লগইন করুন
আবু দুজানা সা‘এদী অথবা সিবা‘ বিন উরফুত্বাহ গেফারীকে মদীনার প্রশাসক নিযুক্ত করে ১০ম হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসের ছয় দিন বাকী থাকতে (অর্থাৎ ২৪শে যুলক্বা‘দাহ) শনিবার যোহরের পর রাসূল (ছাঃ) স্ত্রীগণসহ ছাহাবায়ে কেরাম সমভিব্যাহারে মক্কার পথে রওয়ানা হ’লেন (যাদুল মা‘আদ ২/৯৮-৯৯)। অতঃপর মদীনা থেকে ১০ কি. মি. দক্ষিণে ‘যুল-হুলায়ফা’ গিয়ে আছরের পূর্বে যাত্রাবিরতি করেন। এটা হ’ল মদীনাবাসীদের জন্য হজ্জের মীক্বাত। গলায় মালা পরানো কুরবানীর পশু সঙ্গে ছিল। এখানে তিনি রাত্রি যাপন করেন। পরদিন রবিবার দুপুরের পূর্বে ইহরামের জন্য গোসল করেন এবং গোসল শেষে হযরত আয়েশা (রাঃ) নিজ হাতে তাঁর সারা দেহে ও পোষাকে সুগন্ধি মাখিয়ে দেন। অতঃপর তিনি যোহরের দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেন এবং মুছাল্লায় থাকা অবস্থাতেই হজ্জ ও ওমরাহর জন্য একত্রে ইহরাম বাঁধেন ও সেমতে ‘তালবিয়া’ পাঠ করেন। অর্থাৎ ‘লাববায়েক হাজ্জান ও ওমরাতান’ ধ্বনি উচ্চারণ করেন ও হজ্জে ক্বেরান-এর নিয়ত করেন।[1] যোহরের দু’রাক‘আত ফরয ব্যতীত ইহরামের জন্য পৃথকভাবে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেছেন মর্মে রাসূল (ছাঃ) থেকে কিছুই বর্ণিত হয়নি।[2]
অতঃপর তিনি বের হন এবং স্বীয় ক্বাছওয়া (الْقَصْوَاءِ) উটনীর উপরে সওয়ার হয়ে পুনরায় ‘তালবিয়া’ পাঠ করেন। অতঃপর খোলা ময়দানে এসে পুনরায় ‘তালবিয়া’ বলেন।[3] অতঃপর মক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন এবং মধ্যম গতিতে সাত দিন চলে ৩রা যিলহাজ্জ শনিবার সন্ধ্যার প্রাক্কালে মক্কার নিকটবর্তী ‘যূ-তুওয়া’(ذُو طُوَى) তে অবতরণ করেন ও সেখানে রাত্রি যাপন করেন। পরদিন রবিবার দিনের বেলায় তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন’।[4] ফলে মদীনা থেকে মক্কায় প্রবেশ পর্যন্ত মোট সফরকাল হয় নয় দিন।
একই ইহরামে হজ্জ ও ওমরাহ দু’টিই সম্পন্ন করাকে ‘হজ্জে ক্বেরান’ বলা হয়। এটি কঠিন। প্রথমে ওমরাহ পালন অতঃপর হালাল হয়ে পুনরায় হজ্জের ইহরাম বাঁধাকে ‘হজ্জে তামাত্তু’ বলা হয়। এটি সহজ। শুধুমাত্র হজ্জের ইহরাম বাঁধাকে ‘হজ্জে ইফরাদ’ বলা হয়। সময় স্বল্পতার জন্য এটা অনেকে করে থাকেন। শরী‘আতে তিনটিরই সুযোগ রাখা হয়েছে।
[2]. যাদুল মা‘আদ ২/১০১ পৃঃ। উল্লেখ্য যে, ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে ইহরাম বাঁধার পূর্বে কেবল দু’রাক‘আত ছালাতের কথা এসেছে (মুসলিম হা/১১৮৪ (২১)। যার প্রেক্ষিতে ইমাম নববী ঐ দু’রাক‘আতকে ইহরামের পূর্বেকার দু’রাক‘আত নফল ছালাত হিসাবে গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত একই হাদীছে যোহরের ছালাত স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে (মুসলিম হা/১২৪৩)। এর দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, যোহরের দু’রাক‘আত ক্বছর ছালাত আদায়ের পরেই রাসূল (ছাঃ) হজ্জের ইহরাম বাঁধেন ও তালবিয়াহ পাঠ করেন।
[3]. আর-রাহীক্ব ৪৫৯ পৃঃ। এতে বুঝা যায় যে, তিনি তাঁবুতে ইহরাম পরে একাকী যোহর-আছর জমা ও ক্বছর করে বের হন।
[4]. আর-রাহীক্ব ৪৫৮-৫৯ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ২/২০৬-০৭।