লগইন করুন
আয়েশা (রাঃ) বলেন, হিজরতের দিন ভরদুপুরে একটা কাপড়ে মাথা ঢেকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের বাড়ীতে আসেন। যেসময় সাধারণতঃ কেউ বের হয় না। তিনি এসে আবুবকরকে বললেন যে, তাঁকে হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা তখন তাঁদের সফরের জন্য দ্রুত গোছ-গাছ শুরু করে দিলাম। (বড় বোন) আসমা তার কোমরবন্দ ছিঁড়ে তার এক অংশ দিয়ে থলের মুখ বেঁধে দেন। অন্য অংশ নিজের ব্যবহারে রাখেন।
তিনি বলেন, আবুবকর আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন। কেননা চারমাস পূর্বেই (অর্থাৎ ২য় বায়‘আতের পর থেকে হিজরতপূর্ব সময়ের মধ্যে) রাসূল (ছাঃ) সকলকে জানিয়েছিলেন যে, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান স্বপ্নে দেখানো হয়েছে, যা কালো পাথুরে মাটির মাঝে খেজুর বাগিচা সমৃদ্ধ এলাকা। তখন থেকেই মুসলমানগণ ইয়াছরিবে হিজরত করতে থাকেন। এমনকি হাবশা থেকেও অনেকে ফিরে ইয়াছরিবে যান। তবে জা‘ফর বিন আবু তালেব তখনও সেখানে ছিলেন। এক পর্যায়ে আবুবকরও ইয়াছরিবে চলে যেতে চান। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, عَلَى رِسْلِكَ فَإِنِّى أَرْجُو أَنْ يُؤْذَنَ لِى ‘থেমে যাও! আশা করছি যে, আমাকেও অনুমতি দেওয়া হবে’ (বুখারী হা/২২৯৭; ৩৯০৫)। ফলে সেদিন থেকেই আবুবকর দু’টি দ্রুতগামী বাহন প্রস্ত্তত করে রেখেছিলেন।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবুবকর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন, দু’টি বাহনের যেকোন একটি আপনি গ্রহণ করুন। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, মূল্যের বিনিময়ে (অর্থাৎ নিজস্ব বাহনেই তিনি হিজরত করতে চান)। অতঃপর তাঁরা ছওর গিরিগুহায় চলে যান ও সেখানে তিনরাত আত্মগোপনে থাকেন। সঙ্গে আমার ভাই আব্দুল্লাহ থাকত এবং ভোরের অন্ধকার থাকতেই সে চলে আসত। যাতে লোকেরা বুঝতে না পারে যে, সে বাইরে ছিল। আমাদের মুক্তদাস ‘আমের বিন ফুহায়রা দুম্বা চরাত এবং রাতের অন্ধকারে গিয়ে দুধ পান করাত। এভাবে তিনরাত কেটে যায়। অতঃপর তাঁরা বনু ‘আবদ বিন ‘আদী গোত্র থেকে একজন দক্ষ পথপ্রদর্শকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। যারা ‘আছ বিন ওয়ায়েল সাহমী গোত্রের মিত্র ছিল। ঐ ব্যক্তি (আব্দুল্লাহ বিন উরাইক্বিত্ব) কাফেরদের দ্বীনের উপর ছিল। অতঃপর তিনরাত্রির পরদিন (সোমবার) প্রত্যুষে (صُبْحَ ثَلاَثٍ) তাঁরা রওয়ানা হন। এ সময় তাঁদের সাথে ছিল ‘আমের বিন ফুহায়রা এবং পথপ্রদর্শক ব্যক্তি। যিনি তাদেরকে নিয়ে মক্কার নিম্নভূমি দিয়ে যাত্রা করেন’।
হাকেম বলেন, قَالَ الْحَاكِمُ تَوَاتَرَتِ الْأَخْبَارُ أَنَّ خُرُوجَهُ كَانَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَدُخُولَهُ الْمَدِينَةَ كَانَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ ‘এ কথাটি অবিরত ধারায় বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কা থেকে তাঁর যাত্রা ছিল সোমবারে এবং মদীনায় উপস্থিতি ছিল সোমবারে’। ইবনু হাজার বলেন, أَقَامَ فِيهِ ثَلَاثَ لَيَالٍ فَهِيَ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ وَلَيْلَةُ السَّبْتِ وَلَيْلَةُ الْأَحَدِ وَخَرَجَ فِي أَثْنَاءِ لَيْلَةِ الِاثْنَيْنِ ‘তিনি সেখানে তিনরাত কাটান। শনি, রবি ও সোম। অতঃপর সোমবার রাত থাকতে থাকতেই গুহা থেকে বের হয়ে রওয়ানা দেন’।[1]
হিজরতের উক্ত সংকটময় রাতের কথা বলতে গিয়ে ওমর (রাঃ) আল্লাহর কসম করে বলতেন, وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لَتِلْكَ اللَّيْلَةُ خَيْرٌ مِنْ آلِ عُمَرَ ‘ঐ এক রাতের আমল গোটা ওমর পরিবারের সারা জীবনের আমল অপেক্ষা উত্তম ছিল’।[2]
[2]. হাকেম হা/৪২৬৮; যাহাবী ‘ছহীহ মুরসাল’ বলেছেন।