লগইন করুন
উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পূর্বে আমি বলতে চাই যে, আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর ভিতরে কোনো পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নেই। কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের বিরোধী নয়। এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর ক্ষেত্রেও একই কথা। কুরআন ও সুন্নাতে পরস্পর বিরোধী কোনো জিনিস নেই। এ মূলনীতিটি মনে রাখলে কুরআন-হাদীস বুঝার অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢﴾ [النساء: ٨٢]
“তারা কি কুরআন গবেষণা করে না? এটি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট থেকে হত, তাহলে তারা উহাতে অনেক মতভেদ দেখতে পেত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২]
কুরআনের ভিতরে যেহেতু মতবিরোধ নেই, রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের ক্ষেত্রেও তাই। এক হাদীস অন্য হাদীসের বিরোধী নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি এক স্থানে ঈমানকে একভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং অন্য স্থানে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করেন, যা আপনার দৃষ্টিতে প্রথম ব্যাখ্যার বিরোধী মনে হয়, কিন্তু আপনি যদি গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহলে আপনি কোনো দ্বন্দ্ব পাবেন না।
হাদীসে জিবরীলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে ইসলাম, ঈমান, ইহসান এ তিনভাগে ভাগ করেছেন। আর আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলের হাদীসে শুধুমাত্র দীনের একটি মাত্র প্রকার তথা ইসলামের কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানে শুধুমাত্র ইসলামের কথা উল্লেখ হবে, সেখানে ঈমানকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কারণ, মুমিন হওয়া ব্যতীত ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান পালন করা সম্ভব নয়। আবার যেখানে শুধুমাত্র ঈমানের আলোচনা হবে, সেখানে ইসলামও অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ, প্রত্যেক মুমিনকে ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। আর যেখানে ঈমান ও ইসলাম একই সাথে উল্লেখ হবে, সেখানে ঈমান দ্বারা উদ্দেশ্য হবে অন্তরের বিষয়সমূহ। আর ইসলাম দ্বারা উদ্দেশ্য হবে বাহ্যিক আমলসমূহ। ইলম অর্জনকারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা। শুধুমাত্র ইসলামের আলোচনা আসলে ঈমানও তার ভিতরে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ﴾ [ال عمران: ١٩]
“ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত দীন”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]
আর এটা জানা বিষয় যে, ইসলাম আকীদা, ঈমান ও বাহ্যিক আমলের সমষ্টি। এককভাবে ঈমানের উল্লেখ হলে ইসলামকে তার ভিতরে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দু’টি একসাথে উল্লেখ হলে ঈমানের অর্থ হবে অন্তরে বিশ্বাস করার বিষয়সমূহ আর ইসলামের অর্থ হবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাহ্যিক আমলসমূহ। এ জন্যই পূর্ববর্তী যুগের কোনো কোনো আলিম বলেছেন, ইসলাম প্রকাশ্য বিষয় এবং ঈমান গোপনীয় বিষয়। কারণ, তা অন্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। আপনি কখনো দেখতে পাবেন যে, মুনাফিক ব্যক্তি সালাত পড়ছে, সাওম রাখছে এবং সাদকা করছে। এ ব্যক্তি প্রকাশ্যভাবে মুসলিম কিন্তু মুমিন নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ ٨﴾ [البقرة: ٨]
“মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ এমন আছে, যারা বলে আমরা আল্লাহর ওপর এবং পরকালের ওপর ঈমান আনয়ন করেছি, অথচ তারা মুমিন নয়”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮]