লগইন করুন
১. ‘আমের ইবনুল আকওয়ার কবিতা পাঠ(إنشاد عامر بن الأكوع) : সালামা ইবনুল আকওয়া‘ (سَلَمَةُ بنُ الْأَكْوَع) বলেন, খায়বরের পথে আমরা রাতের বেলা পথ চলছিলাম। ইতিমধ্যে জনৈক ব্যক্তি (আমার চাচা) ‘আমের ইবনুল আকওয়া‘(عَامِرُ بنُ الْأَكْوَع) কে বলল,يَا عَامِرُ أَلاَ تُسْمِعُنَا مِنْ هُنَيْهَاتِكَ؟ ‘হে ‘আমের! তুমি কি আমাদেরকে তোমার অসাধারণ কাব্য-কথা কিছু শুনাবে না? ‘আমের ছিলেন একজন উঁচুদরের কবি। একথা শুনে তিনি নিজের বাহন থেকে নামলেন ও নিজ কওমের জন্য প্রার্থনামূলক কবিতা বলা শুরু করলেন।-
اللَّهُمَّ لَوْلاَ أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَا * وَلاَ تَصَدَّقْنَا وَلاَ صَلَّيْنَا
فَاغْفِرْ فِدَاءً لَكَ مَا أَبْقَيْنَا * وَثَبِّتِ الأَقْدَامَ إِنْ لاَقَيْنَا
وَأَلْقِيَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَا * إِنَّا إِذَا صِيْحَ بِنَا أَبَيْنَا
وَبِالصِّيَاحِ عَوَّلُوْا عَلَيْنَا
‘হে আল্লাহ! যদি তুমি অনুগ্রহ না করতে, তাহ’লে আমরা হেদায়াত পেতাম না। ছাদাক্বা করতাম না, ছালাতও আদায় করতাম না’। ‘আমরা তোমার জন্য উৎসর্গীত। অতএব তুমি আমাদের ক্ষমা কর যেসব পাপ আমরা অবশিষ্ট রেখেছি (অর্থাৎ যা থেকে তওবা করিনি)। তুমি আমাদের পাগুলিকে দৃঢ় রেখো যদি আমরা যুদ্ধের মুকাবিলা করি’। ‘আমাদের উপরে তুমি প্রশান্তি নাযিল কর। আমাদেরকে যখন ভয় দেখানো হয়, তখন আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি’। ‘বস্ত্ততঃ ভয়ের সময় লোকেরা আমাদের উপর ভরসা করে থাকে’ (বুখারী হা/৪১৯৬)।
ইবনু হাজার বলেন, ‘উৎসর্গীত’ কথাটি বান্দার জন্য হয়, আল্লাহর জন্য নয়। তবে এখানে প্রকাশ্য অর্থ উদ্দেশ্য নয়। বরং এর দ্বারা ‘আল্লাহর জন্য আমাদের যাবতীয় সম্মান ও ভালবাসা উৎসর্গীত’ বুঝানো হয়েছে (ফাৎহুল বারী হা/৪১৯৬-এর আলোচনা)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,مَنْ هَذَا السَّائِقُ؟ ‘এই চালকটি কে’? লোকেরা বলল, ‘আমের ইবনুল আকওয়া‘। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, يَرْحَمُهُ اللهُ ‘আল্লাহ তার উপরে রহম করুন’। তখন একজন ব্যক্তি বলে উঠল, وَجَبَتْ يَا نَبِىَّ اللهِ، لَوْلاَ أَمْتَعْتَنَا بِهِ ‘হে আল্লাহর নবী! তার উপরে তো শাহাদাত ওয়াজিব হয়ে গেল। যদি আপনি তার দ্বারা আমাদের উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দিতেন’![1] অর্থাৎ যদি তার হায়াত বৃদ্ধির জন্য আপনি দো‘আ করতেন’। কেননা ছাহাবায়ে কেরাম জানতেন যে, যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কারু জন্য ‘রহমত ও মাগফেরাত’-এর দো‘আ করলে তিনি শাহাদাত লাভ করতেন। আর খায়বর যুদ্ধে সেটাই বাস্তবে দেখা গেছে ‘আমের ইবনুল আকওয়া‘-র শাহাদাতের মধ্য দিয়ে। এর দ্বারা যেন এই ভ্রান্ত আক্বীদা সৃষ্টি না হয় যে, রাসূল (ছাঃ) গায়েব জানতেন। কেননা গায়েবের চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে। তিনি ব্যতীত তা কেউই জানে না’ (আন‘আম ৬/৫৯)। বরং এটি তাঁর উপর ‘অহি’ করা হয়ে থাকতে পারে। কেননা ‘অহি’ ব্যতীত কোন কথা তিনি বলেন না’ (নাজম ৫৩/৩-৪)।
২. জোরে তাকবীর ধ্বনি করার উপর নিষেধাজ্ঞা(نهى عن التكبير بأعلى الصوت) : পথিমধ্যে একটি উপত্যকা অতিক্রম করার সময় ছাহাবীগণ জোরে জোরে তাকবীর দিতে থাকেন (আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ ‘তোমরা নরম কণ্ঠে বল’। কেননা إِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا قَرِيبًا ‘তোমরা কোন বধির বা অনুপস্থিত সত্তাকে ডাকছ না। বরং তোমরা ডাকছ একজন সদা শ্রবণকারী ও সদা নিকটবর্তী এক সত্তাকে’।[2] এর অর্থ এটা নয় যে, আদৌ উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দেওয়া যাবে না। বরং প্রয়োজন বোধে অবশ্যই তা করা যাবে। যেমন তালবিয়াহ, লা হাওলা অলা কুওয়াতা.., ইন্না লিল্লাহ ইত্যাদি সরবে পাঠ করা। যেগুলি অন্যান্য হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রমাণিত।[3] অবশ্য এখানে যুদ্ধের কোন কৌশল থাকতে পারে।
৩. কেবল ছাতু খেলেন সবাই(أكلهم السويق فقط) : খায়বরের সন্নিকটে ‘ছাহবা’ (الصَّهْبَاء) নামক স্থানে অবতরণ করে রাসূল (ছাঃ) আছরের ছালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি খাবার চাইলেন। কিন্তু কেবল কিছু ছাতু পাওয়া গেল। তিনি তাই মাখাতে বললেন। অতঃপর তিনি খেলেন ও ছাহাবায়ে কেরাম খেলেন। অতঃপর শুধুমাত্র কুলি করে একই ওযূতে মাগরিব পড়লেন। অতঃপর এশা পড়লেন।[4] এটা নিঃসন্দেহে রাসূল (ছাঃ)-এর একটি মু‘জেযা। যেমনটি ঘটেছিল ইতিপূর্বে খন্দকের যুদ্ধে পেটে পাথর বাঁধা ক্ষুধার্ত নবী ও তাঁর ছাহাবীগণের খাদ্যের ব্যাপারে।
[2]. বুখারী হা/৪২০৫; মুসলিম হা/২৭০৪; মিশকাত হা/২৩০৩।
[3]. মুসলিম শরহ নববী হা/২৭০৪-এর অনুচ্ছেদ ও আলোচনা।
[4]. বুখারী হা/২১৫; ইবনু কাছীর, সীরাহ নববিইয়াহ (বৈরূত : ১৩৯৫ হি./১৯৭৬ খৃ.) ৩/৩৪৬; ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৬৩৯।