লগইন করুন
(যিলহাজ্জ ৬ষ্ঠ নববী বর্ষ)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সরাসরি দৈহিক আক্রমণের দুঃসাহস দেখানোর কঠিন সময়ে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে কুরায়েশ বীর হামযা ইসলাম কবুল করেন।
হামযার ইসলাম গ্রহণের প্রত্যক্ষ কারণ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ৬ষ্ঠ নববী বর্ষের শেষ দিকে যিলহাজ্জ মাসের কোন এক দিনে ছাফা পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাবার সময় আবু জাহল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অশ্লীল ভাষায় তাঁকে ও তাঁর দ্বীনকে গালি দেন।[1] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নীরবে সবকিছু সহ্য করেন ও চুপচাপ বাড়ী ফিরে যান। আবু জাহল অতঃপর কা‘বাগৃহের নিকটে গিয়ে তার দলবলের সাথে বসে উক্ত কাজের জন্য বড়াই করতে থাকেন।
আব্দুল্লাহ বিন জুদ‘আনের জনৈকা দাসী ছাফা পাহাড়ে তার বাসা থেকে এ দৃশ্য অবলোকন করে। ঐ সময় হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব মৃগয়া থেকে তীর-ধনুকে সজ্জিত অবস্থায় ঘরে ফিরছিলেন। তখন উক্ত দাসী তার নিকটে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ছুটলেন আবু জাহলের খোঁজে। তিনি গিয়ে আবু জাহলকে মাসজিদুল হারামে পেলেন। অতঃপর তীব্র ভাষায় তাকে গালি দেন ও তার মাথায় ধনুক দিয়ে এমন জোরে আঘাত করেন যে, আবু জাহল তাতে রক্তাক্ত হয়ে যান। অতঃপর বলেন, তুমি তাকে গালি দিয়েছ, অথচ আমি তার দ্বীনের উপরে আছি। আমি তাই বলি যা সে বলে’। অতঃপর আবু জাহলের বনু মাখযূম গোত্র এবং হামযার বনু হাশেম গোত্র পরস্পরের বিরুদ্ধে চড়াও হয়। তখন আবু জাহল বলেন, তোমরা আবু উমারাহ (হামযা)-কে ছাড়। আমি তার ভাতিজা (মুহাম্মাদ)-কে নিকৃষ্ট ভাষায় গালি দিয়েছি’।[2] এভাবে আবু জাহল নিজের দোষ স্বীকার করে নিজ গোত্রকে নিরস্ত করেন। ফলে আসন্ন খুনোখুনি থেকে উভয় পক্ষ বেঁচে যায়। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’।[3] তবে ঘটনাটি অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া এটি আক্বীদা বা আহকামগত বিষয় নয়। এ ঘটনায় আবু জাহলের নেতৃত্ব গুণের পরিচয় পাওয়া যায়।
বলা বাহুল্য, হামযার এই ইসলাম কবুলের ঘোষণাটি ছিল আকস্মিক এবং ভাতিজার প্রতি ভালোবাসার টানে। পরে আল্লাহ তাঁর অন্তরকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন এবং তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে শক্তিশালী ও নির্ভর কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হন। বস্ত্ততঃ এটি ছিল রাসূল (ছাঃ) ও নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হ’তে বিশেষ রহমত এবং একটি দৃঢ় রক্ষাকবচ।
[2]. ইবনু হিশাম ১/২৯১-৯২; হাকেম হা/৪৮৭৮; বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/২১৩; সনদ যঈফ।
[3]. হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৫৪৬০; মা শা-‘আ ৫৩ পৃঃ।