লা-তাহযান [হতাশ হবেন না] লা-তাহযান - অনুচ্ছেদ সূচি ড. আয়িদ আল করনী
৩১৭. তুমি যখন সাহায্য চাও, তখন তুমি তা আল্লাহর নিকটেই চাও

আল্লাহর দয়া আমাদের অতি নিকটেই। তিনি সব কিছু শোনেন ও আমাদের প্রার্থনার জবাব দেন। আমরা ভুলে ভরা এবং তাই নাছোড় বান্দা হয়ে প্রার্থনা করা আমাদের খুবই প্রয়োজন। ক্লান্তি, বিরক্তি ও হতাশা যেন কখনই আমাদেরকে আল্লাহর নিকট আকুল আবেদন করা থেকে বিরত না রাখে। আর আমাদের কেউ যেন না বলেঃ “আমি প্রার্থনা করেছি তবুও আমার প্রার্থনার জবাব দেয়া হয়নি।” বরং আমাদের উচিত বিনয়ের সাথে জমিনে মাথা ঠেকানো ও আল্লাহর নিকট থেকে সাহায্য ভিক্ষা চাওয়া। এ কাজ করার সর্বোত্তম পন্থা হলো তার পবিত্র নাম ও গুণাবলির মাধ্যমে তার নিকট সাহায্য চাওয়া। কিন্তু তিনি জবাব না দেয়া পর্যন্ত আমাদেরকে অবশ্যই নাছোড় বান্দা হয়ে তার নিকট সাহায্য চাইতে হবে।

ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً

“ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ও গোপনে তোমাদের প্রভুকে ডাক।” (৭-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-৫৫)

একজন লেখক নিম্নোক্ত এই গল্পটি বর্ণনা করেছেন-

“একজন মুসলমান শরণার্থী হিসেবে এক দেশে গেলেন এবং সেখানে তার নাগরিকত্ব মঞ্জুরের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলেন। তার সামনে সকল দ্বার রুদ্ধ হয়ে গেল। অন্যদের নিকট নাছোড় বান্দা হয়ে কাকুতি করার সর্বাত্মক চেষ্টা সত্বেও তার সকল যোগাযোগ ব্যর্থ হলো। একদিন এক ধাৰ্মিক আলেমের সাথে তার সাক্ষাৎ হলো এবং তিনি তার নিকট তার দুর্ভাগ্যপূর্ণ ও বিপজ্জনক অবস্থার একটি বর্ণনা দিলেন। আলেম লোকটি তাকে বললেন, তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা কর; কেননা তিনিই সব কিছু সহজ করে দেন। এ উপদেশের তাৎপর্য নিম্নোক্ত হাদীসে পাওয়া যায়-

إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلْ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ

ভাবাৰ্থঃ “তুমি যখন সাহায্য চাও তখন তুমি আল্লাহর নিকটেই সাহায্য চাও। আর জেনে রাখ যে, গোটা জাতি যদি তোমার কোন উপকার করার জন্য একত্রিত হয় তবে আল্লাহ্ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না।”

শরণার্থী এরপর বর্ণনা করেছেন- “আল্লাহর কসম, আমি মানুষের নিকট সাহায্যের জন্য অথবা মধ্যস্থতার জন্য যাওয়া বন্ধ করে দিলাম এবং তার বদলে আমি বরং আলেম আমাকে যেমনটি বলেছেন ঠিক তেমনকি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা শুরু করলাম। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার ঠিক পূর্বে আমি আল্লাহকে ডাকতাম এবং তার নিকট আকুল আবেদন করতাম। মাত্র কয়েকদিন পর, আমার পক্ষে ওকালতি (মধ্যস্থতা) করার জন্য কোন পদস্থ ব্যক্তির সাহায্য ছাড়াই আমি নাগরিকত্বের জন্য একটি দরখাস্ত জমা দিলাম। আরো কয়েকটি দিন গেল আর তখন আমাকে বিস্মিত করে হঠাৎ করে আমার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনপত্র তোলার জন্য আমাকে ডাকা হলো। ওসব কাগজে সীল মারা ছিল— অনুমোদিত।”

اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ

“আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি খুবই মেহেরবান।” (সূরা-৪২ আশ শূরাঃ আয়াত-১৯)