করা, সেখানে ফুল দেওয়া, কবরবাসীর নিকটে কিছু কামনা করা, সেখানে বসা, ছালাত আদায় করা বা সিজদা করা, তার অসীলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-ছাদাক্বা ও মানত করা, গরু-ছাগল-মোরগ ইত্যাদি ‘হাজত’ দেওয়া বা কুরবানী করা প্রভৃতি।
সকল প্রকারের শিরকী আক্বীদা ও বিদ‘আতী আমল থেকে মুক্ত মন নিয়ে কেবল মৃতের জন্য দো‘আ এবং আখেরাতকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করতে হবে। নইলে ঐ যিয়ারত গোনাহের কারণ হবে। উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কোথাও সফর করা নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ও নেকী হাছিলের জন্য কা‘বা গৃহ, বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও মসজিদে নববী ব্যতীত অন্যত্র সফর করতে নিষেধ করেছেন।[169] তাই শুধুমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদ্বীনায় যাওয়া নাজায়েয। তবে মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের নেকী হাছিলের উদ্দেশ্যে কেউ মদ্বীনায় গেলে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর কবর যিয়ারত করতে পারেন। অতএব হজ্জের সময় যারা মদ্বীনা হয়ে মক্কায় যান, তাদের নিয়ত হ’তে হবে মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের অশেষ নেকী হাছিল করা।
বর্তমানে যেভাবে রাজনৈতিক নেতাদের ও পীরদের কবর যেয়ারত করা হচ্ছে এবং মৃত পীরের অসীলায় ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির আশায় মানুষ যেভাবে বার্ষিক ওরস ও অন্যান্য সময়ে বিভিন্ন মাযারে ছুটছে, তাদের সাবধান হওয়া উচিৎ যে, এর মাধ্যমে তারা দুনিয়া ও আখেরাত দু’টিই হারাচ্ছেন। কেননা আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশের বিরোধিতা করলে কেবল আল্লাহর ক্রোধ লাভ হয় ও তাঁর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হ’তে হয়।
যিয়ারতের আদব ( آداب الزيارة ) : এই সময় নিজের মৃত্যু ও আখেরাতকে স্মরণ করবে এবং কবরবাসীদের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে খালেছ মনে নিম্নোক্ত দো‘আ সমূহ পাঠ করবে। দো‘আর সময় একাকী দু’হাত উঠানো যাবে। বাক্বী‘ গারক্বাদ গোরস্থানে দীর্ঘক্ষণ ধরে দো‘আ করার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাকী তিন বার হাত উঠিয়েছিলেন। [170] এই সময় স্রেফ দো‘আ ব্যতীত ছালাত, তেলাওয়াত, যিকর-আযকার, দান-ছাদাক্বা কিছুই করা জায়েয নয়।
১ম দো‘আ : এটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে শিক্ষা দিয়েছিলেন।
اَلسَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ، وَيَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَآءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ-
উচ্চারণ : আসসালা-মু ‘আলা আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা; ওয়া ইয়ারহামুল্লা-হুল মুস্তাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুস্তা’খিরীনা; ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা লা-হেকূনা।
অনুবাদ : মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক। আমাদের অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের উপরে আল্লাহ রহম করুন! আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি’।[171]
২য় দো‘আ : এটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্যদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।-
اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ، نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ-
উচ্চারণ : আসসালা-মু ‘আলা আহলিদ দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা; ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা লা-হেকূনা। নাসআলুল্লা-হা লানা ওয়া লাকুমুল ‘আ-ফিয়াতা’।
অনুবাদ : মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ! আপনাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক! আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি। আমাদের ও আপনাদের জন্য আমরা আল্লাহর নিকটে মঙ্গল কামনা করছি’।[172]
৩য় দো‘আ :
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُمْ-
উচ্চারণ : আসসালামু ‘আলায়কুম দা-রা ক্বাওমিন মু’মিনীনা, ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হেকূনা; আল্লা-হুম্মাগফিরলাহুম।
অনুবাদ : মুমিন কবরবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক। আল্লাহ চাহে তো আমরা অবশ্যই আপনাদের সাথে মিলিত হ’তে যাচ্ছি।হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও। [173]
তিরমিযী বর্ণিত ‘আসসালামু ‘আলায়কুম ইয়া আহলাল কুবূরে! ইয়াগফিরুল্লা-হু লানা ওয়া লাকুম’ বলে প্রসিদ্ধ হাদীছটি ‘যঈফ’। [174]
জ্ঞাতব্য :
কাফির-মুশরিক বাপ-মায়ের কবর যিয়ারত করা যাবে। ক্রন্দন করা যাবে। কেননা এর মাধ্যমে মৃত্যুকে স্মরণ করা হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সালাম করা যাবে না। তাদের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তাঁর মায়ের কবর যিয়ারতের জন্য অতটুকুই মাত্র অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।[175]
[170]. ১১৬৫. মুসলিম হা/২৩০১, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৩৫; ঐ, মিশকাত হা/১৭৬৬; তালখীছ পৃঃ ৮৩। উলে−খ্য যে, এখানে ফাতেমা (রাঃ)-এর কবর আছে বিধায় শী‘আরা একে ‘জান্নাতুল বাক্বী‘ বলে, যা গুরুতর অন্যায়।
[171]. মুসলিম হা/২২৫৬; মিশকাত হা/১৭৬৭ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘কবর যিয়ারত’ অনুচ্ছেদ-৮।
[172]. মুসলিম হা/২২৫৭; মিশকাত হা/১৭৬৪।
[173]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৮, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩; ঐ, হা/১৭৬৬ ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৮।
[174]. তিরমিযী হা/১০৫৩; ঐ, মিশকাত হা/১৭৬৫।
[175]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৬৩।