লগইন করুন
দশ সদস্যের এই প্রতিনিধিদল ১০ম হিজরী সনে বিদায় হজ্জের বছরে মদীনায় আসে। এরা ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে আরবদের মধ্যে সর্বাধিক বিদ্বেষী ও কঠোর হৃদয়ের। তাদেরকে রামলাহ বিনতুল হারেছ-এর গৃহে রাখা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের মেহমানদারীর জন্য বেলাল (রাঃ)-কে নিযুক্ত করেন। সকাল-সন্ধ্যা তিনি তাদের খাবার পরিবেশন করতেন। একদিন রাসূল (ছাঃ) যোহর থেকে আছর পর্যন্ত তাদের জন্য সময় দিলেন। এ সময় তিনি এক ব্যক্তির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে বলেন, তোমাকে আমি যেন ইতিপূর্বে কোথায় দেখেছি? লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আপনি আমাকে দেখেছেন এবং আমার সাথে কথাও বলেছেন। আর সেটা হ’ল মক্কার ‘ওকায’ (عُكَاظ) বাজারে যখন আপনি লোকদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। অথচ আমি আপনার বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ করি এবং নিকৃষ্ট বাক্য সমূহ প্রয়োগ করি’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। ঠিক’। ঐ ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঐদিন আমার সাথীদের মধ্যে আমার চাইতে বেশী আপনাকে কেউ গালি দেয়নি এবং আমার চাইতে বেশী ইসলামের বিরোধিতাকারী সেদিন কেউ ছিল না। আমার সেই সব সাথীরা সকলেই স্ব স্ব পিতৃধর্মে মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ তারা আপনার ব্যাপারে আমার চাইতে বেশী কঠোর ছিল না। অতএবفَأَحْمَدُ اللهَ الَّذِي أَبْقَانِي حَتَّى صَدَّقْتُ بِكَ ‘আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি আজও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন আপনাকে সত্য বলে বিশ্বাস করার জন্য’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,إِنَّ الْقُلُوبَ بَيْنَ أَصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللهِ يُقَلِّبُهَا كَيْفَ يَشَاءُ ‘নিশ্চয় মানুষের অন্তরসমূহ আল্লাহর দু’আঙ্গুলের মাঝে রয়েছে। তিনি যেভাবে খুশী সেটাকে পরিচালিত করেন’ (তিরমিযী হা/২১৪০)। অতঃপর ঐ ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বিগত গোনাহ সমূহ মাফের জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করুন’। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إنَّ الْإِسْلاَمَ يَجُبُّ مَا كَانَ قَبْلَهُ مِنَ الكُفْر ‘ইসলাম তার পূর্বেকার সকল কুফরী দূর করে দেয়’। অতঃপর তিনি খুযায়মা বিন সুওয়া’(خُزَيْمَةُ بْنُ سُوَاء) এর মুখমণ্ডলে হাত বুলিয়ে দেন। তাতে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায়।[1]
একই ধরনের বক্তব্য এসেছে, যখন আমর ইবনুল ‘আছ ইসলাম কবুল করার জন্য মদীনায় আসেন, তখন বায়‘আতের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবার টেনে নেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ইসলাম কবুল করার পর আমার বিগত গোনাহ সমূহ মাফ হবে কি? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ইসলাম(يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ) বিগত সকল গোনাহ ধ্বসিয়ে দেয় এবং হিজরত বিগত সকল গোনাহ ধ্বসিয়ে দেয়’ (মুসলিম হা/১২১; মিশকাত হা/২৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,إنَّ الْإِسْلاَمَ يَجُبُّ مَا كَانَ قَبْلَهُ مِنَ الذُّنُوبِ ‘নিশ্চয় ইসলাম তার বিগত সকল গোনাহ দূরীভূত করে দেয়’ (আহমাদ হা/১৭৮৬১, সনদ ছহীহ)।
[শিক্ষণীয় : প্রকৃত তওবা ও বায়‘আত মানুষকে নতুন জীবন দান করে।]