লগইন করুন
তারেক বিন আব্দুল্লাহ ছিলেন ‘রাবাযাহ’ (الرَّبَذَة) এলাকার বাসিন্দা। তাঁর ইসলাম গ্রহণ বিষয়ে তিনি বর্ণনা করেন যে, একদা আমি মক্কার ‘যুল-মাজায’ বাজারে (سوق المجاز) দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক সেখানে এসে বলতে থাকেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ قُوْلُوْا لآ إلَهَ إلاَّ اللهُ تُفْلِحُوْا ‘হে জনগণ! তোমরা বল, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তাহ’লে তোমরা সফলকাম হবে’। কিন্তু সেখানেই তার পিছে পিছে তাকে পাথর ছুঁড়ে মারতে মারতে একজন লোককে বলতে শুনলাম,يَا أَيُّهَا النَّاسُ لاَ تُطِيعُوهُ فَإِنَّهُ كَذَّابٌ ‘হে জনগণ! তোমরা এ ব্যক্তির আনুগত্য করো না। কেননা সে মহা মিথ্যাবাদী’ (হাকেম হা/৪২১৯, সনদ ছহীহ)। পরে লোকদের কাছে জানতে পারলাম যে, দু’জনেই বনু হাশেমের লোক। প্রথম জন ‘মুহাম্মাদ’ যিনি নিজেকে আল্লাহর নবী বলে দাবী করেন এবং দ্বিতীয়জন তার চাচা আব্দুল ‘উযযা, যিনি তাকে অস্বীকার করেন’। আবু লাহাবের প্রকৃত নাম ছিল আব্দুল ‘উযযা।[1]
তারেক বিন আব্দুল্লাহ বলেন, তারপর কয়েক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করে চলে গেছেন। এক সময় আমি ও আমার সাথীগণ ব্যবসা উপলক্ষে মদীনায় গেলাম খেজুর ক্রয়ের জন্য। মদীনার উপকণ্ঠে পৌঁছে আমরা অবতরণ করলাম এজন্য যে, সফরের পোষাক পরিবর্তন করে ভাল পোষাক পরে মদীনায় প্রবেশ করব। এমন সময় পুরানো কাপড় পরিহিত একজন ব্যক্তি এসে আমাদের সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোথা থেকে এসেছেন এবং কোথায় যাবেন? আমরা বললাম, রাবাযাহ থেকে এসেছি এবং মদীনাই আমাদের গন্তব্যস্থল’। তিনি বললেন, কি উদ্দেশ্যে? আমরা বললাম, খেজুর ক্রয়ের উদ্দেশ্যে’। ঐ সময় লাগাম দেওয়া অবস্থায় আমাদের লাল উটটি দাঁড়ানো ছিল। তিনি বললেন, উটটি বিক্রি করবেন কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ। বললেন, দাম কত? বললাম, এত পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে দিতে পারি’। অতঃপর তিনি মূল্য কমানোর কোনরূপ চেষ্টা না করেই উটের লাগাম ধরে নিয়ে গেলেন। উনি শহরে পৌঁছে গেলে আমাদের হুঁশ হ’ল যে, অচেনা লোকটি আমাদের উট নিয়ে গেল, অথচ মূল্য পরিশোধের বিষয়ে কোন কথা হ’ল না। আমরা এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। তখন আমাদের গোত্রনেতার স্ত্রী যিনি আমাদের সাথে হাওদানশীন ছিলেন, তিনি বললেন, আমি লোকটির চেহারা দেখেছি, যা পূর্ণিমার চাঁদের মত। এমন একজন ব্যক্তি যদি উটের মূল্য না দেন, তবে আমিই তোমাদের মূল্য দিয়ে দেব’।
ইতিমধ্যে একজন ব্যক্তি এসে বললেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাঠিয়েছেন। এই নিন আপনাদের উটের মূল্য বাবদ খেজুর এবং বাকী এগুলি তিনি পাঠিয়েছেন আপনাদের আপ্যায়নের জন্য। আপনারা খেতে থাকুন এবং খেজুরগুলি মেপে নিন’।
অতঃপর আমরা খেয়ে তৃপ্ত হয়ে শহরে প্রবেশ করলাম। যেয়ে দেখি যে, উটের খরিদ্দার সেই ব্যক্তিই মসজিদে মিম্বরে দাঁড়িয়ে লোকদের উপদেশ দিচ্ছেন-
تَصَدَّقُوا، فَإِنَّ الصَّدَقَةَ خَيْرٌ لَكُمْ. وَالْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ: أَبَاكَ وَأُمَّكَ، وَأُخْتَكَ وَأَخَاكَ، وَأَدْنَاكَ فَأَدْنَاكَ -
‘তোমরা ছাদাক্বা কর। কেননা ছাদাক্বা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। জেনে রাখো উপরের হাত নীচের হাতের চাইতে উত্তম। যাদেরকে তুমি লালন-পালন কর তাদের দিয়ে শুরু কর। তোমার পিতাকে, তোমার মাকে, বোনকে, তোমার ভাইকে এবং তোমার নিকটতম তারপর তোমার নিকটতম ব্যক্তিকে দান কর’।[2]
তারেক বিন আব্দুল্লাহ তাওহীদের দাওয়াত পেয়েছিলেন মক্কার বাজারে। অতঃপর মদীনায় তার বাস্তবতা দেখে গোত্রসমেত সবাই মুসলমান হয়ে যান।
[শিক্ষণীয় : বিশুদ্ধ আক্বীদার সাথে উত্তম আচরণ যুক্ত হ’লেই কেবল তা অন্যের হৃদয়ে প্রভাব বিস্তার করে এবং পরকালে মুক্তির কারণ হয়ে থাকে।]
একই মর্মে হাদীছ এসেছে রাবী‘আহ বিন ‘ইবাদ আদ-দু’আলী(رَبِيعَةُ بْنُ عِبَادٍ الدُّؤَلِيُّ) থেকে। তিনি বলেন, আমি হিজরতের পূর্বে রাসূল (ছাঃ)-কে হজ্জের মওসুমে মিনায় তাঁবুতে তাঁবুতে গিয়ে দাওয়াত দিতে শুনেছি যে,يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاََ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ‘হে জনগণ! আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না’। এ সময় তাঁর পিছনে একজন লোককে বলতে শুনেছি, يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ هَذَا يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَتْرُكُوا دِيْنَ آبَائِكُمْ ‘হে জনগণ! এই ব্যক্তি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের দ্বীন পরিত্যাগ কর’। তখন আমি এই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলা হ’ল, ইনি আবু লাহাব’ (হাকেম হা/৩৮, হাদীছ ছহীহ)।
[শিক্ষণীয় : চাচা ও ভাতিজা দু’জনেই জনগণকে দাওয়াত দিচ্ছেন। একজন আল্লাহর দিকে, অন্যজন বাপ-দাদাদের রীতি-নীতির দিকে। একজন আল্লাহর সার্বভৌমত্বের দিকে। অন্যজন জনগণের সার্বভৌমত্বের দিকে। একটি জান্নাতের পথ, অন্যটি জাহান্নামের পথ। যুগে যুগে সত্য-মিথ্যার এ দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে। আগামীতেও থাকবে। জান্নাতীগণ আল্লাহর পথ বেছে নিবে আল্লাহর বিশেষ রহমতে। আর এটাই হ’ল চিরন্তন রীতি।]
[2]. ত্বাবারাণী হা/৮১৭৫; হাকেম হা/৪২১৯; বায়হাক্বী ১১০৯৬; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৫৯; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৫৬২; সনদ ছহীহ।