লগইন করুন
(১) বিশ্বাসগত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোন বিধান প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। সেকারণ সার্বিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যখন মক্কায় সেরূপ পরিবেশ তৈরী হয়নি, তখন ইয়াছরিবে পরিবেশ তৈরী হওয়ায় সেখানে হিজরতের নির্দেশ আসে। সেকারণ হিজরত ছিল ইসলামের ইতিহাসে মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা।
(২) ঈমানী বন্ধন দুনিয়াবী বন্ধনের চাইতে অনেক বেশী শক্তিশালী। যেমন রক্তের বন্ধন হিসাবে চাচা আবু তালেব-এর নেতৃত্বে বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সার্বিক সহযোগিতা করলেও তা টেকসই হয়নি। অবশেষে ঈমানী বন্ধনের আকর্ষণে রাসূল (ছাঃ)-কে সুদূর ইয়াছরিবে হিজরত করতে হয় এবং সেখানে গিয়ে তিনি নতুন ঈমানী সমাজের গোড়াপত্তন করেন।
(৩) জনমত গঠন হ’ল ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার আবশ্যিক পূর্বশর্ত। তাই মক্কার জনমত বিরুদ্ধে থাকায় আল্লাহর রাসূলকে মদীনায় হিজরত করতে হয়। অতঃপর অনুকূল জনমতের কারণে শত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও মুনাফেকীর মধ্য দিয়েও তিনি সেখানে ইসলামী খেলাফত কায়েমে সক্ষম হন। আজও তা সম্ভব, যদি নবীগণের তরীকায় আমরা পরিচালিত হই।
(৪) হিজরত হয়েছিল বলেই ইসলামী বিধানসমূহের প্রতিষ্ঠা দান সম্ভব হয়েছিল। এমনকি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে ছিয়াম, যাকাত ও হজ্জ তিনটিই ফরয হয়েছিল মদীনায় হিজরতের পর।
(৫) ইসলামের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিধান সমূহ মদীনায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যা হিজরতের কারণেই সম্ভব হয়েছিল।
(৬) ওমর (রাঃ) হিজরতকে ‘হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী’ বলে আখ্যায়িত করেন। অতঃপর এর গুরুত্বকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য স্বীয় খেলাফতকালে হিজরী বর্ষ গণনার নিয়ম জারি করেন। যা আজও অব্যাহত রয়েছে।
মদীনায় হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দো‘আ করেন, اللهُمَّ أَمْضِ لأَصْحَابِى هِجْرَتَهُمْ، وَلاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ছাহাবীদের হিজরত জারী রাখ এবং তাদেরকে পিছনে ফিরিয়ে দিয়ো না’ (বুখারী হা/১২৯৫)। ফলে মুহাজিরগণ নতুন পরিবেশে নানা অসুবিধা সত্ত্বেও সেটাকে মেনে নেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের হেফাযত ও দাওয়াতের স্বার্থে মুমিনের জন্য হিজরত করা ওয়াজিব। মাওয়ার্দী বলেন, কাফিরের দেশে যদি দ্বীনের দাওয়াত বাধাহীন হয় এবং কোন ফিৎনার আশংকা না থাকে, তবে তাদের সেখানেই থাকা উত্তম হবে হিজরত করার চাইতে। কেননা তাতে অন্যদের ইসলাম কবুলের সম্ভাবনা থাকে’।[1]