লগইন করুন
সরাসরি যুদ্ধ না হ’লেও এই অভিযানে অনেকগুলি ঘটনা ঘটে। যেমন (১) তরবারি গাছে ঝুলিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগে জনৈক মুশরিক বেদুঈন গাওরাছ ইবনুল হারেছ(غَورَثُ بنُ الْحارِث) এসে রাসূল (ছাঃ)-এর তরবারি নিয়ে নেয়। অতঃপর তাঁকে হুমকি দিয়ে বলে,أَتَخَافُنِى؟ قَالَ: لاَ. قَالَ فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّى؟ قَالَ: اللهُ ‘তুমি কি আমাকে ভয় কর? রাসূল (ছাঃ) বললেন, না। সে বলল, বেশ কে এখন তোমাকে আমার থেকে রক্ষা করবে? রাসূল (ছাঃ) বলেন ‘আল্লাহ’। তখন ছাহাবীগণ তাকে ধমকালেন’।[1] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তখন তার হাত থেকে তরবারি পড়ে যায়। এ সময় রাসূল (ছাঃ) তরবারি উঠিয়ে তাকে বললেন, এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে? সে বলল, كُنْ كَخَيْرِ آخِذٍ ‘আপনি শ্রেষ্ঠ ধারণকারীর মত হউন! রাসূল (ছাঃ) বললেন,أَتَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ؟ ‘তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই? সে বলল, না। আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না বা আপনার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করছে তাদের সহযোগিতাও করব না’। তখন উক্ত প্রতিশ্রুতির উপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাবী বলেন, অতঃপর সে তার কওমের নিকট গিয়ে বলে,قَدْ جِئْتُكُمْ مِنْ عِنْدِ خَيْرِ النَّاسِ ‘আমি তোমাদের নিকট এসেছি একজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির নিকট থেকে’।[2] ওয়াক্বেদী ও ইবনু ইসহাক বলেন, পরে সে মুসলমান হয়ে যায় এবং তার মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম কবুল করে। ওয়াক্বেদীর বর্ণনায় এসেছে যে, তার নাম ছিল দা‘ছূর (دَعْثُوْر) এবং সে তখনই ইসলাম কবুল করে। ইবনু হাজার বলেন, প্রকাশ্য বক্তব্যে বুঝা যায় যে, সেটি ছিল পৃথক যুদ্ধের পৃথক ঘটনা (ফাৎহুল বারী হা/৪১৩৪-এর আলোচনা)।
(২) এই দিন রাসূল (ছাঃ) এক দলের পর আরেক দলকে নিয়ে ‘ছালাতুল খাওফ’ আদায় করেন ফলে অন্যদের দু’রাক‘আত হয় এবং রাসূল (ছাঃ)-এর চার রাক‘আত হয় (বুখারী হা/৪১৩৬)।
(৩) যুদ্ধ হ’তে ফেরার পথে বন্দীনী এক মুশরিক মহিলার স্বামী বদলা হিসাবে মুসলিম বাহিনীর রাতের বেলায় বিশ্রামের সুযোগে পাহারায় নিযুক্ত ছাহাবী ‘আববাদ বিন বিশরের(عَبَّادُ بنُ بِشْر) উপরে ছালাতরত অবস্থায় পরপর তিনটি তীর নিক্ষেপ করে তাঁকে মারাত্মক আহত করা সত্ত্বেও তিনি ছালাত ছেড়ে দেননি। পরে অন্য পাহারা ‘আম্মার বিন ইয়াসির যখন বলেন, আমাকে কেন জাগাননি? তখন তিনি বলেন,إنِّيْ كُنْتُ فِيْ سُوْرَةٍ فَكَرِهْتُ أَنْ اَقْطَعَهَا ‘আমি এমন একটি সূরা পাঠে মগ্ন ছিলাম, যা থেকে বিরত হওয়াটা আমি অপছন্দ করেছিলাম’।[3] সেটি ছিল সূরা ‘কাহফ’।[4]
এই অভিযানের ফলে বনু গাত্বফানের লোকেরা আর মাথা উঁচু করেনি। তারা ক্রমে ক্রমে সবাই ইসলাম কবুল করে। তাদের অনেকে মক্কা বিজয়ের অভিযানে ও তার পরে হোনায়েন যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর সাথে যোগ দেয় এবং হোনায়েনের গণীমতের অংশ লাভ করে। মক্কা বিজয়ের পর তারা মদীনায় যাকাত পাঠাতে থাকে। এভাবে আহযাব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তিনটি প্রধান শাখার সবগুলিই পদানত হয়। ফলে সর্বত্র শান্তি ও স্থিতি বিরাজ করতে থাকে’ (আর-রাহীক্ব ৩৮১-৮২ পৃঃ)। এই অভিযানের ফলে শামের দিকে মদীনার প্রভাব বিস্তার সহজ হয়ে যায় (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬২)।
[2]. আহমাদ হা/১৪৯৭১; হাকেম হা/৪৩২২, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৫৩০৫।
[3]. ইবনু হিশাম ২/২০৮-০৯; যাদুল মা‘আদ ৩/২২৭-২৮; আর-রাহীক্ব ৩৮১-৮২ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/১৯৮, সনদ হাসান।
[4]. শামসুল হক আযীমাবাদী (১২৭৩-১৩২৯ হি./১৮৫৬-১৯১১ খৃ.) ‘আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনান আবুদাঊদ (বৈরূত : ১৪১৫ হি.) হা/১৯৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য ১/২২৯ পৃঃ।