লগইন করুন
বাহির থেকে যে লোক আপনার সাক্ষাৎ বা সাহায্য কামনা করে আপনার কাছে আসে, সে বহিরাগত অতিথি আপনার মেহমান। যাকে যিয়াফত অথবা দাওয়াত দিয়ে আপনি আপ্যায়ন করতে চান সেও আপনার মেহমান। আর আপনি হবেন মেযবান;
উল্লেখ্য যে, আপনার জন্য মেহমান-নেওয়াযী অর্থাৎ মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব রয়েছে ইসলামে। রাসুল (ﷺ) বলেন,
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন নিজ প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে সে যেন নিজ মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’’[*]
দাওয়াত কবুল করা ওয়াজেব।
প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন,
حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلَامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ
‘‘একজন মুসলিমের অপর মুসলিমের উপর পাঁচটি অধিকার রয়েছে; সালামের জওয়াব দেওয়া, রোগীকে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জওয়াবে (আলহামদু লিল্লাহ বলা শুনলে) ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ বলা।’’[1]
রাসুল (ﷺ) রোযা অবস্থায় থাকলেও বিবাহ ও অন্যান্য দাওয়াতে উপস্থিত হতেন।[2]
উল্লেখ্য যে, অলীমার জন্য আমন্ত্রিত হলে উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব। যে ব্যক্তি বিনা ওজরে এমন ভোজে উপস্থিত হয় না, সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য।[3] এমন কি রোযা রেখে থাকলেও উপস্থিত হয়ে তাদের জন্য দু‘আ করতে হবে।[4] অতএব খেতে বাধা থাকলেও উপস্থিত হওয়া জরুরী।
অবশ্য দাওয়াতে হাযির হওয়া ওয়াজেব পালনের জন্য শর্ত রয়েছে। যেমনঃ
(ক) দাওয়াতদাতা যেন এমন লোক না হয়, যাকে শরয়ী ও সামাজিকভাবে বর্জন করা ওয়াজেব বা মুস্তাহাব।
(খ) এর পূর্বে যেন অন্য কেউ দাওয়াত না দিয়ে থাকে। সে অবস্থায় যে আগে দাওয়াত দিয়েছে, তার দাওয়াতই গ্রহণ করা ওয়াজেব। যেমন একই সঙ্গে দু’জন দাওয়াত দিলে এবং অপরজন আত্মীয় হলে, আত্মীয়তার খাতিরে তারই দাওয়াত প্রাধান্য পাবে। দুই প্রতিবেশী এক সঙ্গে দাওয়াত পেশ করলে, যার বাড়ির দরজা নিকটে তার দাওয়াতই প্রাধান্য পাবে।
(গ) দাওয়াত অনুষ্ঠানে যেন কোন প্রকার শরীয়ত-বিরোধী কর্ম না হয়। হলে দাওয়াতে উপস্থিত হওয়া বৈধ নয়। তবে ঐ বিরোধী কর্ম বন্ধ করার ক্ষমতা থাকলে দুটি কারণে উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব। প্রথমতঃ আল্লাহর নবী (ﷺ) দাওয়াত গ্রহণ করতে আদেশ করেছেন। আর দ্বিতীয়তঃ তিনি সৎ কাজে আদেশ এবং মন্দ কাজে বাধা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সুতরাং অলীমা অনুষ্ঠানে অশ্লীল বা অবৈধ কর্মকীর্তি (গান-বাজনা, ভিডিও, সিডি, মদ প্রভৃতি) চলে সে অলীমায় উপস্থিত হয়ে যদি উপদেশের মাধ্যমে তা বন্ধ করতে পারে তবে ঐ ভোজ খাওয়া বৈধ। নচেৎ না খেয়ে ফিরে যাওয়া ওয়াজেব। এ ব্যাপারে বহু হাদীস রয়েছে। তার দু-একটি নিম্নরূপঃ
প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন কখনই সেই ভোজ-মজলিসে না বসে যাতে মদ্য পরিবেশিত হয়।’’[5]
একদা হযরত আলী (রাঃ) নবী (ﷺ) কে নিমন্ত্রণ করলে তিনি তাঁর গৃহে ছবি দেখে ফিরে গেলেন। আলী (রাঃ) বললেন, ‘কি কারণে ফিরে এলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার মা-বাপ আপনার জন্য কুরবান হোক।’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘গৃহের এক পর্দায় (প্রাণীর) ছবি রয়েছে। আর ফিরিশ্তাবর্গ সে গৃহে প্রবেশ করেন না যে গৃহে ছবি থাকে।’’[6]
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) কে এক ব্যক্তি দাওয়াত দিল। তিনি লোকটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঘরে মূর্তি (বা টাঙ্গানো ফটো) আছে নাকি?’ লোকটি বলল, ‘হ্যাঁ আছে।’
অতঃপর সেই মূর্তি (বা ফটো) নষ্ট না করা পর্যন্ত তিনি প্রবেশ করলেন না। দূর করা হলে তবেই প্রবেশ করলেন।[7]
ইমাম আওযাঈ (রহ.) বলেন, ‘যে অলীমায় ঢোল-তবলা ও বাদ্যযন্ত্র থাকে সে অলীমায় আমরা হাজির হই না।’[8]
(ঘ) দাওয়াতদাতা যেন মুসলিম হয়; অর্থাৎ কাফের বা অমুসলিম না হয়। নচেৎ তার দাওয়াত গ্রহণ করা ওয়াজেব নয়। যেহেতু মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘একজন মুসলিমের অপর মুসলিমের উপর পাঁচটি অধিকার রয়েছে--।’’
(ঙ) দাওয়াতদাতা যে মাল থেকে দাওয়াত খাওয়াবে সে মাল যেন হারাম না হয়। তা হলে দাওয়াত গ্রহণ করা বৈধ নয়।
(চ) দাওয়াত গ্রহণের ওয়াজেব পালন করতে গিয়ে যেন অন্য ওয়াজেব অথবা তার থেকে বড় ওয়াজেব নষ্ট করা না হয়।
(ছ) দাওয়াত গ্রহণকারী যেন তাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ক্ষতির স্বীকার হলে (যেমন ব্যয়বহুল বা দূরপাল্লার সফর করতে হলে, কাছে উপস্থিত থাকা জরুরী এমন স্বজনকে বর্জন করতে হলে,) দাওয়াতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব নয়।[9]
(জ) দাওয়াত যেন দাওয়াত গ্রহণকারী জন্য খাস হয়। আম হলে (যেমনঃ কোন সভাতে সাধারণভাবে দাওয়াত পেলে) সে দাওয়াত গ্রহণ করা ওয়াজেব নয়।
[1]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ১২৮০, তাওহীদ পাবঃ হা:১২৪০, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১৬২, মিশকাত হা:১৫২৪
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫১৭৯, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/১৪২৯ প্রমুখ
[3]. বুখারী, মুসলিম
[4]. আহমাদ, মুসলিম, নাসাঈ
[5]. আহমাদ, তিরমিযী, হাকেম, আদাবুয যিফাফ ১৬৩-১৬৪ পৃঃ
[6]. ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১৬১পৃঃ
[7]. বাইহাক্বী, আদাবুয যিফাফ ১৬৫ পৃঃ
[8]. আদাবুয যিফাফ ১৬৫-১৬৬পৃঃ
[9]. আল-ক্বাওলুল মুফীদ, ইবনে উষাইমীন ৩/১১১-১১৩ দ্রঃ