লগইন করুন
বনু সা‘দ বিন বকর-এর একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তাদের নেতা যেমাম বিন ছা‘লাবাহ(ضِمَامُ بنُ ثَعْلَبَةَ) রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে আসেন। অতঃপর বাহিরে উট বেঁধে রেখে তিনি মসজিদে প্রবেশ করেন ও বলেন, তোমাদের মধ্যে ইবনু আব্দিল মুত্ত্বালিব কে? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি’। তিনি বললেন, মুহাম্মাদ? রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি আপনাকে কিছু কঠিন বিষয়ে প্রশ্ন করব। মনে কিছু নিবেন না। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি কিছুই মনে করি না। তুমি যা খুশী প্রশ্ন কর। অতঃপর তিনি আল্লাহর কসম দিয়ে তাঁকে বাপ-দাদাদের উপাস্য দেব-দেবী সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, এসবই শিরক। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতঃপর তিনি ইসলামের ফরয সমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। জবাবে রাসূল (ছাঃ) কালেমা, ছালাত, ছিয়াম, যাকাত ও হজ্জ সহ ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদী ফরয ব্যাখ্যা করেন। তখন তিনি কালেমা শাহাদাৎ পাঠ করে ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলেন,وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ ‘যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, আমি এর চাইতে কিছু বাড়াবো না, কিছু কমাবোও না’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, إنْ يَصْدُقْ ذُو الْعَقِيصَتَيْنِ يَدْخُلْ الْجَنّةَ ‘দুই ঝুটিওয়ালা ব্যক্তি যদি সত্য বলে থাকে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। অতঃপর তিনি তার কওমের নিকট ফিরে যান এবং তাদের নিকটে রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ ও নিষেধ সমূহ বর্ণনা করেন। অতঃপর তার উপস্থিতিতে সন্ধ্যার মধ্যেই সকল নারী-পুরুষ ইসলাম কবুল করে’ (হাকেম হা/৪৩৮০, হাদীছ ছহীহ)।
উক্ত ঘটনাটি আনাস বিন মালেক (রাঃ)-এর বর্ণনায় ছহীহ বুখারীতে একটু ভিন্নভাবে এসেছে (বুখারী হা/৬৩)। মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,وَالَّذِى بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لاَ أَزِيدُ عَلَيْهِنَّ وَلاَ أَنْقُصُ مِنْهُنَّ. فَقَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ ‘যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এগুলির চাইতে আমি একটুও বাড়াবো না, একটুও কমাবো না। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যদি সে সত্য বলে থাকে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (মুসলিম হা/১২)।
ইবনু ইসহাক বলেন, যিমাম বিন ছা‘লাবাহ তার কওমের নিকট এসে বলেন,بِئْسَتِ اللاَّتُ وَالْعُزَّى فَقَالُوا : مَهْ يَا ضِمَامَ اتَّقِ الْبَرَصَ وَالْجُنُونَ وَالْجُذَامَ . قَالَ وَيْلَكُمْ إنّهُمَا مَا يَضُرَّانِ وَلاَ يَنْفَعَانِ ‘লাত-‘উযযার মন্দ হৌক! লোকেরা বলল, থাম হে যিমাম! শ্বেতী রোগ, উন্মাদ ও কুষ্ঠ রোগ হওয়াকে ভয় কর। তিনি বললেন, তোমাদের ধ্বংস হৌক! লাত-‘উযযা কারু কোন ক্ষতি করতে পারে না বা কারু কোন উপকার করতে পারে না’। আল্লাহ একজন রাসূলকে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর উপরে কিতাব নাযিল করেছেন। তাঁর মাধ্যমে আমি তোমাদেরকে তোমাদের পূর্বের কৃতকর্ম সমূহ থেকে বাঁচাতে চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি তাঁর নিকট থেকে তোমাদের নিকট নিয়ে এসেছি, যা তিনি তোমাদের প্রতি আদেশ করেছেন ও নিষেধ করেছেন। অতঃপর তাঁর উপস্থিতিতে সন্ধ্যার মধ্যেই তাঁর সম্প্রদায়ের সবাই ইসলাম কবুল করেন। নারী বা পুরুষের একজনও বাকী ছিলনা’। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,فَمَا سَمِعْنَا بِوَافِدِ قَوْمٍ كَانَ أَفْضَلَ مِنْ ضِمَامِ ابْن ثَعْلَبَةَ ‘যিমাম বিন ছা‘লাবাহর ন্যায় কোন সম্প্রদায়ের উত্তম প্রতিনিধি সম্পর্কে আমরা শুনিনি’।[1] ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,ما رأيت أحدا أحسن مسألة ولا أوجز من ضمام بن ثعلبة ‘আমি যিমাম বিন ছা‘লাবাহর চাইতে সুন্দর ও সারগর্ভ প্রশ্নকারী হিসাবে কাউকে দেখিনি’ (আল-ইছাবাহ, যিমাম ক্রমিক ৪১৮২)।
[শিক্ষণীয় : (১) অনেক সময় একজন সাহসী নেতাই একটি সম্প্রদায়ের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট হন। (২) সংক্ষেপে সারগর্ভ কথা বলাই জ্ঞানী নেতার কর্তব্য। (৩) ছবি-মূর্তির ক্ষমতার প্রতি মানুষের যে একটা অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে, উক্ত ঘটনায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়। (৪) হক জানতে পারার সাথে সাথে বাতিল থেকে তওবা করে হক কবুল করতে হবে। এ ব্যাপারে গড়িমসি করাটা শয়তানী ধোঁকার শামিল। (৫) নেতার প্রতি কর্মীদের অটুট বিশ্বাস ও নিখাদ আনুগত্যের প্রমাণ রয়েছে যেমাম ও তার সম্প্রদায়ের কর্মকান্ডে।