লগইন করুন
বদর যুদ্ধের পূর্বরাত। সৈন্যদের শ্রেণীবিন্যাস শেষ হয়েছে। সবাই ক্লান্ত-শ্রান্ত। হঠাৎ সামান্য বৃষ্টি এলো। মুসলিম বাহিনী কেউ গাছের নীচে কেউ ঢালের নীচে ঘুমে এলিয়ে পড়ল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন বাহিনীর সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল এবং যুদ্ধের জন্য দেহমন প্রস্ত্তত হয়ে গেল। বালু-কংকর সব জমে দৃঢ় হয়ে গেল। ফলে চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্য এল। সেই সাথে অধিকহারে বৃষ্টির পানি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেল।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, إِذْ يُغَشِّيْكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِّنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُم مِّنَ السَّمَاءِ مَاءً لِّيُطَهِّرَكُمْ بِهِ وَيُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَى قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الأَقْدَامَ ‘স্মরণ কর সে সময়ের কথা, যখন তিনি তাঁর পক্ষ থেকে প্রশান্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং তোমাদের উপরে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এর মাধ্যমে তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য, তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূরীভূত করার জন্য, তোমাদের হৃদয়গুলি পরস্পরে আবদ্ধ করার জন্য এবং তোমাদের পাগুলিকে দৃঢ় রাখার জন্য’ (আনফাল ৮/১১)।
শয়তানের কুমন্ত্রণা এই যে, সে যেন দুর্বলচিত্ত মুসলমানদের মধ্যে এই প্রশ্ন ঢুকিয়ে দেবার সুযোগ না পায় যে, আমরা যদি ন্যায় ও সত্যের পথে থাকব এবং আমরা যদি আল্লাহর বন্ধু হই, তাহ’লে আমরা এই নিম্নভূমিতে ধূলি-কাদার মধ্যে কেন থাকব? এটি নিঃসন্দেহে আমাদের পরাজয়ের লক্ষণ। অথচ কুরায়েশরা কাফের হওয়া সত্ত্বেও উচ্চ ভূমিতে আছে। তারা উট যবেহ করে খাচ্ছে আর ফূর্তি করছে। এটা নিশ্চয়ই তাদের জন্য বিজয়ের লক্ষণ। সকালেই যেখানে যুদ্ধের সম্মুখীন হ’তে হবে, সেখানে রাতেই যদি সংখ্যালঘু মুসলিম বাহিনীর মধ্যে এ ধরনের বিভ্রান্তি ঢুকে যায়, তাহ’লে সেটা সমূহ ক্ষতির কারণ হবে। সেকারণ আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দিলেন। ফলে ঘুম থেকে উঠে প্রফুল্লচিত্তে সবাই যুদ্ধে জয়ের জন্য একাট্টা হয়ে দ্রুত প্রস্ত্তত হয়ে গেল।
আলী (রাঃ) বলেন যে, বদর যুদ্ধের রাতে এমন কেউ বাকী ছিল না যে, যিনি ঘুমাননি। কেবল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত। তিনি সারা রাত জেগে ছালাতে রত থাকেন। তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বারবার স্বীয় প্রভুর নিকট দো‘আ করতে থাকেন, اللَّهُمَّ إِنَّكَ إِنْ تُهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةَ لاَ تُعْبَدْ فِى الأَرْضِ أَبَداً ‘হে আল্লাহ! যদি তুমি এই দলকে ধ্বংস করে দাও, তাহ’লে জনপদে তোমার ইবাদত করার আর কেউ থাকবে না’। অতঃপর সকাল হলে তিনি সবাইকে ডাকেন, الصَّلاَةَ عِبَادَ اللهِ ‘আল্লাহর বান্দারা! ছালাত’। অতঃপর সবাই জমা হ’লে তিনি ফজরের জামা‘আত শেষে সবাইকে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করেন’।[1]
আলী (রাঃ) বলেন, لَقَدْ رَأَيْتُنَا يَوْمَ بَدْرٍ وَنَحْنُ نَلُوذُ بِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم- وَهُوَ أَقْرَبُنَا إِلَى الْعَدُوِّ وَكَانَ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ يَوْمَئِذٍ بَأْساً ‘বদরের যুদ্ধের দিন আমরা সকলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তিনি আমাদের মধ্যে শত্রুর সর্বাধিক নিকটবর্তী ছিলেন এবং আমাদের সকলের চাইতে সর্বাধিক বড় যোদ্ধা ছিলেন’ (আহমাদ হা/৬৫৪, সনদ ছহীহ)।