লগইন করুন
নাজরান ৭৩টি পল্লী সমৃদ্ধ খ্রিষ্টানদের একটি বিরাট নগরীর নাম। বর্তমানে সড়কপথে এটি মদীনা থেকে দক্ষিণে ১২০৫ কি.মি. দূরে ইয়ামন সীমান্তে অবস্থিত। সেসময় একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার পক্ষে উক্ত নগরী একদিনে পরিভ্রমণ করা সম্ভবপর ছিল না। উক্ত নগরীতে এক লক্ষ দক্ষ যোদ্ধা পুরুষ ছিলেন। নগরীটি মক্কা হ’তে ইয়ামনের দিকে সাত মনযিল দূরত্বে অবস্থিত ছিল। রাষ্ট্রনেতা, ধর্মনেতা, রাজনৈতিক নেতা, অর্থনৈতিক নেতা প্রভৃতি পদবীধারী দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ দ্বারা নগরীটি পুরোদস্ত্তর একটি সুশৃংখল নগর-রাষ্ট্ররূপে সারা আরবে সুপরিচিত ছিল।
নাজরান প্রতিনিধি দলের মদীনায় আগমন সম্পর্কে হাদীছ সমূহে যেসকল বিবরণ এসেছে, তাতে মানছূরপুরীর বক্তব্য মতে দু’বার এই প্রতিনিধি দলের আগমন ঘটেছিল। প্রথমবার তিন জনের এবং পরের বার ৬০ জনের। দু’টি দলই সম্ভবতঃ অল্পদিনের ব্যবধানে ৯ম হিজরীতে মদীনায় এসেছিল এবং ইসলাম কবুল করা ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সঙ্গে সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল।
বায়হাক্বী দালায়েল-এর বর্ণনা মতে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নাজরানবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র লেখেন।
مِنْ مُحَمَّدٍ رَسْوُلِ اللهِ إِلَى أَسْقُف نَجْرَان: إِنْ أَسْلَمْتُمْ فَإِنِّي أَحْمَدُ إِلَيْكُمْ إِلَهَ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ، أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أَدْعُوكُمْ إِلَى عِبَادَةِ اللهِ مِنْ عِبَادَةِ الْعِبَادِ، وَأَدْعُوكُمْ إِلَى وِلَايَةِ اللهِ مِنْ وِلَايَةِ الْعِبَادِ، فَإِنْ أَبَيْتُمْ فَالْجِزْيَةُ، فَإِنْ أَبَيْتُمْ آذَنْتُكُمْ بِحَرْبٍ وَالسَّلاَمُ
‘আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ-এর পক্ষ হ’তে নাজরানের বিশপ-এর প্রতি- ‘যদি তোমরা ইসলাম কবুল কর, তাহ’লে আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনা করব, যিনি ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূব-এর উপাস্য। অতঃপর আমি তোমাদেরকে মানুষের দাসত্ব হ’তে আল্লাহর দাসত্বের প্রতি এবং মানুষের বন্ধুত্ব হ’তে আল্লাহর বন্ধুত্বের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। যদি তোমরা অস্বীকার কর, তাহ’লে জিযিয়া দিবে। যদি সেটাও অস্বীকার কর, তাহ’লে আমি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছি। ওয়াসসালাম।[1]
‘মুবাহালা’ (الْمُبَاهَلَةُ) :
‘মুবাহালা’ অর্থ পরস্পরকে ধ্বংসের অভিশাপ দিয়ে আল্লাহর নিকট বিনীতভাবে প্রার্থনা করা’। উপরে বর্ণিত পত্র পাওয়ার পর নাজরানদের ধর্মনেতা ‘বিশপ’ (الأُسْقُف) সকলের সঙ্গে আলোচনা করে তিনজন প্রতিনিধিকে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে প্রেরণ করেন। তারা হ’লেন হামদান গোত্রের শুরাহবীল বিন ওয়াদা‘আহ হামদানী(شُرَحْبِيلُ بْنُ وَدَاعَة) হিমইয়ার গোত্রের আব্দুল্লাহ বিন শুরাহবীল আছবাহী এবং বনু হারেছ গোত্রের জাববার বিন ফায়েয হারেছী(جَبَّارُ بْنُ فَيْضٍ)। তারা মদীনায় গিয়ে কয়েকদিন অবস্থান করেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে আলোচনা করেন। তারা পূর্ব থেকেই ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ঈসা ও মারিয়ামকে আল্লাহর বেটা ও স্ত্রী হিসাবে আল্লাহর সাথে শরীক করতেন। তাদের ধারণা ছিল মুহাম্মাদ (ছাঃ) সত্যিকারের নবী হ’লে উক্ত ধারণায় বিশ্বাসী হবেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা কাল এসো। পরদিন সকালে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়-
إِنَّ مَثَلَ عِيْسَى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ- الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلاَ تَكُنْ مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ- فَمَنْ حَاجَّكَ فِيْهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَّعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ- (آل عمران ৫৯-৬১)-
‘নিশ্চয়ই ঈসার দৃষ্টান্ত আল্লাহর নিকটে আদমের ন্যায়। তাকে তিনি সৃষ্টি করেন মাটি দিয়ে। অতঃপর বলেন, হয়ে যাও, তখন হয়ে গেল’ (৫৯)। ‘সত্য আসে তোমার প্রভুর পক্ষ হ’তে। অতএব তুমি সন্দেহবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (৬০)। ‘অতঃপর যে ব্যক্তি তোমার সাথে তার (ঈসা) সম্পর্কে ঝগড়া করে তোমার নিকটে সঠিক জ্ঞান এসে যাওয়ার পরেও, তাকে তুমি বলে দাও, এসো আমরা ডাকি আমাদের সন্তানদের ও তোমাদের সন্তানদের, আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের। তারপর চল আমরা সবাই মিলে আল্লাহর নিকটে মিনতি ভরে প্রার্থনা করি। অতঃপর মিথ্যাবাদীদের প্রতি আমরা আল্লাহর অভিসম্পাত কামনা করি’ (আলে ইমরান ৩/৫৯-৬১)।
উক্ত আয়াতগুলি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতিনিধি দলকে শুনিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি হাসান, হোসায়েন ও তাদের মা ফাতেমাকে নিয়ে মুবাহালার জন্য বেরিয়ে এলেন। কোন কোন বর্ণনায় হযরত আলীর কথাও এসেছে। এর দ্বারা তিনি তাদের জানিয়ে দিতে চাইলেন যে, মুবাহালার জন্য তিনি এখুনি প্রস্ত্তত। যদিও প্রতিনিধি দলের পরিবার তাদের সাথে ছিল না।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এই দৃঢ় প্রত্যয় দেখে প্রতিনিধি দলের মধ্যে ভাবান্তর সৃষ্টি হ’ল। তারা প্রথমদিন অস্বীকার করলেও পরের দিন রাতের বেলা একান্তে পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হ’ল যে, মুবাহালা করে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনার চাইতে তাঁর অধীনতা স্বীকার করার মধ্যেই আমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে। অতএব সকালে এসে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে এবং সন্ধিচুক্তির আগ্রহ ব্যক্ত করে। অতঃপর নির্দিষ্ট পরিমাণ জিযিয়া কর দেবার শর্তে রাসূল (ছাঃ) তাদের সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করেন।
চুক্তিপত্রটি লেখেন হযরত মুগীরাহ বিন শো‘বা (রাঃ) এবং তাতে সাক্ষী হিসাবে নাম স্বাক্ষর করেন আবু সুফিয়ান ইবনু হারব (সাবেক কুরায়েশ নেতা), গায়লান বিন আমর, মালেক বিন ‘আওফ ও আক্বরা বিন হাবেস (রাঃ)।[2]
অতঃপর প্রতিনিধি দলটি নিজ গোত্রে ফিরে আসে। তাদেরকে অভ্যর্থনার জন্য বিশপের নেতৃত্বে একটি দল আগেই নগরীর বাইরে এসে গিয়েছিল। চুক্তিনামাটি বিশপের হাতে সমর্পণ করলে তা পড়ার জন্য তার চাচাতো ভাই আবু আলক্বামা বিশর বিন মু‘আবিয়া তার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তাতে তিনি উটের পিঠ থেকে নীচে পড়ে যান ও রাসূল (ছাঃ)-কে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির মন্দ হৌক যিনি আমাকে এই কষ্ট দিলেন’। তখন বিশপ তাকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন, তুমি কি বলছ হিসাব করে বলো।وَاللهِ إِنَّهُ نَبِيٌّ مُرْسَلٌ ‘আল্লাহর কসম! ইনি আল্লাহর প্রেরিত নবী’।واللهِ إِنَّهُ لَلنَّبِىُّ الذى كُنَّا نَنْتَظِرُ ‘আল্লাহর কসম! ইনি অবশ্যই সেই নবী, আমরা যার প্রতীক্ষা করে আসছি’। একথা শোনার সাথে সাথে আবু আলক্বামা তার উটের মুখ মদীনার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন এবং ঐ অবস্থাতেই রওয়ানা করলেন। বিশপ তাকে বারবার অনুরোধ করেও ফিরাতে ব্যর্থ হ’লেন। আবু আলক্বামা সোজা মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন ও সেখানেই থেকে যান ও পরে শহীদ হন (যাদুল মা‘আদ ৩/৫৫৫)।
অতঃপর প্রতিনিধিদল গোত্রের গীর্জায় পৌঁছে গেলে সেখানকার পাদ্রী সবকিছু শুনে ইসলাম কবুলের জন্য তখনই মদীনায় রওয়ানা হ’তে চাইলেন। তিনি গীর্জার দোতলায় তার কক্ষ হ’তে চীৎকার দিয়ে বলতে থাকেন, আমাকে এখুনি নামতে দাও। নইলে আমি এখান থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে জীবন বিসর্জন দেব। পরে লোকেরা তাকে নামতে দিল। তিনি একটি পেয়ালা, একটি লাঠি ও একটি চাদর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য হাদিয়া স্বরূপ নিয়ে তখনই মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তিনি ইসলাম কবুল করার পর বেশ কিছু দিন মদীনায় অবস্থান করেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুমতি নিয়ে নাজরান ফিরে আসেন। তাঁর দেওয়া উপঢৌকন আববাসী খলীফাদের সময় পর্যন্ত রক্ষিত ছিল।
প্রথম প্রতিনিধিদলটি ফিরে আসার অল্প দিনের মধ্যেই ৬০ জন আরোহীর একটি বিরাট প্রতিনিধিদল নিয়ে স্বয়ং বিশপ আবুল হারেছ অথবা আবু হারেছাহ বিন আলক্বামা রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হন। তার সঙ্গে ১৪ জন নেতার মধ্যে সর্বোচ্চ তিনি সহ আরও দু’জন ছিলেন। যাদের একজন হ’লেন নাজরানের শাসক (عَاقِبٌ) আব্দুল মাসীহ এবং প্রধান বিচারপতি ও প্রশাসক (سَيّدُ) আইহাম (الْأَيْهَم) অথবা শুরাহবীল। ইনি সামাজিক ও আর্থিক বিষয়াদিও দেখাশোনা করতেন।
সম্ভবতঃ এটা রবিবার ছিল। আছরের সময় মদীনায় পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের অনুমতি দেন। তারা সেখানে প্রবেশ করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করেন। কিছু মুসলমান তাদেরকে বাধা দিতে চাইলে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেন (ইবনু হিশাম ১/৫৭৪-৭৫)।
খ্রিষ্টানদের এই বিরাট দলটি মদীনায় উপস্থিত হওয়ায় কিছু ইহূদী এসে তাদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে বচসায় লিপ্ত হ’ত। একদিন তারা এসে বলল, ইবরাহীম (আঃ) ইহূদী ছিলেন। জওয়াবে খ্রিষ্টান নেতারা বললেন, ইবরাহীম (আঃ) নাছারা ছিলেন। তখন সূরা আলে ইমরান ৬৫-৬৮ আয়াতগুলি নাযিল হয়। যেখানে বলা হয় যে,مَا كَانَ إِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَلاَ نَصْرَانِيًّا وَلَكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا ‘ইবরাহীম না ইহূদী ছিলেন, না নাছারা ছিলেন। বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম’ (আলে ইমরান ৩/৬৭)।[3]
আরেকদিন তারা এসে খ্রিষ্টান ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বলল, তোমাদের এই নবী কি চান যে, আমরা তার ইবাদত করি, যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসার পূজা করে থাকে? তখন এর প্রতিবাদে সূরা আলে ইমরানের ৭৯ ও ৮০ আয়াত দু’টি নাযিল হয়’।-
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ اللهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَاداً لِّي مِن دُونِ اللهِ وَلَـكِن كُونُواْ رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ، وَلاَ يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُوا الْمَلاَئِكَةَ وَالنِّبِيِّيْنَ أَرْبَاباً أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ- (آل عمران 79-80)-
‘এটা কোন মানুষের জন্য বিধেয় নয় যে, তাকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত ও নবুঅত প্রদান করেন, অতঃপর সে লোকদের বলে যে, তোমরা সবাই আল্লাহকে ছেড়ে আমার গোলাম হয়ে যাও। বরং একথা বলবে যে, তোমরা সবাই আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও। এটা এজন্য যে, তোমরা মানুষকে কিতাব শিক্ষা দিয়ে থাক এবং তোমরা তা পাঠ করে থাক’ (৭৯)। ‘আর তিনি তোমাদের এটা আদেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীগণকে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ কর। মুসলিম হওয়ার পরে কি তিনি তোমাদের কুফরীর নির্দেশ দিবেন? (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ করতে বলবেন?)। (আলে ইমরান ৩/৭৯-৮০)।[4]
মুহাম্মাদ বিন ইসহাক-এর বর্ণনায় এসেছে যে, এই প্রতিনিধিদল মদীনায় অবস্থান কালীন সময়ে তাদের সম্পর্কে সূরা আলে ইমরানের শুরু থেকে ৮০-এর অধিক আয়াত সমূহ নাযিল হয়।[5]
অতঃপর প্রতিনিধিদল বিদায় গ্রহণকালে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আরয করেন যে, তাদের নিকট থেকে চুক্তির মালামাল আদায়ের জন্য একজন আমানতদার ব্যক্তিকে প্রেরণ করা হউক। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)-কে উক্ত গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং বলেন,هَذَا أَمِيْنُ هَذِهِ الْأُمَّة ‘ইনি হ’লেন এই উম্মতের আমীন’ অর্থাৎ সবচেয়ে বড় আমানতদার ব্যক্তি’ (বুখারী হা/৪৩৮০)। পরে আবু ওবায়দাহর সর্বোত্তম আমানতদারী, অনুপম চরিত্র ও অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে নাজরানবাসী দলে দলে মুসলমান হ’তে থাকেন। স্বয়ং ‘আক্বেব’ (শাসক) ও ‘সাইয়েদ’ (প্রধান বিচারপতি) মুসলমান হয়ে যান। পরে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে পাঠান জিযিয়া ও ছাদাক্বা সংগ্রহের জন্য। অর্থাৎ মুসলমানদের নিকট থেকে যাকাত এবং অমুসলমানদের নিকট থেকে জিযিয়া কর। ক্রমে সমস্ত নাজরানবাসী মুসলমান হয়ে যায়।[6]
[শিক্ষণীয় : এক ফোঁটা রক্তপাত না ঘটিয়ে স্রেফ ইসলামের আদর্শে মুগ্ধ হয়ে নাজরানের খ্রিষ্টানরা দলে দলে মুসলমান হয়েছিল। আজও তা সম্ভব। যদি আমরা ইসলামকে সঠিকভাবে মানবজাতির কাছে তুলে ধরতে পারি এবং তারাও ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাসী হয়।]
[2]. পূর্ণ চুক্তিপত্রটি দ্রষ্টব্য : বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত (বৈরূতঃ ১৪০৫/১৯৮৫) ৫/৩৮৯ ‘নাজরান প্রতিনিধি দল’ অনুচ্ছেদ; বালাযুরী, ফুতূহুল বুলদান ৭৫-৭৭ পৃঃ।
[3]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আলে ইমরান ৬৭ আয়াত; যাদুল মা‘আদ ৩/৫৫১।
[4]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আলে ইমরান ৭৯-৮০ আয়াত।
[5]. ইবনু হিশাম ১/৫৭৬; ইবনু কাছীর, তাফসীর আলে ইমরান ৬৪ আয়াত।
[6]. বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ৫/৩৮২-৯৩; ইবনু হিশাম ২/৬০০; আর-রাহীক্ব ৪৫০-৫১ পৃঃ।