আল-ফিকহুল আকবর ইসমাতুল আম্বিয়া, সাহাবায়ে কেরাম, তাকফীর, সুন্নাত ও ইমামাত ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
১. ইসমাতুল আম্বিয়া

ইসমাত (العصمة) শব্দটি ‘আসামা’ (عَصَمَ) ক্রিয়ামূল থেকে গৃহীত, যার অর্থ নিষেধ করা, সংরক্ষণ করা বা হেফাযত করা (prevent, guard, protect)। ইসলামী পরিভাষায় ‘ইসমাত’ বলতে বুঝানো হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো ব্যক্তিকে পাপ বা ভুল-ভ্রান্তি থেকে সংরক্ষণ করা। সাধারণত একে অভ্রান্ততা, নিষ্কলঙ্কত্ব, পাপাক্ষমতা বা নিষ্পাপত্ব (infallibility, impeccability; sinlessness) বলা হয়। ইসমাতুল আম্বিয়া অর্থ নবীগণের অভ্রান্ততা বা নিষ্পাপত্ব। এ বিষয়ে ইমাম আযম (রাহ) বললেন: ‘‘নবীগণ সকলেই সগীরা গোনাহ, কবীরা গোনাহ, কুফর ও অশালীন কর্ম থেকে পবিত্র ও বিমুক্ত ছিলেন। তবে কখনো কখনো সামান্য পদস্খলন ও ভুলত্রুটি তাঁদের ঘটেছে।’’

মহান আল্লাহ বলেন:


يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ


‘‘হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষদের থেকে সংরÿণ করবেন।[1]

কুরআন-হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, সকল নবী-রাসূলই আল্লাহর মনোনীত নিষ্কলুষ নিষ্পাপ প্রিয় বান্দা ছিলেন। আল্লাহ বারংবার বলেছেন যে, নবীগণ বিশেষভাবে আল্লাহর রহমত, হেদায়াত ও মনোনয়ন প্রাপ্ত। আল্লাহ বলেন:


أُولَئِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ مِنْ ذُرِّيَّةِ آَدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِنْ ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا


‘‘এরা নবীগণের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ প্রদান করেছেন, তারা আদমের ও যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের বংশোদ্ভুত, ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভুত ও যাদেরকে আমি পথ-নির্দেশ করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম।’’[2]

এ অর্থের বিভিন্ন আয়াত থেকে জানা যায় যে, বিশেষভাবে পবিত্র ও নিষ্কলুষ বাছাই করা ব্যক্তিদেরকেই আল্লাহ নুবুওয়াত প্রদান করেছেন। এছাড়া আল্লাহ বারংবার নবীগণকে পবিত্র, একনিষ্ঠ, সৎ ইত্যাদি বিশেষণে ভুষিত করেছেন।[3] সর্বোপরি আল্লাহ মানব জাতিকে নবী-রাসূলদের ‘ইত্তিবা’ বা অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশও প্রমাণ করে যে, তাঁরা ‘নিষ্পাপ’ ছিলেন। কারণ যার থেকে পাপ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাকে নিঃশর্ত ‘ইত্তিবা’ করার নির্দেশ আল্লাহ দিবেন না। কুরআন ও হাদীসের এ সকল নিদের্শনার আলোকে মুসলিম উম্মাহর বিশ্বাস এই যে, নবীগণ সকলেই আল্লাহর বিশেষ করুণাপ্রাপ্ত ও প্রিয় বান্দা ছিলেন। তাঁরা সবাই নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী ও নিষ্পাপ ছিলেন। মানবীয় ভুলত্রম্নটি ছাড়া কোনো পাপে তাঁরা লিপ্ত হন নি।

[1] সূরা (৫) মায়িদা: ৬৭ আয়াত।

[2] সূরা (১৯) মারইয়াম: ৫৮ আয়াত।

[3] সূরা (৪) নিসা: ৬৯ আয়াত; সূরা (৬) আনআম: ৮৪-৯০ আয়াত; সূরা (১৯) মারইয়াম: ৪১-৫৮ আয়াত।