লগইন করুন
ইসলামের প্রদত্ত যুদ্ধ নীতিতে যোদ্ধা ও বিচারে দন্ডপ্রাপ্ত ব্যতীত কাউকে হত্যা করার বিধান নেই। তেমনি শরী‘আতের দেওয়া নিয়ম-নীতির বাইরে কোনরূপ স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ নেই। যেমন-
(১) হযরত সুলায়মান বিন বুরায়দা (রাঃ) তাঁর পিতা হ’তে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন বড় কিংবা ছোট সেনাদলের উপর কাউকে ‘আমীর’ নিযুক্ত করতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে আল্লাহকে ভয় করে চলার এবং তার সঙ্গী মুসলমানদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার উপদেশ দিতেন। অতঃপর বলতেন,اَغْزُوا بِاسْمِ اللهِ فِى سَبِيلِ اللهِ قَاتِلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللهِ اغْزُوا وَ لاَ تَغُلُّوا وَلاَ تَغْدِرُوا وَلاَ تَمْثُلُوا وَلاَ تَقْتُلُوا وَلِيدًا وَإِذَا لَقِيتَ عَدُوَّكَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَادْعُهُمْ إِلَى ثَلاَثِ خِصَالٍ ‘আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে গমন কর এবং যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে তাদের সাথে যুদ্ধ কর। সাবধান! জিহাদ কর, কিন্তু গণীমতের মালে খেয়ানত করো না, চুক্তি ভঙ্গ করো না, নিহতদের অঙ্গহানি করো না, কোন শিশুকে হত্যা করো না। কাফেরদের মুকাবিলায় তুমি তাদেরকে তিনটি কথার প্রতি আহবান জানাবে’। যদি তারা সেগুলি মেনে নেয়, তাহ’লে তাদের প্রতি আক্রমণ করা থেকে বিরত হবে। (১) তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে। (২) যদি তারা ইসলাম কবুল করে, তাহ’লে তারা তাদের নিজ এলাকা থেকে মুসলমানদের এলাকায় হিজরত করে চলে আসবে এবং তারা মুহাজিরগণের ন্যায় (গণীমত ইত্যাদির) অধিকার প্রাপ্ত হবে। (৩) ইসলাম কবুলের পরেও যদি তারা হিজরত করে আসতে রাযী না হয়, তাহ’লে তারা বেদুঈন মুসলমানদের মত সেখানে থাকবে এবং আল্লাহর বিধানসমূহ পালন করবে।
পক্ষান্তরে যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তাহ’লে তাদের নিকট থেকে জিযিয়া দাবী কর এবং তাদের প্রতি আক্রমণ করা হ’তে বিরত থাক। যদি তারা জিযিয়া দিতে অস্বীকার করে, তাহ’লে আল্লাহর প্রতি ভরসা কর এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। আর যদি তুমি কোন দুর্গ অবরোধ কর, আর তারা তোমাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হ’তে চায়, তাহ’লে তোমরা নিজ দায়িত্বে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হ’তে পার। এ সময় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামে চুক্তি করো না। কেননা (যদি কোন কারণে উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করতে বাধ্য হও, তখন) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করা অপেক্ষা তোমাদের কৃত চুক্তি ভঙ্গ করা অধিকতর সহজ ...’।[1]
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَنْ قَتَلَ مُعَاهَدًا لَمْ يَرِحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيْحَهَا تُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ أَرْبَعِيْنَ عَامًا ‘যদি কোন ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে অর্থাৎ রাষ্ট্রের অনুগত কোন অমুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করে, তবে সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধি ৪০ বছরের দূরত্ব হ’তে লাভ করা যাবে’।[2]
(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা নিষিদ্ধ করে বলেন,إِنَّ النَّارَ لاَ يُعَذِّبُ بِهَا إِلاَّ اللهُ ‘আগুন দ্বারা কেউ শাস্তি দিতে পারে না আল্লাহ ব্যতীত’। তিনি আরও বলেন,لاَ تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللهِ ‘তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা শাস্তি প্রদান করো না’ (বুখারী হা/৩০১৬)।
(৪) বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,فَإنَّ دِمَاءَكُمْ وَأمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا فِيْ شَهْرِكُمْ هَذَا ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের ইযযত পরস্পরের উপরে এমনভাবে হারাম, যেমন এই দিন, এই শহর ও এই মাস তোমাদের জন্য হারাম’।[3] (বিস্তারিত দ্রঃ ‘ইসলামের জিহাদ বিধান’ অনুচ্ছেদ পৃঃ ২৬৫)।
বলা বাহুল্য ইসলামী জিহাদের উপরোক্ত নীতিসমূহ অনুসরণের ফলেই খুলাফায়ে রাশেদীন ও পরবর্তী যুগে সে সময়ে খ্রিষ্টান, পারসিক ও পৌত্তলিকদের শাসনাধীনে থাকা উত্তর আরব, সিরিয়া, ইরাক, ইরান এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন এলাকা ইসলামী খেলাফতের অধীনস্ত হয়। বস্ত্ততঃ একমাত্র ইসলামী খেলাফতের অধীনেই রয়েছে মুসলিম-অমুসলিম সকল নাগরিকের জান-মাল ও ইযযতের নিশ্চয়তা। কেননা ইসলামী জিহাদ-এর মূল উদ্দেশ্য হ’ল, মানুষকে শয়তানের দাসত্ব হ’তে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে আনা এবং সর্বত্র আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা। আর এর মধ্যেই রয়েছে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণের স্থায়ী নিশ্চয়তা।
[2]. বুখারী হা/৩১৬৬; মিশকাত হা/৩৪৫২।
[3]. বুখারী হা/১৭৩৯; মুসলিম হা/১৬৭৯; মিশকাত হা/২৬৫৯।