লগইন করুন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এর ফুফাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন জাহশ (রাঃ) ও তার মামা রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা হামযাহ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব (রাঃ)-কে একই কবরে দাফন করা হয়’।[1] আব্দুল্লাহ বিন জাহ্শ যুদ্ধে নামার আগের দিন দো‘আ করেছিলেন,اللَّهم ارْزُقْنِي غدًا رجلاً شديدًا بأسُهُ شديدًا حَرْدُهُ، فأُقَاتِلُه فيك و يُقَاتِلُنِي ثم يَأْخُذُنِي فَيُجَدِّعُ أَنْفِي و أُذُنِي فإذا لَقِيْتُكَ غدًا قلتَ : يا عبدَ الله فِيْمَ جُدِّعَ أَنْفُكَ و أُذُنُكَ؟ فأقولُ فِيْكَ و في رسولِكَ فيقولُ : صَدَقْتَ ‘হে আল্লাহ! আগামীকাল আমাকে এমন একজন বীর ও দুর্ধর্ষ যোদ্ধার মুখোমুখি কর, যে আমাকে প্রচন্ড লড়াই শেষে হত্যা করবে এবং আমার নাক ও কান কেটে দেবে। তারপর আমি তোমার সামনে হাযির হ’লে তুমি বলবে, হে আব্দুল্লাহ! তোমার নাক-কান কাটা কেন? আমি বলব, হে আল্লাহ! তোমার জন্য ও তোমার রাসূলের জন্য(فِيكَ وَفِى رَسُولِكَ)। তখন তুমি বলবে, صَدَقْتَ ‘তুমি সত্য বলেছ’ (হাকেম হা/২৪০৯, হাদীছ ছহীহ)। এ দো‘আর সত্যায়ন করে হযরত সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ (রাঃ) বলেন, আমার চেয়ে তার দো‘আ উত্তম ছিল এবং সেভাবেই তিনি শাহাদাত লাভে ধন্য হয়েছেন। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিজে হামযা ও আব্দুল্লাহ দু’জনকে একই কবরে দাফন করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ৪০-এর কিছু বেশী। যুবায়ের (রাঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ বিন জাহশকে ‘আল্লাহর পথে নাক-কান কাটা’(الْمُجَدَّعُ فِي اللهِ) বলে অভিহিত করা হয়। যেটা ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর করা হয়েছিল।[2]
[2]. আল-ইছাবাহ, আব্দুল্লাহ বিন জাহশ ক্রমিক ৪৫৮৬; বায়হাক্বী, হাকেম হা/২৪০৯; হাকেম ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তা সমর্থন করেছেন; সীরাহ ছহীহাহ ২/৩৮৮।
(১) এখানে মু‘জিযা হিসাবে প্রসিদ্ধ আছে যে, যুবায়ের (রাঃ) বলেন, এদিন আব্দুল্লাহ বিন জাহ্শ এলেন এমতাবস্থায় যে, তার তরবারি ভেঙ্গে গিয়েছিল। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে একটি খেজুরের শুকনা ডাল দিলেন। অতঃপর সেটি আব্দুল্লাহর হাতে তরবারিতে পরিণত হ’ল’ (আল-ইছাবাহ ক্রমিক ৪৫৮৬; আল-ইস্তী‘আব)। যাহাবী বলেন, বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ (যাহাবী, তারীখুল ইসলাম ১৮৬ পৃঃ ; মা শা-‘আ ১৬০পৃঃ)।
(২) আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উৎবাহ, নিহত হামযার কলিজা বের করে চিবিয়েছিলেন এবং তার নাক-কান কেটে কণ্ঠহার বানিয়েছিলেন (আর-রাহীক্ব ২৭৬ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/৯৫)। বর্ণনাটির সনদ ‘মু‘যাল’ বা যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম, ক্রমিক ১১৫৫; আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৫২ পৃঃ)।
(৩) এছাড়াও বলা হয়েছে যে, উক্ত প্রসঙ্গে সূরা নাহ্ল ১২৬ আয়াতটি নাযিল হয়। যেখানে আল্লাহ বলেন, وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُمْ بِهِ وَلَئِنْ صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِلصَّابِرِينَ ‘যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদের সাথে করা হয়েছে। কিন্তু যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, তাহলে ধৈর্যশীলদের জন্য নিশ্চয়ই সেটি উত্তম’ (নাহল ১৬/১২৬)। ফলে রাসূল (ছাঃ) ধৈর্য ধারণ করেন ও নিহত ব্যক্তিদের অঙ্গহানি করতে নিষেধ করেন বলে ইবনু ইসহাক কর্তৃক সনদবিহীন যে বর্ণনা (ইবনু হিশাম ২/৯৬) এসেছে, সেটি ‘যঈফ’। ইবনু কাছীর স্বীয় আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (৯/১২০) গ্রন্থে উক্ত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, আয়াতটি হ’ল মাক্কী আর যুদ্ধ হ’ল মদীনায় হিজরতের তৃতীয় বছরে। কিভাবে এ ঘটনার সাথে এটি মিলানো যেতে পারে? (৪) আরও বলা হয়েছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যদি আল্লাহ আমাকে কুরায়েশদের উপরে একদিনের জন্যও বিজয়ী করেন, তাহ’লে আমি তাদের ৩০ জন নিহত ব্যক্তির অঙ্গহানি করব’ (ইবনু হিশাম ২/৯৫-৯৬)। অন্য বর্ণনায় ৭০ জনের কথা এসেছে। একথা শুনে জিব্রীল সূরা নাহল ১২৬ আয়াতটি নিয়ে অবতরণ করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) উক্ত কসমের কাফফারা দেন এবং বিরত হন’ (হাকেম হা/৪৮৯৪, যাহাবী বলেন, অন্যতম রাবী ছালেহ একজন বাজে লোক (واهٍ); বায়হাক্বী শো‘আব হা/৯৭০৩)।
(৫) আরেক বর্ণনায় এসেছে যে, হামযার কলিজা চিবানো লাশ দেখে রাসূল (ছাঃ) বলেন, সে কি এখান থেকে কিছু খেয়েছে? তারা বললেন, না। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ হামযার দেহের কোন অংশকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন না’ (আহমাদ হা/৪৪১৪)। অত্র হাদীছে হিন্দা জাহান্নামী হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। অথচ তিনি পরে মুসলমান হয়েছিলেন। আর ইসলাম বিগত সকল গোনাহ ধ্বসিয়ে দেয়’ (মুসলিম হা/১২১; মিশকাত হা/২৮)। (৬) অন্য বর্ণনায় এসেছে, যদি (তার বোন) ছাফিয়া দুঃখ না পেত, তাহ’লে আমি হামযাহকে এখানেই ছেড়ে যেতাম। অতঃপর আল্লাহ তাকে জন্তু-জানোয়ার ও পক্ষীকুলের পেট থেকে পুনরুত্থান ঘটাতেন’ (হাকেম হা/৪৮৮৭)। উপরে বর্ণিত সকল বর্ণনাই ‘যঈফ’ (মা শা-‘আ ১৪৭-৪৮)।
তবে কাফেররা যে কারু কারু অঙ্গহানি করেছিল, সেটা নিশ্চিত। যেমন যুদ্ধ শেষে আবু সুফিয়ান মুসলিম নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, إِنَّكُمْ سَتَجِدُونَ فِى الْقَوْمِ مُثْلَةً لَمْ آمُرْ بِهَا وَلَمْ تَسُؤْنِى ‘তোমরা তোমাদের কিছু নিহত ব্যক্তির অঙ্গহানি পাবে। এবিষয়ে আমি কোন নির্দেশ দেইনি এবং এটা আমাকে ব্যথিতও করেনি’ (বুখারী হা/৩০৩৯)।
উল্লেখ্য যে, আবু সুফিয়ান ও তাঁর স্ত্রী হিন্দা মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন। হিন্দা যদি হামযার কলিজা চিবানোর মত নিকৃষ্ট কর্ম করতেন, তাহ’লে রাসূল (ছাঃ) নিশ্চয়ই তার রক্ত বৃথা ঘোষণা করতেন। যেমন কয়েকজন নারী-পুরুষের রক্ত বৃথা ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তাদেরকে মক্কা বিজয়ের দিন হত্যা করা হয়েছিল (ইবনু হিশাম ২/৪১০-১১; ফাৎহুল বারী হা/৪২৮০-এর আলোচনা)। তাছাড়া বনু হাশেম কখনো আবু সুফিয়ানকে ছাড়তেন না। আর আবু সুফিয়ান ছিলেন বনু ‘আব্দে শামস গোত্রের। যদিও সকলেই ছিলেন কুরায়েশ বংশের অন্তর্ভুক্ত।
(৭) আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, হামযার লাশের সামনে দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমার মত বিপদগ্রস্ত কেউ কখনো হয়নি এবং তোমার এই দৃশ্যের চাইতে কোন দৃশ্য আমাকে এত ক্রুদ্ধ করেনি। অতঃপর তিনি বলেন,جَاءَنِي جِبْرِيلُ فَأَخْبَرَنِي أَنَّ حَمْزَةَ بْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ مَكْتُوبٌ فِي أَهْلِ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ: حَمْزَةُ ابْن عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَسَدُ اللهِ، وَأَسَدُ رَسُولِهِ ‘আমার নিকটে জিব্রীল এসেছেন ও খবর দিয়েছেন যে, হামযাহ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব সপ্ত আকাশের অধিবাসীদের নিকটে লিখিত আছেন এই মর্মে যে, হামযাহ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব ‘আসাদুল্লাহ’ ও ‘আসাদু রাসূলিহী’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর সিংহ’ এবং তাঁর ‘রাসূলের সিংহ’ (ইবনু হিশাম ২/৯৬; হাকেম হা/৪৮৯৮)। হাদীছটি ‘মুনকার’ বা যঈফ (যঈফাহ হা/৬৩৫৫)। তবে ‘সাইয়িদুশ শুহাদা’ লকবটি ‘ছহীহ হাদীছ’ দ্বারা প্রমাণিত’ (হাকেম হা/৪৮৮৪; ছহীহাহ হা/৩৭৪; ছহীহুল জামে‘ ৫৪৬৯)।
উল্লেখ্য যে, হামযাহ, রাসূল (ছাঃ) ও আবু সালামাহ পরস্পরে দুধ ভাই ছিলেন। যারা শিশুকালে আবু লাহাবের দাসী ছুওয়াইবার দুধ পান করেছিলেন’ (আল-ইছাবাহ, ছুওয়াইবাহ ক্রমিক ১০৯৬৪; ইবনু হিশাম ২/৯৬)।