লগইন করুন
এটাই ছিল সর্বশেষ আগত প্রতিনিধি দল। যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর দু’মাস পূর্বে ১১ হিজরীর মুহাররম মাসের মাঝামাঝি সময়ে মদীনায় আগমন করে। এদের পরে আর কোন প্রতিনিধি দল আসেনি। ইয়ামন থেকে আগত ২০০ জনের এই বিরাট প্রতিনিধি দলটি আগেই মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-এর হাতে মুসলমান হয়েছিল। তাদেরকে কেন্দ্রীয় মেহমানখানায়(دَارُ الضِّيَافَةِ) রাখা হয়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন যুরারাহ বিন ‘আমর(زُرَارَةُ بْنُ عَمْرٍو)। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আসার সময় রাস্তায় আমি কয়েকটি আজব স্বপ্ন দেখেছি। এর ব্যাখ্যা কি হবে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, শুনাও দেখি’।-
১ম স্বপ্ন : যুরারাহ বললেন, আমি দেখলাম যে, বকরী বাচ্চা দিয়েছে, যা সাদা ও কালো রংয়ের ডোরাকাটা (أَبْلَق)।
ব্যাখ্যা : রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার স্ত্রীর ছেলে হয়েছে এবং সেটা তোমারই ছেলে।
যুরারাহ বললেন, কিন্তু সাদা-কালো ডোরাকাটা কেন হ’ল? রাসূল (ছাঃ) তাকে কাছে ডেকে গোপনে আস্তে আস্তে বললেন, তোমার দেহে শ্বেতকুষ্ট ব্যাধি রয়েছে, যা তুমি লোকদের থেকে লুকিয়ে রাখো। তোমার সন্তানের মধ্যে সেটারই প্রভাব পড়েছে। যুরারাহ বলে উঠলেন, কসম আল্লাহর, যিনি আপনাকে সত্য রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন, আমার এই গোপন রোগের খবর এ যাবত কারুরই জানা ছিল না।
২য় স্বপ্ন : যুরারাহ বললেন, আমি আরবের বাদশাহ নু‘মান বিন মুনযিরকে হাতে বাযুবন্দ, কোমরে কংকন ইত্যাদি অলংকারাদি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম (সীরাহ হালাবিইয়াহ ৩/২৭৯)।
ব্যাখ্যা : রাসূল (ছাঃ) বললেন, এর দ্বারা আরব দেশকে বুঝানো হয়েছে। যা এখন শান্তি ও সচ্ছলতা লাভ করেছে।
৩য় স্বপ্ন : আমি একটা বুড়ীকে দেখলাম মাটি থেকে বেরিয়ে আসছে এবং যার চুলের কিছু অংশ সাদা ও কিছু অংশ কালো।
ব্যাখ্যা : রাসূল (ছাঃ) বললেন, এর দ্বারা ‘দুনিয়া’ বুঝানো হয়েছে। যার (ধ্বংসের) বাকী সময়টুকু এখনো অবশিষ্ট রয়েছে।
৪র্থ স্বপ্ন : আমি দেখলাম যে, একটা দাবানল মাটি থেকে উত্থিত হ’ল। যা আমার ও আমার ছেলের মধ্যবর্তী স্থানে এসে গেল। আগুনটি বলছে, পোড়াও পোড়াও চক্ষুষ্মান হৌক বা অন্ধ হৌক। হে লোকেরা! তোমাদের খাদ্য, তোমাদের বংশ, তোমাদের মাল-সম্পদ সব আমাকে খাবার জন্য দাও’।
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এটা হ’ল ফাসাদ, যা আখেরী যামানায় বের হবে। যুরারাহ বললেন, সেটা কেমন ফিৎনা হবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, লোকেরা তাদের খলীফাকে (إمام) হত্যা করবে। তারা আপোষে এমন লড়াইয়ে মত্ত হবে, যেমন দু’হাতের পাঞ্জার আঙ্গুলগুলি পরস্পরে জড়িয়ে যায়। বদকার লোকেরা ঐ সময় নিজেদের নেককার মনে করবে। ঈমানদারগণের রক্ত পানির মত সস্তা মনে করা হবে। যদি তোমার ছেলে মারা যায়, তবে তুমি দেখবে। আর তুমি মারা গেলে তোমার ছেলে এই ফেৎনা দেখবে’।
যুরারাহ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দো‘আ করুন যেন আমি এই ফেৎনা না দেখি। রাসূল (ছাঃ) তার জন্য দো‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! সে যেন এই ফেৎনার যামানা না পায়’। পরে দেখা গেল যে, যুরারাহ মারা গেলেন। তার ছেলে বেঁচে থাকল। যে হযরত ওছমান (রাঃ)-এর বায়‘আত ছিন্ন করেছিল’ (যাদুল মা‘আদ ৩/৫৯৯-৬০০)।
[শিক্ষণীয় : দুনিয়াবী স্বার্থ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। মুসলমানেরা তা থেকে নিরাপদ থাকবে না। আখেরাত পিয়াসীগণ হবেন উক্ত হামলার প্রধান টার্গেট। অতএব ঈমানদারগণ সাবধান!]