যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি কুরআন ও হাদীসের আলোকে যাদু ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বালী
দ্বিতীয়তঃ হাদীস দ্বারা প্রমাণ

১। ইবনে মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ এক রাতে আমরা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। অতঃপর আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে হারিয়ে ফেললাম। এ ব্যাপারে আমরা উপত্যকায় এবং বিভিন্ন গোত্রে খোজতে লাগলাম; কিন্তু না পেয়ে আমরা ধারণা করলাম যে, হয়ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে উধাও বা অপহরণ করা হয়েছে। এরপর সেই রাত খুব খারাপ রাত হিসেবে কাটালাম। যখন সকাল হল হঠাৎ দেখি হেরা গুহার দিক থেকে আসছেন। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে আমরা না পেয়ে অনেক খোঁজা-খুঁজি করেছি তবুও আপনাকে পাইনি? এরপর রাতটি খুব খারাপ কাটিয়েছি।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “জ্বিনের এক আহবায়ক আমার কাছে আসে এরপর আমি তার সাথে চলে গেলাম এবং তাদেরকে আমি কুরআনে কারম পড়ে শুনিয়েছি।”

বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে চললেন সেই স্থানে এবং সেখানে আমাদেরকে তিনি জ্বিন সম্প্রদায়ের নিদর্শনসমূহ ও তাদের আগুন জ্বালানোর চিহ্নসমূহ দেখালেন। তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করেন তাদের খাদ্য সম্পর্কে। তিনি উত্তরে বলেনঃ তোমাদের জন্য প্রত্যেক সেই হাড় যার উপর (যবাই করার সময়) আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে, তোমাদের হাতের কাছে থাকে যাতে মাংস না হয় এবং তোমাদের পশুর গোবর তা তোমাদের জন্যে খাদ্য।

অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “সুতরাং তোমরা তা দিয়ে এস্তেঞ্জা করো না। নিশ্চয় তা হলো তোমাদের ভাই জ্বিনদের খাদ্য।" (মুসলিমঃ ৪/১৭০)

২। আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ আমাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “আমি লক্ষ্য করেছি যে, তুমি ছাগল এবং মরুভূমিকে পছন্দ কর। সুতরাং তুমি যখন ছাগলের সাথে মরুভূমিতে থাকবে তখন তুমি নামাযের জন্য আযান দিবে তখন আযানের ধ্বনি খুব উঁচু করবে। কেননা নিশ্চয়ই মুয়াজ্জিনের ধ্বনি জ্বিন, মানুষ এবং অন্য যারাই শুনবে কিয়ামতের দিন তার জন্যে সাক্ষ্য দিবে।" (মুয়াত্তা ইমাম মালেকঃ ১৬৮, বুখারীঃ ২/৩৪৩ ফাতহ, নাসায়ীঃ ২/১২ ও ইবনে মাজাহঃ ১২৩৯)

৩। ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) নিজ বর্ণনায় বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবাদের এক দলের সাথে উকাজ বাজারের দিকে রওয়ানা হন। ইতিমধ্যে শয়তানদের ও আকাশের খবরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তাদের উপর তারকা অগ্নিশিখা বর্ষিত হয়। যার ফলে তারা স্বীয় জাতির নিকট ফিরে আসে। উপস্থিত শয়তানরা জিজ্ঞেস করেঃ তোমাদের কি হয়েছে? তারা উত্তর দেয়ঃ আমাদের ও আকাশের সংবাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের প্রতি তারকা অগ্নিশিখা বর্ষণ করা হয়েছে। তারা শুনে বলেঃ তোমাদের ও আকাশ সংবাদের মাঝে স্বাভাবিক কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি; বরং বড় ধরণের কিছু ঘটে গেছে। সুতরাং তোমরা বিশ্বের পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত বিচরণ করে দেখ কি সে প্রতিবন্ধকতা যা তোমাদের ও আকাশ সংবাদের মাঝে ঘটে গেছে। অতএব তারা প্রস্থান করে তেহামা অভিমূখে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দিকে। এমতাবস্থায় তিনি উকাজ বাজার অভিমূখে যাত্রাকালে নাখলা উপত্যকায় সাহাবাদেরকে নিয়ে ফজর নামায আদায় করছেন। যখন শয়তানরা (ফজরের) কুরআন তেলাওয়াত শুনল, তখন তারা তা আরো মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করা শুরু করল। অতঃপর তারা বললঃ আল্লাহর শপথ এটিই আমাদের ও আকাশ সংবাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সুতরাং তারা তখন সেখান হতে স্বীয় জাতির নিকট প্রত্যাবর্তন করে বলেঃ হে আমাদের জাতি আমরা নিশ্চয়ই এমন এক আশ্চর্য কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সরল পথের দিশারী। সুতরাং তার প্রতি আমরা ঈমান এনে ফেলেছি। আর আমরা কখনও আমাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপর আল্লাহ তার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি অবতীর্ণ করেনঃ

قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا

অর্থঃ “বলঃ আমার প্রতি অহী প্রেরিত হয়েছে যে, জীনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে এবং বলেছেঃ আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি।" (সূরা জিনঃ ১)

নিশ্চয়ই তার প্রতি অবতীর্ণ হয় জিনের কথা । (বুখারীঃ ২/২৫৩ ফাতহ সহ ও মুসলিমঃ ৪/১৬৮ নববীসহ শব্দগুলি বুখারীর)

৪ । আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) স্বীয় বর্ণনায় বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “ফেরেশতা জাতি সৃষ্টি হয় নূর হতে, আর জিনকে সৃষ্টি করা হয় অগ্নিশিখা হতে এবং আদমকে সৃষ্টি করা হয় তাই দিয়ে যা তোমাদেরকে বর্ণনা দেয়া হয়েছে।" (মুসনাদে আহমদঃ ৬/১৫৩, ১৬৮ ও মুসলিমঃ ১৮/১২৩ নববীসহ)

৫। সাফিয়া বিনতে হুয়াই (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের শরীরে রক্তের মত চলাচল করে।" (বুখারীঃ ৪/২৮২ ফাতহ সহ, মুসলিমঃ ১৪/১৫৫ নববীসহ)

৬। আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “যখন তোমাদের কেউ খাবার খাবে সে যেন ডান হাতে খায় এবং যখন পান করে তখন যেন ডান হাতেই

পান করে। কেননা নিশ্চয়ই শয়তান বাম হাতে খায় এবং বাম হাতেই পান করে।" (মুসলিমঃ ১৩/১৯১ নববীসহ)

৭। আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার বর্ণনায় বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ এমন কোন সন্তান জন্ম গ্রহণ করে না যাকে শয়তান আঘাত করে না। সুতরাং শয়তানের আঘাতের ফলে সে সন্তান জন্মের সময় চীৎকার করে। তবে ঈসা ও তার মাতা ব্যতীত।" (বুখারীঃ ৮/২১২ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ১৫/১২০ নববীসহ)

৮। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তার বর্ণনায় বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এমন এক ব্যক্তির বর্ণনা দেয়া হল যে পূর্ণ রাত্রি সকাল পর্যন্ত ঘুমায়। তিনি বলেনঃ সে এমন ব্যক্তি যার উভয় কানে বা তার কানে শয়তান পেশাব করে ফেলে। (বুখারীঃ ৩/২৮ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ৬/৬৪ নববীসহ)

৯। আবু কাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ সৎ স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ হতে, আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ হতে। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন কিছু দেখে যা তার অপছন্দ হয়, সে যেন তার বাম দিকে তিনবার আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্ত্বোনির রাজীম বলে ফুক দেয়, তবে তাকে অবশ্যই তা কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারীঃ ১২/২৮৩ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ১৫/১৬ নববীসহ)

১০। আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্য হতে যখন কেউ হাই তোলে, তখন সে যেন স্বীয় হাত দ্বারা মুখ বন্ধ করে। কেননা শয়তান তাতে প্রবেশ করে। (মুসলিমঃ ১৮/১২২ নববীসহ ও দারমীঃ ১/৩২১)

এই বিষয়ে আরও অনেক হাদীস রয়েছে। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হল যে, জ্বিন এবং শয়তানের অস্তিত্ব বাস্তব সত্য। এর মধ্যে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।