লা-তাহযান [হতাশ হবেন না] লা-তাহযান - অনুচ্ছেদ সূচি ড. আয়িদ আল করনী
৩২১. আল্লাহ একাই সর্বশক্তিমান

এটা খুব ছোটখাট ঘটনা যে, মানুষ মাঝে মাঝে জীবনের বাস্তবতা বুঝতে পারে। ১৪১৩ হিজরীতে আমার এক বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য রিয়াদ সফর করেছিলাম। রিয়াদে আমার আগমনের দিন তাকে দিনের শেষ নাগাদ কাজ করতে হয়েছিল, তাই আমি সরাসরি আমার (আবাসিক) হোটেলে চলে গেলাম। কুলি আমাকে হোটেল কর্মচারীদের কাজকর্মের স্থান থেকে অনেক দূরে পঞ্চম তলার একটি কক্ষে নিয়ে গেল। ঘরে প্রবেশ করার পর বিছানার উপরে আমার ব্রিফকেস রেখে অজু করতে গোসল খানায় গেলাম।

দরজা বন্ধ করে গোসল সারার পর বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে গেলাম । বিরক্ত হয়ে গেলাম, (কেননা,) দরজা আটকে থাকল, যতই চেষ্টা করলাম কিছুতেই কিছু হলো না- আমি দরজা খুলতে পারলাম না। শীঘ্রই আমি বুঝতে পারলাম যে, আমি এই সংকীর্ণ স্থানে আটকা পড়ে গেছি, যেখানে নেই কোন জানালা, নেই কোন টেলিফোন আর সবচেয়ে খারাপ যা হলো, নিকটে এমন কেউ ছিল না যাকে সাহায্যের জন্য ডাকতে পারতাম । আমি আমার প্রভুকে স্মরণ করলাম এবং সাহায্যের জন্য তার নিকট আকুল আবেদন করলাম। আমি সম্পূর্ণ শক্তিহীন হয়ে বিশ মিনিটে দাঁড়িয়ে রইলাম, (যদিও বিশ মিনিট) তবুও এটা আমার নিকট তিন দিন মনে হয়েছিল, সে বিশ মিনিটে আমি ঘেমে গিয়েছিলাম, আমার হার্টবিট তখন বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গিয়েছিল আর আমার শরীর কাপতে শুরু করে দিয়েছিল। আমার ভীষণ আতংকের প্রধান কারণ এই ছিল যে, কোনরূপ সতর্কসংকেত ছাড়াই এ ঘটনা হঠাৎ করে ঘটেছিল এবং এও (একটি কারণ ছিল) যে, আমি এমন এক অদ্ভুত স্থানে ছিলাম যেখানে সাহায্যের জন্য কারো সাথে যোগাযোগের কোন উপায় ছিল না।

আমার কাছে মনে হয়েছিল যে, সেখানে আমি এক জীবনকাল কাটালাম, এরপর আমি শারীরিক শক্তি খাটিয়ে দরজাটিকে জোর করে খোলার চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি আমার দুর্বল অস্থি চর্মসার শরীর দিয়ে দরজাটিকে বাঁকাঝাকি শুরু করে দিলাম। আমি অনবরত ঝাকাতে ঝাকাতে দুর্বল হয়ে পড়লাম ও বিশ্রাম করার প্রয়োজন বোধ করলাম। যখনই আমি দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম তখনই আমি বিশ্রাম নিয়ে- এভাবে কিছুক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। অবশেষে দরজা খুলে গেল এবং আমি এমন ধরনের অনুভূতি নিয়ে বেরিয়ে এলাম যা কিনা সে লোকের থাকতে পারে যে নাকি তার কবর থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমি আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করলাম। আমি স্মরণ করলাম যে, মানবজাতি কতইনা দুর্বল আর তখন আমি আমাদের ক্রটি-বিচ্যুতির কথা ও আমাদের পরকালকে ভুলে যাওয়ার কথা মনে করলাম।

“আর তোমরা সেদিনকে ভয় কর যেদিন তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র নিকট ফিরিয়ে আনা হবে।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-২৮১)

أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ

“তোমরা যেখানেই থাকনা কেন মৃত্যু তোমাদেরকে পেয়ে বসবেই, যদিও তোমরা মজবুত ও সুউচ্চ দুর্গে থাকনা কেন।” (৪-সূরা নিসাঃ আয়াত-৭৮)

মৃত্যু এমনভাবে আসে যা আমরা প্রত্যাশা করি না। আমি এমন কিছু লোকের কথা পড়েছি ও শুনেছি যারা মৃত্যুকে চেয়েছিল, কিন্তু, অবশেষে তারা দীর্ঘ জীবন পেয়েছিল। পক্ষান্তরে এমন অন্যান্যরা আছে যারা নিরাপত্তা চেয়েছিল, কিন্তু তারা যে স্থানকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ করেছিল ঠিক সে স্থানেই মারা গিয়ে তারা শেষ হয়ে গিয়েছল। কেউ একজন রোগের জন্য চিকিৎসার সন্ধান করে আর এভাবে (চিকিৎসার মাধ্যমে) সে তার মৃত্যুর সাথে সাক্ষাৎ করে। অপর পক্ষে আরেকজন উদারভাবে জীবন যাপন করে ও নিরাপদ থাকে। মহান আল্লাহ কতইনা নিখুঁত ও পবিত্র। তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তার এলাহী প্রজ্ঞা অনুসারে সবকিছুর পরিকল্পনা করেছেন।