লগইন করুন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চিন্তা করলেন যে, আরব এলাকায় রোমকদের প্রবেশ করার আগেই তাদেরকে তাদের সীমানার মধ্যেই আটকে দিতে হবে। যাতে আরব ও মুসলিম এলাকা অহেতুক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অন্য সময় রাসূলুললাহ (ছাঃ) ‘তাওরিয়া’ (التَّوْرِيَة) করেন। অর্থাৎ একদিকে যাওয়ার কথা বলে অন্যদিকে যেতেন। কিন্তু এবার তিনি সরাসরি ঘোষণা করলেন যে, রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে হবে। অতঃপর এ ব্যাপারে তিনি সবাইকে জোরালোভাবে উৎসাহিত করতে থাকেন। যাতে ভীতি ঝেড়ে ফেলে সবাই যুদ্ধের জন্য জোরে-শোরে প্রস্ত্ততি নিতে পারে। দেখা গেল যে, কেবল মুনাফিকরা ব্যতীত সবাই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলো। মক্কাবাসীদের নিকটে ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলির নিকটে খবর পাঠানো হ’ল। একই সময়ে সূরা তওবার অনেকগুলি আয়াত নাযিল হ’ল মুনাফিকদের যুদ্ধভীতির বিরুদ্ধে ও মিথ্যা ওযর-আপত্তির বিরুদ্ধে। এতদ্ব্যতীত জিহাদের ফযীলত এবং এতদুদ্দেশ্যে দান-ছাদাক্বার ফযীলত সম্পর্কে অনেকগুলি আয়াত নাযিল হয়। এতে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। গ্রীষ্মের খরতাপ, ফসল কাটার মৌসুম, দীর্ঘ সফরের কষ্ট সবকিছু ভুলে গিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় জিহাদে গমন করার ও জিহাদ ফান্ডে দান করার প্রতিযোগিতা।
এই বাহিনীকে ‘জায়শুল উসরাহ’(جَيْشُ الْعُسْرَةِ) অর্থাৎ ‘ক্লেশকর যুদ্ধের সেনাবাহিনী’ বলে অভিহিত করা হয়। এসময় মুনাফিকরা মসজিদে ক্বোবার অনতিদূরে একটি মসজিদ নির্মাণ করে এবং সেখানে গিয়ে ছালাত আদায়ের জন্য রাসূল (ছাঃ)-কে দাওয়াত দেয়। রাসূল (ছাঃ) তাবূক যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে সেখানে যাবেন বলে কথা দেন। ইতিহাসে এটি ‘মসজিদে যেরার’(مَسْجِدُ الضِّرَار) বা ‘অনিষ্টকারী মসজিদ’ নামে পরিচিত’ (ইবনু হিশাম ১/৫২২; তওবা ৯/১০৭)।
জিহাদে গমনের নির্দেশ প্রচারিত হওয়ার পর মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জিহাদের প্রস্ত্ততি শুরু করে দেয়। যাদের বাহন ছিল না, তারা ছুটে আসেন রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে বাহনের জন্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সবাইকে বাহনের ব্যবস্থা করতে পারলেন না। ফলে যারা বাহন পেলেন না, তারা জিহাদে যেতে না পারার দুঃখে কেঁদে বুক ভাসান। ইতিহাসে এরা ‘আল-বাক্কাঊন’ (ক্রন্দনকারীগণ) নামে খ্যাত।[1]