লগইন করুন
ওহোদ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী প্রথম দিকে বিজয়ী হয় এবং শত্রুবাহিনী ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু তীরন্দাযগণের মারাত্মক ভুলের কারণে অরক্ষিত গিরিসংকট দিয়ে শত্রুবাহিনী অতর্কিতে ময়দানে ঢুকে পড়ে। যাতে মুসলিম বাহিনী চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে আহত হন। তাঁর দান্দান মুবারক শহীদ হয়। এছাড়া মুসলিম বাহিনীর সর্বমোট ৭০ জন শাহাদাত বরণ করেন। যার মধ্যে মুহাজির ৪ জন, ইহূদী ১ জন, বাকী ৬৫ জন আনছারের মধ্যে আউস গোত্রের ২৪ জন ও খাযরাজ গোত্রের ৪১ জন ছিলেন। কুরায়েশ বাহিনীর নিহতের সংখ্যা সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ মতভেদ করেছেন। কেউ বলেছেন ২২ জন, কেউ বলেছেন ৩৭ জন। কিন্তু এ হিসাব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তারাই বলছেন যে, একা হামযা (রাঃ) ৩০ জনের অধিক শত্রুসৈন্য খতম করেছেন’। তাছাড়া আলী (রাঃ) হত্যা করেছেন ৮ জনকে, কুযমান ৭ অথবা ৮ জনকে। এতদ্ব্যতীত যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম, মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবু দুজানা, আবুবকর, ওমর, আছেম বিন ছাবেত, হাতেব বিন আবু বালতা‘আহ, আবু তালহা, তালহা বিন উবায়দুল্লাহ, মুছ‘আব বিন উমায়ের, উসায়েদ বিন হুযায়ের, হুবাব ইবনুল মুনযির, সা‘দ বিন মু‘আয, সা‘দ বিন ওবাদাহ, সা‘দ ইবনু আবী ওয়াকক্বাছ, সা‘দ বিন রাবী‘, নযর বিন আনাস, আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহ, হানযালাহ, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান ও তাঁর পিতা ইয়ামান, আবু সাঈদ খুদরীর পিতা মালিক ইবনু সিনান, জাবের-এর পিতা আব্দুল্লাহ বিন হারাম, হারিছ ইবনু ছিম্মাহ, উছায়রিম, মুখাইরীক্ব, আব্দুল্লাহ বিন জাহ্শ, রাফে‘ বিন খাদীজ, সামুরাহ বিন জুনদুব, মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ, ক্বাতাদাহ বিন নু‘মান, আনাস বিন নাযার, ছাবিত বিন দাহদাহ ও তার সঙ্গীরা, আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ, সাহল বিন হুনাইফ প্রমুখ বীর যোদ্ধাদের হাতে কত শত্রুসৈন্য খতম হয়েছে, তার হিসাব কোথায়? তিন হাযারের দুর্ধর্ষ কুরায়েশ বাহিনী কোনরূপ চরম মূল্য না দিয়েই কি ময়দান ছেড়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালিয়েছিল? অতএব মুসলিম বীরদের হাতে তাদের যে অগণিত সৈন্য হতাহত হয়েছিল, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কথা নয়।
দ্বিতীয়তঃ কুরায়েশ বাহিনী বিজয়ী হ’লে মুসলিম বাহিনীর ঘাঁটি দখল করল না কেন? তাদের মালামাল লুট করল না কেন? তারা মদীনার উপরে চড়াও হ’ল না কেন? সে যুগের প্রথানুযায়ী বিজয়ী দল হিসাবে তারা সেখানে ৩ দিন অবস্থান করল না কেন? কেন একজন মুসলিম সৈন্যও তাদের হাতে বন্দী হ’ল না? অথচ কাফের বাহিনীর দু’জন কবির অন্যতম আবু ‘আযযাহ মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হয় এবং ইতিপূর্বে বদরের যুদ্ধে বন্দী হওয়ার পর মুক্তিপণ হিসাবে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করায় তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। অতএব এটাকে ‘অমীমাংসিত যুদ্ধ’ বলা চলে। তবে আখেরাতের হিসাবে মুসলমানেরাই বিজয়ী এবং সর্বদা লাভবান তারাই। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَهِنُوْا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ إِنْ تَكُوْنُوْا تَأْلَمُوْنَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُوْنَ كَمَا تَأْلَمُوْنَ وَتَرْجُوْنَ مِنَ اللهِ مَا لاَ يَرْجُوْنَ وَكَانَ اللهُ عَلِيْماً حَكِيْمًا ‘শত্রুদলের পশ্চাদ্ধাবনে তোমরা শৈথিল্য প্রদর্শন করো না। যদি তোমরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাক, তবে তারাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে যেমন তোমরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছ। (পার্থক্য এই যে,) তোমরা আল্লাহর নিকট থেকে (জান্নাত) আশা কর, যা তারা করে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (নিসা ৪/১০৪)।