লগইন করুন
ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﷲ ﻭﺤﺩﻩ ﻻ ﺸﺭﻴﻙ ﻟﻪ ﻟﻪ ﺍﻟﻤﻠﻙ ﻭﻟﻪ ﺍﻟﺤﻤﺩ ﻴﺤﻴﻲ ﻭﻴﻤﻴﺕ ﻭﻫﻭ ﺤﻲ ﻻ ﻴﻤـﻭﺕ ﺒﻴـﺩﻩ ﺍﻟﺨﻴـﺭ ﻭﻫﻭ ﻋﻠﻰ ﻜل ﺸﻲﺀ ﻗﺩﻴﺭ
উচ্চারণ ও অর্থ : (পূর্বোক্ত ৩ নং ও ৬৯ নং যিকর দেখুন।)
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বাজারে (শহর, বন্দর বা কর্মস্থলে) প্রবেশ করে এই যিকরগুলি বলবে, আল্লাহ তাঁর জন্য এক লক্ষ সাওয়াব লিখবেন, তাঁর এক লক্ষ (সাধারণ ছোটখাট) গোনাহ মুছে দিবেন এবং তাঁর এক লক্ষ মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।”
হাদীসটির সনদ দুর্বল। ইমাম তিরমিযী হাদীসটি সংকলন করে এর সনদের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হওয়ার কারণে হাদীসটির গ্রহণযোগ্যতা এসেছে বলে কোন কোন মুহাদ্দিস মতপ্রকাশ করেছেন।[1]
সাধারণত কোনো সহীহ হাদীসে কোনো যিকর বা নেক আমলের এত অপরিমেয় সাওয়াবের কথা উল্লেখ পাওয়া যায় না। এখানে পাঠক একটু চিন্তা করলেই এই অপরিমেয় সাওয়াবের কারণ বুঝতে পারবেন। যে স্থানে আল্লাহর স্মরণ ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেই স্থানে তাঁর যিকরের সাওয়াবও বেশি। বাজার, ঘাট, শহর, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি স্থানে মানুষের দেহ ও মন স্বভাবতই বিভিন্নমুখী কর্মে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে। এ সময়ে যে বান্দা নিজেকে আল্লাহর যিকরে নিয়োজিত রাখতে পারেন তিনি নিঃসনেদহে এই মহান পুরস্কারের অধিকারী হবেন।
প্রাচীন যুগে বাজারই ছিল সকল বাণিজ্যিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মের কেন্দ্রস্থল। বর্তমানে বাজার বলতে বৃহদার্থে ‘শহর’ বা ‘কর্মক্ষেত্র’ বুঝানো যায়। সকল মুমিনের উচিত বাজারে, হাটে, দোকানে, শহরে, অফিসে, কর্মস্থলে বা যে কোনো জাগতিক বা সামাজিক ব্যস্ততার স্থানে গমন করলে প্রবেশের সময় এবং যতক্ষণ সেস্থলে অবস্থান করবে ততক্ষণ মাঝে মাঝে সুযোগমতো এই যিকরগুলি পাঠ করা।
যদি মুখে যিকর করতে না পরি তাহলে অন্তত মনে মনে আল্লাহর নিয়ামত, বিধান ইত্যাদি স্মরণ করা উচিত। তাবেয়ী আবু উবাইদাহ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবন মাস’ঊদ বলেন: “কোনো ব্যক্তি বাজারে থাকে আর তাঁর মনের মধ্যে যদি আল্লাহর কথা স্মরণ করে, তাহলে সে সালাতে রত আছে বলে গণ্য হবে। যদি সে মনের স্মরণের সাথে সাথে ঠোঁট নাড়াতে (মুখে উচ্চারণ করতে) পারে তাহলে তা হবে উত্তম।”[2]
(২) যোহর ও আসরের সালাত
আল্লাহর স্মরণ মানব হৃদয়ের খাদ্য ও মানবাত্মার প্রাণের উৎস। কর্মময় ও সংঘাতময় দিনের ব্যস্ততায় ভারাক্রান্ত হয় মানব হৃদয়। হৃদয়ের মধ্যে জমতে থাকে উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, বিরক্তি, রাগ, হিংসা, ভয়, অনুরাগ, বেদনা, লোভ, কৃপণতা, হতাশা ইত্যাদি বিভিন্নমুখি অনুভুতি যা অত্যন্ত ক্ষতিকর কার্বনের মতো আমাদের হৃদয়কে ক্রমান্বয়ে অসুস্থ করে তোলে এবং বিভিন্ন প্রকার অন্যায়, অনৈতিক বা ক্ষতিকর কাজে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। এসকল ক্ষতিকর অনুভবে কঠিন ভার থেকে হৃদয়কে মুক্ত করার একমাত্র উপায় আল্লাহর স্মরণ ও প্রার্থনার মাধ্যমে মনের আবেগকে তাঁর পবিত্র দরবারে সমর্পণ করা। আর এজন্য মহান আল্লাহ বান্দার জন্য ফরয বা অত্যাবশ্যকীয় করেছেন যে, হৃদয়কে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম ও আহার দেবে সে সালাতের মাধ্যমে।
আমরা দেখেছি যে, সালাতই সর্বোত্তম যিকর। পরিপূর্ণ আবেগ ও মনোযোগ সহকারে মুমিন তাঁর ব্যস্ততার ফাঁকে যোহর ও আসরের সালাত আদায় করবেন। এরপর সামান্য কিছু সময় আল্লাহর জপমূলক যিকর আদায় করবেন।
সাধারণত সালাত শেষ হওয়া মাত্র মুমিন হৃদয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে কর্মে প্রবেশের জন্য। অনেক সময় সত্যিই কোনো জরুরি কাজ তাঁর থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সালাতের পরেই সালাতের স্থান ত্যাগের এই অস্থিরতা শয়তানী প্রেরণা। অনেক সময় আমরা দ্রুত মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসি, কিন্তু মসজিদের বাইরে এসে কোনো বন্ধুর সাথে দেখা হলে বা কোনো আকর্ষণীয় কথা বা দৃশ্য পেলে সেখানে অনেক সময় কাটিয়ে দিতে অসুবিধা হয় না। এজন্য মুমিনের উচিত সম্ভব হলে অস্থিরতা পরিত্যাগ করে প্রশান্ত হৃদয়ে কয়েক মিনিট আল্লাহর যিকরে রত থাকা।
যোহরের সালাতের পরের যিকর
উপরে ফজরের সালাতের পরের যিকরের দ্বিতীয় প্রকার নির্ধারিত যিকর হিসাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরের যিকর-সমূহের আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা ২৯ প্রকার মাসনূন যিকর উল্লেখ করেছি। ৭১ নং থেকে ৯৯ নং যিকর। যাকির যোহরের পরেও এই যিকরগুলি পালন করবেন। সবগুলি যিকর পালন সম্ভব না হলে কিছু যিকর বেছে নিয়ে ওযীফা তৈরি করে নিতে হবে। প্রয়োজনে ওযীফা তৈরির জন্য কোনো নেককার আলিম বা মুরশিদের সাহায্য গ্রহণ করবেন।
আসরের সালাতের পরের যিকর
আসরের সালাতের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় যিকরের বিশেষ সময়। ইতঃপূর্বে বিভিন্ন হাদীসে আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত যিকরে রত থাকার অভাবনীয় ফযীলত ও মর্যাদার কথা আমরা দেখেছি। এ সময়ে তিন প্রকার যিকর আদায় করতে হবে।
প্রথম প্রকার যিকর যা সকল সালাতের পরে পালনীয়। আসরের সালাতের পরেও মুমিন যোহরের সালাতের মতো উপরিউক্ত ৭১ নং থেকে ৯৯ নং পর্যন্ত ২৯ প্রকার যিকর বা সেগুলি থেকে বেছে কিছু যিকর পালন করবেন।
দ্বিতীয় প্রকার যিকর যা রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশেষ করে ফজরের পরে ও আসরের পরে নির্দিষ্ট সংখ্যায় পালনের জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। উপরে সকাল-বিকাল ও সকাল-সন্ধ্যার যিকর আলোচনার সময় ১০০ নং যিকরে আমরা দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ফজরের ও আসরের পরে চারটি মূল তাসবীহ একশতবার করে মোট ৪০০ বার যিকর করার বিশেষ অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ১০০ বার ‘আল-হামদুলিল্ললাহ’, ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ ও ১০০ বার ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু’। ১০০ বার (লা-ইলাহা ইল্লল্লাহু)-র পরিবর্তে ১০০ বার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুআ আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর’ পড়া যাবে। এগুলি পালনে আমাদের সকলেরই সচেষ্ট হওয়া দরকার।
তৃতীয় প্রকার যিকর যা রাসূলুল্লাহ (সা.) এই সময়ে গণনাহীনভাবে বেশি বেশি পালন করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। ফজরের সালাতের পরের অনির্ধারিত যিকরের আলোচনার সময় আমরা দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আসরের সালাতের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল হামদু লিল্লাহ’, ‘লা-ইলাহা ইললল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ - এই চার প্রকার যিকরে অবিরত রত থাকার উৎসাহ প্রদান করেছেন।
যাকির উপরের দুই প্রকার যিকর পালনের পরে নিজের সময়, সুযোগ ও ক্বালবী হালত অনুযায়ী যতক্ষণ ও যত বেশি সম্ভব, মনে মনে বা মৃদুস্বরে, অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে হৃদয়কে আলোড়িত করে এই চারটি বাক্য একত্রে বা পৃথকভাবে যিকর করবেন। সুযোগ থাকলে মাগরিব পর্যন্ত যিকর করবেন। বিশেষত শুক্রবারের দিন সূর্যাস্তের আগের সময়টুকু দু‘আ-মুনাজাতে কাটানোর চেষ্টা করবেন।
[2] জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম পৃ. ৪৪৯।